Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Sourya Chatterjee

Romance Classics

4.8  

Sourya Chatterjee

Romance Classics

কাঠগোলাপ

কাঠগোলাপ

5 mins
1.2K


কাঠঠোকরা পাখিটা নারকেল গাছটায় গর্ত করে বাসা বানাচ্ছে আনমনে। কাঠগোলাপ গাছের ফুলগুলো সূর্যের রশ্মি গায়ে মেখে সেই দিকে স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছেলেপুলেদের কান্ড দেখো! ঘড়িতে সবে আটটা। এর মধ্যেই দাপাদাপি শুরু করেছে মাঠে ফুটবল নিয়ে।রোজকার মতো সৌরভ পিঠে ব্যাগ নিয়ে বের হল। রং ওঠা ব্যাগটা জোঁকের মতো সৌরভের জামাটা জড়িয়ে রয়েছে। ফুটবলটা পায়ের সামনে আসতেই ছোট্ট একটা টোকা মেরে ব্যাকহিল করে ফিরিয়ে দিল সৌরভ।

-   সৌরভদা, তিন সপ্তাহ পরে ম্যাচ আছে। খেলো না গো আমাদের টিমে। একজন মাঝমাঠের প্লেয়ারের খুব দরকার।

-   না রে। ছুটি পাব না। 

-   একটু হাফ ছুটিও পাবে না?

-   না! ন’টা থেকে ন’টা। কোনো হাফ ছুটি নেই।

কাঠগোলাপ গাছটার কাছে গিয়ে আনমনে হাসল সৌরভ। ছোট থেকে কত দৌরাত্ম্য। কবে যে গাছটা জন্মালো। কিভাবে বড় হল তার খোঁজ কেউ নেয়নি কখনো। সৌরভও নেয়নি। অথচ এখন অফিস যাওয়ার পথে ওই গাছের দুটো ফুল সৌরভের চাই-ই চাই। ফুল দুটো হাতে নিয়ে আবার রওনা দিল সৌরভ।


-   কুড়ি টাকা! লিয়ে যান। কুড়ি টাকা! ডাসা হবে। ও দাদা! লিয়ে যান না। টাটকা আছে!

শ্যামা তার বাবার সাথে সমান তালে গলা মিলিয়ে চেঁচিয়ে পেয়ারা বিক্রি করে চলেছে। অবিরাম। তেষ্টা পেত আগে, এখন সয়ে গেছে! যদি একটা পেয়ারাও বেশি বিক্রি হয় সেটাই তার লাভ। কখনো বাবা একটু বিশ্রাম নেন! বয়স হচ্ছে তো। তখন বিক্রির গুরুভার শ্যামা নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়। ‘সৌভাগ্য’ কমপ্লেক্সটার উল্টোদিকে রোজ আশা নিরাশার দোলনায় চড়ে কখনো পেয়ারা, কখনো কমলালেবু, কখনো আবার আম ভর্তি ভ্যান নিয়ে বসে থাকে শ্যামা। চরম বাস্তবতার টানাপোড়েনের মাঝেও শ্যামা অপেক্ষা করে থাকে ‘সৌভাগ্য’ কমপ্লেক্সের দারোয়ানবাবুর জন্য। সে রোজ আসে। না, পেয়ারা কিনতে নয়। সে আসে দুটো কাঠগোলাপ ফুল উপহার দিতে।


ছয় মাস হল সৌরভ দারোয়ানের চাকরি টা পেয়েছে। তন্ময়দা জোগাড় করে দিয়েছে। অবশ্য শ্যামা বাবার সাথে পেয়ারা নিয়ে বসে, বছর দুয়েক হল। সৌরভের চাকরি শুরুর মাস দুয়েক পর থেকেই নিজেদেরই খেয়ালের আড়ালে দুজনের মনের ক্যানভাসে একে অন্যে ভাগ বসাতে শুরু করেছে। তবুও কেউ সাহস করে আলাপ করতে এগিয়ে যায় না। নিজের ভাতের জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হয়, তার উপর আবার প্রেম ভালোবাসা! তবুও একে অপরকে না দেখতে পেলে মন অস্থির হয়। শুধু কথা বলা হয়ে ওঠে না।

একদিন রাস্তার উপর মুখ থুবড়ে থাকা একটা কাঠগোলাপ তুলে নিজের খোপায় গুঁজে নেয় শ্যামা। সেই থেকেই নিয়ম করে দুটো কাঠগোলাপ নিয়ে এসে শ্যামাকে উপহার দেয় সৌরভ। সৌরভের দেওয়া কাঠগোলাপ দুটোকে পরম স্নেহে খোপায় বাঁধে শ্যামা। ব্যাস এইটুকুই! তারপর আবার দুজনের ভাত জোগাড় করার দুটো আলাদা পৃথিবী “পেয়ারা লিয়ে যান বাবু” আর “গুড মর্নিং স্যার” এর চক্রগণ্ডিতে দিনের বাকি সময়টুকু অতিবাহিত করে দেওয়া।

আরো মাস দুয়েক চলল এইভাবে। একদিন সৌরভ এসে শ্যামাকে খুঁজে পায় না আর। আর আসবে না ও? জামার পকেটে কাঠগোলাপ গুলো লেপটে ঝিমিয়ে রয়েছে। কোনো বেহালা বাদক অবিরাম সৌরভের মনের কুঠুরিতে ‘দরবারী কানারা’ বাজিয়ে চলেছে। একদিন গেল, দুদিন গেল! শ্যামা আসে না। কত সম্পর্কের কত শক্ত বুনন কত সহজে ছিন্ন হয়ে যায়। আর এই সম্পর্কটার জাল তো সবে মাত্র বোনা শুরু হয়েছিল। না! এসব নিয়ে আর ভাববে না সে। কাজে মন দেয় সৌরভ।

শান্তনু স্যার অফিস বেরোচ্ছেন।

-   গুড মর্নিং স্যার। 

-   গুড মর্নিং সৌরভ। আচ্ছা সৌরভ, সপ্তাহ খানেক হল লক্ষ করছি তোমার পকেটে কাঠগোলাপ ফুল থাকে। কি ব্যাপার কি!

-   না স্যার। এমনি।

হাসে সৌরভ। অভ্যেস মত এখনো রোজ দুটো করে কাঠগোলাপ ফুল নিয়ে আসে সে। 

পাশেই চায়ের দোকান টা থেকে চা নিয়ে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছে সৌরভ। হঠাৎই রাস্তার অন্য ফুটপাথ থেকে “ডাসা পেয়ারা লিয়ে যাআআন বাবু”। শ্যামার গলা না! ওই তো শ্যামা!

শ্যামার কাছে পৌঁছালো সৌরভ। কাঠগোলাপ দুটো শ্যামার হাতে নিয়মমতো কিন্তু সস্নেহে তুলে দিয়ে একটু দাঁড়ালো সৌরভ। নিজে কিছু জিজ্ঞেস করবে না, যদি শ্যামা কিছু বলে তবে শুনবে। নিশ্চই কিছু বলবে শ্যামা। জোরে জোরে নি:শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দের আদানপ্রদান চলে। নির্বাক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। পেয়ারার ভ্যানটাকে শক্ত করে ধরে শ্যামা।

-   বাবাকে আর বাঁচাতে পারলুম নি। বুকে ব্যথা উঠলো। চলি গেল। আমায় একটা চাকরি খুঁজি দিবেন বাবু!?

মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সৌরভ।

-   চেষ্টা করব।


এত সহজে শ্যামার চাকরি হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি সৌরভ। তন্ময়দাকে একবার বলতেই তন্ময়দা বলল

-   হ্যাঁ রে সৌরভ, তুই যেখানে চাকরি করছিস, ওখানে আরেকজন গার্ড লাগবে। ‘সৌভাগ্য’তেই। ভালোই হল।

খুব খুশি হল সৌরভ। মেয়েটা চাকরিও পেল। আর তার থেকেও বড় কথা দুজনে একসাথে কাজ করবে এবার থেকে। দক্ষিণের মিষ্টি বাতাস তখন ঢেউ খেলছে সৌরভের মনে। দূরত্বটা আর একটা বড় রাস্তার নয় আর। খুব কাছাকাছি থাকবে দুজনে এবার থেকে।

পরদিন তন্ময়দার সাথে অফিসে কথা বলতে গেল ওরা। সাদা সালোয়ারটা পরে শ্যামাকে খুব সুন্দর লাগছে। আর তার উপর সৌরভের দেওয়া শুভ্রতায় মোড়া কাঠগোলাপ দুটো শ্যামার মাথায় গোঁজা। শ্যামার মুখে অমলিন হাসি নতুন জীবন সূচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে যেন। সৌরভও খুশিতে ডগমগ। কতদিনকার না বলা কথা! সাক্ষী থেকেছে শুধু কাঠগোলাপরা। আর আজ তারা একসাথে চাকরি করবে।

তন্ময়দা এল।

-   হুমম! সব ব্যবস্থা পাকা। আজ থেকে তোমরা দুজনেই ‘সৌভাগ্য’ কমপ্লেক্সের গার্ড। আর সৌরভ! তোমার স্যালারি মাসে হাজার টাকা করে বাড়ানো হল।

সৌরভ যতটা আনন্দ পেল তার থেকে অবাক হল বেশি। কি হচ্ছে তার জীবনে! এ তো মেঘ না চাইতেই জল। তন্ময়দা আবার বলতে শুরু করল 

-   ও, শোনো। এবার থেকে শ্যামা, তুমি ডিউটি করবে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা। আর সৌরভ! তুমি নাইট টা সামলাবে। মানে সন্ধ্যে সাত টা থেকে সকাল সাতটা অবধি। ওকে?

-   মানে? এরম তো.. 

-   আরে দ্যাখো, নাইটে তেমন কিছু করার ও নেই। শুধু বসে থাকা। তার উপর এক্সট্রা মাইনে পাচ্ছো। তোমার তো হেব্বি ব্যাপার।

শ্যামা খুব খুশি চাকরি পেয়ে। সংসারে আর অভাব থাকবে না। অসুস্থ মাকে শুশ্রূষা করতে পারবে এবার।

-   থ্যাঙ্কু তন্ময়দা।

-   ধন্যবাদ সৌরভকে জানাও শ্যামা। ওই তোমাকে রেফার করেছে।

-   সৌরভদা খুব ভালো মানুষ। জানি আমি। স্বার্থ ছাড়া কেউ এমন হেলেপ করে নাকি না হলে!

স্মিত হাসে সৌরভ। নিঃস্বার্থ ভাবে নয় শ্যামা। কিছুটা স্বার্থ ছিল, কাঠগোলাপরা জানে। শ্যামাকে আরো কাছে পাওয়ার স্বার্থ। শ্যামাকে আরো জানার স্বার্থ।

বাড়ি ফিরে আসে সৌরভ।হারুর চায়ের দোকানে খবরের কাগজ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। ও বাবা! একটা প্রতিবেদন বেরিয়েছে আজ কাঠগোলাপ ফুলকে নিয়ে। হঠাৎ করেই প্রিয় হয়ে ওঠা তার কাঠগোলাপ ফুল। এই তো লেখা আছে কাঠগোলাপ নাকি ভালোবাসার ফুল। বুদ্ধিস্টদের মতে কাঠগোলাপ অমরত্বের প্রতীক। আর হাওয়াই-ইয়ান মতে কাঠগোলাপ প্রেমের পরিচয় বহন করে যখন মাথার চুলে কেউ ফুলটিকে পরিধান করে।

শ্যামা প্রথম ডিউটিতে এসছে। শান্তনু বাবু দেখে অবাক হলেন। বাব্বা! এই ফ্ল্যাটে যে-ই গার্ড হয়ে আসুক না কেন তাদের সাথে কাঠগোলাপ থাকে! কারোর পকেটে! কারোর মাথার খোপায়! অদ্ভুত ব্যাপার! কাঠগোলাপগুলো মুচকি হাসে। ওরাই তো সাক্ষী সব ঘটনার। ওরা হয়তো জানে আগামীকেও।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance