Bhaswati Ghosh

Drama

3  

Bhaswati Ghosh

Drama

আবার আসিব ফিরে [শেষ পর্ব]

আবার আসিব ফিরে [শেষ পর্ব]

3 mins
9.3K


'একদিনেই বুঝে গেলে কলকাতা বদলে গেছে?তা কি করে বুঝলে মনা? তোমার ওই এসি

 ঘরের ভিতর থেকে,এসি গাড়ির কাঁচ সরিয়ে কলকাতাকে দেখলে কখন?'কবির মেসেজটা

 দেখে সাথে সাথে ই উত্তর দেয় মনা-'কিন্তু কবি সেই পূজা কি কলকাতায় হয়?আজ তো শুধু থিমের ভীড়।'কবি লেখে-'মনা থিমের ভীড়ে দাঁড়ানো ঢাকিটার চোখটা কি কখনো দেখেছ?সে কিন্তু আজ ও এক ই সুরে ঢাক বাজায়।মূর্তির পেছনে লুকিয়ে থাকা শিল্পী কিন্তু একই ভালবাসায় গড়ে তোলে তার স্বপ্নের মাতৃমুর্তি।তুমি তো গরম আর দূষণের দোহাই দিয়ে এসি কাঁচ তুলে কলকাতার পথে ঘুরেছো।কলকাতার প্রাণটাকে কখনো কি খুঁজেছ? তোমার ক্যানভাসে স্থান পেয়েছে কি-তোমার গাড়ির কাঁচে আঘাত করে ফুল বিক্রি করতে এসে ফিরে যাওয়া সেই বাচ্ছাটা?যদি কোনো দিন ওর থেকে একথোকা গোলাপ কিনে থাক, চেয়ে দেখ ওর চোখের হাসি।'

 "হোয়াই আর ইউ ক্রাইং মাই গার্ল?

-পাশের বিদেশি সহযাত্রীর ডাকে চমক ভাঙে মনার।কখন যে জলের ধারা দুচোখ ছাপিয়ে গাল বেয়ে নেমে এসেছে মনার,ও বুঝতেই পারেনি।

একটু হেসে চোখের জলটা মুছে নেয় মনা।প্লেন এখন মাঝ আকাশে।ও আবার ফিরে

যাচ্ছে ইংল্যান্ড।কিন্তু এবারে প্রথম কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার বিচ্ছেদে ওর বুকটা টনটন করে উঠছে।এই প্রথম ও কলকাতার বুকে খুঁজে পেয়েছে জীবনের স্বাদ।যেটা ও সারা জীবন চেয়ে এসেছে।-সেদিন ও কবির কথা শুনে প্রথম কলকাতার পথে ওর গাড়ি ছুটিয়েছিল এসি ছাড়া।খুলে দিয়েছিল গাড়ির বন্ধ জানালা।-অবাক হয়ে ও দেখেছিল পাঁচ বছর আগের দেখা সেই ফুল বিক্রি করা ছেলেটা আজো ঘুরে যাচ্ছে সিগনালে দাঁড়ানো গাড়ির জানালায়।কত বার যে ছেলেটা ওর গাড়ির বন্ধ জানালায় আঘাত করে ফিরে গেছে।এই প্রথম ছেলেটার থেকে এক তোড়া গোলাপ কিনলো মনা।-নাঃ পৃথিবীর কোনো রঙ নেই৷

কবি যে রঙে এই হাসিটা ফুটিয়ে তুলবো আমার আঁকার ক্যানভাসে।বিশ্ববিখ্যাত মনা চৌধুরির তুলি আজ হেরে গেছে এই হাসির কাছে।মনে মনে বলেছিল মনা।

পায়ে পায়ে কদিন মনা ঘুরে বেড়িয়েছিল কলেজ স্কোয়ার,কফিহাউস,নন্দন,রবীন্দ্রসদন,উত্তর-দক্ষিণের পূজার ভিড়ে।-খুঁজে পেয়ে ছিল মানুষের হাজার না পাওয়ার মাঝেও কিভাবে আজো বেঁচে রয়েছে আপনজনকে ঘিরে জীবনকে পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে তোলার অদম্য ইচ্ছা।

বাবা-মার হাত ধরে শস্তা ফ্রক পড়ে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা বাচ্ছাটার মধ্যে মনা খুঁজে পেয়েছিল তার শৈশব কে।-তাহলে আজো শৈশবের মনা বেঁচে আছে।এই তো সেই মনা।এদের মাঝেই তো লুকিয়ে আছে মনার শৈশব।

সদ্য কলেজে পড়া যুবক-যুবতীর খুনসুটির মাঝে মনা খুঁজে পায় এক হিসাবছাড়া জীবনের মানে।তাহলে আজো ওরা ছুটে চলার মাঝে অভিমান,হাসি,কান্নায় জীবনকে রঙীন করে?এই তো সেই জীবনের স্বাদ যা মনা খুঁজে ফিরেছে ওর এত পাওয়ার ভীড়ে।ঠাম্মা যে বৃদ্ধাশ্রমে ছিল কোনোদিন মনার যাওয়া হয়নি।ঠাম্মা মারা যাবার সময়তেও ওকে কেউ যেতে দেয় নি বাচ্ছা ও, এই অজুহাত দেখিয়ে।এই প্রথম ওখানে যায় মনা।দুহাত ভর্তি উপহার।ঠাম্মা কে তো পূজায় কোনো উপহার দিতে পারে নি কোনোদিন।এদের মাঝেই খুঁজে ফেরে ওর ঠাম্মা কে মনা।ওদের ঐ ফোকলা দাঁতের হাসিতে খুঁজে পায় কতকাল আগে হারিয়ে ফেলা ঠাম্মার ভালবাসা,আদর আর প্রশয়ের আদর মাখা হাতের স্পর্শ।

দূষণে মোড়া কলকাতার বাতাস মনার কাছে এই প্রথম যেন একবুক তাজা সুগন্ধ বয়ে আনে। আস্তে আস্তে কলকাতা ছাড়িয়ে প্লেন এখন অনেক দূরে।মনে মনে মনা কথা দেয়

কলকাতার রাজপথ,ট্রাম.কফিহাউস,ওদের বাড়ির পাশের ফুচকা কাকু,সেই অন্ধ

ভিখিরি যে গঙ্গার ধারে চুপ করে বসে থাকে,গঙ্গার ফেরি ঘাট,সব্বাইকে কথা দেয় মনা আবার ফিরে আসব তোমাদের কাছে জীবনের স্বাদ নিতে ৷দেখ ঠিক আসবোই।ভালবাসার মানে খুঁজতে বার বার আসব।একঘেয়ে জীবনের মাঝে খুঁজে নিতে উত্‍সবে রাঙানো জীবনের মূল্যবান ক্ষণটুকু।কথা দিলাম আসবই ঠিক আসবই।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama