তানাবাতার কথা
তানাবাতার কথা
আজ তোমরা কেউ দোয়েল পাখিদের দেখেছো?
দেখো নি তো? ঠিক জানি।
আজ তো ওরা কেউ আসবে না।
আজ ওরা সকলে গিয়েছে
স্বর্গ নদীর ওপরে সেতু বাঁধতে,
তানাবাতার জন্য।
মর্ত্য মানব চি-এন-নু তার ভালবাসার জন।
সে যে থাকে নদীর ওই পারে।
বড়ই অশান্ত সে নদী,
নৌকো ভাসে না তার জলে।
কিভাবে যাবে তানাবাতা
নদী পেরিয়ে সেই দয়িতের কাছে!
প্রেমপূজারী চি-এন-নু বড় কষ্টে আছে আজ,
প্রিয়া কে সে পায়নি কাছে কতদিন।
তানাবাতার দু চোখ ভরা জল।
ডাক পাঠালো সে দোয়েল পাখিদের।
যেথায় যত ছিল দোয়েল, সবাই এল ছুটে,
ডানায় বেঁধে ডানা, স্বর্গ নদীর ওপর
সবাই মিলে বাঁধল সে এক সাঁকো.
সেই সাঁকোতে দাঁড়িয়ে তানাবাতা —
ডাক পাঠালো চি-এন-নু কে প্রবল উচ্ছ্বাসে।
যুগল মিলন রচল দোয়েল সাঁকো।
৭ই জুলাই, বছরের এই একটিমাত্র দিনে
তানাবাতার ডাকে—
সারা বিশ্বের দোয়েল পাখি যত,
সেতু বাঁধতে স্বর্গ নদীর ওপর আসে দলে দলে।
সূর্য যখন অস্ত যাবে আজ , সন্ধ্যা নেমে আসবে দিকে দিকে,
ঠিক তখনই তাকিয়ে দেখো সাঁঝ আকাশের গায়ে,
স্বর্গ নদী উতল হল ওই,
বুকের ওপর দুলছে যে তার দোয়েল সাঁকোর হার ।
তানাবাতা তানাবাতা মিষ্টি তোমার নাম
আজও লেখা শ্রবণা তারার গায়ে ।
তোমার নামে চিঠি লিখে দিলাম যে এক
মেঘ পিওনের হাতে,
সেই চিঠিটা পৌঁছে যাবে ঠিক
আকাশ পাড়ায় তোমার ঠিকানায় ।।
এটা শ্রবণা তারার গল্প। ।জুলাই মাসের মাঝামাঝি রাত সাড়ে আটটা বা নটা নাগাদ দক্ষিণ দিকে মুখ করে আকাশের দিকে তাকালে নজর কাড়বে স্নিগ্ধ সাদা রঙের ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা, যা পূর্ব দক্ষিণ কোণ থেকে শুরু করে সারা পুব আকাশ চিরে চলে গেছে উত্তর দিকে। দক্ষিণ দিকে সোজা তাকালে দেখা যাবে বৃশ্চিকরাশিকে, পশ্চিম দিকে মুখ করে রয়েছে । দক্ষিণে বৃশ্চিকের লেজ থেকে ছায়াপথ ধরে পুবে উঠে এলেই দেখা যাবে টি পট আকৃতির ধনুরাশিকে । ধনুরাশির উপরেই একটু উত্তর দিক ঘেঁষে রয়েছে আকুইলা বা শোন মন্ডল।।অলটেয়ার, অলসাইন ও টেরাজড এই তিনটি উজ্জ্বল তারা নিয়ে এই নক্ষত্র গঠিত। এই তিনটি তারার মধ্যে মাঝেরটির নাম অলটেয়ার বা শ্রবণা। শ্রবণা তারাই হল তানাবাতা। গ্রিক পুরাণে বর্ণিত এই তারার গল্প টি ভারি চমৎকার। সেই গল্পই বলতে চেষ্টা করেছি এই কবিতার মাধ্যমে।
চিন, জাপানের মানুষ রা বিশ্বাস করত যে, বছরের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনটীতে সারা পৃথিবীতে একটাও দোয়েল বা ম্যাগপাই পাখির দেখা পাওয়া যায় না। সেদিন তারা সকলে স্বর্গ নদীর ওপর সেতু বাঁধতে চলে যায়। জাপানে ওইদিন নানা রকম উৎসব হত। কেউ কেউ নদীর জলে তানাবাতার নামে কবিতা লিখে ভাসিয়ে দিত। এই প্রথা এখনও আছে কিনা জানি না।