আলো আঁধারে জীবন।
আলো আঁধারে জীবন।
মানব জীবন আলো আঁধারের খেলা। কখনো সুখ-শান্তিতে আলোকিত হয় কোন পর্যায়, আবার হয়তো পরের পর্যায়ে দুঃখ-যন্ত্রণা জীবনকে করে আঁধার। এই খেলা চলে নিরন্তর।
সনাতন বাবু রেলে চাকরি করতেন, মাইনেও পেতেন মোটা। স্বচ্ছল সংসার। এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। মেয়ে সীমার বিয়ে হলো এক ইন্জিনিয়ার ছেলের সাথে, থাকে বিদেশে। ছেলে সজীব বাংলা নিয়ে এম. এ. পাশ করে বি. এড. পড়ে, আর কিছু টিউশন পড়ায়।
সনাতন বাবু মোটা পেনশন পান। সজীব হাত খরচের টাকা টিউশন পড়িয়ে তুলে নেয়। চাকরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখনও, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই তো সবে বি.এড. পাশ করলো।
হঠাৎ ঘটে গেল এক বিপদ। সনাতনবাবু স্ত্রী বিভাবতী দেবীকে নিয়ে গিয়েছিলেন হরিদ্বার বেড়াতে। ফেরার পথে ট্রেন দুর্ঘটনায় সনাতন বাবু মারাযান। বিভাবতী দেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সজীব মাকে চিকিৎসা করানোর জন্য ভালো প্রাইভেট হাসপাতলে ভর্তি করে। যেটুকু টাকা জমানো ছিল তাই দিয়ে ও প্রাণপন চেষ্টা করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারলো না।
এখন ও একা, চাকরি নেই, জমানো টাকা শেষ।ছোটাছুটি করতে গিয়ে টিউশন হয়েছে হাতছাড়া। একেবার গনগনে ভাদ্রমাস ওর জীবনে।
আবার, হঠাৎ করেই সজীবের দেখা হলো কলেজ জীবনের বান্ধবী সুছন্দার সাথে। সুছন্দা সব শুনে, ওকে ভরসা দিল সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। মাঝে চলতে থাকে ওদের ফোনে কথা। সবীজের একাকীত্ব কাটে সুছন্দার ফোনে।
সুছন্দা একদিন দুপুরে খাওয়ার জন্য সজীবকে ওদের বাড়িতে আসতে বলে। সজীব জানতে পারে সুছন্দার বাবা একটি প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপাল। আরে ওই স্কুলেই তো আমি বাংলা শিক্ষক পদে চাকরির জন্য আবেদন করেছি। সুছন্দা তাই না কি মহারাজ। তাহলে তো চাকরিটা হলো, রাণীটা খোঁজ। সুছন্দা ওকে মন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, সেটা এই কদিনে সজীব ওর আচরণেই টের পাচ্ছে। তাই সজীব অকপটে বলে ওঠে রাণী তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সবীজ গুনগুনায় জীবনে নতুন আলোর আশায়।