Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Manasi Ganguli

Inspirational

4.7  

Manasi Ganguli

Inspirational

আয়রন লেডি

আয়রন লেডি

4 mins
712


অল্প বয়সে হঠাৎ করে বাবার মৃত্যুতে মায়ের সঙ্গে পাঁচ ভাই-বোন যেন অনাথ হয়ে গেল। ১০বছরের প্রীতি ভাইবোনদের সবার বড়। গ্রামের আর পাঁচটা বউয়ের মত তার মায়েরও তেমন কোন বিদ্যা ছিল না যা দিয়ে তিনি সবার ভরণপোষণ করতে পারেন। সম্বল কেবল চাষের জমিটুকু। লোক দিয়ে কাজ করিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন হয়, গ্রামের স্কুলে পড়াটুকুও চলছে কোনোক্রমে তিনজনের, বাকি দুজনের পড়াশোনা শুরু হয়নি তখনও। ওই বয়সেই সে বুঝেছে জীবনটা লড়াই করেই চলতে হবে।

     প্রচন্ড মনের জোর প্রীতির, সংগ্রামী মনোভাব। গ্রামের স্কুলে তখন ক্লাস সিক্স অবধি পড়ানো হত। নিজের চেষ্টায় বাড়ীতে বই কিনে পড়ে দূরের এক গ্রামের স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসত। এইভাবে প্রাইভেট পড়ে মেট্রিক ও পরে আই এ পাশ করে খুবই ভাল নম্বর পেয়ে, গ্রামের যে স্কুলে পড়াশুনো করেছে সেখানেই শিক্ষিকার চাকরী পায়, তখন চাকরী পাওয়াটা খুব দুরূহ ব্যাপার ছিল না, বস্তুত গ্রামের কটা মেয়েই বা এভাবে পড়াশুনো করতে পারত।

    কয়েকবছর চাকরী করার পর সংসারে একটু স্বচ্ছলতা এল, ভাইবোনেদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিল, ইতিমধ্যে গ্রামের স্কুলও খানিক এগিয়েছে। ক্লাস টেন অবধি পড়ানো হয় সেখানে।

    মা এবার তার বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। প্রীতির ইচ্ছে শহরে বিয়ে করার। সেইমতই ব্যবস্থা হল। শহরের এক ধনী পরিবারে তার বিয়ের ঠিক হয়। হলে হবে কি, শ্বশুরমশাই বলে গেলেন,"মেয়ের কপাল বড়, ওটা ঢেকে দেবেন আর রূপোর দানসামগ্রী ছাড়া আমরা নিই না।"

   প্রীতি রাজি হয় না, মাকে বলে,"তুমি অন্য জায়গায় দেখো, এখানে আমি বিয়ে করব না, তোমাদের সর্বশ্রান্ত করে দিয়ে গিয়ে আমি সুখী হতে পারব না"। মা দেখলেন ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, মেয়েও শিক্ষিতা, তাই কিছু জায়গাজমি বিক্রি করে বিয়ের ব্যবস্থা করেন, যদিও জমির আয়টুকুই তাঁর সম্বল। প্রীতি ভাবে সে তো চাকরী করছেই, মাকে সাহায্য করতে পারবে। যাই হোক, বিয়ে হয়ে গেল।

    শ্বশুর বাড়ী এসে প্রথমদিনেই তার তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় যখন তার শাশুড়ি তাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করেন যে সে হিজড়ে কিনা, কারণ প্রীতি ছিল খুবই রোগা। স্বপ্নেও ভাবেনি এমনটা হবে। বুকের মাঝে তোলপাড় করে ওঠে, এ কোথায় এসে পড়ল সে। এসব নিয়েই অনুষ্ঠান শেষ হল। কদিনের ছুটির পর প্রীতি আবার স্কুলে জয়েন করে, যাবার আগে যথাসম্ভব কাজ করে দিয়ে যায়,ফিরে এসে আবার কাজ। অনেকটা রাস্তা যাতায়াত করতে হয় তাকে, ক্লান্তি আসে তবু হজম করে থাকে। বাড়ী ফিরে রোজই দেখে সবার মুখ ভার, কেউ কথা বলে না। প্রীতি তাও চুপ করে থাকে, ভাবে কদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না, এ ঠিক হবার নয়। কদিন পর স্বামী তাকে বলে,"চাকরীটা ছেড়ে দাও, প্রয়োজন যখন নেই আর তাছাড়া বাড়ীর বউ চাকরী করলে আমাদের সম্মান থাকবে না"। প্রীতি রাজী হয় না, তার ভাইবোনদের ওপর দায়িত্ব আছে, আর এত কষ্ট করে লেখাপড়া শেখা তবে কেন। এ তার ভালবাসার জায়গা, অধ্যবসায়ের গল্প, সব ছেড়ে দিতে হবে?

    জোর করেই স্কুলে যায় রোজ। একদিন সকালে কাজকর্ম সেরে প্রস্তুত হয়ে যখন বেরোতে যাবে, শ্বশুরমশাই লাঠির বারি দিয়ে পায়ের গোড়ালিতে এমন মারেন যে তার গোড়ালির হাড় ভেঙ্গে যায়। বাবা-মার মত-ই স্বামীর মত, তাই এক্ষেত্রে কোনো প্রতিবাদ হয় না। সে যেন এক শত্রুপুরীতে বাস করে। এই ঘটনার পর, প্রীতির মা, ও আত্মীয়স্বজন সকলে বুঝিয়ে প্রীতিকে চাকরী ছাড়তে বাধ্য করেন। একমাত্র প্রীতিই জানে কত বড় ধাক্কা সে খেল।

   এরপর আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বামী, সন্তানপালন, সংসার এই হল তার কাজ। বুকের মাঝে কষ্টটা একটা ডেলা বেঁধে থাকে। দুটি ছেলে তার, তাদের পড়ায়, ভাল করে মানুষ করতে চায়। কিছুদিন পর স্বামী অসুস্থ হয়, নেফ্রাইটিস। প্রীতির ভাই ততদিনে ডাক্তারি পড়তে ঢুকে গেছে, সে তার প্রফেসর বড় ডাক্তার দিয়ে জামাইবাবুকে দেখাবার ব্যবস্থা করে কিন্তু প্রীতির শাশুড়ি তার বাপের বাড়ীর কোনো সাহায্য নেবেন না বলে, ছেলেকে লোকাল ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা শুরু করান। আর প্রীতির স্বামী এতটাই মা-বাবার বাধ্য যে তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয়নি। নিজে বড় চাকরী করা সত্ত্বেও বাবা-মার এই ভুল সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল, যার ফল শুরু হল ডায়ালিসিস আর দুবছর যেতে না যেতে মৃত্যু। ছেলেরা বেশ ছোট তখন।

      প্রীতির তখন স্কুলে চাকরীর বয়স চলে গেছে। অকূলপাথার। শ্বশুর-শাশুড়ি কোনোভাবে সাহায্য করেন না। তখন তার মা প্রীতিকে খানিকটা চাষের জমি লিখে দেন, যেখানে চাষ করিয়ে প্রীতি কোনক্রমে সংসার চালায়। ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে গ্রামে ছোটে,সব ব্যবস্থা করে আবার ছুটতে ছুটতে স্কুল ছুটির আগে বাড়ী আসে। আছে রান্না, ছেলেদের পড়ানো, পেট ভরে খাবারও রোজ জোটে না। চেষ্টা করে ছেলে দুটোকে পেটভরা খাবার দিতে। ছেলেরা ছোট, তাদের খেলার টান তো থাকবেই। তারা খেলতে গেলে, তাড়াহুড়ো করে খানিক রান্না করে ছেলেদের মাঠ থেকে ধরে আনে,পড়তে বসায়। একটাই শান্তি, ছেলেদুটো ওর খুব বাধ্য,পড়াশুনোটা মন দিয়ে করে। পরীক্ষার সময় ভোর ৪টেয় ছেলেদের উঠিয়ে পড়তে বসায়। দুধ তো দিতে পারে না,তাই বাচ্চা ছেলেদুটোকে চা-ই করে দেয়,বলে চা খেলে ঘুম চলে যাবে। ছেলেরা পড়ে,প্রীতি সমানে পাশে বসে থাকে যাতে কোনোভাবে পড়ার ক্ষতি না হয়।

  ধনী ঘরের বউ হয়েও কাজের লোক রাখার ক্ষমতা নেই,সব কাজ নিজেকে করতে হয়। কোনোভাবে সাহায্য করেন না অথচ শ্বশুর-শাশুড়ি বাইরে কোনো কাজও করতে দেবেন না,তাহলে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেবেন বলে দিয়েছেন।

   নিজে আধপেটা খেয়ে দিনের পর দিন গ্রামে ছুটে কোনক্রমে দুটো ভাতের জন্য লড়াই করতে করতে প্রীতি ক্লান্ত,ভাবে,"সেই ছোট থেকেই লড়াই শুরু,এর শেষ কবে?"

   লড়াই চলতে থাকে ছেলেদুটো মানুষ হওয়া পর্যন্ত। অবশেষে তার লড়াই সার্থক,বড় ছেলে C.A ও ছোট ছেলে Engineer. মায়ের লড়াই শেষ। মুখে তার শান্তির হাসি যা সে এপর্যন্ত কোনদিন পায়নি। ছেলেরা বোঝে মায়ের জন্যই তারা সফল হতে পেরেছে। তবু সংগ্রামী প্রীতির মনটা খচখচ করে, সে নিজেও তো কিছু করতে পারত যা তাকে হাত-পা বেঁধে করতে দেওয়া হয়নি।


Rate this content
Log in