STORYMIRROR

Munmun Mukherjee

Tragedy Classics Fantasy

4  

Munmun Mukherjee

Tragedy Classics Fantasy

মৃত্যু মিছিল

মৃত্যু মিছিল

2 mins
284


ওয়র্ক ফ্রম হোম, অনলাইন স্কুল… যাপনের নতুন অনুষঙ্গ।


ভার্চুয়াল মিটিং, ভার্চুয়াল আড্ডা, ভার্চুয়াল তর্ক, ভার্চুয়াল মেধাচর্চা, কোলাহলহীন কফি হাউস- অগ্নিগর্ভ সোশ্যাল মিডিয়া… নব্য যাপন নিয়ম।

এক কোষী মহামারীর হাতে বন্দী জীবন।


ব্যাকড্রপে…

সুশান্তের মৃত্যু তত্ত্ব, বিষণ্ণতার চুলচেরা বিশ্লেষণ, নেপোটিজমের বংশোদ্ধার,

আর উপসংহারে… আত্মহত্যা? সে তো দুর্বলের ভূষণ।

ডিপ্রেশন? সে আবার কী? আদতে সবটাই পাগলামোর লক্ষণ।


বিজ্ঞজনেদের গবেষণা, আহাজারি, চায়ের কাপে ঝড়,

সিগারেটের ধোঁয়া পেরিয়ে পরিচিত, অর্ধ-পরিচিতদের মৃত্যু মিছিল

এখন অনেকটাই দৃশ্যমান।


মিছিলের চতুর্থ সারির বাঁদিক থেকে ঠিক অষ্টম জনই সুশান্ত,

নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে এদিকে। মুখে হাসি, দৃষ্টিতে আমন্ত্রণ।

সুশান্তের ঠিক পেছনের ছেলেটি?

চেনা যায় তাকে?


ছেলেটির সেরকম কোন ডিপ্রেশন ছিল না।


আকাশ ছোঁয়ার সাধ বা সাধ্য সেসবও ছিল না তার। বিশ্ববিদ্যালয় শেষে মোটামুটি গোছের একটি চাকরিও যোগাড় করে নিয়েছিল সে।

বাবার ওষুধ, মায়ের অপারেশন, মাস শেষে বাড়ি ভাড়া, ইলেকট্রিকের বিল এসব নিয়েই বেশ ছিল সে।

এই কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত। তারপর? ইথারের ওপার থেকে ভেসে আসে বসের সহমর্মী কণ্ঠস্বর। জানায়, করোনা কালীন এই দুর্যোগে চাকরি হারাবে হয়তো অনেকেই, সেই অনেকের মধ্যে আজ লটারিতে শুধু তার নামটাই উঠেছে। সাইড টেবলে রাখা জলের গ্লাসের সবটুকু জল এক নিঃশ্বাসে শেষ করে এগিয়ে চলে ছেলেটি মিছিলের দিকে… ছেলেটির ভালো নাম ছিল অনির্বাণ।


অনির

্বাণের দু সারি পরের জন রোহিণী। হরি মিত্তির লেনের শেষ প্রান্তের সেই যে হলুদ বাড়িটির সিঁড়ি পেরুলেই বসার ঘর।

ঘরের ঠিক মাঝখানে অবনত চোখে তাকিয়ে আছে রোহিণী। আজ তার বোর্ডের রেজাল্ট বেরিয়েছে।

বসার ঘরেই তাই বসেছে বিচার সভা। বাংলায় ঊনআশি, লিটারেচরে পঁচাত্তর। ম্যাথসে চৌষট্টি, বিজ্ঞানেও লেটার নেই। বংশের সম্মান ধুলোয় লুটোপুটি। মিছিল ততক্ষণে হলুদ বাড়িটির পাশ ঘেঁষে হরি মিত্তির লেনের পাশের গলির দিকে এগিয়ে গেছে। কিশোরী একছুটে বসার ঘর পেরিয়ে সিঁড়ি, সিঁড়ি পেরিয়ে উঠোন, উঠোন পেরিয়ে রাজপথে পা রাখার আগে একবার পেছন ফিরে তাকালো; অতঃপর নিশ্চিন্তে এগিয়ে চলল মিছিলের দিকে।


কাননের পাশের জন? সে তো মুক্তি। পেশায় প্রকৌশলী, পড়াশোনায়ও শুনেছি বেশ প্রখর! এই তো বছর দুয়েক আগে ধুম ধাম করে বিয়ে হয়েছিল। ছেলেটি ওর ছোটবেলার খেলার সাথী, পেশায় ডাক্তার। তর তর করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠছিল দুজনেই। পাড়ায় তো ‘পারফেক্ট কাপল’ এই তকমাও মিলেছিল। অথচ, আজ সকালেই সেও… শোনা যাচ্ছে, বিয়ের পর থেকেই শারীরিক-মানসিক অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে তাকেও।


শেষ বিকেলের আলো গায়ে মেখে অনির্বাণ, রোহিণী, মুক্তি, আরও অনেক অনেকের হাতে হাত রেখে মিছিলের মধ্যমণি হয়ে এগিয়ে চলেছে সুশান্ত- ঠিকানা বিহীন, অনির্দিষ্ট এক গন্তব্যের পথে। যাকে তোমরা বলছ আত্মহত্যা, আর ওরা বলছে অনিবার্য সমাধান।


করোনা কালীন অগুনতি মৃত্যুর ভিড়ে এসব মৃত্যু আর তেমন দাগ কাটে না আজকাল। এসব ক্ষেত্রে আত্মহত্যা নিয়ে খুব একটা সন্দেহের অবকাশও যেন থাকে না। অথচ এদের নিয়ে নেই কোন আলোচনা।


তারকা হীন মৃত্যুগুলো কি আর বিখ্যাত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়???


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Tragedy