Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

AYAN DEY

Romance Inspirational

3  

AYAN DEY

Romance Inspirational

দেয়া নেয়ার মাঝে

দেয়া নেয়ার মাঝে

6 mins
200


" প্রশান্ত , হ্যালো প্রশান্ত আমি সুকান্ত বলছি । "

" হ্যাঁ হ্যাঁ সুকান্ত বল । "

" আমার খুব বড়ো অসুখ , যক্ষ্মা সন্দেহ । তবে ইংরেজ সরকারের পুলিশের নজর এড়িয়ে বাইরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারছি না ভাই প্রশান্ত । আমি আবার কলম ধরতে চাই প্রশান্ত ... ওরা ভয় পেয়েছে তাই আটকে দিয়েছে । "

" তুই কিচ্ছুটি চিন্তা করিস না । আমি আজই কোলকাতায় গিয়ে অসীমের সাথে শলা করছি । "

দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে কোলকাতার উদ্দেশ্যে বেরোতে যাবে প্রশান্ত এমন সময় শিল্পপতি বাবা বিকে রায় এসে হাজির ।

" সুটকেসটা রাখো । কোথায় যাচ্ছো ? "

" বাবা কোলকাতায় সুকান্ত অসুস্থ , ইংরেজ সরকার ওর স্বদেশীর বিরোধিতা করতে গিয়ে ওকে গৃহবন্দী করে রেখেছে । আমার যাওয়াটা জরুরী বাবা । "

" তা তুমি গিয়ে কী করবে শুনি ? গান গাইছো , মেনে নিয়েছি কিন্তু স্বদেশী ক্ষেত্রে তোমার ভূমিকা হবে শুনি । "

" বাবা আমি অসীমের সাথে কথা বলে গলি গলি সুকান্তের লেখা গানগুলো গাওয়ার জন্য লোক জমায়েত করবো । অত লোকের জমায়েতে চাপে ফেলে সরকারকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করবোই । "

" আমার ছেলে হয়ে তুমি আন্দোলন করতে নামবে ! এসব আমি বরদাস্ত করবো না । ভুলে যেও না ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির সাহায্য না পেলে বিকে রায় আজকের বিকে রায় হতে পারতো না , রায় ইন্ডাস্ট্রিস বন্ধ হয়ে যেতো । "

" আপনি তবে বলতে চাইছেন আমি সুকান্তকে স্বদেশীতে সাহায্য করলে এখানে আমার জায়গা হবে না ? "

" বলতে চাইছি না বলছি । "

প্রশান্ত রেগেমেগে চলে যাচ্ছে এমন সময় মা এসে কাঁদতে কাঁদতে এলেন , " কোথায় চললি বাবু ? তোর বাবা ওরকম বলেই থাকেন । ওতে কিছু মনে করিস না । "

" আমি আমার যে বন্ধুর জন্য আমি গান গেয়ে নাম করেছি তার পাশে দাঁড়াতে যখন আমি সমর্থন পাবো না তখন এখানে থাকার কোনো মানে হয় না । "

" হ্যাঁ যাও না যাও ; যখন ইংরেজ সরকার কোমড়ে দড়ি দিয়ে ধরে নিয়ে যাবে তখন স্বদেশীর মর্ম বুঝবে ! "

রেগে মেগে বেরিয়ে গেলো সুকান্ত কোলকাতার উদ্দেশ্যে । 

" অসীম অসীম ... আমি আমি প্রশান্ত । " দরজায় এসে ঠকঠক করলো প্রশান্ত ।

" ও তুমি , এসো এসো ... এদিকে যা অবস্থা ! "

" হ্যাঁ বৌদি সেইজন্যই তল্পিতল্পা নিয়ে খবর পেতেই ... সুকান্তের ফোনটা পেয়েই তো চলে আসা । অসীম আছে তো ? "

" হ্যাঁরে আয় আয় ! বন্ধ করে দে দরজাটা । "

" বল কী ভাবলি ? "

" দেখ তোর কথামতো আমি লোক জড়ো করার কথা ভেবেছি । অমৃতলাল মজুমদার কোলকাতার বড়ো জমিদার । উনি সম্প্রতি বিপ্লবীদের অর্থসাহায্য করছেন । ওনার বাড়ি বিপ্লবীদের বৈঠক হলেও ইংরেজদের ক্ষমতা হয়নি ওঁর বিরুদ্ধাচরণ করার । এর কারণ অবিশ্যি ইংরেজরা সময়ে অসময়ে নানান সুবিধা নিয়ে থাকেন ওনার থেকে । উনি ইংরেজদের ভালোর পৃষ্ঠপোষক ও খারাপের তীব্র প্রতিবাদ করেন । "

" তুই ব্যবস্থাটা কী করলি সেটা বললি না তো ! অমৃতলাল বাবুরই বা কী ভূমিকা এখানে ? "

" সেটাই বলবো , শোন উনি সম্প্রতি একটি ড্রাইভার চাইছেন ওনার ভাগনি সুচরিতার জন্য । "

" হ্যাঁ তো ? "

" আমি ভাবছি তুই যদি ... "

" ড্রাইভারি নয় করবো কিন্তু তাতে ? "

" শোন ওনার বিশ্বাস অর্জন কর । মাঝেমধ্যে গভীর রাতে বিপ্লবীরা ওখানে মিটিং করতে আসেন । ওইসময় তুই নিজের পরিচয়টা দিলেই চলবে । "

" আচ্ছা বেশ । তবে এর মধ্যে আকাশবাণী থেকেও কয়েকবার গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ এসেছে । এই অভিযানে নামলে কীভাবে সম্ভব সেটা ? আর আর বিকে রায়ের পরিচয়টাকে কোনোভাবে আনাও যাবে না । কী করবো তাই ভাবছি । "

" তুই একটু ঠান্ডা মাথায় ভাব , উপায় বেরোবে । "

এদিকে প্রশান্ত এসে উপস্থিত অমৃতলাল বাবুর বাড়ি । বেশী বলতে হলো না অল্প কথাতেই কাজ পেয়ে গেলো প্রশান্ত ।

" তা তোমার থাকা , খাওয়া , মাসে দুবার জামাকাপড় সব ভার আমার সাথে মাইনে কীরকম চাও ? "

" মামা তুমি কাকে না কাকে আবার ড্রাইভার রাখলে ? " হিল খটখটিয়ে এক সুদর্শনা নেমে এলো ।

" আজ্ঞে এই কাকের নাম হৃদয়হরণ । "

" ও হো তোমায় বলা হয়নি এ হলো আমার একমাত্র ভাগনি সুচরিতা , আমার সুচি মা । ওরই ড্রাইভারি করবে তুমি । আর বেতন কত নেবে বলে দিও । "

" সে আপনি যা বুঝবেন । "

কলেজ থেকে বাড়ি , বাড়ি থেকে কলেজ করে ড্রাইভারি চলতে লাগলো । এরই মধ্যে একবেলা ছুটি নিয়ে আকাশবাণীতে গান শোনাতে গেলো প্রশান্ত । তবে নাম রাখলো অভিজিৎ চৌধুরী ।

" মামা , মামা এই এই গানটা শোনো অভিজিৎ চৌধুরীর । কিছু বার্তা চান বোধহয় উনি ! "

গানের প্রথম কটা কথা :

যে তোমার দাঁড়ালো পাশে ,

তাকে তোমরা দেখেছো কি ?

যে তোমার করলো ভালো

তাকে মনে রেখেছো কি ?

যে আগুন জ্বালালো তোমায় ,

ঘরবাড়ি পোড়ালো যে সব ,

তাকে নেভাতে যে নিয়েছে পণ

তাকে তোমরা ভেবেছো কি ? 

" এ এতো সুকান্তর উদ্দেশ্যে গান । ও কে ? ওকে বাঁচাতে হবে , ইংরেজ সরকারের কড়া নজর পড়বে খুব শীঘ্রই ওর ওপর । "

" তুমি সিওর মামা , এটা সুকান্ত বাবুর উদ্দেশ্যে লেখা । "

" কথাগুলো শুনলেই বুঝবি সুকান্তের আত্মত্যাগের উদ্দেশ্যেই লেখা । "

" আচ্ছে , এর খোঁজ রাখতে হবে মামা । আমাদের যে দল সরকারের ওপর চাপ তৈরীতে লাগবে তাতে দরকার । "

এরপর আরও কটা স্বদেশী গান দুদিন অন্তর বেজে উঠলো রেডিওয় অভিজিতের গলায় । আশ্চর্যরকমভাবে ওই ওই দিনগুলোতেই প্রশান্ত ছুটি নিতে লাগলো ।

গান শেষে সুচরিতা একদিন নিজে ফোন করলো আকাশবাণীতে । সেই মুহূর্তেই প্রশান্ত বেরোতে ফোন দিতে গেলো এক স্টাফ । না করলো সুচরিতা নাম শুনে । বলা হলো রেকর্ড বাজানো হয়েছে ।

এরপর একদিন রেডিওর গান গেয়ে বেরোনোর পথে পুলিশের হাতে পড়লো প্রশান্ত । ইংরেজ পুলিশ । " ইউ প্রশান্ত রয় ?বিকে রয় ইওর ফাদার ? "

" ইয়েস অফিসার । "

" হি অলরেডি ইনফর্মড আস ফিউ ডেজ ব্যাক । ইউ আর অলসো গোয়িং এগেনস্ট গভর্ণমেন্ট । অ্যাজ মিস্টার রয় ইস আ গুড ফ্রেণ্ড অফ কোম্পানি ইউ উইল বি পার্ডনড বাট বি অ্যালার্ট , ডোনট সিং সাচ সংস । "

একটিও কথা না বলে প্রশান্ত গাড়িতে উঠে বসলো । কিছুদূর যেতে না যেতেই শয়ে শয়ে লোক এসে পথের দুধার থেকে এসে গাড়ির সামনে এগোতে লাগলো । সাথে সুকান্তের লেখা স্বদেশী গান । কিছুক্ষণ পরে সুকান্তের গলা মেলানো আর গাড়ি থেকে নেমে পড়ে ওদের সাথে হাঁটা ।

" প্রশান্ত , ডোনট মুভ । উই উইল ফায়ার , ইফ ইউ ডোনট স্টপ ইউ উইল গেট হার্ট । স্টপ প্রশান্ত । "

বন্দুক উঁচিয়ে সবে ফায়ার অর্ডার বেরিয়েছে প্রধান অফিসারের মুখ থেকে এমন সময় রাস্তা কাঁপিয়ে বাঘের গর্জন । বাঘ কোত্থেকে এলো !

অবাক চোখে প্রশান্ত দেখলো অমৃতলাল বাবু একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের উপর হেলে দাঁড়িয়ে । অনেকটা নতুন ব্রাণ্ডেড গাড়ির গায়ে কেউ যেভাবে দাঁড়ায় তার মতো । বাঘটা ক্রমশঃ অমৃতলাল বাবুর সাথে এগিয়ে ইংরেজ পুলিশের তিনটে গাড়ির দিকে এগিয়ে চলেছে । তবুও বন্দুক চালাতে যাবেন অফিসাররা ওপর থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি । চারজন পুলিশ আহত হলো ।

" অফিসার , প্লিজ গো ব্যাক । ইফ ইউ ডু গুড থিংস হি উইল রাইট গুড আদার ওয়াইজ সুকান্ত উইল প্রোটেস্ট , সো গো ব্যাক । "

অবশেষে জনপ্লাবনের ভয়ে ইংরেজ মাথা নোয়লো । সুকান্তকে চিকিৎসা করতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তড়িঘড়ি ব্যবস্থা করলেন ।

ওদিকে অমৃতলাল বাবুর বাড়ি প্রশান্তের বাবা মা এসে উপস্থিত । মান অভিমানের পালা মিটলে সুচরিতার ভিজে চোখ দেখে এগিয়ে গেলো প্রশান্ত ।

" দেখুন আমি কিন্তু মানে ... "

" থাক যথেষ্ট হয়েছে । "

এমন সময় অসীমের স্ত্রী এসে মুহূর্ত নরম করে প্রশান্ত আর সুচরিতার বিয়ে পাকা করে দিলো ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance