শাড়ি
শাড়ি
দোকানী দেখালো নীল বালুচরী সবুজ পাড়,
আমি দেখলাম সর্বনাশী ফুলেশ্বরী নদী,
ডুবে যাওয়া মানুষ, ডুবন্ত ক্ষেত আবাদি,
হারিয়ে যাওয়া হাত আর একরাশ অন্ধকার।
দোকানী মেলে ধরল ডুরে কাটা ধনেখালি,
আমার মনে পড়ে গেলো শরীর জুড়ে আঘাত,
ক্ষতর জ্বালা, ফেলে আসা অতীতের অভিসম্পাত
আর পায়ের নিচে লুকিয়ে থাকা হতাশার চোরাবালি।
দোকানী বের করে আনলো বেগুনি তসর,
রংটা বড় অচেনা লাগলো, কেমন যেন মেকি ধরণ
সেই ভেকধারী ঝুটা স্বপ্নের সওদাগরের মত চিকন
মোলায়েম স্বভাব কিন্তু চোখে চিকচিক করা বিষ নজর।
দোকানী খুঁজে খুঁজে নামালো জংলা ছাপা সুতি শাড়ি।
ঠিক যেমন মা রোজই হাঁড়িতে চাপাত শাপলা, পুঁই ডাটা,
কলমি, হেলেঞ্চা, পাট,থানকুনি, কিংবা ধনেপাতা বাটা
আর কখন সঙ্গে কিছু কুমড়ো ফুল আর
ডালের বড়ি।
এবার দোকানী ধরালো হাতে ,লাল রঙা তাঁতের শাড়ি
ঠিক যেন তেরঙ্গা পতাকায় মোড়ানো বাবার শরীরে
লেগে থাকা রক্তের ছোপ, চোখে পড়ছিল বারেবারে,
যুদ্ধ থেকে সেই শেষবারের মত বাবাও ফিরেছিল বাড়ি।
দোকানী বলল,' এই নিন হাতে বোনা ঢাকাই জামদানি'।
আমি তাকিয়ে দেখলাম, রংটা খুব সুন্দর, কাঁচা হলুদ
যেন মাখানো হয়েছে কনেকে , জমিতে ছিটে ছিটে সিদুর,
বললাম হেসে, 'এই রং টিকবে না, এ আমি নিশ্চিত জানি'।
দোকানী বললো হাল ছেড়ে,' কি রং দেবো আপনিই বলুন'
আমি বললাম সাদা রঙের কিছু আছে কিনা দেখুন।
অনেক বেছে তুলে নিলাম সাদা একখান খাদি কাপড়
আর কিছু পড়ল না মনে, পরে দেখলাম মানিয়েছে এক ঘর।