তবুও ফিরতে হয়
তবুও ফিরতে হয়


~~ তবুুও ফিরতে হয়~~
© প্রসেনজিৎ ঘোষ
আজও
মাঝরাতে যখন জীবনের শেষ ট্রেন হুইসেল দিয়ে জানান দিয়ে যায়,
আর
শীতল ঠান্ডা বাতাস হঠাৎ করেই এসে কানেকানে বলে যায়
এবার এগোতে হবে... সময় যে বড্ড কম।
জানো!
আমার তখন, তোমার সেই কথা গুলো, খুব মনে পড়ে যায়।
তোমার লাবণ্যময়ী মুখ, নরম স্পর্শ, সেই খুলে রাখা অবিন্যস্ত চুলের আন্দোলন,
যেন এক টানে, আমায় টেনে নিয়ে যায় সেই আদিমতায়,
ঠিক সেইখানে,
যেখানে স্মৃতিরা, বারবার জড়িয়ে ধরে নতুনতাকে।
তোমার মনে পড়ে?
প্রথম বার, তোমার সাথে যখন কথা হয়েছিল,
সেদিন আমি হাসপাতালের বিছানায়, ভোরের অপেক্ষায় প্রহর গুনছি।
তুমি তোমার হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলে নতুন সূর্যের মতোই।
এরপর অনেকটা বসন্ত কেটেছে ,জোয়ার ভাটায়।
সেদিনের ভোরের, সেই মুকুলের কুড়ি,
সময়ের লালনে পালনে ডালপালা ছড়িয়ে একসময় মহীরুহ হয়েছে,
সে মহিরূহের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছে না জানি কত পথিক।
পাখির দল বাসা বানিয়েছে, উরে গেছে আবার।
বেড়েছে ভালোবাসা আর ভালোবাসার দায়িত্ববোধ।
একেক সময় পাগল করা ঝড়ও এসেছে
উপরে ফেলতে চেয়েছে সমস্তটা।
তবুও মাটি আকরে থাকা শক্ত ভীতটাকে নাড়াতে পারেনি একটুও।
পারেনি বিশ্বস্ততা ভঙ্গের, দুঃসাহসে হাত মেলাতে।
ভেবেছিলাম, সম্পর্কের অটুট বন্ধন
ঠিক হয়ত অন্ধকারকে আটকে দেবে ভালোবাসার দরজায়।
ভাঙন নামের শব্দটা আমাদের অভিধান বহির্ভূতই থাকবে
অসীম নীল আকাশের মতন কেটে যাবে এভাবেই এক মহাকাল।
আর ছন্দপতন , সেতো শুধু কাব্যেই হয়।
বুঝিনি, অনুভূতিরাও মাঝে মাঝে বিদ্রোহ দাবি করে।
অনেকটা জায়গা জুড়ে একাকিত্বও থাকতে চায়।
ফাঁস দেওয়া বাঁধনটাই মাঝে মাঝে মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে।
মৃত্যু - কি সহজ একটি শব্দ তাইনা!
আপাত নিরীহ বেদনা মিশ্রিত এই একটা শব্দই পারে
কি সুন্দর সব কিছুর সমাধান করে দিতে পারে!
সমস্ত ব্যাথা, বেদনা,উপসম, গ্লানি, ভাঙ্গা মনের ভেতরে বারবার উথলে ওঠা কান্না, শত্রুতা মিত্রতা, হিংসা, ভয় পরাজয়, ভালোবাসা,দ্বন্দ্ব, পরিবার, ক্লেশ এবং যাবতীয়...
সব কিছুই কি সহজে মুছে যায়।
মৃত্যু নামক অচেনা পথের হাত ধরে।
যে পথের শেষটায় জুড়ে থাকে এক অন্তহীন শূন্যতা, যে শূন্যতাকে জড়িয়ে থাকে মিশমিশে কালো অন্ধকার।
অন্ধকার! হয়তো জীবনের এক পর্যায়ে সকলের কাছে এক শিক্ষণীয় অধ্যায়।
আবেগ, লজ্জা, অনুভূতি আর কষ্টের তারতম্যের এক দারুন প্রকাশ।
যে প্রকাশে লুকিয়ে থাকে এক নতুনের সূচনা।
কখনো ভোরের আলোকে প্রশ্ন করে দেখেছো?
কোন সে প্রতিযোগিতা...
যে খেলায় সে প্রতিদিন অন্ধকার কে হারিয়ে চলে অবলীলায়।
আবারও একবার শেষ হয় একটা নিস্তব্দ রাতের।
যে রাত না জানি কত শত বালিশ ভেজা কান্নার নিঃসঙ্গ সাক্ষী।
শুনেছি জীবনটা অনেকটা দাবানলের মত
একবার তাতে আগুন ধরলে বাতাস তখন অনুঘটকের কাজ করে।
তাইতো আজও কলকাতার উত্তরে সেই অচেনা রাস্তায় মানুষ নিজেকে বিকিয়ে চলে অহরহ।
পেট চালায়।
আর তাইতো -
মহাজনী শাসন আজও কায়েম করে, সমস্ত পৃথিবীকে।
মাঝে মাঝে ভালোবাসার মত এই সমাজ, এই পৃথিবীও কেঁদে ওঠে
একটু যত্ন একটু ভালোবাসা
একটু স্পর্শ চায়।
যেভাবে বর্ষার প্রথম জলের স্পর্শ চায় গ্রীষ্মের দাবদাহে
পুড়ে যাওয়া অসংখ্য তরুদল।
ঠিক অনেকটা সেই রকম।
যে স্পর্শ অনেকটা নিঃস্তব্ধ রাত, নিঃশব্দ কান্না, পোরা মনের আগুন, কিংবা বর্ষার প্রথম জল কোনো কিছুতেই পূর্ণ হয় না,
তোমায় ছাড়া!
তুমিও হাত বাড়ানোর চেষ্টা হয়ত করোই ,
আর ঠিক
মাঝরাতে তখনই শেষ ট্রেন অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে
আর বারবার জানান দিয়ে যায়
সময় বড্ড কম।
এবার যে ফিরতেই হবে।।।