পরিনীতা পর্ব ১
পরিনীতা পর্ব ১
সৌমেন মুখার্জি,,,,,, একজন রিটায়ার্ড ইঞ্জিনিয়ার । ওনার ৬০ বছর বয়স হয়ে গেছে।
ওনার স্ত্রী মৌমিতা মুখার্জি মারা গেছেন,,,, ২ বছর হয়ে গেছে।
ওনার একমাত্র ছেলে হচ্ছে কৌসিক মুখার্জি।
কৌসিক IT ইঞ্জিনিয়ার। কৌসিকের বিয়ে হয়ে গেছে ।
কৌসিকের স্ত্রী পরিনিতা টিউশনি করে। হাসবেন্ড, অয়াইফ দুজনেই তাই ব্যস্ত থাকে ।
সেদিন ছিল কৌসিক আর পরিনীতার anniversary
পরিনীতা-- " আমার হাত ছাড় না কৌসিক ।"
কৌসিক -- " কেন?.... একটা পরিকে ছেড়ে আর থাকতে পারছিনা আমি। "
পরিনীতা -- " যাও .....।"
কৌসিক -- " আজ আমাদের anniversary পরিনীতা । আজ আমি.... দূরে থাকতে পারবনা ।"
পরিনীতা -- " জানো... তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর আমি তোমায় এতো ভালোবেসে ফেলেছিলাম বলার বাইরে ।"
কৌসিক -- " সত্যি? কিরম........... বলোনা।"
পরিনীতা-- " বল্লে.......তুমি নিজেকে সামলাতে পারবে?"
কৌসিক-- " হমম্........ চেষ্টা করবো ।"
পরিনীতা-- " ভাবতাম..... তুমি আমার হৃদয় । তুমি আমার জীবন।
তোমার কথা মনে পরলেই .......... আমার মুখে হাসি ফুটে উঠত ।"
কৌসিক - " এতো প্রিয়ো কথা আগে বল্লেনা"
পরিনীতা-- " বিয়ের পর যে এরম দেখব, তো ভাবিনি ।"
কৌসিক-- " বিয়ের পর কি মনে হয়েছে তোমার.... আমি পাল্টে যাবো?? সত্যিই তো তোমার হাত ধরে আছি ।"
পরিনীতা-- " আরে না..... তা নয় । "
কৌসিক -- " তাহলে কি ?"
পরিনীতা-- " ভাবিনি না........... বিয়ের পর দেখব................................. তুমি একটা পুরো বুড়ো ভাম।"
কৌসিক-- " আমি বুড়ো ভাম ?........... আমিও ভাবিনি....... তুমি যে বিয়ের পর ..... দিন রাত... তোমার এই রূপ দেখাবে...."
পরিনীতা-- " বুড়ো ভাম নয় তো কি.... তুমি? অলস। সারাদিন শুধু laptop নিয়ে বসে থাকবে...... আর সংসারের সব... কাজের দায়িত্ব..... আমার ।"
কৌসিক-- " কেন?....... আমি তো সেদিন আটা মেখে..রুটি বেলেও দিলাম........... আর কাজের লোক না এলে তো.... আমাকে দিয়েই ঘর ঝাড় দেওয়াও। এগুলো কাজ নয়??"
পরিনীতা-- " বাহ্ যা সুন্দর রুটি বেলেছিলে বলার বাইরে পুরো ইন্ডিয়ার map লাগছিল ।
ঘর ঝাড় দেওয়াই? মানে ওটা তোমার কাজ নয়??? সংসারটা চালানোর দায়িত্ব আমাদের দুজনের । "
কৌসিক-- " ভালো যাও !"
পরিনীতা --" কি হয়েছে? রেগে গেছ Ok... Sorry
আসলে তোমায় খচাতে একটু ভালো লাগে"
কৌসিক-- " আমি একটা কথা বলবো?"
পরিনীতা -- " কিবলো না ।"
কৌসিক -- " তুমি নিজেকে সামলাতে পারবে তো?"
পরিনীতা -- " অবশ্যই পারবো ।"
কৌসিক-- " তুমি রেগে গেছ দেখলেআমার একটু হাসি পেয়ে যায়। "
পরিনীতা -- " কিআমি রেগে গেলে তোমার আনন্দ লাগে? "
কৌসিক-- " একি কি করছ? আমায় বালিশ দিয়ে মারছ কেন?"
পরিনীতা-- " বেশ করবো আরো মারব"
কৌসিক-- " মুখ গোমড়া করে পেছন ফিরে বসে আছ কেন?"
পরিনীতা-- " সেটাতে তোমার কি? আমি রেগে গেলেই তো তোমার ভালো লাগে.
কৌসিক-- " মজা করছিলাম তোএকদম রেগে যেও না । এবার, একটু চোখ বন্ধ করো ।"
পরিনীতা-- " কিন্তু কেন??"
কৌসিক -- " করোনা..............এবার হাত পাত। "
পরিনীতা -- " হিরের দুল
তুমি না কোনদিন্ও পাল্টাবেনা । প্রথমে রাগাবে, তারপর অঢেল আনন্দ দেবে ।"
পরিনীতা-- " শোনো নাএকটা কথা বলবো ভাবছিলাম ।"
কৌসিক -- " বলোকি কথা ।"
পরিনীতা-- " বাবাকে না..... খুব একা একা লাগে জানো ।
তুমি তো laptop নিয়েই বসে থাক সারাদিন।
আর আমি তো টিউটার ।
অনলাইনে পড়াতে হচ্ছে বলে, আরো busy হয়ে পরেছি ।
বাড়িতে পড়ানো আর অনলাইনে পড়ানো তো এক নয়।
বেশি সময় ধরে পড়াতে হয় ।
বাবা'র সাথে কথা বলার কেউ নেই ।
মা যবে থেকে চলে গেছে, বাবা একা হয়ে গেছে ।"
কৌসিক-- " তুমি স্টুডেন্ট কমিয়ে দিয়ে....বাবার সাথে থাক না ।"
পরিনীতা -- " কৌসিক আমি ইয়ার্কি মারছি না ।"
কৌসিক-- " ok, sorry, বলো কি বলতে চাও ।"
পরিনীতা -- " একদিন ফেসবুকে দেখছিলাম একজন বাবার মতন বয়স্ক মহিলা, বাবার নতুন বন্ধু হয়েছে । বাবার সাথে একটু কথা হয় বোধহয়।"
কৌসিক -- " একবার বলছ বাবা একা, একবার বলছ বাবার বন্ধু হয়েছে । ব্যাপারটা কি, খুলে বলো না ।"
পরিনীতা -- " কৌসিক আমি দেখি ওনার সাথে বাবা ফেসবুকে কথা বলার পর, বাবা খুব খুশী হয়ে যায় । কিন্তু রোজ তো আর কথা বলা যায় না । যেদিন দেখি বাবা ফেসবুক খোলে না অতো, বাবার একটু মন খারাপ লাগে । বাবাকে তাই একদিন বললাম
" বাবা তোমার যার সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, তার সাথে ওয়াটস্যাপে কথা বলো না । রোজ ফেসবুক খুলতে তো কারোরই ভালো লাগে না ।"
বাবা খালি বলে যাচ্ছিল উনি বন্ধু নন, আমি ভুল করছি
বললাম -- " বাবা লুকানোর কি আছে?? বয়স হয়ে গেছে বলে তোমার আর কোন অধিকারই নেই বন্ধুত্ব করার, এরম হয় না । কেউ যদি ডিভোর্স করে ৪০ বছর বয়সে বিয়ে করতে পারে, তাহলে তুমি তো শুধু বন্ধুত্ব করছ । উনিও একা মানুষ, দুটো কথা বলতে পারবেন ।
বাবা বল্ল -- " না রে, কেউ দেখলে কি বলবে ।"
বললাম -- " কে কি বলবে?? তোমার ছেলে তো সারাক্ষণ ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকে, আর কে আছে বাড়িতে? ওনার নাম কি? লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই"
বাবা বল্ল উনি বাবার কলেজের বন্ধু,, মধুরিমা দে।
আমি তখন একটু অবাক হয়ে গিয়ে বলি "কলেজের বন্ধু তোমার...... তাও তুমি দূরে থাকচ আর বলছ তোমার বন্ধু নয়?"
বাবা বল্ল -- " কি করব বল? পৃথিবীটাই এমন, কোন মহিলার সাথে এখন দেখলে হাজারও কথা শুনতে হবে ।"
বললাম -- " আমাকে তো বলতে পারতে..... নাকি বিশ্বাসই করোনা নিজের বউমাকে।"
বাবা ভালোবেসে বলে-- " কি সব বলছিস । খবরদার আর বলবি না এরম কথা ।"
বাবার সাথে এখন ওয়াটস্যাপে কথা বলতে, এখন বাবাকে আগের চেয়ে একটু ভালো আছে মনে হয় ।
কিন্তু ওয়াটস্যাপেও বা কতক্ষণ কথা বলা যায় ।
বাবার সাথে যদি দেখা করিয়েদি, দুজনেরই তো ভালো লাগবে । আর যাই হোক কলেজ ফ্রেন্ড, দেখা করতেই পারে।"
কৌসিক-- " মানে তুমি কি বলতে চাইছো?? ওয়াটস্যাপে কথা বলেও হচ্ছে না, আমার বাবা গিয়ে আরেকজন মহিলাকে লাইন মারবে, যেহেতু মা নেই??"
পরিনীতা-- " লাইন মারার কি হয়েছে? দুজনে তো বন্ধু ।"
কৌসিক-- " আচ্ছা । তার মানে, বুড়ো বয়সে তুমি চলে গেলে, আমি কলেজের একজন অন্য মহিলার সাথে ঘুরব । বাহ্, ভালো, একা লাগবে না আমার ।"
পরিনীতা-- " যা পার তাই করো । তোমার সাথে না......., কথাই বলা যায় না । খালি রাগাবে আমাকে ।"
কৌসিক-- " আমি তোমায় রাগাচ্ছি.......না তুমি আলফাল বলছ.......... একটু ভেবে দেখ তো ।
বাবা তো বলেওনি যাবে, আর তুমি বাবাকে বাহ্বা দিয়ে যাচ্ছ মহিলাটার দিকে আরো এগোতে । ঠিক আছে....ওয়াটস্যাপে কথা বলে বাবা ওনার সাথে । তাই বলে দেখা করতে যাবে কেন?? আর এখন তো দেখা করা উচিতও না। নিজেই তো শুনছি চতুর্দিকে কি হচ্চে। তাও তোমার কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই ।"
পরিনিতা -- " ও,,, আচ্ছা,,,, বিয়েবাড়ি হলে যাওয়া যেতে পারে ১০০ জনের মাঝে,, কিন্তু দুজন মানুষ দেখা করতে পারবেনা ।
তুমি শুধু নিজের কথাই ভেবে যাচ্ছ যানো । বাবা যে একাকিত্ব লাগছে, বাবার যে কথা বলার কাউকে চাই....... তা তুমি মানতেই চাইছ না। মা চলে গেছেন বলে বাবাকে ফেলে রেখে দেব ।
আমি যদি বাড়িতে না থাকি, তোমার কিছু ভালো না লাগেলে তুমি কি তোমার সেই মনের কথাগুলো বাবাকে গিয়ে বলবে??? না।
বাবার ও তো মন বলে কিছু আছে ??
যে কথাগুলো বাবা আমাদেরকে বলতে পারে না।
নিজে ভেবে দেখ এবার ।"