এক বাধাহীন জীবন
এক বাধাহীন জীবন
আমি বলেছিলাম,রহস্যময়ী তোমাকে নিয়ে একটা ভালো কবিতা লিখবো ভাবছি
তুমি তার উত্তরে আমাকে বিভ্রান্ত করে অবাক হলে খুব-
কবিতা তো কোন সাজানো বাগানে রঙিন পাতাবাহার নয়
আবেগী মনের মুগ্ধবেশের অপরূপ গনকপাথর
যা হৃদয়বেগের মায়াবী চিলেকোঠায় ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে শব্দসঙ্গমে খুব নরম হয়, ভেজা হয়
তারপর নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে মধ্যাহ্নে অথবা রাতের সেই সময়ে যখন, মানবীর শরীর হয় দেহফল
প্রেমের ভরে আক্রান্ত কিশোরী অবোধ আঙুলে ভাবনাটায়ে পিছল কন্ঠ রাখে
এক একটা অক্ষর যেন বিলম্বিত জ্যাকেটে অপবিত্র শ্বেদ রাখে
দহনের বৈসাম্যের গড়ে ওঠা কুয়াশার বর্তুল বিবেক
তখন কবিতা এসে ধরা দেয়, বলে: স্বপ্নবোধের সূত্র ধরে তোমাকে লেখা আমার
নিবেদন ততটা মোহনীয় নয়, অবাধ্য মাতাল শাসক শোকগাঁথা পুড়িয়ে
আমারই সমুদ্র ভরা তরঙ্গে একটা সস্তা পালতোলা ডিঙি ভাসিয়ে উজানে
যাবে, যেখানে মেয়েটি ভুলভাল ছবি আঁকে!
ছবি আঁকার মাঝে মাঝে সে গল্প লিখতো যখন
তার কান্না ভরা কাহিনী কখনও ভীত
কখনও বিশুষ্ক মেয়েটির কথা মনে করিয়ে দিত
রাত বাড়ার সাথে সাথে যে একাকী হয়, জোছনা আর
প্রগলভ নক্ষত্র পাশ কাটিয়ে সে কথা বলে জান্তব-অসুরের সাথে
জরী সিঁদুর ঝুমঝুম করে ছড়িয়ে দেয় অস্ফুট ভোরকথা
কিছুটা বিরাগ হয়ে, তোমার দিকে তাকাবে যখন
আমার এই পাড়ি দেওয়া মহাসময় অন্তিম রহস্যময়ীর
ঠিক এখানে নিশ্চল থাকুক, তা চাইবার উৎপ্রেক্ষা
আমাকে ভোলাবে কবিতা না লেখার যাতনা।
তার ব্যক্তিগত সুখে কবির দুঃখ
মেলাতে চাই না আমি
তার অবাক পেন্সিলের আঁচড়কে ভুলভাল বলার দুঃসাহস যদিও
কবির ক্ষুদ্রতা,তবুও কবি এই ভেবে প্রবোধ দেবে নিজেকে যে
মেয়েটি তার ছবি আঁকেনি কোন!
তুমি বলেছিলে- কবিতার ধরন কেমন হতে পারে,
আমার ভালো লাগাই কি মূল প্রেরণা নয়!
রবি ঠাকুরের চেয়ে যদি বিষ্ণু দে আমার ভালো লাগে তবে
আমি কি অগোত্রের মালতি ফুল অথবা শকুন্তলার ভুলে যাওয়া দুষ্মন্ত হয়ে যাবো; কবিতা কি এতটা নির্মম হবে-
পাঠক কি অবাধ স্বাধীনতার নামে কবিকে করবে সম্ভ্রমহীন!
এসব দারুণ তর্কে মেতে তোমার মোবাইলের চার্জ ফিকে হয়ে এলে
তুমি যেতে যেতে, করুন বেহালায় তানপুরা বাজিয়ে বলতে-
আবার কবিতা পড়বো, আবারও কবিতার মেয়ে হয়ে যাবো!
আহা! কবিতার মেয়ে, আহা! মধ্যরাত
সাঁড়াশী দিয়ে খুঁজে খুঁজে অক্ষর তুলে তুলে এক একটা পদ্য
কড়া লিকারের অবোধ চমক খাটের তলায় থাক
হঠাৎ জোরে নামা বৃষ্টিতে তোমার চোখের পাপড়ি রাখো
আমি ঢাকাওয়ালা এক সানকি দেবো তোমার অশ্রু ভরে রাখার জন্যে
জমে জমে মুক্তো হবে সে অজস্র জলবিন্দু
আমার কবিতার সুকর্ম এই অগ্রহায়ণে মেঘনার পাড়ে বুনো ফুল হয়ে রবে;
অতঃপর পরস্পর এই অভিজ্ঞান ঠোঙায় মুড়ে শেষ করি কবিতা-
বাধাহীন জীবন কবিতা আনে না, দেহটাকে আনে পোষাকে
শ্বাপদ তরুর শব্দ নিজেরই আবেগ বিষাদ আর খেয়ালে।
ফুটনোটঃ এ কবিতা এরিস এরিন্যায়াসের, অদ্ভুত সময়ের দারুণ গল্পকার,
একজন শিল্পী আর পুরোপুরি কবিতা প্রেমিক! আমার শুভকামনা তার জন্যে!!