Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Rinki Banik Mondal

Drama Inspirational

3  

Rinki Banik Mondal

Drama Inspirational

লক্ষ্মীর কৃপা

লক্ষ্মীর কৃপা

8 mins
158



চন্দনাদেবী


বৃহস্পতিবারের দিন,না দিয়েছে পান না দিয়েছে বেলপাতা।এই ফুল কেনা নিয়ে বড় সমস্যা হয়েছে তো!ছেলেটাকে কতবার বললাম দেখেশুনে চেয়ে নিয়ে আসবি সব জিনিস।তা নয়,উনার তো অফিস যাওয়ার এত তাড়া এগুলো দেখার প্রয়োজনই মনে করে না।সাপ দিল না ব্যাঙ দিল ওর দেখার দরকার নেই।এবার ছেলেটাকে একটা লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে দেখে বিয়ে দেব।তাহলেই ছেলেটা সংসারের হাল ধরতে শিখবে।ততদিন থাক বাবা,এবার থেকে আমিই নিয়ে আসবো বাজার থেকে ঠাকুরের ফুল।পারুল রোজ বাজার করে আনে,কতদিন বলেছে ফুল নিয়ে আসবে কিনা,আমিই বারণ করি।ও আবার এটোঁকাটার বাদবিচার করে না।যদিও এ বাড়িতে দশবছর ধরে আমার সাথে থেকে অনেক কিছু শিখে গেছে,সেই কর্তা বিছানায় পড়ার পর থেকেই ও এসেছিল। একবছর পরে কর্তা চলেও গেল।তারপর পারুলকে আর যেতে দেয়নি।এখানেই রয়েছে।ওরও তো তিনকূলে কেউ নেই।আমার থেকে বয়সে ও সাত-আট বছরের ছোটই হবে।তবুও মনটা বড় খচখচ করে ওকে দিয়ে ঠাকুরের জিনিস আনাতে।স্নান করার সাথে সাথেই ছেলেটাকেই যার জন্য পাঠালাম।তারপর ও ফুল নিয়ে আসার পর ওকে ভাত খেতে দিলাম।কিন্তু ও তো অনেক্ষণ আগে অফিস চলে গেছে।কত বেলা হয়ে গেল।প্রায় এগারোটা বাজে।নাহ্!আজ আর মনের মত করে ঠাকুরটা দেওয়া যাবে না দেখছি।প্রত্যেক বৃহস্পতিবারই এক ঘটনা ঘটে।

বেল বাজছে!এখন আবার কে এলো কে জানে!ঠাকুর দেওয়ার সময় যত জ্বালাতন।

ও বাবা!বাবু আবার ফিরে এলো কি ব্যাপার! আবার ঐ মেয়েটা কে!একেবারে দুজন দুজনের হাত ধরে রেখেছে দেখছি,ব্যাপারটা মোটেও সুবিধার ঠেকছে না যে!

-------"কি হল বাবু,তুই চলে এলি যে,কি ব্যাপার?আর তোর সাথে এই মেয়েটা কে?"


-------"আহ্ মা,ভেতরে চলো,বলছি।"


শান্তুনু রায়


সুতপাকে নিয়ে তো এলাম মায়ের সাথে কথা বলবো দেখে কিন্তু মনে মনে একটা ভয় থেকেই যাচ্ছে।মা সব মেনে নেবে তো?আমার ভয় একটাই,যদি সুতপাকে বিয়ে করবো বললে মা রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন?কিন্তু আমার কাছে যে আর কোনো উপায় নেই।সুতপাও খুব ভয় পেয়েছে।না না,যাই হয়ে যাক্,আমি আমার দায় কিছুতেই এড়াতে পারবো না।


সুতপা সরকার


শান্তুনুকে কতবার বললাম আমার হাতটা ধরো না,অন্ততঃ তোমার মায়ের সামনে, কে শোনে কার কথা।আমি তো এত তাড়াহুড়ো করতে চায়নি।কিন্তু পরিস্থিতি এমন হবে বুঝতে পারিনি।

শান্তুনুর সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় পাঁচ বছর হতে চলল।শান্তুনু আর আমি একই অফিসে চাকরি করি।এই চাকরি সূত্রেই আমাদের পরিচয়,ভালোবাসার শুরু বড্ড ভালোবাসি আমি ওকে।


আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।কিন্তু মা আমাদের সাথে থাকে না।সে অন্য একজনের সাথে থাকে।আমার যখন দশ বছর বয়স তখনই মা আমাদের ছেড়ে অন্য একজনের সাথে ঘর বাঁধবে বলে যায়।খুব কষ্ট হত আমার মায়ের জন্য।মা থাকতেও আমি তার ভালোবাসার থেকে বঞ্চিত।এতে মায়ের কোনো আক্ষেপ নেই।সে ভালোই আছে।একবারও আমার খোঁজ নিয়ে দেখে না।আমার বাবা আমায় কোনোদিনও আটকায়নি মায়ের সাথে দেখা করতে, তার খোঁজ নিতে।কিন্তু আমি যাইনি।আমার ভালো লাগে না।মায়ের স্নেহ,ভালোবাসা পাওয়ার লোভ আমার অবশ্য ছিল।কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়নি।কারণ বয়সটা ছোট হলেও আমি আমার মায়ের স্বভাবটা জানতাম।আমার মামাবাড়ি খুবই ধনী।ধনী পরিবারের মেয়ে ছিল দেখে মায়ের অনেক অহংকার ছিল।যদিও বাবা মা দুজন দুজনকে ভালোবেসেই বিয়েটা করেছিল।কিন্তু আমার মায়ের মতে সেটা নাকি তার মস্ত বড় ভুল ছিল।উঠতে বসতে বাবাকে যা নয় তাই বলতো,যেহেতু আমার বাবা আর্থিক দিক দিয়ে অনেকটাই দুর্বল ছিল।আমার বাবার মুদি দোকান। কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিত,এখনো নেয়। তবে এখন আমি দাঁড়িয়ে গেছি।রোজগার করছি।তাই বাবা মেয়ের ছোট্ট সংসারে আর কোনো অভাবই নেই।আমার বাবা আমার মাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য,মা রাজি হয়নি।তারপর বাবাও বাধ্য হয়ে মাকে বিচ্ছেদ দিতে রাজি হয়েছিল।কথায় আছে-কুপুত্র যদাপি হয়,কুমাতা কদাপি নয়।কে জানে! হয়তো এই প্রবাদ বাক্যটা আমার জন্য খাটেনা।সবার কপাল কি সমান হয়?মায়েরাও যে এরকম নিষ্ঠুর হয়।সে কথা আমার থেকে ভালো কে জানে।আমার মামাবাড়ির লোকও আমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করেছে।তারা আমার মায়ের কাজকেই প্রাধান্য দেয়।কে জানে,ছেলে থাকলে আমার মা তাকে সঙ্গে রাখতে চাইত কিনা!সে যাই হোক,এইসব মনে পড়লেও আমার খুব কষ্ট হয়।



এখন আবার আমার কপালে কি আছে কে জানে!শান্তুনু তো জোর করে এখানে নিয়ে চলে এলো।কে জানে ওর মা আমাকে মেনে নেবে কিনা,তাও আবার আমার অতীত আর এই লজ্জাকর ঘটনাটা জানার পর!আমিও যে কি বলি মাঝে মাঝে,আশা যে আমার মনে কোথা থেকে আসে বুঝিনা।নিজের মায়'ই তার সন্তানকে ফেলে রেখে চলে গেল,আর ইনি আমায় কি করে মানবেন,তাও এত দোষ করার পর।কখনোই নয়।তবে আমি মরবো না,শেষপর্যন্ত জীবনটার সাথে লড়বো,আর আমি শান্তুনুকে বিয়ে করে স্বার্থপরের মত আলাদা সংসার করতেও পারবো না।ওর মাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই।উনি যদি আমায় দুটো কটূ কথা বলে গালমন্দ করে বাড়ি থেকে এখন তাড়িয়েও দেন আমি মেন নেব।কথাতেই তো আছে,অভাগা যেদিকে যায়,সাগর শুকিয়ে যায়। আমিও যে,,,,,,থাক্।যাই বাড়ির ভেতরেই যাই।

শান্তুনু রায়


আমি আমার মায়ের মুখের ওপর কোনোদিনও কথা বলিনি,কিন্তু আজ যে বলতেই হবে।নাহলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।তবে যা করবো মাকে বলেই করবো।জানি,মায়ের রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক,তবুও।মা তো দেখছি এখনি রাগে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।নাহ্,এবার বলেই ফেলি।

------"মা বলছিলাম যে আমি সুতপাকে বিয়ে করতে চাই।"


------"সুতপা,কে! এই মেয়েটা? তা এটা ওকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেই বলতে লাগলো?"

------"না আসলে,,,"

------"আমাকে ভাবতে দাও।যাকে তাকে নিয়ে এসে বললেই তো হবে না যে বিয়ে করবো!"

-------"মা এইভাবে বলো না।আমরা এই মাসেই বিয়ে করবো।"

------"কি!কি বললি!নিজেই সব ঠিক করে নিয়েছিস? এত কিসের তাড়া তোর?আমি যখন বলতাম বাবু মেয়ে দেখা শুরু করি,তুই কি বলতি মনে আছে?তখন ন্যাকামো করে কেন বলতিস বিয়ে করবি না।এদিকে তুমি তলে তলে সব ঠিক করে নিয়েছ?"


আর এই মেয়ে শোনো,তুমি আর কোনো ছেলে পেলে না?আমার ছেলের গলাতেই ঝুলতে হল?কি চাও তুমি?দেখেছ,একমাত্র ছেলে এত বড় বাড়ি,ভালো চাকরি,ওমনি ঘাড়ে এসে পড়লে?বলি বাড়িতে মা বাবা সহবত শেখায়নি?"

-------"আহ্ মা।তুমি আমাকে যা ইচ্ছে বলো,সুতপাকে কিছু বলবে না বলে দিলাম।"


------"বাবহা!এখনো তো বিয়েই হলো না,তাতেই এত দরদ এই মেয়েটার জন্য?এই তোরা আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর চক্করে আছিস নাকি দুজনে মিলে?আজকাল তো তাইই হচ্ছে।আমি এক্ষুণি পাড়ার লোক ডাকছি।তোদের চালাকি আমি বের করছি।বিয়ে করবো,বললেই হলো!


সুতপা সরকার

যা ভেবেছিলাম,ঠিক তাইই হচ্ছে।না, না।ব্যাপারটা খুব বাজে দিকে যাচ্ছে।এটা হতে দেওয়া যায় না। লোকের ভয় আমি পাইনা,কিন্তু একটা মানুষ আমাদের জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়ুক সেটা আমি চাইনা।আমিই সত্যি কথাটা বলে দেখি-

-------"মা,আসলে,,, "


-------"মা!কে মা?এখনি এত?কোন বাড়ির মেয়ে বলো তো তুমি?তোমার জন্য আমার বৃহস্পতিবারের পুজোটাতে বাধা পড়লো।অলক্ষ্মী কোথাকারে!"

-------"আপনার যদি মনে হয় আমি অলক্ষ্মী,তাহলে তাই।তবে আমি আজ আমার কথাটা আপনাকে বলে এখান থেকে চলে যাব।আপনি যদি না চান আর কোনোদিনও আসবো না।কিন্তু আপনাকে আমার কথাটা শুনতেই হবে।"

--------"কি কথা শুনি?বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে?নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার না করে আমার ভালো মানুষ ছেলেটাকে এখন বিয়ে করবে?অসভ্য মেয়ে কোথাকারে!"


কথাগুলো আমি আর সইতে পারছি না। সত্যিই আমি বড্ড অপয়া।নাহলে মানুষ এইভাবে কথা শোনায়!আমার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আমার চোখে জল দেখে শান্তুনু আবার ওর মায়ের সাথে তর্ক করা শুরু করলো।তবে আমি এবার ওকে কথা বলতে বারণ করলাম।আমিই কথা বলতে চাই মায়ের সাথে।

-------"আপনি নিজে একজন মেয়ে হয়ে এতগুলো কলঙ্ক আরেকটা মেয়ের ওপর চাপাতে পারলেন?"

-------"একদম বাজে কথা বলো না।মুখে মুখে আবার তর্ক করছে, কত বড় সাহস!"


-------"আপনার সাথে আমি আর কোনো বচসায় জড়াতে চাই না।শুধু এইটুকুনি বলার,আমি মা হতে চলেছি।আর এই সন্তানের বাবা আপনার ছেলে।জানি, আমি আর আপনার ছেলে আবেগের বশে বিয়ের আগেই অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছি।তবে আপনি যদি না চান আমাকে আর আমার সন্তানকে আপনাকে মেনে নিতে হবে না।এমনকি শান্তুনু আমার সাথে এ বাড়ি ছেড়ে যাবে না।ও আপনার ছেলে আপনার কাছেই থাকবে।ও আমার সাথে যেতে চাইলেও আমি ওকে কিছুতেই আমার সাথে নিয়ে যাব না,কথা দিলাম।আমি একাই যাব।



আর হ্যাঁ,ভয় পাবেন না।আমি বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছি বলে আমার যে লোকলজ্জার ভয় আছে তা কিন্তু নয়।আমার এই বাচ্চটাকে একা মানুষ করা একটু কঠিন হয়ে যাবে সেটাই ভয়।তবে ও মনের জোর নিয়েই বড় হবে।তাতে যদি ও পরবর্তীকালে আমায় খারাপ ভাবে তো ভাববে।কিন্তু ওকে আমি মানুষ করবোই।

আমার কথাগুলো শোনার পরই সান্তুনুর মা তো মাথায় হাত দিয়ে বিছানার ওপর বসে পড়লেন।নাহ!আমি চলেই যাব।দূরে কোথাও গিয়ে থাকবো।জানি আমার পথটা খুব কঠিন হবে,তবে আমাকে পারতেই হবে।


চন্দনাদেবী

কি করবো আমি এখন?এই মেয়ে বলে কি!না না,এই মেয়েকে এখন যেতে দিলে হবে না।যদি ও কিছু করে বসে।ছেলেটারও তো আমার কিছু কম দোষ নেই।কিন্তু একটা জিনিস সত্যিই খুব আশ্চর্যের।এখনকার সমাজে দাঁড়িয়েও ওরা কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়।অনেকেই হয়তো বলবে,তাহলে ওতই যখন দায়িত্ব তখন বিয়ের আগে এসব কেন?কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা।যে যার নিজের জীবন কি করে তৈরি করবে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।সেখানে সমাজের নাক না গলালেও চলে।তবে সমাজের কাজই নিজের কাজের হিসেব না চেয়ে অন্যের কাজে নাক গলানো।আজকাল সমাজ তো নোংরামির নেশায় মত্ত।কিন্তু এই ছেলে-মেয়ে দুটো মোটেও তাদের দায়িত্ত্ব ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায়নি।বরং যে আসছে তাকে খুশিতে বরণ করতে চেয়েছে।তাতে ওরা কূপমন্ডক সমাজকে পাত্তা দেয়না।ওরা আর যাই হোক,লড়তে ভয় পায়না।বিয়ের আগে বা পরে যাই হোক,মা বাবার দায়িত্ব যে কি হয় তা ওরা বরণ করতে রাজি।নাহলে আজকাল রাস্তার আনাচে কানাচে প্রায়ই সদ্যজাত শিশুগুলোকে তাদের মা বাবারা ফেলে দিয়ে যায় এই সমাজের ভয়ে,অপবাদের ভয়ে।তারা যদি এই দুটো ছেলে মেয়ের মত উন্নত মানসিকতার হত তাহলে এরকম জঘন্য কাজ মোটেও করতে পারতো না।রইল বাকি লোকে নিন্দে করবার কথা।আরে এইটুকুনি তো জীবন!তাতে নয় একটু নিন্দে মেখেই নিলাম।কিন্তু এইটুকুনি জীবনে একটা নিষ্পাপ ভ্রুণকে হত্যা করে পাপ তো আর করলাম না।স্বয়ং রাধাও যে কলঙ্কিনী ছিল,কিন্তু কৃষ্ণ যে তার সহায় সর্বদা,যুগে যুগে।না না।আমি শাসনের নামে মেয়েটাকে যাই গালিগালাজ করি না কেন,এই ছেলে মেয়ে দুটোর বিয়ে আমি দেবো।ঈশ্বর যে তখনই প্রসন্ন হন যখন মানবতা পূজিত হয় এই ধরাধামে।


আজও মনে পড়ে আমার পঁচিশ বছর আগের কথা।তখন আমি বাপেরবাড়ি ঘুরতে গেছিলাম কদিনের জন্য।বোনটা আমার বিয়ের আগেই সন্তানসম্ভবা হয়েছিল।বাড়ির সকলের চোখে সে নোংরা মেয়ে নামে পরিচিত ছিল।তারপর একদিন বোনটা যে বাড়ি ছেড়ে কোথায় চলে গেল তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।তবে কয়েকমাস বাদে আমার শ্বশুরবাড়ির একদম কাছে একটি আবর্জনার স্তূপের মধ্যে সদ্যজাত সন্তান পাওয়া যায়।বাচ্চাটাকে দেখে আমার বড় মায়া হয়েছিল।বিয়ে হয়ে যাওয়ার সাত বছর পরেও যে আমি নিঃসন্তান ছিলাম।তাই মা হওয়ার লোভটা আমার মনে ছিলই।কিন্তু ঐ সন্তানটিকে আমার শ্বশুরবাড়ির পাশে ঐ ময়লার স্তূপে কেন পেলাম জানি না।হয়তো কেউ আমার জন্যই ওকে আমার এত কাছে রেখে গেছিল।কিছুদিন কাটার পর বুঝেছিলাম বাচ্চাটার মুখের সাথে আমার বোনের মুখের একটা আশ্চর্য মিল আছে।বোনটা তো বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনতেই চেয়েছিল।কিন্তু এই মুখপোড়া সমাজ চায়নি,এমনকি বাচ্চাটার বাবাও চায়নি।হয়তো আমার বোনই,,,,,,।না থাক্।এর থেকে বেশি আর আমার কিছু জানা নেই।আমার এটাই মনে হয়।যাই হোক,ঐ সদ্যজাত শিশু এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।ছেলেটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।কিন্তু ছেলেটা আজও তার অতীত সম্পর্কে কিছু জানে না।আমি জানতে দেয়নি।ও শুধু এখন আমার ছেলে।আমার ছেলে শান্তুনু। তবে আজ ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে নিয়েছি,ও যদি কখনো ওর অতীত সম্পর্কে জেনেও যায়,ও ঠিক তা মেনে নিতে পারবে।কারণ ও কঠিন বাস্তবের সাথেই থাকতে ভালোবাসে।

সেদিন মনে মনে ভেবেছিলাম,জীবন যদি আবার আমায় দ্বিতীয় সুযোগ দেয়,আমি আর এই ভুল কোনোদিনও করবো না।হ্যাঁ,ভুলই তো করেছিলাম সেদিন বোনটাকে আমার সাথে আমার কাছে রাখার আশ্বাসটুকু না দিয়ে।ওকে যদি আমার কাছে ধরে রাখতে পারতাম তাহলে হয়তো ওকে এভাবে হারিয়ে ফেলতাম না।কে জানে ও বেঁচে আছে কিনা।

একই বিষয়কে যদি আমরা একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখি তাহলে তো যে কোনো পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারবো,নিজেও খুশি হব,অপরকেও খুশি করতে পারবো।তাই এই মূল্যবান দ্বিতীয় সুযোগটাকে আমি কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারবো না,আমি এতটা নিষ্ঠুর হতে পারি না,কিছুতেই না।


-----"ফুল নেবে গো,ফুল নেবে?"

ঐ দেখো,এত বেলায় আবার কে ফুল নিয়ে যায়?এখান থেকে তো কেউ কোনোদিনও ফুল বিক্রি করতে আসে না।তাহলে আজ হঠাৎ,,,,,না না।এই দুটোকে দাঁড় করিয়ে ছুটলাম ফুল নিতে।একটা ছোট্ট মেয়ে।কি মিষ্টি!লক্ষীবারের পুজোর জন্য যা যা বাকি ছিল,সবই পেলাম ওর কাছে।কে জানে আজ হয়তো লক্ষ্মী প্রসন্ন হয়েছে।তাইতো লক্ষ্মী কৃপা করেছে আমায়।

**********

লক্ষ্মীর কৃপায় সুতপার কোল আলো করে ফুটফুটে একটি মেয়ে সন্তানই এসেছে।সুতপা,চন্দনাদেবী,সান্তুনু ভীষণ খুশি ওকে পেয়ে।লক্ষ্মীর কৃপা মনে করেই চন্দনাদেবী ওর নাম রেখেছেন 'লক্ষ্মী'।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama