অবিস্মরণীয় ভালবাসা ❤️ পর্ব ১
অবিস্মরণীয় ভালবাসা ❤️ পর্ব ১
ক্লোকরুমে থরে থরে সুন্দর করে সাজানো শার্ট - কোট - প্যান্ট - টাই - হাতঘড়ি - মোজা - জুতো ইত্যাদি । একদিকে সবকিছু বাবার অপরদিকে সবকিছু ছেলের । আদিত্য মুখার্জী ও তার ছয় বছরের ছেলে আয়ুশ ক্লোকরুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো । যেমন বাবা তেমন ছেলে , দুজনেই ড্রেস ম্যাচিং করে শার্ট-প্যান্ট - টাই - হাতঘড়ি - জুতো-মোজা নিয়ে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে । পাশাপাশি দুটো বড়ো বড়ো দেওয়াল সেটিং আয়না, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরী হতে শুরু করে আদিত্য । আয়ুশের জন্য অবশ্য একজন লোক আছেন যিনি আয়ুশের সবকিছু দেখাশোনা করেন । যেমন - আয়ুশকে স্নান করানো, জামাকাপড় পড়ানো, খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো এমনকি তার সাথে খেলাধুলা করা থেকে শুরু করে গল্প শোনানো, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া সবটাই ছিল ওনার কাজ । সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আয়ুশের সব দায়িত্ব ওনার তারপর আদিত্য বাড়িতে ফিরে এলে উনি চলে যান । উনি চলে যাবার পর থেকে আয়ুশের সঙ্গী হিসেবে সব দায়িত্ব সামলায় আদিত্য স্বয়ং ।
বাবা আর ছেলে বেরোনোর জন্য একেবারে তৈরী । বাড়ির সামনের লনে দাঁড়ানো দুটি দামি গাড়ি , একটিতে করে অফিসে যাবে আদিত্য মুখার্জী আর অপরটিতে করে কিন্ডারগার্ডেনে যাবে আয়ুশ । দুজনেই বাড়ির সামনের লনে এসে দাঁড়ালো । আদিত্য ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করে গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে নিজের গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলো । বাড়ির গেট থেকে বেরিয়ে দুটো গাড়ি দুদিকে চলে গেল ।
আদিত্য মুখার্জীর বয়স মাত্র তেত্রিশ বছর । ছয় ফুট লম্বা, ফর্সা, স্বাস্থ্যবান , দারুন স্মার্ট যাকে এক সুপুরুষ বলা চলে । আঠাশ বছর বয়স থেকে শপিং কমপ্লেক্সের দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নেয় সে । পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মোট সাতটি শাখা রয়েছে এই " গ্যালাক্সি শপিং কমপ্লেক্স " এর তাই ওনার উপর দায়িত্বও অনেক । তিনকুলে নিজের বলতে আছে এক নিঃসন্তান বিধবা কাকিমা এবং ছেলে আয়ুশ । তিনি অফিস ও পাড়ায় যেমন গাম্ভীর্যপূর্ণ তেমনই বাড়িতে ছেলে আয়ুশের সাথে একেবারে একটি বাচ্চার সমান । সেই সময় ওনাকে দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবে না যে ওনার ভয়ে অফিসে ও পাড়ায় বাঘে- গরুতে এক ঘাটে জল খায় ।
পাঁচ বছর আগেও এতো গম্ভীর ও দাপুটে ছিল না আদিত্য । বন্ধুদের সাথে আড্ডা - হৈচৈ - গান - বাজনা - খেলাধুলা - মজা করা এইসব থাকতে ভালবাসতো সে । কিন্তু পাঁচ বছর আগে একটা দুর্ঘটনা সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয় আদিত্যকে । ছটফটে প্রাণবন্ত আদিত্যকে বানিয়ে তোলে সৎ - গম্ভীর - দাপুটে - দায়িত্বশীল - নিষ্ঠাবান একজন পুরুষ ও পিতা ।
দুপুর ২টো বেজে ৩০ মিনিট, অফিসের বোর্ড মিটিংয়ে ব্যস্ত কোম্পানির CEO আদিত্য । সেই সময় তার সেক্রেটারি মিঃ ঘোষালের কাছে একটা ফোন আসে । আসলে আদিত্যর একটা স্বভাব ছিল অফিসের মিটিং চলাকালীন নিজের ফোন বন্ধ রাখা । এমনকি মিটিংয়ের সময় বাকী সকলের ফোন সাইলেন্ট রাখার নির্দেশ ছিল । তাই মিটিং চলাকালীন কোনো দরকারী ফোন আসে আদিত্যর সেক্রেটারি মিঃ ঘোষালের ফোনে ।
সেক্রেটারি ঘোষালের পকেটে ফোনটা ভাইব্রেট হতেই সে ফোনটা বের করে
" Excuse Me " বলে কনফারেন্স রুমের বাইরে বেরিয়ে এসে ফোনটা রিসিভ করে বলে , " হ্যালো " । অপরপ্রান্ত থেকে আয়ুশের তত্বাবধায়ক ( caretaker ) বলে, " হ্যালো! আমি রাজেশ বলছি । আর বলবেন না বাধ্য হলাম ফোন করতে । আয়ুশ বাবা খুব রেগে গিয়ে একটা জল ভর্তি বোতল ছুঁড়ে মেরেছে টিভিতে । আর টিভির কাঁচ ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়েছে । কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে ফোন করলাম । আয়ুশ বাবাকে কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছে না এমনকি কিছু খাওয়ানোও যাচ্ছে না । " সব শুনে মিঃ ঘোষাল বলে , " আচ্ছা ঠিক আছে আমি এক্ষুনি স্যারকে সব জানাচ্ছি , তারপর আবার আপনাকে ফোন করছি । Ok ? . "
রাজেশ " ঠিক আছে " বলে ফোন রেখেই আয়ুশকে শান্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস করতে
থাকে ।
কনফারেন্স রুমে মিটিং চলাকালীন কোনো বিষয়ে বিরক্ত করা আদিত্য মুখার্জী একেবারেই পছন্দ করে না তাই রাজেশের ফোনটা পেয়ে চিন্তায় কনফারেন্স রুমের বাইরে পায়চারি করতে থাকে মিঃ ঘোষাল । এভাবে প্রায় কেটে যায় মিনিট পনেরো , এখন ঠিক কি করা উচিত তা ভাবতে না পেরে প্রচন্ড চিন্তায় মিঃ ঘোষাল হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে পড়ে কনফারেন্স রুমে । মিঃ ঘোষালকে এভাবে ঢুকতে দেখে আদিত্য বুঝতেই পারে নির্ঘাত বাড়ি থেকে ফোন এসেছে আর নিশ্চয়ই আয়ুশ কিছু ঘটিয়েছে । সে বলে, " কি ব্যাপার মিঃ ঘোষাল ? " মিঃ ঘোষাল আমতা আমতা করে বলে , " স্যার আপনার বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল । আয়ুশ খুব রেগে রয়েছে , রাজেশ কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না । " একথা শুনেই আদিত্য সকলকে বলে ,
" I am very sorry. Please forgive
me. " এই বলেই মিঃ ঘোষালকে সাথে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়িতে ফিরে আসে ।
******* ক্রমশঃ প্রকাশ্য

