১১৮
১১৮
সুরেশ বাবু নতুন এসেছেন কলােনিতে। সকালে একটু মর্নিং ওয়াকের সখ। একাজে একজন ভালাে সঙ্গী না হলে জমে না। দু-একদিন পর জুটেও গেল। বিমলবাবু সুগারের রােগী। জীবনে সুর্যওঠা দেখেননি।নেহাত দায়ে পড়ে। তার উপর বড় ইবরেগুলার।
পােষায় না সুরেশবাবুর - সকালে একটু হাঁটবেন, শরীরচর্চা করবেন। জমিয়ে একটু গালগল্প হবে তা না তাে কি - উনি কোনদিন আসবেন, কখন আসবেন সেই উৎকণ্ঠাতেই মর্নিংটা ফেল হয়ে যায়।
সুরেশবাবু, ধৈর্য ধরতে না পেরে বলেই ফেললেন - "বিমলদা কাল থেকে আমিই আপনার বাড়ি।যাব, আপনিও রেগুলার হবেন।"
বিমলবাবু - না - না বলছিলাম মানে আপনি আবার কষ্ট করে আসবেন ?
সরেশবাবু - আপনার যদি কোনো প্রবলেম না থাকে। আসলে একা একা ভালাে লাগে না। বিমলবাবু - না, মানে আপনার যাওয়াটা ঠিক হবে ...।
কথাটা শেষ করতে না দিয়ে সুরেশবাবু বলে ফেললেন, “এতে আর আপনার আপত্তি কি থাকতে পারে?'
বিমলবাবু - 'কথাটা আসলে ...'।
সুরেশবাবু -' তাহলে এই কথাই রইল।'
বিমলবাবু বিড়বিড় করলেন কিন্তু কিছু বলতে পারলেন না।
পরের দিন সকালে উঠেই সুরেশবাবু ছুটলেন বিমলবাবুকে তুলতে। উঠোনের দরজা খােলা দেখে সােজা ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালেন সদর ঘরটির উল্টোদিকে এক চালার নীচে। বেশ পরিপারটি বটে। গরমে ইচ্ছে করলে শুয়ে বসে কাটানাে যাবে- এরকম সাতপাঁচ ভাবছেন, এমন সময় কী একটা সর-সর আওয়াজ। পিছনে ফিরে তাকাতেই ওরে-এ বাপরে, বলে একলাফে উঠোনের মাঝে।
চিৎকারের মিনিট পাঁচেক পর প্রাতঃকর্ম সেরে হেলে-দুলে এসে বিমলবাবু বললেন -" কিছু হয়নি তো?"
সুৱেশৰাৰু -" হয় নি মানে, একটু হলে হতে কিছু বাকী থাকত না আপনার চালাতে।"
বিমলবাবু -" হ-হে-হে, আপনি সাপটার কথা বলছেন তাে।”
সুরেশবাবু-" আপনি হাসছেন। জলজ্যান্ত খরিশ।'
বিমলবাবু -" ওখানেই বাসা।"
সুরেশবাবু বিষ নেই।
বিমলবাবু - "খরিশ তাে, তা একটু আধটু থাকবেই।"
সুরেশবাবু - "ওকে পুষে রেখেছেন ?"
বিমলবাবু - " বাউস্তু, সাক্ষাৎ মা মনসা।"
সুরেশবাবু - ''মারবেন না, এই তাে।"
বিমলবাবু - "গিন্নি বলেন গেরস্থের অকল্যান হয়।"
সুরেশবাবু -" আপনি কি বলেন ?"
বিমলবাবু - “গিন্নির কথা তাে, টুম্পি চেয়ারটা দিস্ তাে।"
উঠোনাের মাঝখানে চেয়ার পেতে সুরেশবাবুকে বসতে বলে বিমলবাবু দু-মিনিট আসছি বলে।বাড়ির ভিতরে গেলেন।
সুরেশবাবু অস্থির চিত্তে চারিদিকটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। মনে মনে বলতে থাকলেন - ''সকাল সকাল কার মুখ দেখে বেরুলাম, একেবারে খরিশের পাকে; আরাে কী কপালে আছে কে জানে" - এই সব সাতপাঁচ ভাবছেন এমন সময় লােম ওঠা, পিঠে থক্থকে ঘা ওয়ালা এক কুকুর এক পা দু পা করে এসে জুটল কোলের কাছে। একটু অন্যমনা হতেই ফ্যাচ করে ধরল হাটুর নীচে।
সুরেশ বাবু - ''অ্যাই - অ্যাই - ছাড়-ছাড়-ছাড়, খেয়ে ফেলল-খেয়ে ফেলল রে।"
চিৎকার শুনে বিমলবাবু তাড়াতাড়ি বাড়ির ভিতর থেকে ছুটে এসে লেজ ধরে এক ই্যাচকা টানে ছুঁড়ে ফেলল কুকুরটাকে। কাই কাই চিৎকার করতে করতে বসল গিয়ে বাঁধানাে বারান্দায়।
সুরেশবাবু - ''একবারে খাম করে ছাড়লে। এখন আমি কী করি?"
বিমলবাবু -" ও টুম্পির মা, বলি গেলে কোথায় ? সুরেশবাবু - 'বলি এটাও কি বাউস্তু?'
বিমলবাবু - ''না - মানে এখানেই থাকে, এঁটো-খাটো খায়, আর একটু নাইট ডিউটি দেয়। "
সুরেশবাবু বিরক্ত হয়ে বলে ওঠেন, ''এটাও কি গিন্নির ইচ্ছা ?''
বিমলবাবু - ''না, মানে, আপনি যা বলেন ।"
এমন সময় টুম্পির মা পনে - 'দুহাত ঘােমটা টেনে একটা বালতি আর সাদা কাপড়ের টুকরাে রেখে গেলেন। বিমলবাবু সুরেশবাবুর রক্তাক্ত পা-টা-বা-হাতে তুলে ধরে ধুতে ধুতে - প্রাথমিক চিকিৎসা করে দিলাম বুঝলেন। বাকীটা আপনার। বলতে বলতে পুনরায় হাক দিলেন, 'বলি গেলে কোথায়?'
টুম্পির মা একটা সাত পুরানাে ডাইরি আর কলম দিয়েই ফিরে গেলেন। বিমলবাবু ডাইরিতে কী। একটা লিখে বললেন - "সুরেশবাবু এ-নিয়ে আপনি একশাে আঠারােতে পড়লেন।"
সুরেশবাবু - ''অ্যা! বলেন কী!"
