STORYMIRROR

Sharmistha Mukherjee

Romance Others

4  

Sharmistha Mukherjee

Romance Others

অবিস্মরণীয় ভালোবাসা❤ পর্ব ৫

অবিস্মরণীয় ভালোবাসা❤ পর্ব ৫

8 mins
380

মিনিট খানেক চুপ করেই ইভান আবার বলে, " আচ্ছা আদি, একটা কথা বলবো ? " আদি বলে ," তুই এতোক্ষণ চুপ করেছিলি ? বল কি বলবি ? " ইভান একটু ঢোঁক গিলে আমতা আমতা করে বলে, " আয়ুশতো মিস সান্যালকে ভীষণ ভালোবাসে আর মিস সান্যালও আয়ুশকে খুব ভালোবাসে তাই বলছিলাম, মিস সান্যালকে একবার বিয়ের প্রস্তাব দিলে কেমন হয় ? " ইভানের কথা শুনে আদি চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে বলে, " তুই কি ক্ষেপেছিস ইভান ? তুই কি বলছিস জানিস ? এই বেরো এখান থেকে, বাড়ি যা আর নয়তো আয়ুশের কাছে যা । আমার অনেক কাজ আছে এখন , যতোসব পাগলের প্রলাপ । " ইভান বুঝতে পারে আদি রেগে গেছে তাই আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা চলে যায় আয়ুশের ঘরে । 


ইভান আয়ুশের ঘরে চলে যাবার পর আদি ল্যাপটপে নিজের কিছু অফিসিয়াল কাজ নিয়ে বসে কিন্তু কাজের সময় যতো বাঁধার সৃষ্টি করে ইভানের বলা কথাগুলো । " কেনো ঘুরে ফিরে শুধু ইভানের কথাগুলোই বারবার মনে পড়ছে । ওর যতোসব পাগলের প্রলাপ শুনতে শুনতে আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যাবে, উফ্ ! " এই বলে মাথার দুপাশে হাত দিয়ে ধরে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কিছুটা জোর করেই নিজের কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করে আদি । অন্যদিকে আয়ুশের ঘরে বসে ইভান মনে মনে ফন্দি আটতে থাকে কিভাবে আদি আর মিস অহনাকে এক ফ্রেমে চিরদিনের মতো বন্দী করা যায় । এভাবে অহনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা নিয়ে আদি আর ইভানের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি লাগতে থাকে তারপর একদিন এইসব ঝামেলা সহ্য করতে না পেরে ইভান ইচ্ছাকৃতভাবে আদিকে কিছুটা আঘাত করেই বলে, " আদি তুই আসলে একজন খুব ভীতু টাইপের মানুষ, ওপর ওপর শুধু সাহসী হওয়ার ভান করিস । তুই শুধু নিজের কথা ভাবছিস যাতে তোর হৃদয়ে - মনে কোনো আঘাত না লাগে কিন্তু একবারও আয়ুশের কথা ভাবছিস না । এতো স্বার্থপর তুই এটা আমার জানা ছিল না আদি । " এসব কথা শুনে আদি চীৎকার করে বলে ওঠে, " এইসব কি বলছিস ইভান ? R u alright ? তুই এতো বছর ধরে আমাকে এই চিনলি , আমি ভীতু ? আমি স্বার্থপর ? আয়ুশের জন্য আমি সব করতে পারি সেটা তোর অজানা নয়, আর তুই বলছিস আমি আয়ুশের কথা ভাবি না ? তুই এইসব কথাগুলো মন থেকে বলিস নি তা আমি জানি তাই তোর ওপর রাগ হচ্ছে না আমার । যাইহোক তুই অহনা আর আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর জন্য পরিকল্পনা করে এতো সব বাজে কথা বলে আমার আর নিজের সময় নষ্ট না করলেই পারতি । " আদির কথা শুনে বোকার মতো খিলখিল করে হেসে ওঠে ইভান । ইভানকে হাসতে দেখে আদি বিরক্ত হয়ে বলে, " বোকার মতো হাসছিস কেনো ? একটু সিরিয়াসলি ভাব তুই যে আমাকে বলছিস অহনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে , আচ্ছা তুই বলতো একটা সুন্দরী - যুবতী ডাক্তার আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে কেনো ? তার উপর আবার আমার ছেলে আছে তা জেনে সে কি নিজের পায়ে কুড়ুল মারবে ? স্বামী নিয়ে, সংসার নিয়ে, সুখী বৈবাহিক জীবন নিয়ে মিস সান্যালেরও নিশ্চয়ই অনেক আশা - আকাঙ্ক্ষা আছে যেমনটা প্রত্যেক মেয়ের থাকে । আমি বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে আমাকে তো ফিরিয়ে দেবেই, মাঝখান থেকে আয়ুশটা আবার একলা হয়ে যাবে । না না আমি জেনে বুঝে এই ভুল কিছুতেই করবো না । " ইভান চুপ করে সব শোনার পর বলে, " তুই কি বলতে চাইছিস আমি তা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি আদি । ঠিক আছে তোকে কিছু করতে হবে না যা করার আমি করবো । " আদি বলে, " এই তুই কি করবি ? দ্যাখ ইভান কোনো ভুলভ্রান্তি ঘটলে কিন্তু তার এফেক্ট আয়ুশের উপরেও পড়বে তাই দয়া করে কিছু করার চেষ্টাও করিস না ভাই । " ইভান বলে, " Ok OK don't worry . আমি কিছু করবো না ঠিক আছে ? " এই বলে প্রনামের ভঙ্গিতে দুই হাত মাথার উপরে তোলে আর আদিও ভয় দেখানোর ভঙ্গিতে তর্জনী তুলে সাবধান করে ইভানকে । 


মাস খানেক পর একদিন ইভান অহনার নার্সিংহোমে গিয়ে অহনাকে বলে, " মিস সান্যাল , আপনার সাথে একটা কথা ছিল । " অহনা বলে, " হ্যাঁ বলুন না কি বলবেন । " ইভান একটু আমতা আমতা করে বলে, " না মানে, মানে আমি বলতে চাইছিলাম , ঠিক কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না মিস সান্যাল । " অহনা বলে, " আরে ইভান বাবু এতো দ্বিধা করার কি আছে ! কি বলবেন নিশ্চিন্তে বলতে পারেন । " ইভান একটু হেসে বলে, " অভয় দিচ্ছেন যখন তাহলে কথাটা বলেই ফেলি । কিন্তু দয়া করে আপনি রাগ করবেন না । " অহনা বলে, " ওমা! শুধু শুধু রাগ করতে যাবো কেনো ? আপনি বলুন । " ইভান বেশ লম্বা একটা নিঃশ্বাস বাতাসের গায়ে ছুঁড়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো । " মিস সান্যাল, আমি আজকে আপনাকে যা বলবো সেই কথাগুলো যেন আদি ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে । ও জানতে পারলে আমাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেবে । এই কথাগুলো শুধু আপনার আর আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে । " অহনা একটু মুচকি হেসে বলে, " আচ্ছা, আমি কথা দিলাম কেউ কিছু জানতে পারবে না । " 

অহনার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ইভান বলে , " আপনার মনে আছে মিস সান্যাল আপনি একদিন আদিকে বিয়ে করার কথা 

বলেছিলেন । আপনি বলেছিলেন আয়ুশের মায়ের ভালোবাসার খুব প্রয়োজন তাহলে ও অনেকটাই ভালো হতে পারবে । " অহনা বলে , " হ্যাঁ, হ্যাঁ আমার সব মনে আছে । আচ্ছা তাহলে কি মিঃ মুখার্জী বিয়ে করতে রাজি হয়েছে ? মেয়ে নিশ্চয়ই ঠিক করে ফেলেছেন , আয়ুশকে দেখেছেন তিনি ? আয়ুশের প্রতিক্রিয়া কিরকম ছিল ? " অহনাকে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়তে দেখে ইভান বলে, " হ্যাঁ, আদি আর আয়ুশের জন্য একদম পারফেক্ট একটা মেয়ে আমি দেখেছি যদিও আদিকে সেটা জানাই নি । আসলে ঐ মেয়েটির সাথে আদিকে বিয়ে করার ব্যাপারে বলতে ঠিক সাহস হচ্ছে না । আদির একটা ছেলে আছে জেনেও কি মেয়েটা রাজি হবে ? কি প্রতিক্রিয়া হবে মেয়েটির সেটা ভেবেই বলতে ভয় করছে । আচ্ছা মিস সান্যাল আমি যদি মেয়েটাকে বলি, আয়ুশকে নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নিয়ে আদিকে বিয়ে করতে তাহলে মেয়েটির প্রতিক্রিয়া ঠিক কিরকম হতে পারে ? আপনার কি মনে হয় ? " 

ইভানের কথা শুনে অহনা সাবলীলভাবে উত্তর দেয়, " আমার মতে মিঃ মুখার্জীর উচিত পুরানো সব ঘটনা মেয়েটিকে বিস্তারিত জানানো । আয়ুশ যে ওনার নিজের সন্তান না হয়েও নিজের সন্তানের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওনার কাছে সেটা প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে হবে । তারপর দেখতে হবে মেয়েটির প্রতিক্রিয়া কি হয় । যদি মেয়েটি দয়া না দেখিয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং কর্ত্যবকে বেছে নেয় তাহলে মেয়েটি একেবারে খাঁটি । " অহনা একটু থামতেই ইভান হঠাৎ করেই বলে, " আচ্ছা মিস সান্যাল আপনি হলে কি করতেন ? মানে আপনাকে যদি আমি আদিকে বিয়ে করার এবং আয়ুশের মা হবার প্রস্তাব দেই ? আসলে আয়ুশ আপনাকে খুবই ভালোবাসে তাই আর কি অন্য কোনো পাত্রীর কথা মাথায় আসে নি আমার । আপনাকে এই কথা বলেছি শুনলে হয়তো আদি আমাকে আস্ত রাখবে না তবুও আমি না বলে পারলাম না । I'm really sorry . " এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো থামলো ইভান । আচমকা ইভানের এইরূপ প্রস্তাব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল অহনা । কি বলবে ? কি বলা উচিত ? কিছুই ভেবে পায় না সে । অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ থাকার পর ইভান নিজেই নিস্তব্ধতা ভেঙে একটু গলাটা ঝেড়ে নিয়ে বলে, " জানি আপনাকে খুবই বিব্রত করলাম তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি মিস সান্যাল । Please don't mind , আসলে আমি কিছু না ভেবেই আপনাকে কথাগুলো বলে ফেললাম । দয়া করে রাগ করবেন না । আচ্ছা আমি আসি আজকে । আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তো আয়ুশ চলে আসবে আপনার কাছে । " এই বলে ইভান বেরিয়ে যায় নার্সিংহোম থেকে । ইভান চলে যাওয়ার মিনিট পনেরো পরেই আয়ুশ চলে আসে । আয়ুশ ও অন্যান্য বাচ্চাদের নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে অহনা তাই ইভানের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবার সময় থাকে না তার । নার্সিংহোম থেকে আয়ুশের বাড়িতে যাবার পথে ইভানের বলা কথাগুলো আবার মাথায় ঘুরতে শুরু করে অহনার । বাড়িতে গিয়ে আয়ুশকে খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়ানোর সময় খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবতে শুরু করে ইভানের বলা কথাগুলো । ভাবতে ভাবতে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে , " অন্য মেয়ের ব্যাপারে বলার সময় আমি নিজেই বললাম যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং কর্তব্যকে বেছে নেওয়ার কথা কিন্তু এই একই প্রসঙ্গ নিজের ক্ষেত্রে আসায় এতো ভাবনা আসছে কেনো মাথায় ? আমি যতোটুকু দেখেছি মিঃ মুখার্জী মানুষ হিসেবে যথেষ্ট ভালো তবুও মাত্র কিছুদিনের চেনায় তাকে জীবনসঙ্গী রূপে বেছে নেওয়া কি ঠিক হবে ? আর মিঃ মুখার্জীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছেন ইভান বাবু কিন্তু এই ব্যাপারে মিঃ মুখার্জীর মতামত কি ? আর মা , মা কি এরকম একটা বিয়ের জন্য রাজি হবে ? উফ্ ! আর ভাবতে পারছি না । কালকেই আমি একবার ইভান বাবুর সাথে খোলাখুলি আলোচনা করবো এই ব্যাপারে । " এতো সব ভাবনার মাঝে অহনা খেয়ালই করে নি কখন যেন আয়ুশের ঘুম ভেঙে গেছে । আয়ুশ চুপচাপ শুয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অহনার মুখের দিকে । অহনা আয়ুশের দিকে তাকিয়ে বলে, " কি ব্যাপার little boy , ঘুম হয়ে গেল ? " অহনার প্রশ্ন শুনে আয়ুশ উঠে বসে একগাল হেসেই অহনার গলা জড়িয়ে ধরলো আর অহনাও পরম মাতৃস্নেহে আয়ুশের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, " কি হয়েছে little boy , কিছু বলবে ? " এই কথা শুনে আয়ুশ এক লাফে বিছানা থেকে নেমে চলে যায় পড়ার টেবিলের দিকে তারপর স্কুলের ব্যাগের থেকে ইংলিশ ছবির বই বের করে নিয়ে নির্দিষ্ট একটা পৃষ্ঠা খুলে ধরে অহনার সামনে । অহনা আয়ুশের বইটির খোলা পৃষ্ঠার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় , সেই পৃষ্ঠায় মায়ের ছবি এঁকে লেখা " Mother " । অহনা বলে, " এটা তো Mother । Mother মানে মা । " অহনার কথা শুনে আয়ুশ খুব দ্রুত উপর - নীচে মাথা নাড়িয়েই অহনার গলা জড়িয়ে ধরে । অহনা আবার বলে , " কি হোলো little boy ? মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে ? " এই কথা শুনে আয়ুশের মুখটা একদম শুকিয়ে যায় । অহনা বুঝতে পারে সত্যিই আয়ুশের মায়ের আদর - যত্ন - ভালোবাসার খুবই প্রয়োজন । অহনার খুব খারাপ লাগে কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সেদিনের মতো সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে যায় । সেদিন বাড়িতে গিয়ে আয়ুশের মায়ের প্রয়োজনীয়তার কথা আর ইভানের প্রস্তাবের কথা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে করতে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সে । 


পরের দিন নার্সিংহোম যাওয়ার পথে ইভানকে ফোন করে দেখা করতে বলে অহনা । সেদিন অহনার আউটডোর ছিল না তাই নার্সিংহোমের ক্যান্টিনেই ইভানের সাথে আলোচনায় বসে সে ।


  

 ********* To Be Continued


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance