অদৃষ্ট শেষ পর্ব
অদৃষ্ট শেষ পর্ব
মেয়ে মাস পরে গেছিল। আমি দেখি সুভাষ গিফ্ট নিয়ে এনেছে,, আর আবারও আমার ছবি এঁকে নিয়ে এসছে ।
বললাম-- " সুভাষ কি করছিস??"
সুভাষ -- " তোর মনে হয়েছে,,, আমি ভুলে গেছি তোর জন্মদিন?? হমম্!"
-- " মনে রেখে কি হবে বল??"
সুভাষ -- " মানে,, কি বলতে চাস?? কারোর জীবনে কষ্ট হলেই তার জীবন একদম শেষ । আর কোন অধিকার নেই আনন্দ করার?? তুই না একটা পুরো বোরিং ।"
-- " তাই বলতে পারিষ । আমি জীবনে পুরো একা হয়ে গেলে,,, ঠিক করেছি,, কোন বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাব।"
সুভাষ -- " What?? তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?? একা হবি কেন তুই??"
-- " মা,, বাবা না থাকলে, তো আমি একাই হয়ে যাব। "
সুভাষ-- " আর তুই আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব ভুলে যাবি??"
-- " তোর তো বিয়ে হয়ে যাবে পাগল ।"
সুভাষ -- " আমি বিয়ে করব না ।"
-- " চুপ কর,, পাগল । সবারই বিয়ে হয়।"
সুভাষ -- " তাই?? আজ আমি তোকে গিফ্টটা দিতে এসছি,,, একটু চোখ বন্ধ কর ।"
-- " চোখ বন্ধ করব কেন?? খুলে দেখব তো ।"
সুভাষ -- " আহ! কর না।"
তাই করলাম । তারপর চোখ খুলে দেখি,, সুভাষ আমাকে আংটি পড়াচ্ছে
হাত সরিয়ে নিচ্ছিলাম । ও সেই পরিয়ে দিল।
আমি পুরো চুপ হয়ে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
বললাম-- " কি করলি তুই এটা??? আংটি পরালেই হয়ে গেল ।"
" গোলাপ ফুল??"
সুভাষ-- " হমম্ । তোর জন্য।
আমি তোকে ভালবাসি সুভমিতা। মনটাকে আমি কি করে সামলাব ??
যেদিন তোর প্রথম ছবি এঁকেছিলাম,,, তারপর মনটা বারবার তোর কথাই ভাবত।
তোর আনন্দের জন্য,,, ছবি এঁকে দিতাম ।
তুই একবারও ভেবেছিস, তুই কেন খুশি হতিস??"
সুভাষের কথা শুনে আমি পুরো চুপ হয়ে গেছিলাম। সত্যি তো,,, আমি কেন খুশি হতাম??
সুভাষ-- " তোর মনটাও আমাকে চাইত ,,,, তাই না??"
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললাম -- " হ্যাঁ ।"
সুভাষ-- " তাও একবার বলিস নি?"
-- " বলার পর যদি সম্পর্কটা ভেঙে যায়,, আমি কষ্টে শেষ হয়ে যাব। এই ভেবে বলিনি। "
সুভাষ -- " তোর মনে হতো,,, ২ মিনিটে এতো বছরের বন্ধুত্বটা ভেঙে ফেলব আমি?? এতো নিষ্ঠুর মনে হয়েছে তোর আমাকে??"
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। চোখটা একটু ছলছল করছিল ।
তারপর দেখি সুভাষ আমার ঠোঁটে kiss করছে
বললাম-- " সুভাষ কি করছিস ।"
সুভাষ -- " ওটাই,,, যেটা তোর মন চাইছে,,, কিন্তু লোকে কি বলবে বলে দূরে আছিস ।"
-- মা, বাবা এখন ঘরে নেই বলেই না করতে পারছিস। নইলে তোর গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো হতো।"
সুভাষ -- " সেটা দেখেই তো এলাম। তোর মা, বাবা বেরিয়েছে দেখেই এলাম।
আমার মা,, তো দিদির কাছে Bangalore গেছে, দিদি pregnent বলে । আর বাবা জানে না।"
-- "সে আমি জানি, পিয়ালিদি মা হতে চলেছে। আর
তাই তুই লুকোচুরি খেলছিস??
কেন করছিস এরম?? তোর পরিবার আমাকে মানবেওনা।"
সুভাষ-- " লোকে কি বলবে ইম্পরট্যান্ট আর আমার মনটা নয়। মনকে পাল্টানো যায় না রে সুভমিতা। জীবনে লোকে যা বলবে মানতে হবে,, আর মন যা চায় করার অধিকারও নেই??
এদিকে তাকা ।"
-- " সুভাষ কি করছিস??? মা এসে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ।"
সুভাষ -- " I want to marry you । এটা আমার ফার্স্ট আর লাস্ট decision । তোর যদি ইচ্ছে না করে করিসনা । আমি তো force করতে পারিনা তোকে । কিন্তু আমি কাউকে বিয়ে করব না ।"
-- " কেন কাঁদাচ্ছিস আমায়??? জানিসই তো আমি হাঁটতে পারিনা। "
সুভাষ -- " কাঁদাচ্ছি না জানিস। তোর মনের কথা তোর চোখ দিয়েই বেরিয়ে এসছে ।
Operation করিয়ে আমি তোর পা ঠিক করে দেবই। আমি কি দেখতে পারি তুই হাঁটতে পারছিস না??"
-- " কি বলছিস তুই???"
সুভাষ-- " যা বলছি সত্যি কথা বলছি। গল্প করছিনা।"
--- " সুভাষ,, I really love you । কিন্তু বলতে পারছিলাম না ।"
সুভাষ-- " বলতে হবেনা । আমি তোর চোখ দেখেই তোর উত্তর পেয়ে গেছিলাম ।"
কিছুদিন বাদে আমি সুভাষকে ফোন করতে,,, শুনলাম ওর মা মানতে চাইছে না ।
বললাম-- " স্বাভাবিক । কেন মানবে আমায়?? আমি হাঁটতে পারিনা ।"
সুভাষ -- " আবার সেই এক কথা?? না মানলে না মানুক,,, আমি তোকেই বিয়ে করব,,, নইলে করবো না।"
-- " তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে । যা পারিস কর।"
অক্টোবার মাসে দেখি পিয়ালিদি এসছে ।
পিয়ালিদি আমাদের বাড়ি আসতে খুবই ভালো লাগছিল। আমার জন্য কতো সুন্দর লম্বা কুর্তি,, দুল,, কতো শারি নিয়ে এনেছিল ।
বললাম -- " এতো কিছু এনেছ। এতো শারি কার জন্য??"
পিয়ালিদি -- " আমার এই বোনটার জন্য । "
সব শুনলাম রে। তোর সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক ।"
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। লজ্জা লাগছিল আমার খুব ।
বললাম-- " ছাড় না ওর কথা। ও তো আজীবন এরম পাগ্লাটে । বাদ দাও না । তোমার কথা বলো।"
পিয়ালিদি দেখি আমার কথার কোন উত্তরই দিল না । তারপর বল্ল -- " ভাইটা না একটা হাঁদা। কি বলবো বল,, বিয়ে করবে আগে তো একটু বলবে? বলেনি। তারাতারি শারি কিনতে হলো তাই ।
পছন্দ হয়েছে তোর??"
আমার চোখ দিয়ে জল বেরোচ্ছিল পিয়ালিদির কথা শুনে ।
পিয়ালিদি -- " কাঁদছিস কেন?? তোর মনে হয়েছিল আমি ঠেলে সরিয়ে দেব তোকে । তা হয়?
আমি জানি ভালোবাসা কি। আর সেটাকে ভোলা যায় না ।"
সবকিছু শুনে মা,, বাবার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিল ।
পিয়ালিদি -- " আন্টি,,,,,,, কাঁদছ কেন??"
মা -- " কাঁদব না?? এত বড়ো কপাল দেবে ঈশ্বর আবার ভাবিনি । কপালটা পোড়াই ভাবতাম । কিন্তু তোর মতন মেয়ে সত্যি হয় না রে পিয়ালি । আশীর্বাদ করি তুই সারাজীবন ভালো আর খুশি থাকিশ ।"
পিয়ালিদি -- " তুমিও তো মন থেকে আমায় কতো ভালোবাস ।
এই সুভমিতা আয় বস । অনেক কিছু করতে হবে। শারি ঠিক করব আয় । ভাইয়েরটা মা করবে আর তোরটা আমি। "
বিয়ের আগে সত্যিই আমার পায়ের operation করে,, কাঠের পা লাগানো হলো।
যখন আমি দেখছিলাম আমি হাঁটতে পারছি আমার কি আনন্দ লাগছিল। আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম ।
তারপর আয়বুড়োভাত ,, গায়ে হলুদ,, সব হলো ।
বিয়ের দিন,, মা আর পিয়ালিদি দুজনে মিলে আমায় সাজাচ্ছিল।
বিয়েতে পিয়ালিদির শ্বশুরবাড়ি লোক,, আমার কাকা, কাকিমা, জেঠিমা আর ভাই বোন এসছিল।
সত্যিই বিয়ে হয়ে গেল আমার সাথে সুভাষের ।