SHUBHAMOY MONDAL

Drama Romance Thriller

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Romance Thriller

আত্মকথা-৪(ভোরের আলো ফোটার আগে)

আত্মকথা-৪(ভোরের আলো ফোটার আগে)

3 mins
157



বাড়ি ফিরে ঘরে ঢুকতে যাবো, দেখি - দরজার শিকলে তালার সঙ্গে একটুকরো কাগজ বাঁধা! আশ্চর্য হয়ে গিয়ে তালাটা না খুলে কাগজটাই আগে খুললাম। 


তারপর সেটা নিয়ে হেঁটে রাস্তার ধারে এলাম - স্ট্রীট লাইটের আলোয় এসে খুলে দেখবো বলে, কি লেখা আছে তা'তে?


দেখি - একটা ছোটো চিঠি। চিনুদার লেখা -

ভাই জ্যোতি,

জানি তুই যখন ফিরবি, তখন হয়তো বহুদিন কেটে যাবে। সাহেব হাতে পিস্তল নিয়ে ঘর থেকে বেড়োচ্ছে দেখেই, আমি দলবল নিয়ে যখন পালিয়ে আসছি তখনই তোর কথা মনে পড়ল আমার। 

তোর কি হল, কোথায় আটকে গেলি দেখবো বলে ফিরতে যেতেই, ওনার গুলি লাগে আমার কাঁধে। কোনক্রমে আমায় ওখান থেকে বের করে এখানে নিয়ে আসে বাকিরা। 

আমাদের হরবোলা ডাক্তার এসে আমার কাঁধ থেকে গুলিটা বের করে দিয়ে, ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিয়ে গেলো। আমি এই চিঠিটা তোর কাছে রেখে গেলাম।

কবে ফিরবি, কি করে ফিরবি, তা তো জানিনা। আমারই আরো সাবধান হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তা না করায়, আমারই ভুলে তোর এই অবস্থা হল। আমি খুব স্যরী রে।

আমি আজ রাতেই বস্তি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বোনকেও আমিই সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছি। তুই যতদিন না ফিরছিস, বোনের সব দায়িত্ব আমার।

ওর যত্নে কোন ত্রুটি রাখবো না। আমি ওকে স্কুলে ভর্তি করবো, আবার পড়াশুনা করবে ও। তোর স্বপ্নটা নিশ্চয় পূরণ হবে।

কোথায় যাবো জানিনা। আপাতত বড়মামার সেই বাড়িটায় যাচ্ছি। পরে তোকে সঠিক ঠিকানা জানাবো। ভালো থাকিস ভাই।

হতভাগ্য

চিনুদা


চিঠিটা পড়ে, চোখে জল এসে গেলো আমার। সত্যি, এত ভালোবাসে আমাদের ভাইবোনকে চিনুদা! আমি ওর বড়মামার সেই বাড়িটায় আগে গেছি। ট্রেনে করেই যাওয়া যায় এখান থেকে।


কিছুক্ষণ আগেই, মিত্রসাহেবের বাড়ি থেকে বেড়োনোর সময়, দেওয়াল ঘড়ির আওয়াজ শুনেছিলাম - বারোটা বাজছিলো তখন। এর অর্থ, এখন বড়জোড় সাড়ে বারোটা বাজবে। পা চালিয়ে গেলে হয়তো লাস্ট ট্রেনটা পেয়েও যেতে পারি!


যা ভাবা, তাই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ালাম স্টেশনের দিকে। ঈশ্বর সহায়, ওরাও তখনও ট্রেন পায় নি। অরূপা চিনুদাকে আমি কোথায়, কি করছি, কখন আসবো - এইসব প্রশ্ন করে করে পাগল করে তুলেছিলো প্রায়।


বেচারা চিনুদার কাছে ঐ প্রশ্নের কোন উপযুক্ত জবাব ছিল না। কি আর বলতে পারতো - আমার বোনকে সে? তাই, আমি ওখানে পৌঁছাতেই দুজনেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো একেবারে!


এত আবেগ তাড়িত ছিলাম কথাই বলতে পারলাম না কেউ ঠিকভাবে। তাই, সোজা বাড়ি ফেরার রাস্তাই ধরলাম। কিন্তু চিনুদা আর ফিরতে চাইলো না। আমি বিস্মিত হয়ে ওর দিকে চেয়ে রইলাম।


চিনুদা হাতটা ধরে বললো - তুই নিশ্চয়ই সব পড়েই এখানে এসেছিস? তোকে তাহলে বিশেষ কিছুই আর খুলে বলতে হবে না? চলি তাহলে রে, বোনের খেয়াল রাখিস।


বললাম - চলি বলতে নেই চিনুদা। বলো আসি। চিনুদা ঈষৎ হেসে আমার চিবুক ছুঁয়ে বললো - আসি রে। তারপর হেঁটে প্ল্যাটফর্মটা পার হয়ে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেলো। 


ট্রেনটাও দেখলাম দূরে হুইশেল দিচ্ছে। আমরা একটু তাই দাঁড়িয়েই গেলাম। চিনুদা সেই রাতেই, এখান থেকে ঐ ট্রেনে চড়েই চলে গেলো। কোথায় গেলো জানতেও পারলাম না। ওর সেই মামার বাড়িতে পরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জেনেছি - সেখানে ও ফেরেনি!


আমরা ভাই-বোন বাড়ির পথ ধরলাম। তখন রাতের অন্ধকার ভাবটাও কমে এসেছে। অরূপা বললো - তুই কোথায় গিয়েছিলি রে দাদা? চিনুদাই বা কোথায় যাবার কথা বলছিলো?


আমি বললাম - ঐ যে, একটা চাকরির খোঁজে বেরিয়েছিলাম না, তুই জানিস তো। সেই যে ষাট হাজার টাকা... আমার মুখের কথা শেষ হলো না, অরূপা বললো - টাকাটার ব্যবস্থা হয়েছে?


আমি - না রে, সেটার জন্যই চিনুদার সঙ্গে যাবার ছিলো তো। ক'দিন হয়তো আমাদের সেখানে গিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরিও করতে হত। তাই চিনুদা বললো তোকেও সঙ্গে নিতে। তুই একা কি করে এখানে থাকবি?


অরূপা - টাকার ব্যবস্থা করে ফেলেছিস বুঝি? চিনুদার সাথে গেলি না যে, তবে?


আমি - না রে, টাকার ব্যবস্থা হয় নি। কিন্তু যেটার জন্য টাকার দরকার সেটা মিটে গেছে। আমি অন্য একটা কাজ পেয়েছি - টিউশান পড়ানোর। মাসে পাঁচশো টাকা করে দেবে, জানিস?


তোর স্কুলে ভর্তি হতে - একশো ষাট টাকা লাগবে, তাও শুধু এই মাসে। পরের মাস থেকে দেখিস আমাদের দুজনের ঠিক চলে যাবে। নয়তো, আরো গোটা ক'তক ঐ রকম টিউশনি খুঁজতে হবে। তুই চিন্তা করিস না। আমি ঠিক চালিয়ে নেবো।


আমার জীবনের সেইটাই ছিলো সবথেকে ভয়ের, এক ঝোড়ো, বিপর্যয়ের চরম অন্তিম রাত। সাহিত্যচর্চা যে আবার শুরু করতে পারবো, লেখালিখি করার সত্যিই সুযোগ পাবো এটুকু আশাও করিনি আমি তখন। 


তবে, আমার জীবনে শীতের শেষে বসন্তের শুরু হতে চলেছে, তা বুঝতে পেরেছিলাম। ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত ভোর হয়ে এসেছিলো, আমার জীবনেও তাই। এখন শুধু প্রতীক্ষা - নতুন প্রভাত কি নতুন সারপ্রাইজ নিয়ে আসে?


ক্রমশ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama