Bhaswati Ghosh

Drama

2  

Bhaswati Ghosh

Drama

আবার আসিব ফিরে [দ্বিতীয় পর্ব]

আবার আসিব ফিরে [দ্বিতীয় পর্ব]

4 mins
8.9K


 ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে কবির কাছ থেকে হঠাৎ একদিন।কবির সাথে পরিচয়ের পর

 থেকে জীবন কে নতুন ভাবে চিনতে থাকে মনা। তবে কবির পরিচয় কোনোদিন জানতে

 চায়নি মনা।বাস্তবের সাধারণ চেনা, অচেনা লজ্জা,ঘৃণা,ইগোর মাঝে টেনে নামাতে

 চায়নি তাকে ।মনার কাছে কবি একটুকরো জীবনের ছবি। এমন বন্ধু যাকে সব বলা

 যায়। মনার জীবনে যে এত কথা ছিল মনা নিজেই বুঝতে পারতো না। আজ কলকাতায় আসা শুধু কবির চাওয়াতেই।কবি মনাকে কলকাতায় নিমন্ত্রন করেছে কলকাতায় দূর্গাপূজার ভোরে।আজ ষষ্ঠী।মায়ের বোধন।কতকাল কলকাতার পূজা মনা দেখেনি।পাঁচ বছর না, না পাঁচ বছর কি, আরো আরো আরো অনেক বছর আগেই তো ওর জীবনের আনন্দ উৎসব হারিয়ে গেছে। ঠিক কবে থেকে? ভাবে মনে মনে মনা।মনে পড়ে না ওর। নিজেকে একটু একটু করে হারিয়ে কবে থেকে ওর ছুটে চলার শুরু? আরো ওপরে আরো ওপরে৷ অনেক ওপরে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু যখন ও ওখানে পৌঁছালো তখন দেখলো ওই সাফল্যের শিখরে শুধুই এক বুক নির্জনতা।অনেক ভালবাসা,চাওয়া পাওয়ার বিসর্জনের বিনিময়ে পাওয়া এই সাফল্যকে তখন একটা অজগর সাপের মত মনে হত মনার। হঠাত্‍ একদিন কবির সাখে কথা বলতে বলতে ওর সেই পুরানো পূজার দিনগুলো নতুন করে ঝাঁপি খুলে বসে স্মৃতি জুড়ে।তখনি কবির আদেশ এবারে মনা কলকাতার পূজা দেখবে।একবার ভেবেছিল মনা কবিকে বলবে এবারে দেখা করবে কলকাতায় এসে।তারপর ভাবলো না থাক, কবির পরিচয় জেনে বাস্তবের মাটিতে টেনে আনবে না ওকে।কবি শুধু কবি হয়েই থাক ওর জীবনে।ঠিক যেন খর রৌদ্রের পরে এক ঝলক বৃষ্টি। মনা কবির মেসেজের উত্তর দেওয়ার সাথে সাথেই কবি উত্তর করলো। অবাক হয়ে মনা জিজ্ঞেস করলো -"কবি এখন ফেসবুকে যে?" "বন্ধূ কে ওয়েলকাম জানাতে কলকাতায়।"-কবির উত্তর এল।

"কিন্তু কি দিয়ে ওয়েলকাম করবে?"-মনা টাইপ করলো।

"ভোরের শরত্‍ আকাশ আর একবুক তাজা শিউলির সুবাস।"-কবির উত্তর।

মনা তার ঘরের বন্ধ জানালা খুলে দেয় বহুকাল পরে। আঃ! একবুক ঠান্ডা ভোরের বাতাস ঝাপটা মারে মনার চোখে মুখে। মনার ফোনে আবার মেসেজ ঢোকে।-"মনা ঐ আকাশ কে তোমার ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলো এটাই আমার উপহার৷"

 বহুকাল পরে মনার ক্যানভাসে রঙ তুলির আঁচড় পরে নিজের মনের খুশিতে। ছবির কাজ শেষ করে অল্প একটু প্রাতঃরাশ করে মনা ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দেয়। প্রায় বিকেলের আকাশটাকে শেষ আলোয় রাঙিয়ে সূর্য্যি মামা বিদায় নেবে নেবে করছে তখন ঘুম ভাঙে মনার মায়ের ডাকে। কিছুটা সময় বুঝে নিতে সময় লাগে মনার ও এখন ইংল্যান্ডে নেই কলকাতায়। "দীপ্ত এসেছে।"-মা জানায়।

"দীপ্ত! বাট্ হোয়াই ইউ এ্যালাউ হিম?"-মনা বিস্মিত ভাবে বলে। মনার মা কিছু বলে না অল্প হেসে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।যাবার আগে জিজ্ঞাসা করে, দীপ্ত কে ঘরে পাঠিয়ে দেবে  কি? আবারো বিস্মিত হয় মনা। দীপ্ত কে মা ওর ঘরে পাঠাবে? সেই দীপ্ত কে ! হিসাবের কেমন গোলমাল লাগে মনার। আধঘন্টা হল দীপ্ত বেরিয়ে গেছে। তারপর মায়ের সাথে কিছুটা বোঝাপড়া করতে হয়েছে।আসলে বিখ্যাত ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট দীপ্ত রয় কে মেয়ের হাসবেন্ড হিসাবে আজ আর মেনে নিতে মিসেস চৌধুরির কোনো অসুবিধা নেই।এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হল৷ মেয়েকে কলকাতায় পাকাপাকি আটকে রাখার বন্দোবস্ত হয়ে গেল আর অতবড় ঘর জামাই ও জুটে গেল সহজে।কিন্তু মিসেস চৌধুরি বড় ভুল করে ফেলেছে চালের৷ মনা তো এই দীপ্ত কে চায়নি। দশবছর আগের সেই নির্ভিক,আদর্শবান,আগোছালো দীপ্তকে চেয়েছিল। সেই দীপ্তকে চেয়েছিল যাকে দুর দুর করে কুকুরের মত তাড়িয়ে দিয়েছিল তার বাবা৷ অপরাধ ছিল দীপ্তর, সে নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। নিজেকে শান্ত করতে শাওয়ার টা অন করে দেয় মনা।আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বকে দেখে।টপ্ টপ্ করে প্রতিটা জলের ফোঁটা নামছে ওর চিবুক বেয়ে। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে- "কেন এমন হয়?এতটা বদলে যেতে পারলো দীপ্ত? সত্যিই একটা কুকুরে পরিণত হল দীপ্ত? যে নির্দ্বিধায় মিসেস চৌধুরির পদলেহন করছিল।একবার ও দীপ্তর মনে পড়লো না সেদিন কি ভাষায় অপমান করেছিল মিসেস চৌধুরি দীপ্তকে।কি ভাবে দীপ্তর দারিদ্র্য কে ব্যঙ্গ করেছিল চৌধুরি অর্থাৎ মনার স্ত্রৈন বাবা। আজ সেই চৌধুরিকে আংকেল, আংকেল বলে যখন দীপ্তের লাল গড়িয়ে পড়ছিল মনার গা টা গুলিয়ে উঠছিলো। মনার মাথার শিরাগুলো দপদপ করে উঠেছিল। এই দীপ্তের জন্য ও গলা ফাটিয়েছিল!মা-বাবার বিরুদ্ধে ওর অপমানের বদলা নিতে?এই দীপ্তের সাথে ও নির্দ্বিধায় বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল? শুধু দীপ্ত দায়িত্ব নিতে অপারগ ছিল জেনে এতটুকু রাগ করে নি যখন, দীপ্ত নিজে থেকে ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেল। সেই কি এই

দীপ্ত?অবাক হয়ে মেলাতে পারে না মনা ।নিজেকে সামলাতে পারে না আর মনা।

চিত্‍কার করে দীপ্ত কে প্রশ্ন করে "কেন এসেছিস তুই আজ?'

দীপ্ত উত্তর দিয়েছিল-"কেন আবার তোর আমার রিলেশনটা নতুন করে শুরু করতে।আর

তো আন্টি,আংকেল না করবে না আমাদের সম্পর্কটাকে।আন্টি তো আমাকে তুই আসার

আগেই বলে রেখেছে তুই কবে আসছিস।আর তুই এলেই বিয়েটা সেরে ফেলবো বলেই

প্ল্যান করা হয়েছে।আংকেল ও তাই চান। তোকে সারপ্রাইজ দেব বলে কেউ

জানাইনি।আর বিয়ের পর ওনাদের আব্দার, আমি এবাড়িতেই ছেলের মত থাকব।তোর জন্যে।আমি এটুকু স্যাক্রিফাইস করেই নেব।আন্টি তো যেদিন ফোন করে আমায় ডেকে সব কথা বললো আমি তো বিশ্বাস ই করতে পারছিলাম না"।

মনা চুপ করে সব কথা দীপ্তের শোনে।তারপর ওর খুব কাছে সরে এসে বলে-"দীপ্ত রয় তুমি আর তোমার আংকেল,আন্টি ভুলে গেছো মনা চৌধুরি আজ একজন বিশ্ববিখ্যাত

আর্টিস্ট।বামন হয়ে চাঁদ স্পর্শ করবার ইচ্ছা হতেই পারে কিন্তু সেটা স্বপ্নই থাকে।"

মনা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে অপমানিত দীপ্ত কিভাবে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল।" আচ্ছা আমি কি ভুল করলাম?আমি তো দীপ্তকে ভালবাসি?তাহলে কি এই আঘাতটা দেওয়া ঠিক হল?"নিজেকে প্রশ্ন করে মনা।

"হ্যাঁ, হ্যা্‌ঁ, হ্যাঁ একদম ঠিক হয়েছে।আমি তো এই দীপ্ত রয়কে চিনি না।সেই

দীপ্ত রয় ডেড।"

দুচোখ বন্ধ করে ফেলে মনা।শাওয়ার থেকে ঝরে পড়া জলের ধারা গালের নোনা জলকে

ধুয়ে দিয়ে নামতে থাকে মনার নগ্ন শরীর বেয়ে।মনা ভিজতে থাকে সমস্ত জ্বালাকে

ধুয়ে ফেলে মনা ভিজতে থাকে।(চলবে)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama