তিলি পাড়ার মেয়ে
তিলি পাড়ার মেয়ে
ছোট থেকেই একা ঐ....
তিলি পাড়ার মেয়েটা!
বয়স যখন পাঁচ! রাতের অন্ধকারে
কোন এক চোরাগলির অভিশপ্ত বাঁকে
মায়ের রক্তাক্ত দেহের দেখা মিলেছিল!
তখন সে কিছুই বোঝেনা, তাই মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমের কোলে ঢলে পড়েছিল,
কিন্তু যখন সবাই মিলে চিৎকার করে বলছিল এই মেয়ে... এই... মেয়ে ওঠ!
তখন ভয়ের চোটে কেঁদে দিয়েছিল মেয়েটা!
কেউ আসেনি তখন তার কান্না থামাতে!
মমতার স্নেহ ভরা আঁচলে আশ্রয় দিতে!
পুলিশ এসে যখন ওর মায়ের অসাড় দেহকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল,
তখন মেয়েটি চিৎকার করে বলেছিল,
কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমার মাকে?
ও... মা...., মা... সাড়া দাওনা?
তখনও কেউ তার চোখের জল
মুছে দেয়নি! বরং বলেছে তোর মা...
তোকে ছেড়ে চলেগেছে অনেক দূরে...
এবার থেকে তোর রাস্তা তোকেই
নিতে হবে খুঁজে !
সেদিন ভালোবাসায় ভরা হাত মাথার
ওপর কেউ রাখেনি, দেখিয়ে দিয়ে ছিল
শিশুটির চোখে আঙ্গুল দিয়ে বাস্তব এবং
মনুষ্যত্বহীন সমাজের কঠিন রূপ!
একই জায়গায় বসে কাটিয়ে দিয়েছিল
মেয়েটি কটা দিন..!
চোখের জল গেছিল তার শুকিয়ে,
পেটের জ্বালা কি! সে.. যেন গিয়ে ছিল ভুলে!
শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকত আকাশের দিকে!
শুরু হয়েছিল সেই দিন থেকে মেয়েটির একা একা পথ চলা!
শুরু হয়েছিল নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই!
কত গ্রাম, কত শহর একাই চলেছে তার হয় নি কোন সঙ্গীর প্রয়োজন!
এই চলার পথে কেউ করেছে অবহেলা,
আবার কেউ হয়েছে আপনজন,
অনেকে করেছে ছলনা,
দু... মুঠো ভাতের জন্য তার শরীর
কে নিয়েছে নিংড়ে,
নিজের লালসা মিটিয়ে ছুঁড়ে
ফেলেছে আস্তাকুঁড়ে,
তবুও সে হারেনি এগিয়ে চলেছে মনের শক্তি জোগাড় করে !
কত কি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছে নিজের অন্তরে একা একা পথ চলতে গিয়ে!
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কদর্য
রূপের পরিচয় রাতের অন্ধকারেই মেলে!
একা একা জীবন পথ চলা
এবং নিজের অস্তিত্ব কে টিকিয়ে রাখা
যে কতটা কঠিন! তা বোঝা যায়
রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হলে!
