জীর্ণতার বেদন গাথা
জীর্ণতার বেদন গাথা
কবেকার জং ধরা তালা ঝুলছে
বন্ধ দরজার কড়া ধরে। দরজার ওপারে
হয়তো কোনোদিন, ছিল এক আস্ত প্রাসাদ,
হাসি, কান্না, আলো, গানে ভরা।
আজ পড়ে আছে নিস্তব্ধ এক পুরী।
স্থানে স্থানে ভেঙে পড়া প্রাচীরের
ফাঁক ফোকর গলে অনধিকার প্রবেশের ইশারা ।
হে পথিক! ক্ষণেক দাঁড়াও এই স্থানে,
একবার দেখে যাও এসে,
এককালে কি ছিল এখানে।
মোরাম বিছানো রাস্তার দুপাশে
কোনো এক সময়ে ছিল হয়তো সুসজ্জিত বাগান।
সেখানে আজ আদিম যুগের আহ্বান।
শ্বেতপাথরের পরীগুলোর ভগ্নদশা ।
কোথায় হারাল বলো তাদের সেই মোহময়ী মাধুর্য্য! ডানা ভেঙে পড়ে আছে তারা আজ
ব্যথাতুর জীর্ণ দেহ নিয়ে।
কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে উঠে এসো এই প্রশস্ত চত্বরে, পায়ে পায়ে এগিয়ে চলো সামনে।
ওই দ্যাখো, বিশাল হলঘর এক।
প্রাচীন বনেদীয়ানার নিদর্শন বটে। বিবর্ণ যত অয়েল পেন্টিং, সাক্ষ হয়ে আছে আজ
বিগত দিনের বিপুল বৈভবের। হে পথিক, এসো, ধুলোভরা মর্মর সোপান বেয়ে উঠে এসো দোতলায়। চওড়া দালান, পুরু ধুলোর আস্তরণে আচ্ছাদিত ।সারি সারি ঘর, ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। ওগো পথিক, এই নিস্তব্ধ নির্জন প্রাণহীন পুরী আজ
উৎকর্ণ হয়ে আছে তোমার চরণের ধ্বনি
শ্রবণের অপেক্ষায় ।একী! সহসা থমকে গেলে কেন? কি দেখো অমন করে ওগো প্রিয় অতিথি আমার! ফাটল ধরা দেওয়ালের ফাঁকে
অঙ্কুরিত এক নবীন চারা, জন্ম নিয়েছে প্রাচীনতার পাঁজর ভেদ করে। একী বিস্ময়!
না। নেই কোনো বিস্ময়।
পুরাতন গর্ভেই জন্ম নবীনের,এ সত্য চিরদিনের।
আর কিছুকাল পরে
থাকবেনা এই ভগ্নদেহ প্রাসাদ খানি।
সেজায়গায় গড়ে উঠবে আর এক
বিলাস বহুল প্রাসাদসম ঝাঁ চকচকে এক
শপিংমল। সেই মলে এসো তুমি পথিক,
সবান্ধবে, রইলো আগাম নিমন্ত্রণ।
বিদায়. হে আমার পথিক।
