অবিস্মরণীয় ভালোবাসা ❤ পর্ব ২
অবিস্মরণীয় ভালোবাসা ❤ পর্ব ২
আদিত্য বাড়িতে ঢুকেই দ্যাখে বসার ঘরের মেঝেতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আছে খাবার , কাগজপত্র , খেলনা ইত্যাদি । চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে আচমকা " এটা কি ? " বলে চীৎকার করে ওঠে আদিত্য , ডান হাতের তর্জনী নির্দেশ করছে টিভির দিকে । সেক্রেটারি মিঃ ঘোষাল বলে, " স্যার, আয়ুশ জলভরা বোতল ....... * , মিঃ ঘোষালের কথা শেষ না হতেই সোফার উপর ধপ্ করে বসে পড়ে আদিত্য । এদিকে আয়ুশ বুঝতে পারে যে সে সত্যিই এবার খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছে তাই আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে বাবার পাশে এসে দাঁড়ায় । আয়ুশের হাতে ছোটো ছোটো অনেকগুলো কাগজের টুকরো , তাতে লেখা, " Papa I'm sorry. I made a big mistake, I promise , I will never do it again. " আদিত্য কোনো কথা না বলে আয়ুশকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে , " It's ok sona . আমি একদম রাগ করিনি তবে একটু ভয় পেয়ছি, যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো সেই ভেবে । " বাবাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য আয়ুশ আবার কাঁধে আড়াআড়ি ভাবে ঝোলানো ছোটো ব্যাগ থেকে কয়েকটা কাগজের টুকরো বের করে বাবার হাতে দেয় , তাতে লেখা, " আমার সোনা পাপা । I Love You Papa . " তারপরেই বাবার গলা জড়িয়ে ধরে । এই ধরনের ঘটনা নতুন নয় আদিত্য ও তার সেক্রেটারি মিঃ ঘোষালের কাছে । কোনো কারণে আয়ুশ খুব রেগে গেলে এই ধরনের ঘটনাই ঘটায় এই বারও তার কোনো ব্যতিক্রম নেই । সব জেনেও ছেলের ওপর রাগ করতে পারে না আদিত্য কারণ আয়ুশ পড়াশোনা - খেলাধুলা এমনকি কম্পিউটার সব দিক থেকে দূর্দান্ত স্মার্ট কিন্তু একটাই সমস্যা PTSD ( পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার ) এর কারণে কথা বলতে পারে
না । পাঁচ বছর আগে সচক্ষে দেখা একটি মর্মান্তিক ঘটনার প্রভাবে ট্রমাটিক হয়ে কথা বলার ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলে আয়ুশ । তবে হয়তো কোনোদিন , হয়তো কোনো বিশেষ কারণের বশবর্তী হয়ে আবার কথা বলার ইচ্ছাশক্তি ফিরে আসতে পারে তবে অবশ্য তা সময় সাপেক্ষ । আদিত্যর পরিবারের এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার জন্য আদিত্য এবং আয়ুশ দুজনেই ভিন্নভাবে PTSD -এর শিকার । আদিত্যর ক্ষেত্রে এটি প্রত্যেকদিন রাতের ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন যার ফলে insomnia অর্থাৎ অনিদ্রাজনিত রোগের শিকার সে ।
আয়ুশ কথা বলতে না পারার জন্য আদিত্য সবসময় খুব চিন্তায় থাকতো । ইতিমধ্যে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে সে আয়ুশকে । বেশ কিছু স্পিচ থেরাপিস্ট আবার বেশ কিছু সাইক্রিয়াটিস্ট , কিন্তু কোনো লাভ হয় নি । আর আয়ুশের আরেকটা বড়ো সমস্যাও ছিল , সে সহজে কারো সাথে মিশতে পারতো না । সর্বদা নিজের মতো থাকতো এমনকি কিন্ডারগার্টেনেও কারো সাথে কোনো রকম বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ গড়ে ওঠে নি । সেই কারণে আয়ুশকে সবাই বুঝতে পারতো না, ওর সমস্যাগুলো কেউই অনুভব করতে পারতো না । আয়ুশের সামনে কেউ এলে বা তাকে কেউ ধরতে এলেই সে ভয়ে তারস্বরে চীৎকার করতে শুরু করে । সেই কারণেই একজন সাইক্রিয়াটিস্ট আদিত্যকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আয়ুশকে অনেক বেশি সংখ্যক লোকের সাথে মিশতে শেখাতে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আয়ুশ কারো কাছে যেতেই নারাজ ।
এক রবিবারের বিকালে আদিত্য আয়ুশকে নিয়ে নিজের শপিং কমপ্লেক্সে যায়, আসলে ওখানে সকলেই আয়ুশকে খুব ভালোবাসে যদিও সে কারো কাছেই যায় না । কসমেটিকস শপের একটি মেয়ে আয়ুশকে অনেকবার গাল টিপে আদর করতে থাকলে সে বিরক্ত হয়ে ভীষণভাবে রেগে যায়, তারপর একটা চীৎকার দিয়ে ছুটতে শুরু করে । তখন সামনে আদিত্য ও মিঃ ঘোষাল কেউই ছিল না , আসলে কিছুটা ইচ্ছে করেই আদিত্য আয়ুশের সামনে থেকে চলে গিয়েছিল যাতে সে কারো সাথে একটু মিশতে পারে । কিন্তু ফল হোলো উল্টো । আয়ুশ ছুটতে শুরু করলে কর্মরতা আরো দুটি মেয়ে তাকে ধরার জন্য পিছনে ছুটতে থাকে । এদিকে আয়ুশ ছুটতে ছুটতে হঠাৎ করে পড়ে গিয়ে কাঁদতে শুরু করতেই একটি মেয়ে ছুটে এসে আয়ুশকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে । মেয়েটি আয়ুশকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
" কোথায় লেগেছে আমাকে বলো , আচ্ছা আর কাঁদে না । তুমি কার সাথে এসেছো ? তুমি একা কেনো ? " আয়ুশ কিছুতেই শান্ত না হওয়ায় মেয়েটি আয়ুশের হাতে সুন্দর মখমলের কারুকার্য করা রুমালের উপর একটি রাবারের খেলনা হাঁস দিয়ে বলে " এটা তোমার মা ঠিক আছে । " আর আরও একটি ছোট্ট হাঁস বড়ো হাঁসটার পিঠের উপর রেখে বলে , " এইটা তুমি । কি পছন্দ হয়েছে ? " একথা শুনেই আয়ুশ হঠাৎ করে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে তারপর কাঁধে আড়াআড়ি ভাবে রাখা ব্যাগ থেকে কিছু কাগজের টুকরো বের করে তুলে ধরে মেয়েটির সামনে । তার একটিতে লেখা , " Thank You " সেটা দেখে মেয়েটি বলে , " Wellcome baby . কিন্তু তুমি এখানে কার সাথে এসেছো ? " একথা শুনে আয়ুশ আরেকটি কাগজের টুকরো তুলে ধরে মেয়েটির সামনে, তাতে লেখা " Papa " ।
আয়ুশ বাবার কথা বলতেই আদিত্যর সেক্রেটারি মিঃ ঘোষাল সেখানে এসে আয়ুশকে বলে , " আয়ুশ চলো আমার সাথে, বাবা ঐদিকে দাঁড়িয়ে আছে । " এই বলে মিঃ ঘোষাল আয়ুশের হাত ধরতেই আয়ুশ হাত ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে । এদিকে ওদেরকে ঘিরে রীতিমতো কিছুটা ভীড় জমে উঠেছে । মিঃ ঘোষালকে দেখে আয়ুশ মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলে মেয়েটি মিঃ ঘোষালকে বলে, " আপনি কি ওর বাবা ? " মিঃ ঘোষাল উত্তর দেয়, " ও আয়ুশ । ওর বাবা এই শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আর আমি ওনার সেক্রেটারী । " একথা শুনে মেয়েটি আয়ুশকে বলে, " তুমি এনাকে চেনো ? উনি কি তোমার বাবার সেক্রেটারী ? তুমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বা না জানাও , আমি জানি তুমি কথা বলতে চাইছো না । উনি কি তোমার বাবার সেক্রেটারী ? " মেয়েটির কথা শুনে আয়ুশ উপর - নীচে মাথা নাড়িয়ে " হ্যাঁ " জানালো । তখন মেয়েটি আয়ুশকে আদর করে মিঃ ঘোষালের হাতে তুলে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায় । মিঃ ঘোষাল আয়ুশকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটে যায় আদিত্যর কাছে । আদিত্য দুচিন্তায় একটু রেগে গিয়ে আয়ুশ কোথায় ছিল , এতোক্ষণ কি করছিলে এসব জিজ্ঞাসা করতেই মিঃ ঘোষাল মেয়েটি এবং আয়ুশের সব কথা বিস্তারিত জানালো আদিত্যকে । আদিত্য সব শুনে অবাক হয়ে মিঃ ঘোষালকে বললো , " কি বলছো ঘোষাল , আয়ুশ ঐ মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে ? আয়ুশ তো কারো কাছে যায় না এমনকি কাউকে কাছেও আসতে দেয় না তবে আজকে এই রকম একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটলো কিভাবে ! " তারপর আয়ুশকে কোলে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো , " সোনা, তুমি কি ঐ আন্টিকে আগে থেকেই চেনো ? " বাবার প্রশ্ন শুনে আয়ুশ দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না করে । আদিত্য আর কোনো কথা না বাড়িয়ে আয়ুশকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় ।
অন্যদিকে রাজেশ অর্থাৎ আয়ুশকে যে দেখাশোনা করে সে আর কাজ করবে না জানিয়ে দেওয়ায় আদিত্য মিঃ ঘোষালকে একজন গভর্নেস নিয়োগ করার জন্য বিজ্ঞাপন দিতে বলেছিল । তার জন্য আদিত্যর বাড়িতে কয়েকদিন ধরে ইন্টারভিউ চলছে কিন্তু আয়ুশ কাউকে সামনে আসতেই দেয় না , উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে । এভাবে তিন দিন প্রায় ত্রিশ জন ইন্টারভিউ দেয় কিন্তু আয়ুশের জন্য কাউকে রাখা সম্ভব হয় না । এই নিয়ে আদিত্য খুব চিন্তায় পড়ে যায় আর আরও বড়ো সমস্যা হোলো আয়ুশের সব কিছু তাকেই করতে হয় তাই অফিসে যাওয়ার সময় হচ্ছে না । যতোটা সম্ভব সব অফিসিয়াল কাজ বাড়িতে থেকেই করতে হচ্ছে ফলে মিঃ ঘোষালেরও দম ফেলার সময় নেই তার উপর গভর্নেস নিয়োগ করার গুরুদায়িত্ব তারই কাঁধে । একেবারে দম ফেলার সময় নেই মিঃ ঘোষালের । বাড়িতে আদিত্যর স্টাডি রুমের টেবিলের উপর অনেকগুলো বায়োডাটা পড়েছিল যেগুলো আদিত্য নিজে বসে খুঁটিয়ে দেখছে এবং পছন্দসই প্রার্থীকে বেছে রাখছে পরের দিনের ইন্টারভিউর জন্য ।হঠাৎ কলিংবেলের ক্রমাগত শব্দ শুনে আদিত্য বুঝতে পারে ইভান এসেছে ।
ইভান আদিত্যর এক মাত্র বন্ধু , প্রায় কুড়ি বছরের বন্ধুত্ব ওদের । তেরো বছর বয়সে ইভানের বাবা বদলি হয়ে আসে দার্জিলিংয়ে । ইভান অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয় দার্জিলিংয়ের সেন্ট পলস স্কুলে । সেখানেই পরিচয় হয় আদিত্যর সাথে আর সেই থেকে বন্ধুত্ব শুরু । আদিত্যর জীবনে এই একজনই মাত্র আছে যাকে সে মনের সব ধরনের কথা নির্দিধায় খুলে বলতে পারে । অন্যদিকে আয়ুশের সাথেও ইভানের দারুণ বন্ধুত্ব , আয়ুশ তো ইভানকে " ছোটো পাপা " বলে ডাকে । যদিও মুখে বলতে পারে না তবে ইভান নিজেই ওকে ছোটো পাপা বলে ডাকতে বলেছে । ইভানের বিশ্বাস একদিন আয়ুশ ঠিক কথা বলতে পারবে আর সেদিন " ছোটো পাপা " বলে ডাকবে ।
আয়ুশ এই দুজন মানুষকেই ভীষণ পছন্দ করে এছাড়া আর কারো সাথেই তার বনিবনা হয় না । ইভান রোজই আসে আদিত্যর বাড়িতে , রাতে একসাথে ডিনার করে । কোনও দিন নিজের বাড়িতে ফিরে যায় আবার কোনো কোনো দিন থেকে যায় আয়ুশের সাথে । সেদিন রাতে আদিত্য স্টাডি রুমে বসে সব বায়োডাটা গুলো পুনরায় দেখছিল ঠিক সেই সময় সেখানে ইভান আয়ুশকে কোলে করে নিয়ে এসে বসে বলে , " কিরে আদি এতো মন দিয়ে কি দেখছিস রে ? " আদিত্য বলে, " আর বলিস না এই ছেলের জন্য গভর্নেস খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাচ্ছি কিন্তু ওর কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না । আর ওর জন্য আমিও অফিস যেতে পারছি না । আয়ুশ যে কবে স্বাভাবিক ভাবে সবার সাথে মিশতে শিখবে জানি না আর কবেই বা কথা বলবে । অনেক তো চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না । " আদিত্যর কথাগুলো এতোক্ষণ গোল গোল চোখ করে শুনছিল আয়ুশ তারপর হঠাৎ আদিত্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল । আদিত্য বললো , " কি দেবো ? কি চাই ? " আয়ুশ হাত দিয়ে ইশারা করে বায়োডাটাগুলো দেখতে চাইলো সেটা দেখে আদিত্য আর ইভান দুজনেই হেসে উঠলো । আদিত্য বললো , " ওরে পাকা বুড়ো ! এইগুলোউ তো তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না । কি করবে দেখে ? " আয়ুশ তখন বিরক্ত হয়ে মুখটা গোমড়া করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো , তাই দেখে ইভান বললো , " ঠিক আছে ও যখন চাইছে তখন দে । তারপর দেখি ও কি করে । " ইভানের কথা শুনে আদিত্য সব বায়োডাটাগুলো আয়ুশের সামনে রেখে বললো , " সোনা সবগুলো মিশিয়ে ফেলো না কিন্তু , যেগুলো আমার ভালো লাগে নি সেগুলো পড়ে ফেলে দেবো । " উপর-নীচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ করে আয়ুশ । ইভান আর আদিত্য অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে । আদিত্য ইভানকে বলে, " এই মেয়েটার বায়োডাটা আমি বাতিল করেছি । আসলে এতো কম বয়সী মেয়ে কি পারবে আয়ুশকে দেখাশোনা করতে , সেই ভেবেই বাদ দিয়ে দিয়েছি । কিন্তু অবাক ব্যাপার দ্যাখ আয়ুশ এই মেয়েটার বায়োডাটাটাই বের করেছে, আবার ও নাকি এই মেয়েটাকে চেনে । " ইভান আয়ুশকে বললো, " আচ্ছা চ্যাম্প যেই মেয়েটার সাথে বাবার শপিং কমপ্লেক্সে তোমার আলাপ হয় এটা কি সেই মেয়েটা ? " আয়ুশ এক গাল হাসি নিয়ে খুব আনন্দের সাথে উপর - নীচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ করে ইভানের কোল থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে , তারপর ছুটে আদিত্যর গলা জড়িয়ে ধরে । আদিত্য ছেলের মনের কথা আঁচ করতে পেরে বলে, " কি ব্যাপার সোনা এতো খুশি কেনো ? Then let me guess , একে তোমার খুব ভালো লেগেছে তাইতো ? তাহলে এই মেয়েটাকে কালকে ইন্টারভিউতে ডাকি, কি জুনিয়র এবার খুশি তো ? " আয়ুশ সাথে সাথে আনন্দে একটা চীৎকার দিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে দু গালে চুমু খায় আর আদিত্যও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করে । ইভান আদিত্যকে বলে, " Best of luck Adi . Ultimate তোর একটা সমস্যার সমাধান হোলো এবার দেখা যাক মেয়েটি কালকে কি বলে । " আদিত্য মিঃ ঘোষালকে ফোন করে বলে , " ঘোষাল আমি একটা ফোন নাম্বার পাঠাচ্ছি তোমাকে, তুমি এই মেয়েটিকে ফোন করে আমার বাড়িতে কালকে ইন্টারভিউর জন্য আসতে বলে দাও এখনি । সকাল ১১ : ৩০ মিনিটে আসতে বলবে তাহলে সেই সময় আয়ুশও স্কুল থেকে এসে পড়বে । আর এই ইন্টারভিউটা আমি নিজেই নেবো , তুমি অফিসটা সামলে নিও । মেয়েটিকে বাড়ির ঠিকানাটা ভালো করে বলে দিও আর বোলো যেন দেরী না করে । " এই বলে ফোনটা কেটেই আদিত্য মিঃ ঘোষালকে মেয়েটির ফোন নম্বর পাঠিয়ে দেয় তারপর ইভানকে বলে , " ইভান যা তুই তোর চ্যাম্পকে নিয়ে শুয়ে পড় । আমার কিছু কাজ আছে সেগুলো সেরে তারপর আমি শোবো । " ইভান " Ok boss. Good Night " বলে আয়ুশকে কোলে করে নিয়ে শুতে চলে গেল ।
পরেরদিন দিন ঠিক সকাল ১১ টা বেজে পঁচিশ মিনিট, দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ শুনে ইভান গিয়ে দরজা খোলে । তারপর মেয়েটিকে নিয়ে বসার ঘরে বসিয়ে আদিত্যকে গিয়ে বলে, " আদি মেয়েটি এসে গেছে । তবে মেয়েটা দেখতে অপরূপ সুন্দর , আমার তো দারুণ লেগেছে । তুই একটু সাবধান ভাই , কারণ আজ পর্যন্ত তোর হৃদয়ের দরজা কেউ খুলতে পারে নি তবে আজ হয়তো সেই চান্স আছে । " এই কথা শুনে আদিত্য বলে, " কি ফাজলামি হচ্ছে ইভান । আমার হৃদয়ের দরজা খোলা সহজ নয় বুঝেছিস ? আচ্ছা ভালো কথা, তুই এখনো যাস নি কেনো বলতো ! কাজ নেই তোর ? " একথা শুনে ইভান হেসে বলে , " না, আজকে যাবো না । আসলে আমার কৌতুহল হচ্ছে মেয়েটির মধ্যে কি এমন আছে যে আয়ুশের মনে ধরেছে । আয়ুশতো কাউকেই পছন্দ করে না তবে এই মেয়েটি ওর ওপর ঠিক কি যাদু করেছে সেটা না দেখে আজকে আমি কোথাও যাচ্ছি না । "
ঠিক ১১ টা বেজে ৩০ মিনিটে আদিত্য বসার ঘরে এসে ঢুকলো । আদিত্যকে আসতে দেখেই মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে পড়তেই আদিত্য বললো , " আরে বসুন, বসুন । নমস্কার ! আমি আদিত্য মুখার্জী । আপনি নিশ্চয়ই জানেন আপনাকে কি জন্য ডাকা হয়েছে ? আচ্ছা আপনার নামটা কি যেন ? " আদিত্যর প্রশ্ন শুনে মেয়েটি বলে , " আমার নাম অহনা সান্যাল । আমি চাইল্ড সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছি এবং বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি নার্সিংহোমে চাইল্ড কাউন্সিলর হিসেবে যুক্ত আছি । আমি আসলে কোনো প্রাইভেট কাজে Interested না । জানি না আমার বায়োডাটা আপনি কিভাবে পেলেন । কালকে রাতে আপনার সেক্রেটারি আমাকে ফোন করে ইন্টারভিউতে আসতে বলেন । আমি প্রথমে না করি কিন্তু উনি অনুরোধ করায় আমি বাধ্য হয়ে আজকে আসলাম । Sorry , I'm not interested in this job. Please forgive me . " এই কথা বলে অহনা উঠে দাঁড়াতেই আয়ুশ ঘরের ভিতর থেকে ছুটে এসে অহনাকে জড়িয়ে ধরে । অহনা অবাক হয়ে হাঁটু মুড়ে বসে আয়ুশকে বলে, " আরে ! Little Boy তুমি এখানে ? " আদিত্য বলে, " ও আয়ুশ, আমার ছেলে । ওর জন্যই আজকে আপনাকে ডাকা হয়েছিল । আসলে আয়ুশ PTSD ( পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসর্ডার ) - এর জন্য কারো সাথে মিশতে পারে না । লোকেদের সাথে মেশাতে ওর ভীষণ ভয় আর এই PTSD - র জন্যই আজও পর্যন্ত ও কথা বলতে পারে না । আমি অনেক সাইক্রিয়াটিস্ট , স্পীচ থেরাপিস্ট দেখিয়েছি এতোদিন কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না । ওনারা সকলেই বলছেন এই ট্রমা কেটে গেলেই আয়ুশ আবার স্বাভাবিক হতে পারবে এবং কথাও বলতে পারবে, তবে তা সময় সাপেক্ষ ।" সব শুনে অহনা বললো , " সত্যিই এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা । আচ্ছা আমাকে একটা দিন সময় দিলে ভালো হয়, আমি তাহলে একটু ভেবে কোনো উপায় বের করার চেষ্টা করতে পারি । আমি বরং কালকে আপনাকে জানিয়ে দেবো । If you don't mind please give me your phone
number. " অহনার কথায় সম্মত হয়ে আদিত্য নিজের ফোন নম্বরটা দিয়ে দিল । অহনা আদিত্যর ফোন নম্বরটা মোবাইলে তুলে নিয়ে আয়ুশকে আদর করে চলে গেল । অহনা চলে যাবার পর ইভানকে ধপ্ করে সোফায় বসে পড়তে দেখে আদিত্য বলে, " তোর আবার কি হোলো ? না কিছু না , একটা ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ার আওয়াজ শুনে ভয়ে বসে পড়লাম । " আদিত্য অবাক হয়ে বলে, " ভেঙে পড়ার শব্দ ! কোথায় ? আমি তো শুনিনি ! " তখন ইভান হেসে বলে, " It is the sound of heart breaking bro , whose breaking he can't hear himself . " একথা শুনে আদিত্য " ওরে শয়তান ছেলে , আজকে তোকে মেরেই ফেলবো " বলে তাড়া করে । এই দেখে আয়ুশ তো হেসেই গড়াগড়ি ।
****** ক্রমশঃ প্রকাশ্য

