আশ্বাস:-
আশ্বাস:-
আচ্ছা ভালোবাসা কি খুব গাম্ভীর্যপূর্ণ হয়? কি জানি!
স্মৃতির ভেলায় ভাসছি আজ। তখন আমি ষোড়শী। দিবাস্বপ্ন দেখা আর অলীককল্পনার জগতে বিচরণ করা ছিলো আমার স্বভাবসিদ্ধ কাজ। পড়ন্ত বিকেলে একদিন পাড়ার খেলারমাঠে বসে আকাশকুসুম কিছু ভাবছিলাম আমি। ঝড়ের গতিতে আমার সামনে এসে দিবাস্বপ্নের ইতি ঘটালে তুমি। জিজ্ঞেস করেছিলে আমি জানি কিনা অর্ণবদের বাড়ি কোনটা।
একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম বৈকি, ভাবছিলাম এ আবার কোন উটকো আপদ! আমাকেই জিজ্ঞেস করছে আমার দাদা অর্ণবের বাড়ির কথা। মনেমনে ভাবলাম দাদার সব বন্ধুকে তো চিনি একে তো আগে দেখিনি কখনো! ভাবনার ছেদ পড়ল ওনার ডাকে,
- এই যে,বলতে পারবেন অর্ণবদের বাড়ি কোনটা?
ইতস্তত করে বললাম,
- চলুন,দেখিয়ে দিচ্ছি।
যেতে যেতে আড়চোখে লক্ষ্য করেছিলাম তোমায়। গম্ভীর আর শান্ত ছিলো তোমার চোখের দৃষ্টি, চুপচাপ হেটে চলেছো আমার সঙ্গে। বাড়ি ঢুকে দাদাকে ডাকতেই দাদা বেরিয়ে এলো। আমি চলে এলাম নিজের ঘরে। এরপর বেশ কয়েকদিন তুমি এসেছো দাদার কাছে। দাদার থেকেই জানতে পেরেছি তুমি নাকি দাদার নতুন ক্লাসমেট আর ঘনিষ্ট বন্ধু। ক্রমেক্রমে অনেকবার সামনাসামনি হয়েছিলাম তোমার। তুমি শুধু স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করতে,
- কী খবর?
***************************
খবর কী ছিল নিজেও বুঝতে পারছিলাম না, শুধু অপেক্ষা করে থাকতাম তোমার আসার। কৌতূহল হতো, কেনো তোমার দৃষ্টি এতো শান্ত আর গম্ভীর! ততদিনে
তোমার গাম্ভীর্যের প্রেমে পড়ে গেছি। আমার জীবনের প্রথম আর শেষ প্রেম তো তুমিই।
তোমার কথা ভেবে লজ্জায় চোখ ভারী হয়ে যেতো। কেনো জানি আলতা পরার খুব সখ হতো তখন। মনে হতো আমার আলতারাঙা পায়ে তুমি নূপুর পরিয়ে দেবে। খুব ইচ্ছে করতো বলতে 'শুভ্র দা তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি....'। কিন্তু তোমার চোখের ওই গাম্ভীর্য....নাহ,ওই গাম্ভীর্য লঙ্ঘন করে বলতে পারিনি।
কিন্তু তুমি বোধকরি বুঝেগেছিলে কোনোভাবে, আর এরপরেই প্রেমের পথে আমাদের যাত্রা শুরু। আজ ৩৫তম বিবাহবার্ষিকীতে দাবি করেছো ছেলে-বৌমা-নাতনির সামনে তোমায় প্রেম নিবেদন করতে হবে। বড্ডো কঠিন কাজ! ষোড়শী বয়সের সেই প্রথম ভালোবাসা, ভালোলাগার অনুভব গুলো মুখফুটে বলতে পারবো কি আবার?
কতকিছুই তো পাল্টে গেছে এতদিনে, পাল্টায়নি শুধু তোমার গাম্ভীর্যভরা শান্ত দৃষ্টিটা। কিন্তু জানো, ওই দৃষ্টিতেই আমি খুঁজে পাই চিরন্তন প্রেমের নিশ্চিন্ত আশ্বাস।