কবিতা স্ট্রিট
কবিতা স্ট্রিট
এক কবিতা থেকে অন্য কবিতায়
যাওয়ার চওড়ারাস্তার গোলাম আমি।
তারই মাঝে রোড-ক্রশিং,
জ্বলন্ত লাল-সবুজ-হলুদ সতর্কতা,
ট্রাফিকের ক্যাকোফোন,
মুষড়ে পড়া গভীর মুখ,
শান্ত ছেলেটার হাতে ভেজা রুমাল,
চলন্ত বাসের ফুটবোর্ডে ঝুলন্ত বডিগার্ড,
বুড়ো ভদ্রলোকটির হাতে ডাঁট ওয়ালা ছাতা,
রোগা কন্ডাকটরের হেঁড়ে গলায় চেঁচানো,
আর বাসের হাতলে বেঁধে রাখা অজস্র লাশ,
আরও অনেককিছু।
আবার সেই রাস্তাই নিশীথের অন্ধকারে
চোর ডাকাত পোষে,
কালো হাতের কালো কারবার,
নির্দ্বিধায় সহ্য করে।
কয়েকটা কুকুর এধার থেকে ওধার,
শুধুই চিৎকার করে গেছে এতকাল।
তারা জানত,কত নোঙরামো হয় এই স্ট্রিট লাইটের ফাঁকে,
কত নিম্নগামী মস্তিষ্ক এখানে প্রতিরাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়,
কত তারাকে সাক্ষী রেখে নির্লজ্জ হয়ে কত মানুষের অঘটন ঘটায়,
কত জীবনের হিসেব গুলিয়ে দিয়ে চৌপট করে দেয়।
এই দুই রাস্তাতেই আমার অবাধ গমনাগমন,
যেখানে সময়-আবহাওয়া নির্বিশেষে একটা মানুষ-
চিরকাল থেকে গেছে।
আমার মনের মানুষ বলতে আমি তাকেই খুঁজি।
দাঁড়ি গোঁফ,গালে বসন্তের দাগ,
একটা ঝুলি,যেখানে জীবনের সব খেতাব রাখা,
একটা ছোট্ট বটুয়া, তাতে কিছু খুচরো পয়সা।
সারাদিন আবোলতাবোল কবিতা বলে,
নিজের লেখা গান গায়,
নিজের কবিতাতেই সাবাসি দিয়ে ওঠে,
আর রাতে পচা-ধুলো মাখা রুটি খেয়ে
এই রাস্তার নৃশংস কাণ্ডকারখানা প্রত্যক্ষ করে।
আর সেই কথাগুলোকেই গুছিয়ে নিয়ে
পরদিন কবিতা ও গান বাঁধে,
আর চিৎকার করে শুধু কাঁদে।
এই রাস্তার উপরিভাগে,
পৃথিবীর ইতিহাসের কান্না ভেসে বেড়ায়।
তাই,এই রাস্তার গোলামের পদে নিযুক্ত আমি।