অদ্বিতীয়া
অদ্বিতীয়া


কাল রাতে ঈশ্বর এসেছিলেন আমার চাঁদ বাড়িতে।
শান্ত, সমাহিত, স্থিতধী, অথচ বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দু’টি রেখেছিলেন আমার দু’চোখে।
অতঃপর অমায়িক হেসে জানালেন, “তুমিই সেই- এক এবং অদ্বিতীয়া। তুমিই সেই মনোনীতা।”
আহা!
আমার আপাদমস্তক তির তির করে কাঁপছিল যেন। আমি আনন্দিত, উদ্বেলিত, বিগিলিত, উচ্ছ্বসিত।
“এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল, প্রভু। তবুও কেন হয়েছিল মতিভ্রম? সেই তো ফিরে আসতে হ’ল, তবে প্রথমেই কেন আসা হ’ল না?”
ঈশ্বর বললেন, “আসলে তারাদের র্যাম্প ওয়াকের শো-স্টপার হিসেবে আমাদের প্রথম বিবেচনায় ছিল, অরুন্ধতী..”
“অরুন্ধতী?” নিজেকে স্থির রাখার চেষ্টা করতে করতে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলাম আমি।
“কেন নয়? ওঁর দেখানো পথেই তো এগিয়ে চলেছ তুমি...” ঈশ্বর থামলেন কয়েক মুহূর্তের জন্য,
“তবে লাল পাড় সাদায় এমন শরীরী উদ্দামতার আভাস নিয়ে প্রকট হওয়া আসলে অরুন্ধতীর এক্সপার্টীজ নয়,
তাছাড়া ওর চারপাশে নেই তোষামোদের ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। তাই বিচারক মণ্ডলীর রায়ে তুমিই শো-স্টপার।”
“আমার যশ, খ্যাতি, ট্যালেন্ট, প্রফেশন, স্ট্যাটাস, স্বামী-সুখ, সন্তান-ভাগ্য, আমার এক্সক্লুসিভনেস... এসব বুঝি কিছুই নয়? এত কিছুর ভিড়ে অভিশপ্ত অরুন্ধতী! আমার প্রেস্টিজের কথাটি একবারও বিবেচনায় এল না? শুধুমাত্র অরুন্ধতীর দেখানো পথটিই গুরুত্ব পেল?”
ঈশ্বর সেই শান্ত, সমাহিত দৃষ্টি মেলে দ্বিতীয়বার আমার চোখে গাঢ় তাকালেন।
আহা!
কী এক উচ্ছ্বাস প্লাবনে ভেসে গেলাম আমি। ডুব সাঁতার কাটতে কাটতে দেখলাম, জলোচ্ছ্বাসের সাথে এক পা দু’পা করে এগিয়ে আসছে আমার অন্ধকার অতীত!
“ওমা! সে কী? এ যে মেয়ে!
তাও আবার কালো!
চোখ গুলো ডাগর বটে
হাইটটা কিন্তু বেশ খাটো!”
আমি চিৎকার করে বলি, “তফাৎ যাও! কিচ্ছু জানো না তোমরা। আমিই এক এবং অদ্বিতীয়া! আমি সর্বশ্রেষ্ঠা... আমি মনোনীতা, ঈশ্বর সাক্ষী!”
কিন্তু কোথায় ঈশ্বর?
আমার চারপাশে শুধু চাপ চাপ অতীত-অন্ধকার। অন্ধকারকে আমার বড্ড ভয়, জানো? তাই নিজেকে একটু একটু করে লাইম লাইটে এনেছি। যাতে আমার কালো রঙ ঢেকে যায় আলোর রোশনাইয়ে। সেই আলো কেড়ে নেবে অরুন্ধতী?
আমি-আমি মনোনীতা, আমিই অদ্বিতীয়া। আমি এক্সক্লুসিভ, তাই প্রতিবার প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামি আমি “তারা”দের সাথে।