কংসাবতীর কথা
কংসাবতীর কথা


( লেখাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পাথরা নামে একটি জায়গার পটভূমিতে লেখা। অঞ্চলটি স্মরণাতীত কাল থেকে কংসাবতী নদীর আশীর্বাদধন্য। মধ্যযুগীয় বাংলায় আলীবর্দী খানের নায়েব তথা এই অঞ্চলের তৎকালীন জমিদার বিদ্যানন্দ ঘোষালের তত্ত্বাবধানে এখানে বহু মন্দির নির্মিত হয়। বর্তমানে তার প্রায় কিছুই তেমন অবশিষ্ট নেই। বেশিরভাগই অবহেলা আর অনাদরে বিলীন নদীবক্ষে। তবু যেটুকু নদী ভাঙন অগ্রাহ্য করে টিকে আছে আজও, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেহাত কম নয়। পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মানচিত্রে এটি তাই এক উজ্জ্বল নাম।)
"ও মেয়ে নাম কি তোমার?" , বললো হেসে-" কংসাবতী"।
"বলি চললে কোথা ব্যস্ত হয়ে , জিরোও খানিক , কথা বলি।"
না জানি কেন তারপরেতেই অভিমানে কাঁপলো খানিক ,
বললো মেয়ে ," শুধিয় না আর ,লোকে বলে কীর্তিনাশা আমি"।
বললাম আমি ,"তাই কেন হবে , তুমি না গড়েছ কত নগর গ্রাম ,
তোমার বুকেই লেখা হয়েছে দিনবদলের গান"।
উড়িয়ে দিয়ে সেসব কথা , মেয়ে প্রশ্ন করে আমায় ,
"যে জীর্ণ শিবমন্দিরে আছো বসে , বলতো সেটি কোথায় ?"
ভাবলাম বুঝি বোকা ভেবেছে, বললাম- "এতো উত্তর সোজা,
এসেছি মন্দির ঘেরা পাথরায়, যার অনেকই আজ ভাঙা। "
মেয়ে বললো ফিসফিসিয়ে , " কালে কালে আমার গর্ভে বিলীন সেসব কীর্তি।"
চমকে উঠে জেরা করতেই ,জানালো সে কাহিনী শোনার আর্জি।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো , মেঘের পরে মেঘ ,
উঠলো জমে কথার পাহাড় ,গল্প হলে শেষ ।
সেই ইতিহাস নেইকো লেখা ছাপার হরফে,
আজও দুষছে নদীকে সবাই, তার কান্না ক'জন শুনেছে ?
জানালো সে একদা রাজৈশ্বর্য্য হয়েছে ব্যয়িত মন্দির নির্মাণে ,
কালে কালে গেছে মান ,গেছে অর্থ ,গেছে গৃহশান্তি ,নজর পড়েনি রক্ষণাবেক্ষণে ।
তবু লোকে দোষে শুধু নদীকেই , কেন সে প্রগলভা , চঞ্চলা
শুধালো আমাকে , যাবে কোথা দিয়ে সে , পথে পথে পেলে বাঁধা ,
এর পরেতেই দস্যি মেয়ে কপট রাগে ওঠে ছমছমিয়ে
বললে " আমার দেরি করে দিলে, কাজ নেই আর জিরিয়ে"।
এই না বলে কংসাবতী চললো ছুটে সূর্যি ডোবার পথে ,
যে পথে একদা ভেসেছে সওদাগরি সপ্তডিঙ্গা ,তাম্রলিপ্তের পথে।