Pronab Das

Inspirational

3  

Pronab Das

Inspirational

আধ্যাত্মিকতা ।

আধ্যাত্মিকতা ।

3 mins
1.1K


বেশ কয়েক বছর আগের কথা। শিয়ালদা স্টেশনে অবিন্যস্ত পোশাকে এক অষ্টাদশী মানসিক ভারসাম্যহীন অনাথ অবলহেলিত মেয়েকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। হয়ত পথ ভুলে সে চলে এসেছে। কোথায় থাকে বা তার নাম জিজ্ঞেস করলে অবাক হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দু চার বার বেশি করে আবারও জিজ্ঞেস করলে প্রথমে বিরক্ত হয় ও শেষে ঝর ঝর করে হাত পা ছুড়ে কাঁদতে থাকে। স্টেশন চত্বরে এক কোনের দিকে এক ছোট্ট থামের পাশে পরে থাকত। বাস্ত স্টেশনে পথচলতি মানুষে পয়সা বা এটা সেটা দিয়ে সাহায্য করত। তদেরই দানে কোন মতে মেয়েটির দিন কেটে যেত। গায়ের রং খুব পরিস্কার থাকায় তার নাম জুটেছিল,......সাদা পাগলী।


বছরখানেক অতিক্রান্ত হয়ে যায় সে এখানে এসেছে। স্টেশনে সে এখন এক পরিচিত মুখ। স্টেশনের হকার থেকে নিত্য যাত্রী প্রত্যেকেই তাকে চেনে। হাসিমুখে হাতপেতে দাঁড়ালে সাধারণত কেউ তাকে নিরাশ করে না। কিন্ত আজ মেয়েটিকে দেখে সবাই অবাক, মুখভার করে দেখছে। ঈষৎ ফুলে ওঠা পেট আর ফেকাসে মুখখানি দেখে মেয়েটি যে সন্তানসম্ভবা তা পরিস্কার অনুমান করা যাচ্ছে।


এক বর্ষামুখর ব্যস্ত সন্ধ্যায় প্লাটফর্মের ওপরেই মেয়েটি একটা ফুটফুটে পুত্র সন্তান প্রসব করে। অনেকের মনে তখন একটা প্রশ্ন ছিল এই পাগলী শিশুটিকে লালন পালন করতে পারবে তো? ধীরে ধীরে স্টেশন চত্বরের বাচ্চাটি বড় হয়ে ওঠে। সবাই তাকে ছোটু বলে ডাকে।


ছোটু এখন আঠের বছরের। লিকলিকে রোগা, উচ্চতাও কম। নামের সাথে চেহারার বিশেষ মিল আছে। এর তার দোকানে কাজ করে, ফাই ফরমাশ খাটে। ইদানিং খরচপাতি বেড়ে যাওয়ায় ছোটু এখন ছিনতাই দলে ভিড়েছে। কামাই ভালই হচ্ছিল। মাস খানিকের মধ্যে কোন এক যাত্রীর পকেট কাটতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে। ভাগ্য ভাল ছিল দুএকটা চড় থাপ্পর খেয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যায়। ঠিক পরের মাসে চুরি করে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে জখম হয়। ওই মুহূর্তে আসন্ন বিপদ বুঝে সে এক আশ্রমে লুকিয়ে ঢুকে পড়ে। ব্যথায় কাতর ছোটু ও আশ্রমের এক ঘরের টেবিলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরের দিকে ছোটু দেখে বই বোঝাই এক ঘরের টেবিলে সে শুয়ে আছে। গেরুয়া বসন পরা এক স্বামীজী তার সামনে দাড়িয়ে।ছোটু কে কোন কথা জিজ্ঞেস না করে পরম স্নেহে নিজেই তার পায়ের ক্ষতস্থানে ওষুধ ব্যান্ডেজ জড়িয়ে দিলেন। ছোটুকে দেখে স্বামীজীর বুঝতে পারেন যে পালিয়ে বাঁচার জন্যই সে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।


সেদিনের স্বামীজীর ব্যাবহার ছোটুকে সেখানেই আটকে রাখে ভেতর থেকে। সে এক অনুভূতির অভিজ্ঞতা যা ছোটুর মন ও অবচতেন মনের ওপর গভীর ভাবে দাগ কাটে। অসুস্থ্যতার জন্য মাস তিনেক সে স্বামীজীর কাছেই থেকে যায়। ওই তিন মাস ছোটু প্রত্যহ আধ্যাত্মিকতার যে জ্ঞান লাভ করে তাতে সে নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। সে তার আত্মা, তার শরীর ও তার মনের মধ্যে সমন্বয় খোঁজার চেষ্টা করে। আধ্যাত্মিকতার এই প্রথম পাঠ পেয়ে পার্থিব জীবনের যে অভিজ্ঞতা সে লাভ করে তার সাথে সে কোনভাবেই পূর্বের ফেলে আসা জীবনের মিল খুঁজে পায় না। সেখানে গিয়েও আবার আশ্রমেই ফিরে আসে কোন এক অমোঘ টানে। নিজেকে নিজের গভীর থেকে গভীরে গিয়ে খুঁজতে থাকে। তাকে অনুভব করার চেষ্টা করতে থাকে বারে বারে। চোখে পড়ার মত তার এই পরিবর্তন, আধ্যাত্মিক বিকাশ স্বামীজির কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছিল। স্বামীজির তত্বাবধানে, তার ঔকান্তিক প্রচেষ্টায় আর আধ্যাত্মিকতার জ্ঞানে এগিয়ে যেতে থাকে...          


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational