STORYMIRROR

Subhajit Sanyal

Abstract Horror

4.0  

Subhajit Sanyal

Abstract Horror

০০১

০০১

4 mins
183

আমরা পাঁচ বন্ধু ছিলাম। যারা কিনা এডভেঞ্চার খুব খুব ভালোবাসতাম। আমরা কিন্তু ঠিক করি, দেরাদুনের সেই ভৌতিক হোটেল যার রুম নম্বর ০০১ সেই রুমে একসাথে তিনটি রাত কাটাব।

ওই রুমে নাকি কেউ থাকতে চায় না।। তার কারণ অবশ্য সঠিক জানা নেই । এই হোটেলটি ছিল আগে একটি ফরাসি ব্যবসায়ীর।। জানা গেছে যে ওখানে ওই ফরাসি ব্যবসায়ী আত্মহত্যা করেছিল।। তবে থেকে ওই ঘরে কেউ থাকতে পারতো না। ওই ফরাসি ব্যবসায়ীর ছেলে সেই বাড়িটিকে বিক্রি করে দিল তার এক কাছের বন্ধুকেই, তারই এখন হোটেল দেরাদুন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই ঘরটিকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ভাড়া দেওয়া শুরু করল। কিন্তু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছিলো একের পর এক। ওখানে নাকি ঠিক রাত একটার পর শোনা যেত এক বৃদ্ধার চিৎকার ।। ফ্যান বন্ধ করা সত্ত্বেও

নিজে নিজেই চালু হয়ে যেতো। লাইটগুলো বারবার বন্ধ হতো আর খুলতো।। স্বাভাবিক ব্যাপার এসব দেখে সাধারণ মানুষজন যারা কিনা পয়সা দিয়ে এত সুন্দর হোটেল রুম ভাড়া করেছে যাতে কিনা দু-তিন দিন একটু শান্তিতে থাকা যায় সেখানে এরকম ভুতুড়ে কান্ড দেখে তারা ঠিক থাকবে কি করে! তারা এক বিন্দু সময় নষ্ট না করে চলে গেল হোটেল থেকে। হোটেল মালিক ভারি চিন্তিত এই বিষয়ে। কেউই এই হোটেল রুমে থাকতে চান না। মাসের পর

 মাস তালা বন্ধ করে রাখতে হয় এই ঘরটিকে। সেই হোটেলেই একদিন আমরা পৌঁছে গেলাম পাঁচ বন্ধু। ওই ০০১ রুমটি আমরা ভাড়া নিলাম। হোটেল মালিক অবশ্য এক অদ্ভুত ভাবেই আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি বুঝতে পেরেছেন। সেই ঘটনাটি আবার হবে। হোটেল বয় সৌভিক ওই রুমটির দিকে আমাদের নিয়ে গেল। চাবি খুলে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেল, বলল কোন দরকার পড়লেই ডাকবেন। আর আমরা পাঁচ বন্ধু এক এক করে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। তারপর হোটেলের ফোনে কল করে বললাম রাতের খাবারটা পাঠিয়ে দিন। খাবার আসলো এবং ঝটফট করে সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম। তার কারণ আমাদের তো মাথায় চলছে কখন ওই বিষয়গুলি নিজের চোখে দেখব। সবাই খুব আগ্রহী হয়ে বসে ছিলাম । দেখতে দেখতে সময় গুলি কাটতে লাগলো। ঘড়িতে বাজলো রাত একটা টিক টিক টিক টিক শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে চারিদিক একেবারে নিস্তব্ধ। 

আর তখনই হঠাৎ করে দেওয়ালের সেই ঘড়ির টিক টিক শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। রুমের জানালা গুলো হঠাৎই জোরে জোরে ধাক্কা খাচ্ছিল । শীতল হাওয়া হু হু করে ঘরে বইতে শুরু করলো। হঠাৎই একটা চিৎকার মেরে ফেলবো.............

আমরা সবাই মজা করতে এসেছি ঠিকই কিন্তু এটি ঠিক সত্যিই না মিথ্যে কিছুই ধরতে পারছিলাম না ।

তারপর আবার একটা চিৎকার চলে যা এখান থেকে নাহলে তোদের পাঁচজনকেই শেষ করে ফেলব। আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যা। যা বলছি...

পাঁচ বন্ধুর মধ্যে চার জনই ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু আমি এর শেষটা দেখতে চেয়েছিলাম। তাই আমি পালাইনি। আমি জানতে চাইছিলাম কেন আপনি এরকম করছেন?? কি চান আপনি?? উত্তরে বললেন আমি চাই আমার বাড়ি, আমার সৎ ছেলে আমার পুড়িয়ে মেরেছে সামান্য কিছু সম্পত্তির জন্য। আমি ওদের সব দিয়েছি। শুধু এই শখের বাড়িটি আমি ওদের দি নি । এতে আমার ভালোবাসার মানুষের স্মৃতি জড়িয়ে আছে । আমি এটা কাউকে দিতে চাইনি । তাই ও আমায় গায়ে পেট্রোল দিয়ে মেরে ফেলেছে । আর সেটাকে আত্মহত্যা হিসেবে বানিয়ে সবার সামনে তুলে ধরেছে। শুনে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝর্ণার মত বেয়ে চলেছে। যাকে কিনা পালন করেছে দিনের পর দিন বুকের কাছে আগলে রেখেছে তাকে কিনা শেষমেষ সামান্য অর্থের জন্য এভাবে আঘাত করতে পারলো। বৃদ্ধাটি খুব কাঁদছিল। আর আমায় বলল তুমিই প্রথম যে কিনা সাহস করে এই ঘরে থেকে গেলে এবং আমার সাথে কথা বললে । চিন্তা নেই তোমায় আমি কিছু করবোনা কারোরই কিছু করবোনা ।

খুব ভালোবাসতাম জানো তো দুঃখিত ভালবাসাটাই আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমি বললাম আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি কি কোন স্বপ্ন দেখছি!! না তুমি কোন স্বপ্ন দেখছো না বাস্তবে এগুলো আমার সাথে ঘটেছে। আর তুমি তা আমার মুখ থেকে শুনছো। আমি বললাম আপনার ছেলে তো এটি কে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন এটি একটি বিলাস বহল হোটেলে পরিণত হয়েছে আপনি নিশ্চয়ই জানেন? আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি সবটাই জানি কিন্তু কি বলতো মেনে নিতে পারিনা। আমি বললাম, আচ্ছা আমি শুনেছি যে আপনার পুত্র নাকি মারণ রোগ ক্যান্সারে ভুগছে !! হ্যাঁ এটা তো হওয়ারই ছিল।। যেমন কর্ম তেমন ফল। তাহলে আপনি এরকম করছেন এখনো সে তো শাস্তি পাচ্ছে বলুন। হ্যাঁ , সে সুস্থ হয়ে উঠুক । যতই হোক বাবা তো ছেলের খারাপ চাই কি করে ।

আমি কথাটি শুনে অবাক হয়ে গেলাম । কি করে একটা মানুষ এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরও তাকে ভালোবেসে যেতে পারে। অবিশ্বাস্য!!

আমি বললাম আচ্ছা আমি ও তো আপনার ছেলের মতনই আমার একটা কথা রাখবেন??

কি কথা?? 

কথাটি হল আপনি আর কাউকে ভয় দেখাবেন না। আপনি থাকুন আপনার এই বাড়িতেই কেউ আপনাকে তাড়াবে না আমি কথা দিলাম।। শান্তিতে থাকুন ।। 

আমায় বললেন, ঠিক আছে তোমার কথাটি আমি রাখলাম। আমি আজ থেকে আর কাউকে বিরক্ত করব না।। আমি শান্তিতে চুপ করে এই ঘরে থাকবো।।

ভালো থাকবেন ।। 

ব্যাস এই বলেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম...

পরের দিন,

সকাল হতেই হোটেল মালিকসহ আমার চার বন্ধু এই ঘরে আসলো দেখলো আমি ঠিক আছি কিনা । দেখে পুরো অবাক আমরা ভয় চলে আসলাম আর তুই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে এই ঘরে থেকে গেলি।। কী করে ভাই পারলি বল না বল না।। আরে বলবো বলবো সব বলবো সবাইকে বলবো । ধৈর্য ধর একটু।। চল এবার বাড়ি ফেরা যাক। যা করতে এসেছিলাম সেটি সফল হয়েছে এবার চল দেখি তো।। যাওয়ার সময় হোটেলের বাইরে গিয়ে সেই ঘরের জানালার দিকে তাকালাম। মনে হল জানালার দিকে ঠই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আমায় বিদায় জানাচ্ছে।।

আমি মনে মনে হেসে গাড়িতে উঠলাম এবং রওনা দিলাম আমার বাড়িতে ....


                

            



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract