অবিস্মরণীয় ভালোবাসা❤ পর্ব ৬
অবিস্মরণীয় ভালোবাসা❤ পর্ব ৬
ইভান বলে , " কি ব্যাপার মিস সান্যাল , এতো জরুরি তলব ! "
অহনা বলে, " Sorry ইভান বাবু, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য । আসলে আপনি কালকে আমাকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সেই ব্যাপারে কিছু কথা বলার ছিল । ওহ্ ! আরেকটা কথা , আপনি আমাকে মিস সান্যাল না বলে অহনা বলতে পারেন । "
ইভান বলে , " Ok , আজ থেকে অহনা বলেই ডাকবো । এবার বলো তোমার কি বলার আছে , কিছু ভাবলে আদিত্যকে বিয়ে করার প্রস্তাবের ব্যাপারে ? "
অহনা বলে, " হুমমমম , কালকে এই ব্যাপারে অনেক ভেবেছি । আপনি যেই প্রস্তাব দিয়েছেন তাতে আমার বিশেষ আপত্তির কিছু নেই তবে ......... " ।
ইভান বলে, " তবে , তবে কি অহনা ? তোমার যা বলার তুমি নির্দ্বিধায় বলতে পারো । "
অহনা একটু আশ্বস্ত হয়ে বলে, " আমি বলছিলাম আপনি যে মিঃ আদিত্য মুখার্জীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাতে মিঃ মুখার্জীর মত আছে কী ? মানে এই ব্যাপারে ওনার মতামত জানাটা আমার ক্ষেত্রে খুবই জরুরি । আমার মনে হয় এই ব্যাপারে ওনার সাথে আমার সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন । "
ইভান একটু ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে , " মানে ? এই অহনা wait, wait । তুমি এই ব্যাপারে সরাসরি আদিত্যর সাথে কথা বলতে চাও ? "
অহনা বলে , " হ্যাঁ, আমি কথা বলতে চাই । "
এই কথা শুনে ইভানের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে আসে " সর্বনাশ ! "
অহনা অবাক হয়ে বলে , " সর্বনাশ মানে ? "
অহনার মুখে এই কথাটি শুনে ইভান চমকে ওঠে মনে মনে বলে, " ধুর বাবা, এতো আস্তে বললাম তাও শুনে ফেললো ? উফ্ ! কি তীক্ষ্ন কান । " এই ভেবে একটু চুপ থেকে তারপর বলে, " ঠিক আছে অহনা , আমি আদির সাথে কথা বলে তোমাকে রাতে ফোন
করবো । গুরুগম্ভীর আদিত্য মহারাজের সাথে কথা বলে দেখি ওনার কখন সময়
হয় । "
ইভানের এই কথাটা শুনেই হেসে উঠলো অহনা । অহনাকে হাসতে দেখে ইভান বলে,
" আচ্ছা আজকে চলি অহনা । রাতের দিকে তোমাকে ফোন করে নেবো । ওহ্ ! তুমিতো রাত আটটা পর্যন্ত আদির বাড়িতেই থাকবে তাহলে ওখানেই কথা বলে নেবো , শুধু শুধু ফোন করার কি দরকার । Ok , bye . " এই বলে সে বিদায় নেয় ।
ইভান চলে যেতেই অহনা একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে মিঃ আদিত্য মুখার্জী মানে একজন গুরু গম্ভীর , গোমড়া মুখো মানুষের সাথে কি ভাবে কথা বলবে সেই ভেবে । আসলে অহনা আদিত্যর মুখের অভিব্যক্তির মধ্যে শুধুই রাগ - চিন্তা - বিরক্তি - কষ্ট ইত্যাদি লক্ষ্য করেছে কিন্তু হাসি নামক অভিব্যক্তিটা একেবারেই উধাও , যেন কেউ জোর করে তার গায়ে লেবেল আটকে দিয়েছে,
" রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
হাস্ব না-না না-না । "
এই কথা ভাবতে ভাবতে অহনার নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় " রামগড়ুরের ছানা, হ্যাঁ সত্যিই রামগড়ুরের ছানা " । তখনই হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসে " ম্যাডাম, ম্যায় আমান । " অহনা বলে, " বোলো, ক্যায়া হুয়া ? " আমান বলে , " ম্যাডাম, আয়ুশ বাবাকো স্কুল সে লেনে আয়া তো দ্যেখা কি উসে ত্যেজ বুখার হ্যায় । ম্যায় উসকো সাথে লেকর নার্সিংহোমকে নীচে হু , আপ জলদি আইয়ে । " একথা শোনার সাথে সাথেই অহনা পড়ি কি মরি করে ছুটতে শুরু করে , তাড়াতাড়ি নীচে গিয়েই অন্য একজন শিশুর ডাক্তারের ( Pediatrician ) কাছে নিয়ে যায় আয়ুশকে । পেডিয়াট্রিশিয়ান ডঃ জয়ন্ত রায় তখন আয়ুশের চিকিৎসা শুরু করেন এবং অহনাকে জানায় " ভয়ের কিছু নেই ডঃ সান্যাল , don't worry । অসাধারণ ভালো বাচ্চা এই আয়ুশ , খুবই ধৈর্যশীল যেটা এই বয়সী শিশুদের বিশেষ একটা চোখে
পড়ে না । এই বেবী কে হয় আপনার ? "
ডঃ জয়ন্ত রায়ের প্রশ্নে হঠাৎ করেই অহনা বলে , " আমার ছেলে " । কথাটা শুনে অহনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ডঃ জয়ন্ত রায় তারপর বলে, " আপনি বিবাহিত সেটাতো জানতাম না । " সেইসময় দরজার বাইরে থেকে " Excuse me " কথাটা শুনে অহনা ও ডঃ জয়ন্ত রায় দরজার দিকে তাকায় । অহনা সাথে সাথেই লজ্জায় মাথা নীচু করে নেয় আর ডঃ রায় প্রশ্ন করে , " আপনি কে ? " দরজার বাইরে থেকে উত্তর আসে " আমি আয়ুশের বাবা আদিত্য মুখার্জী " । " ওহ্ ! আসুন আসুন , আপনিই তাহলে ডঃ সান্যালের হাজব্যান্ড ? " এই বলে করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় । ডঃ রায়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আদিত্য করমর্দন করে জিজ্ঞাসা করে , " আয়ুশ এখন কেমন
আছে ? " ডঃ রায় বলে, " ভালো আছে , ভয়ের কিছু নেই । এটা আসলে ভাইরাল জ্বর তাই কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাদের ছেলে একেবারে সুস্থ হয়ে যাবে । " আদিত্য বলে ,
" তাহলে আমরা কি ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি ? " ডঃ রায় বলে , " হ্যাঁ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই । আর যদি কোনো সমস্যা হয় তার জন্য তো বাড়িতে আপনার মিসেস আছেই । " এই কথা শুনে আদিত্য আবারও ডঃ রায়ের সাথে করমর্দন করে আয়ুশকে কোলে তুলে নিয়ে অহনাকে বলে , " Will you go with us
now ? " অহনা মুখ না তুলেই উত্তর দেয়
" হ্যাঁ যাবো " । ডঃ রায়ের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই আদিত্য অহনাকে প্রশ্ন করে , " মিস সান্যাল , একটু আগে আপনি ডঃ রায়কে বললেন আয়ুশ আপনার ছেলে । আপনি কি সত্যিই ......... " আদিত্যর কথা শেষ করতে না করতেই অহনা লজ্জায় থতমত খেয়ে বলে , " মিঃ মুখার্জী আপনি একটু দাঁড়ান, আমি উপর থেকে আমার ব্যাগটা নিয়ে আসি " এই বলেই ছুটে পালালো ।
অহনা পালিয়ে যেতেই আয়ুশ জ্বরের ঘোরেই মাথা তুলে অহনার দিকে হাত বাড়িয়ে " মা " বলে ডেকে উঠে আবার মাথা এলিয়ে দেয় আদিত্যর কাঁধে, আদিত্যও নিজের অজান্তেই একটু মুচকি হাসে । মিনিট দুয়েকের মধ্যেই নিজের ব্যাগ নিয়ে হাজির হয় অহনা তারপর বলে, " চলুন মিঃ মুখার্জী " । বাড়ির পথে যাবার সময় গাড়িতে দুজনে একটাও কথা বলে না কিন্তু কোনো কারণে চোখাচোখি হলেই দুজনেই লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় । আদি বাড়িতে ঢুকে আয়ুশকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আয়ুশের ঘর থেকে বেরিয়ে যায় । আদি চলে গেলে অহনা আয়ুশের পাশে বসে থাকে সময় মতো শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখার
জন্য । ঘন্টা খানেক ঘুমানোর পর আয়ুশ চোখ মেলে তাকায় অহনার দিকে , আয়ুশের জ্বরটা একটু কমেছে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অহনা আয়ুশকে বুকে জড়িয়ে ধরে । সেই সময় বাইরে থেকে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে অহনা পিছন দিকে তাকিয়ে দ্যাখে ইভান দাঁড়িয়ে । অহনা বলে," কিছু বলবেন ইভান বাবু ? " ইভান বলে, " অহনা, তুমি একবার আদির স্টাডি রুমে যাও । সেখানে আদি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে , আমি থাকছি চ্যাম্পের কাছে । " ইভানের কথা শুনে অহনার মুখটা শুকিয়ে যায় দেখে ইভান অহনার কাছে এসে বলে, " ভয় নেই অহনা , আদিকে বাইরে থেকে দেখতে ঐরকম কঠিন মনে হলেও আসলে ও একটা শিশুর মতোই সহজ - সরল । আদি ঠিক একটা নারকেলের মতো , নারকেল বাইরে থেকে যতোটাই শক্ত ভিতরে ঠিক ততোধিক নরম । তুমি নিশ্চিন্তে যাও , একবার আদিকে খুব কাছে থেকে দ্যাখার চেষ্টা করলে তুমি নিজেই বুঝতে পারবে । " ইভানের কাছ থেকে আশ্বস্ত হয়ে অহনা চলে যায় , স্টাডি রুমের সামনে গিয়ে দ্যাখে আদিত্য মন দিয়ে নিজের ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে । অহনা স্টাডি রুমের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিতেই আদি সামান্য মাথা তুলে বললো, " ওহ্ ! মিস সান্যাল , ভিতরে এসে বসুন । আমার আর মাত্র দু - তিন মিনিট লাগবে কাজ শেষ করতে । আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটু বসুন, আমি কাজটা শেষ করে নি । " অহনা বলে, " হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই , আপনি আগে কাজ শেষ করে নিন তারপর কথা বলা যাবে । " আদি একটা আলতো হাসি দিয়ে আবার ল্যাপটপে নিজের কাজে মন দিলো । আদি ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই অহনার মুখ থেকে একটা শুষ্ক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে , মাথা নীচু করে মনে মনে ভাবে, " আমি এটা কি দেখলাম ? মিঃ মুখার্জীকে আমি হাসতে দেখলাম ? না না না, আমি নিশ্চয়ই ভুল দেখেছি । " অহনাকে মাথা নীচু করে থাকতে দেখে আদি বলে ,
" কি হোলো মিস সান্যাল , আমার মুখে হাসি দেখে খুব অবাক লাগছে তাই না ? " আদির কথায় হকচকিয়ে যায় অহনা , আবারও মাথা নীচু করে থাকে সে । মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নিজের কাজ শেষ করে আদি অহনাকে বলে, " এবার বলুন মিস সান্যাল আপনার কি কথা আছে আমার সাথে । " অহনা অবাক হয়ে আদিত্যর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবে, " কি কথা আছে মানে ! উনি কি কিছুই জানেন না ? ইভান বাবু কি কিছুই বলেননি ? " অহনাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদি বলে, " ওহ্ ! Sorry , ইভান আমাকে সব বলেছে । আপনার মনের মধ্যে থাকা প্রশ্নগুলোও আমি বোধহয় খানিকটা আঁচ করতে পারছি মিস সান্যাল । তবুও আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি আপনি নির্ভয়ে আপনার মনের সব কথা, সব প্রশ্ন নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন । তবে একটা কথা আমি আগেই আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই আমার স্ত্রী হিসেবে আপনাকে সারাজীবন পাশে পেলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো । অহনা তুমি এই কয়েকদিনের মধ্যেই আমার মনের অনেকখানি জায়গা দখল করে নিয়েছো আমার আয়ুশকে মাতৃস্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে । " আদির কথা শেষ না হতেই অহনা চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় আর আদিও অহনার এই আকস্মিক লাফ দিয়ে উঠে পড়াতে ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
" কি হোলো অহনা , আমি কি অন্যায় কিছু বলে ফেললাম ? Sorry Sorry তোমার , না মানে আপনার খারাপ লেগে........ " । অহনা আদির কথার মাঝেই বলে ওঠে, " না না মিঃ মুখার্জী , আসলে আপনি নিজে থেকেই এই কথাগুলো বলবেন সেটা.......... " তারপর একটু চুপ থেকে আবার বলে, " আ.... আ..... আমি এখন আসি " বলে ছুটে পালাতে যেতেই আদি বলে ওঠে , " ইভানের প্রস্তাবে আমি রাজি শুধু আপনার সিদ্ধান্তটা জানা বাকী রয়ে গেল । "
আদির কথার কোনো উওর না দিয়ে অহনা দৌড়ে পালিয়ে চলে গেল আয়ুশের ঘরে । আয়ুশের পাশে শুয়ে গল্প করছিল ইভান, তখন ঘরের ভিতর আচমকা অহনাকে ছুটে ঢুকতে দেখে ধড়মড়িয়ে উঠে বসে বলে, " কি হোলো অহনা ? ওমা ! তোমার মুখটা পুরো লাল হয়ে আছে কেন ? হুমমমম.......... অহনা তোমার মুখমণ্ডলের এই রক্তিম আভা তো ভয়ের নয় , লজ্জার । " ইভানের কথায় আরও লজ্জা পেয়ে অহনা বলে, " কি যাতা বলছেন ? লজ্জায় লাল কেনো হবে ? "
ইভান বলে , " আলবৎ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে , আরে অহনা ম্যাডাম মেয়েদের কিছু কিছু অভিব্যক্তি আমিও বুঝতে পারি । "
অহনা মজা করে বলে, " তা কতো মেয়ের সাথে মিশেছেন আপনি যে মেয়েদের মুখের ভাষা পড়তে পারেন এতো সহজেই । " অহনার এই কথায় ইভান আমতা আমতা করে বলে, " সেই কপাল এখনো হয় নি ম্যাডাম , আজও একটাও প্রেম করতে পারলাম না তো আবার মেয়েদের সাথে মেলামেশা । ধুর ! বাদ দাও সব বাজে কথা, এবার বলো আদির সাথে কি কথা হোলো । "
এবার অহনা আবার লজ্জায় মাথা নীচু করতেই ইভান বললো, " হুমমমম.......... বুঝতে পেরেছি , তা এবার লজ্জাটা বিয়ের পরের জন্য তুলে রেখে কি হোলো খুলে বলো দেখি । তারপর যা করার তাতো আমাকেই করতে হবে, মানে বিয়ের তোড়জোড় থেকে শুরু করে তোমাদের মধুযামিনীর আয়োজন পর্যন্ত সবটাই তো আমার দায়িত্ব । বলো বলো, আর লজ্জা পেয়ে লাভ নেই । " ইভানের কথায় হেসে ফেললো অহনা তারপর সব কথা খুলে বললো , সব শুনে ইভান বললো, " তা আদির শেষ কথার উত্তরটা কি দিলে ? আদির তো এই বিয়েতে পুরোপুরি মত আছে , in fact ওযে তোমাকে খুব পছন্দ করে সেটাও নিজেই বলে দিয়েছে তোমাকে । তোমার মতটা কি জানিয়েছো তুমি ? মানে তুমি কি নিজে এই বিয়েতে রাজি ? " অহনা বলে, " না , আমি মিঃ মুখার্জীর সামনে কিছু বলতে পারি নি ঠিকই কিন্তু এই বিয়েতে আমি রাজি । মিঃ মুখার্জীর মতো মানুষের স্ত্রী হওয়া তো আমার সৌভাগ্য আর আয়ুশকে আমি আমার সন্তানের মতোই ভালোবাসি তাই আমার কোনো আপত্তি নেই । " অহনার সাথে কথা বলতে বলতে ইভান হঠাৎ খেয়াল করে ঘরের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে একটা ছায়ামূর্তি , ইভানের বুঝতে অসুবিধা হয় না ওটা আদি । আদি জানে অহনা ইভানের সাথে খুব সহজেই সব কথা আলোচনা করতে পারে তাই সে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে জানতে চাইছে অহনার মনের গোপন কথা ।
অহনার এই বিয়েতে মত আছে শুনে ইভান এবার এমন কিছু প্রশ্ন করে বসে যেটার জন্য অহনা এবং দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা আদি কেউই প্রস্তুত ছিল না । ইভান বলে , " আচ্ছা অহনা , ধরো বিয়ের পর তোমাদের নতুন বিবাহিত জীবনের বাগিচায় অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে আয়ুশের জন্য বিভিন্ন বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে , তখন তুমি কি করবে ? "
ইভানের কথার ইঙ্গিত আঁচ করতে পেরেও অহনা বলে , " আমি ঠিক বুঝলাম আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন , Please
clarify " । ইভান এবার সহজ ভাষায় বলে , " দ্যাখো বিয়ের পর প্রত্যেকটি মেয়েরই স্বামী নিয়ে, সংসার নিয়ে অনেক আশা থাকে, সাধ থাকে । এই ধরো দুজনে একা সময় কাটানো, বেড়াতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়া এইরকম আরও অনেক কিছু । এইসব ক্ষেত্রে ধরো তোমার ইচ্ছে থাকলেও আয়ুশের জন্য তোমার ইচ্ছায় বাঁধা পড়ছে, তুমি নিজের মতো করে একা সময় কাটাতে পারছো না আদির সাথে তখন তুমি কি করবে ? আয়ুশের উপর রাগ করবে ? " ইভানের কথা শুনে অহনা রীতিমতো বিরক্তির সুরে বলে, " একি বলছেন ইভান বাবু ? আয়ুশ আমার সন্তান , আমি যেমন আদিত্য বাবুর হবু স্ত্রী সেরকমই আয়ুশের হবু মা । আমার কাছে আমার সবটুকু আনন্দ - উল্লাস সবটাই আয়ুশকে ঘিরে । আর আমি যদি শুধু নিজের সুখ - সাধের কথাই ভাবতাম তাহলে কখনোই এই বিয়েতে রাজিই হতাম না ইভান বাবু । " ইভান বুঝতে পারে অহনা সত্যিই আয়ুশের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস । অহনা রেগে গেছে দেখে " I'm extremely sorry Ahana " বলে ক্ষমা চায় ইভান তারপরেই আবার আরেকটা প্রশ্ন করে বসে । ইভান বলে ,
" অহনা তুমি তো বিয়ে করতে চলেছো, খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রকৃতির নিয়মে তুমি হয়তো নিজের গর্ভজাত সন্তানের জন্ম দেবে তখন কি আয়ুশকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসবে ? " ইভানের এবারের প্রশ্ন শুনে চেয়ার ছেড়ে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ায় অহনা তারপর বলে , " ইভান বাবু, যেই সব মা প্রথম সন্তানের জন্মের পর আবার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন তাদের কাছে কি তার প্রথম সন্তান অবহেলার পাত্র হয় ? তাহলে আপনি ভাবলেন কি করে আমি আমার প্রথম সন্তানকে অবহেলা করবো । আর হ্যাঁ, এটা আমি মিঃ মুখার্জীর উপর ছেড়ে দিতে চাই, উনি না চাইলে আমি গর্ভধারণ করবো না । " দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আদি ও ইভান উভয়েই অহনার এই কথায় কেঁপে ওঠে ।
অহনার কথা শুনে দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে আদি তারপর মুগ্ধ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে অহনার মুখের দিকে । প্রায় মিনিট খানেক সব চুপচাপ , কারো মুখের থেকেই কোনো কথা বেরোচ্ছে না ।
********* To Be Continued

