SHUBHAMOY MONDAL

Drama Thriller Others

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Thriller Others

আত্মকথা

আত্মকথা

4 mins
207



লাইব্রেরী গিয়েছিলাম, একটা পুরানো খবেরের কাগজের পেপার কাটিং নেবো বলে। অনেক দিনের পুরানো সব কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে, পেলাম এই পাণ্ডুলিপির ডায়েরীটা। 


লেখকের নাম দেখলাম - খ্যাতনামা সাহিত্যিক, জ্যোতির্ময়বাবু। আমার বিশেষ সূত্রে একদা তাঁর সাথে পরিচয় ও কিঞ্চিৎ সখ্যতাও হয়েছিলো একসময়। তাঁর বাড়ির ফোন নম্বরটিও আমার অজানা ছিলো না।তাই, একটা বুথ থেকে কল করে, তাঁকে ধরার চেষ্টা করলাম ফোনে। ফোনটা ধরলেন ওনার স্ত্রী - কিরণ দেবী।


তাঁকে নিজের নাম বলে, জানালাম ঐ ডায়েরীটার কথা। শুনে তিনি বললেন - ওটা আপনি খুঁজে পেয়েছেন? ভালোই হয়েছে, ওনারও এইরকমই ইচ্ছে ছিলো - সাহিত্যপ্রেমী কেউ ওটা খুঁজে পাক, পড়ুক, তারপর, ইচ্ছে হলে - লিখে প্রকাশ করুক। আপনি ওটা পড়ুন, ভালো লাগলে নিজের মত করে, ওটা প্রকাশও করতে পারেন। আসলে, নিজের কথা নিজে লিখতে, আপনার দাদা - একটু ইতস্তত বোধ করছেন, এই আর কি?


আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম - ওনার পার্সোনাল ডায়েরী, আমি পড়বো?


বৌদি বললেন - ওনার তো তাইই ইচ্ছে। আসলে, ওটা নিজের বায়োগ্রাফী হিসাবেই লেখা শুরু করেছিলেন উনি। তারপর কি মনে হলো - একদিন ডায়েরীটা লাইব্রেরীতে ফেলে রেখে এসে, বললেন - দেখাই যাক, আমার প্রতি লোকের ভালোবাসা কতটা! আর আমার ভাগ্যই বা কি করে?সেও প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা। এতদিন ধরে অস্পৃশ্য হয়ে পড়ে থাকার পর, আপনার হাতে এসেছে ওটা আজ। এর অর্থ একটাই - আপনিই ওটার প্রকৃত প্রাপক। আপনি নির্ভয়ে পড়ুন। জানবেন আপনার দাদা ওটা আপনাকেই শুধু পড়ার জন্য, লিখে রেখে দিয়ে এসেছিলেন। আপনার হাত ধরেই, তার প্রকাশ হবে বলে!


আমি, আরো কিছু কথা বার্তার পর, ফোন রেখে বেরিয়ে এলাম বুথ থেকে। ডায়েরীটার প্রতি আমি একটা দারুণ আকর্ষণ অনুভব করছিলাম। বাড়ি এসেই, প্রায় একবার বসেই পুরো কাহিনীটা পড়ে ফেললাম।


সাহিত্যগুণ তো অসাধারণ বটেই, তবু বিষয়টা তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত হওয়ায়, তাঁর যথাযথ অনুমতিক্রমে, যথাস্থান উহ্য রেখে, কাট ছাঁট করে, পুরো কাহিনীটাকে - নিজের সুবিধা মত ছোট করে নিলাম। অর্থাৎ, একটা আস্ত উপন্যাসকে সিনপসিস করে, ছোটগল্প বানালাম আর কি! সেটাই এখন যথাসম্ভব তাঁরই কথনে সাজিয়ে, লিখছি।


আজ আমি এক সাহিত্যিক। সাহিত্যচর্চার দৌলতে, যে বিরাট সংখ্যক পাঠক পাঠিকাদের আমি পেয়েছি, তাঁদের অসংখ্য প্রশ্ন আসে - আমার জীবন সম্পর্কে। আমি ধন্য তাঁদের ভালোবাসা আর সমর্থন পেয়ে। কিন্তু আমার পূর্ব জীবনের ইতিহাস যদি আমি প্রকাশ করি, তবে আমাদের থানার বড়বাবু তাঁর পুরানো কেস ফাইলের পাতাগুলো হয়তো আবার ওল্টাতে বসবেন!



না, না, কোন খুন বা রাহাজানির ঘটনা নয় - আজ আমার এই রচনায়, পাঠকদের অনুরোধে, আমি খুলে বলবো - আমার পূর্ব জীবন বৃত্তান্ত।


মোটামুটি স্পষ্ট রূপেই, দুটো পৃথক অধ্যায়ে ভাগ করে, বলা উচিত আমার জীবন কাহিনীটা। আমিও তাইই করলাম।


প্রথম অধ্যায়


১৯৯৩ সালে যখন আমি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করি, তখন মা মৃত্যুশয্যায়, আর বাবা পরলোকে। কোন দাদা বা ভাই না, শুধু একটা বোন ছিলো আমার - অরূপা। পারিবারিক অবস্থাও আমাদের খুব খারাপ ছিলো না প্রথমে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর, মায়ের অসুস্থতার সুযোগে, কাকা জেঠারা ফাঁকি দিয়ে সব সম্পত্তি নিজেদের নামে করে নেয়। আমিও তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক।


মাধ্যমিকে সবকটা বিষয়ে লেটার পেয়েছিলাম, উচ্চমাধ্যমিকেও তাই। কিন্তু নিয়তির নিদারুণ পরিহাসে, সেই রেজাল্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে আর হাসতে পারিনি আমি! কারণ, মাও ততক্ষণে বাবাকে অনুসরণ করে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। আমার বোনও সেই বছরেই মাধ্যমিক পাস করেছিলো, দারুণ ভালো মার্কস নিয়ে। কিন্তু দুই ভাইবোনে, একই বছরে এত ভালো রেজাল্ট করেও, তার আনন্দ উপভোগ করার কোনও সুযোগ পাইনি। আমি জানতাম - আমার ভবিষ্যত এখানেই শেষ, কিন্তু বোনটার?তাকে বড় করবার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা চেপে ধরেছিলো আমায়। কিন্তু সে রাজীই হলো না। অগত্যা, আমিই কাজের সন্ধানে বেড়োতে শুরু করলাম - সে বাড়িতে একাই থাকতো।


একদিন, পাড়ারই বস্তির চিনুদার সঙ্গে পরিচয় হলো আমার। সে রেঙাবাজ হলেও, আমাদের টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতো খুব। কিন্তু আমার নিজেরই তার কাছ থেকে রোজ রােজ হাত পেতে টাকা নিতে ইচ্ছে করতো না। তাই একদিন তাকে বলেই ফেললাম - চিনুদা, কতদিন আর এভাবে তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চালাবো বলো তো? তুমি একটা কাজ দেখে দিতে পারছো না - যে কোনও কাজ?


চিনুদা কোনো কথা না বলে, চুপ করে থাকে। আমি বলি - তোমরা কি কাজ করো? কোনদিন তো, কিছু করতে দেখিনি তোমাদের। অথচ এত টাকা তোমরা কি করে রোজগার করো? আমাকেও নিয়ে গিয়ে ঐ কাজে লাগিয়ে দাও না!


চিনুদা একটু কেমন অন্যমনস্কভাবে বললো - তুই যাবি?


আমি সোৎসাহে বললাম - নিশ্চয়ই, আজই যাবো, চলো না!


চিনুদা - কিন্তু, আমাদের যে নাইটডিউটি করতে হয় ভাই?


আমি - সে তো আরো ভালো। দিনে অন্য কাজ করে, আরো টাকা রোজগার করবো। বোনটার ধূমধাম করে বিয়ে দেবো। তারপর নিজেরও একটা মাথা গোঁজার যা হোক ব্যবস্থা করা যাবে 'খন।


চিনুদা - বেশ, তাহলে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে চলে আসবি, ভাঙা মন্দিরটার পাশে - কাউকে কিছু বলিস না। এখন বাড়ি যা।


তখনও বুঝতে পারিনি, কত বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে আমার জীবনে। আজও সে রাতের কথা ভাবলে, আমার শরীরে কম্পন অনুভব করি, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হৃদগতিও।


বোনকে সেদিন সন্ধ্যেতেই বের হতে দেখলাম। বললো - আজ রুনুর বিয়ে রে দাদা। ওদের বাড়ি যাবো, রাতেও ওখানেই থেকে বরং কাল সকালে ফিরবো। তোর কোন অসুবিধা হবে না তো? তাহলে, রাতে ওদের বাড়ি থেকে আমায় নিয়ে আসতে যাস।


আমি - না, না। কোন অসুবিধা হবে না। তুই যা, বন্ধুর বিয়েতে খুব করে মজা কর।


সে সেজে গুজে বন্ধুর বিয়েতে গেলো। আমিও সন্ধ্যে সাতটা বাজতে না বাজতেই, হাজির হলাম ভাঙা মন্দিরটার পিছনে।


(পরের পার্ট দিচ্ছি খুব শীঘ্রই।)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama