লাফা
লাফা
পশ্চিম বঙ্গের মানুষ হলেও উত্তর বঙ্গের বাসিন্দা,
পোলিয়া, রাজবংশী, বাহে, তোরাই রাখিস বাইন্দা।
ভালোবাসার বাঁধন যে রে, এ তো বড়ই মজবুত,
বোকা বলুক আমায় সবাই, ধরুক আমার খুঁত।
পাটা শাকের খাটা আর লাফা শাকের প্যালকা,
শরীর মজবুত করে যেমন তেমন রাখে হালকা।
উত্তর বঙ্গের মানুষ গুলান খায় বটে নাফার ঝোল,
এই কারনেই উয়াদের মুখে এমন মিঠা মিঠা বোল।
মুখ দিয়ে মধু ঝরে যতোই খাক না তারা ঝাল,
বাঙাল লোকেও হার মানে, নাক মুখ হয়ে যায় লাল।
ঢডামামা রুটি খেতো ইয়া মোটা মোটা চারটা,
যত রকম তরকারি থাক, তাকে খুশী করা যেতো না।
সাথে পিঁয়াজ ও শুকনা মরিচের ছানা চাই এতোটা!
আসল কথা বাঙালদের রান্না ওনার পছন্দ হতোনা।
চাষের বেশি খরচ নাই এই লাফা শাকের বেলায়,
নাফা তাইতো "গরীবের ফসল" এই নামটা পায়।
ও বাহে ভাই, বলো দেখি মুই কি কিছু ভুল বলিছু ?
সব শাকের চেয়ে নরম কি না লাফা, তুই কি বলিছু ?
দুইটা কাঁচা মরিচ আর লাগে কয়টা কোওয়া লসুন,
একটু ফোঁট্টা তুরির ত্যাল, আর এট্টুখানি হলুদ নুন।
এক থাল ভাত উয়ার দ্বারা সাপটায় খাওয়া যায়,
বাড়ির লোক আর আসুক ঘরে যতোই কেন সাগাই।
কিন্তু দুঃখের কথা তোক বলবো কি আর ভাই,
তোদের নিয়ম মতো আমি ইটা রান্না করতাম লাই।
ঘরের লোক তাই এই শাক পছন্দ করতো নাই।
কালোজিরা,কাঁচালঙ্কা ফোঁড়নে দেওয়াটাই ছিল ভুল,
নিরামিষ গন্ধটাই ভালো না লাগার কারণ ছিল মূল।
এই নাফাকে লাফা বলে লাফায় লাফায় বাড়ে তাই,
আড়াই হাজার বছর আগে খেতো লোকে চিন, রোম,
ভারত, গ্রীস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইথিওপিয়ায়।
রসুন, পেঁয়াজ, মটরের মতো এটাও শীতের ফসল,
একটু একটু ছায়া লাগে, লাগেনা মোটেও বেশী জল।
আগুনকে তোরা অগ্নি বলিস শুনে সবাই হাসে,
হুড়ুম কথাটা কয়জন জানে! কিন্তু মুড়ি ভালোবাসে।
লাফা শাকের গুণের কথা যদি জানে সকল লোকে,
চাষ করবে, খাবে, উপকার পাবে, গল্প করবে,
আর ধন্যবাদ দিবে সকল রাজবংশী ভাই বোনকে ।
