আরো এক মন্দ মেয়ের গল্প
আরো এক মন্দ মেয়ের গল্প
আরো এক মন্দ মেয়ের গল্প
চন্দ্রিমার কাকা বেরিয়ে গেলেন দেশি মুরগির সন্ধানে , কাকিমা তাকে জিজ্ঞাসা করেন কিরে পুজোতে এখানে থাকবি তো ? চন্দ্রিমা জানায় ইচ্ছা তো আছে, মাকে একটা ফোন করি বুঝলে কাকিমা । কাকিমা বলে সবাই মিলে এখানে থাকলে তো বেশ মজা হবে রে , তুই একটা কাজ কর ওনাদের ঘর গুলো দেখিয়ে দে, সব গোছানোই আছে । আমার এটা ভেবেই কি আনন্দ হচ্ছে যে এ বছরে আবার আমরা সবাই একসাথে , দাদা - দিদি তুই কতগুলো বছর পরে বলতো । কাকিমা আমাকেও তো এই গ্রামের মাটি টানে সারাক্ষণ কিন্তু কি করি বলোতো? উপায় তো নেই । কাকিমা বলেন ঠিক আছে, আগে ওনাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা কর ,তারপর তুই দিদিকে ফোনটা করে নিয়ে আমার কাছে আয়, আমি ততক্ষণ ভাতটা বসিয়ে দেই ওনারা ভাত খাবেন তো ? চন্দ্রিমা জিজ্ঞাসা করে কি তোমরা ভাত খাবে তো রাত্রে ? ওরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় । চন্দ্রিমা কাকিমাকে বলে হ্যাঁ , কাকিমা ওরা ভাত খাবে । কাকিমা ওই ঘরে চলে যান , চন্দ্রানির ঘরের দরজা খুলে বাতিটা ধরিয়ে দেয় । ওদের বলে ভেতরে আসো , ভেতরে গিয়ে ওদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করে ম্যাডাম আপনি কি এখানেই থাকবেন পুজোতে ? তেমনটাই তো ইচ্ছা আছে । কিন্তু ম্যাডাম আপনার যে বিজয়া সম্মেলনের একটা প্রোগ্রাম রয়েছে । জানি তো , এখান থেকেই করব , তোমরা চাইলে কালকে ফিরে যেতে পারো আমার গাড়ি নিয়ে যেও , বিজয়ার দিন একটু সকাল সকাল চলে এসো তাহলেই হবে । অপরজন বলে কিন্তু ম্যাডাম এই অচগ্রামে আপনাকে একা ছেড়েে যাব কি করে ? চন্দ্রানী জানায় এটা আমার জন্মভূমি তোমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই আর এখনই এত কিছু ভেবে লাভ কি ? আগে তোমার রাজি হোক , কাকিমা একটা থালায় সাজিয়ে মুড়ি , চানাচুর, চা -বিস্কুট নিয়ে হাজির হন । সামান্য কিছু জলখাবার আপনারা গ্রহণ করুন । চন্দ্রিমার ড্রাইভার বলে এসব এখন আনতে গেলেন কেন একটু আগেই তোর ওখান দিয়ে টিফিন দিয়েছে । কাকিমা বলেন আমি তো আর দেখিনি যতটুকু খেতে পারবেন খান চা - বিস্কুটটা তো অন্তত খেতে পারবেন । তোমরা জলখাবার খাও আমি কাকিমার সাথে একটু যাচ্ছি । চন্দ্রিমা আর কাকীমা বেরিয়ে কাকার বাড়ির দিকে যায় , কাকিমা জিজ্ঞাসা করে কিরে মাকে ফোন করলি ? চন্দ্রিমা বলে বড্ড গরম লাগছে আগের চেঞ্জ করি তারপরে করছি তোমার সামনেই তো করব।কাকিমা বলেন আলমারিতে নাইটি আছে, চুরিদার আছে দুই একটা। যেটা পছন্দ হয় সেটা পর , কাকিমাদের ঘরের বাথরুমটা গ্রাম্য হলেও পাকা , চন্দ্রিমা একটা চুরিদার নিয়ে বাথরুমে চলে যায় । কাকিমা ও আদা, রসুন, পিঁয়াজ, আলু সবকিছু নিয়ে বসে পড়ে কাটাকাটি করতে ।
কিছুক্ষণ পরেই চন্দ্রিমা চুরিদার পরে বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে । কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পোশাকের পরিবর্তন চন্দ্রিমার মধ্যে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসে । এতক্ষণ যে মেয়েটাকে মেমসাহেব মেমসাহেব লাগছিল , এখন তাকে গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ের মতই দেখতে লাগছে। চন্দ্রিমা বলে মাকে তাহলে ফোন করছি কিন্তু কাকিমা , বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব তোমার । কাকিমা বলেন আমি , চন্দ্রিমা বলে হ্যাঁ তুমি? মা তোমাকে খুব ভালবাসে । কাকিমা বলে ঠিক আছে ফোনটা ধরে দে আমি কথা বলছি । এমন মনে হল যে চন্দ্রিমা মা ফোনের সামনে বসেছিলেন , ফোনটা রিং হতে না হতে ধরে নিলেন । চন্দ্রিমা কিছু বলার আগেই একগুচ্ছ প্রশ্ন বান ছুড়ে দিলেন তার মা। কিরে প্রোগ্রাম কেমন হলো ? প্রোগ্রামটা কি শেষ হয়েছে ? ফিরছিস কখন ? পৌঁছেতো মানুষ একটা ফোন করে নাকি ? চন্দ্রিমা সবকিছুচুপচাপ শুনে নিয়ে আস্তে করে বললএকজন তোমার সাথে কথা বলতে চায় । মা একটু ইতস্তুত হয়ে বলল আমার সাথে ? চন্দ্রিমা বললো হ্যাঁ আমি দিচ্ছি তুমি কথা বলো । চন্দিমা ফোনটা কাকিমার হাতে তুলে দেয়, কাকিমা ফোনটা নিয়ে প্রথমেই বলেন দিদি কেমন আছেন ? চন্দ্রিমার মায়ের গলাটা এবার একটু কেঁপে যায় , কে মিনু নাকি ? চন্দ্রিমার কাকিমা বলে হ্যাঁ দিদি , কেমন আছো তুমি ? চন্দ্রিমার মা একটু কাঁদো কাঁদো সরে বলল কতদিন পরে তোর গলা শুনলাম।আমি ভালোই আছি, তোরা কেমন আছিস রে? আর চন্দ্রার সাথে তোর দেখা হল কোথায় ? কাকিমা বলে চন্দ্রা তো ওর বাড়িতেই । চন্দ্রিমার মা বলে মানে ? কাকিমা জানায় ও নিজের গ্রামে প্রোগ্রাম করতে এসেছে । চন্দ্রিমার মা কিছুটা ভীত হয়ে বলে গ্রামের লোকজন ? চন্দ্রিমার কাকিমা জানায় কারোর মুখে টু শব্দটি নেই সবাই ওকে মাথায় করে নিয়েছে । ওখানে যাওয়ার আগে একটিবারও ওর আমাকে জানাবার কথা মনে হলো না । কাকিমা বলেন জানালে কি তুমি আসতে দিতে দিদি ওকে । চন্দ্রিমার মা বলে তা হয়তো দিতাম না , আমার দেওরটা কেমন আছে ? কাকিমা জানান ভালো আছে, দেশি মুরগির ঝোল খাবে বলেছে ভাইজি তাই আনতে গেছে।দিদি তোমার কাছে না একটা অনুরোধ রয়েছে , চন্দ্রিমার মা বলে অনুরোধ কি অনুরোধ ? তুমি আগে বল না বলবে না । চন্দ্রিমার মা বলে অনুরোধটা তো আগে বলবি । না তোমায় কথা দিতে হবে তুমি না করবে না । চন্দ্রিমার মা বলে আচ্ছা ঠিক আছে এবার বল । কাকিমা বলে দাদাকে নিয়ে কাল সকালে তোমরা এখানে চলে আসো পুজোর চারটে দিন সবাই মিলে একসাথে কাটাবো। তোর দাদা কি রাজি হবে ? ওই গ্রামের লোকেরা যে ধরনের অপমান তোর দাদাকে করেছে । চন্দ্রিমার কাকিমা বলে তুমি বললে অবশ্যই রাজি হবে । চন্দ্রিমার মা বলে দাদা এখনো বাড়ি ফেরেননি। উনি ফিরুক আমি কথা বলে তোদের জানাচ্ছি । কাকিমা বলেন জানাচ্ছি নয়, তোমাদের আসতেই হবে । চন্দ্রিমার মা বলে আমি বললাম তো তোর দাদা আসুক দেখছি । দেখছি বললে হবে না আমরা কিন্তু চন্দ্রিমা কে ছাড়ছি না । চন্দ্রিমার মা বলে আচ্ছা ঠিক আছে, তুই ফোনটা একবার চন্দাকে দে । কাকিমা ফোনটা চন্দ্রিমার হাতে তুলে দেয় , চন্দ্রিমা আমাকে কোন কথা বলতে না দিয়েই বলে মা প্লিজ তোমরা চলে আসো , কতগুলো বছর হয়ে গেল গ্রামের পূজো দেখিনি । চন্দ্রিমার মা বলে তোর সঙ্গে যারা গেছে তাদেরও তো পরিবার-পরিজন আছে , সারাটা পূজায় কি তুই ওদের ওখানে আটকে রাখবি । চন্দ্রিমা বলে না মা সকালে ওদের পাঠিয়ে দিচ্ছি দশমীর দিন আমার প্রোগ্রাম আছে , ওরা সময়মতো চলে আসবে । আমরা প্রোগ্রাম সেরে একসাথে বাড়ি ফিরে যাব কেমন। মা বলে তুই তো জানিস তোর বাবা কেমন জেদি কথা বলে দেখি আদেও যেতে রাজি হয় কিনা ? চন্দ্রিমা বলে আমি আছি শুনলে বাবা চলে আসবে । এখন তাহলে রাখি বাবা এলে তুমি একটা ফোন করো , কাকিমার হাতে হাতে একটু সাহায্য করে দেই । ফোনটা রেখে চন্দ্রিমা বলে কই দাও আর একটা বটি দাও দেখি আলুগুলো আমি ছাড়িয়ে দেই , কাকিমা বলেন অনেক কাজ করেছ এখানে চুপটি করে বসে থাকো তোমায় কিছু ছাড়াতে হবে না।
ওদিকে বাইরে থেকে কাকার আওয়াজ ভেসে আসে , কই গো কই গেলে সব , দেখো দেখো একেবারে একটা রেওয়াজি মোরগ নিয়ে এসেছি । কাকিমা মজা করে বলেন বেশ করেছ এবার ওটাকে একটা পাত্রে ঢেলে সুন্দর করে ধুয়ে ফেলো কেমন । কাকা বলে যাব বাবা এত কষ্ট করে একটা রেওয়াজি মোরগ জোগাড় করে নিয়ে আসলাম এখন ধুতেও হবে আমাকে , কাকিমা আর চন্দ্রানী মুচকি মুচকি হাসতে থাকে । হাসতে হাসতে কাকিমা বলে ভাইঝি টা কার, কাকা হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে তো নাকি । কাকা বলে অগত্যা দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে । চন্দ্রানী আর তার কাকিমা হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ।
সমাপ্ত

