Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Partha Roy

Romance

3  

Partha Roy

Romance

নিশিগন্ধা হনন

নিশিগন্ধা হনন

7 mins
981


আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে নিশিগন্ধা। এনাফ ইজ এনাফ। মেজাজ একদম চরমে। মস্তিষ্কের হার্ড ডিস্ক মেমরি কানায় কানায় অ্যাংগার পার্টিকেলে ঠেসে গাদাগাদি হয়ে আছে। বনগাঁ লোকালের অফিস টাইমের কামরার থেকেও বেশি। সেখানে গিগা মেগা তো দূর অস্ত পয়েন্ট লক্ষ কোটি ডেসিম্যাল কিলো বাইট ক্ষমারও জায়গা নেই। ক্যাপ্রির ওপর একটা হলুদ টি-শার্ট গলিয়ে নিল। চুলে চিরুনি বোলানোর কোন দায় বোধ করল না। একটা গার্ডার লাগিয়ে পনি টেইল করে নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হতে গিয়ে খেয়াল হল তাড়াহুড়োতে টিশার্ট এর নিচে ব্রা পরা হয় নি।

উফ! মার কাছে গেলে ঠিক ধরে ফেলবে। চোখ তো না যেন হাজার কিলোওয়াটের সার্চ লাইট। ঘরে থাকলেই হল। সারাক্ষণ নিশির সাথে পোঁ পোঁ। “চুলটার কি হাল করেছিস? আয় বেঁধে দি। একটু তেল দিয়ে দি। তোর দিন্না আমাকে দিত”। নিশিগন্ধা আকাশ থেকে পড়ে বলে, “মানে? একদম না। এখন কেউ চুলে তেল দেয় না। সে আমলে চুল দিয়ে গড়িয়ে পড়া সর্ষের তেলে মুড়ি মেখে খেয়েছ। পসিবলি”। মেয়ের কথা শুনে মা হেসে ফেলে। তানাহলে বলবে, “এই জিন্সটা কেনার পর থেকে আর ধোয়া হয় নি”, “এই একটা টপ ছাড়া তোর কি আর টপ নেই?”, “কলেজের পরে সোজা বাড়ি”, “ছেলেদের সাথে মেলামেশা করতে একটু সামলে। দিনকাল ভাল নয়। কাগজ খুললেই তো যাসব চোখে পড়ে”, ইত্যাদি, প্রভৃতি। বাড়িতে থাকলেই হল সারাক্ষণ ‘এই করবি’, ‘সেই করবি না’। ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস। নিশি চোখ কান বুজে বলে দিতে পারে ডোন্টসের পাল্লা কয়েকশ গুণ বেশি। মা বোধহয় এখনও ওকে সেই আঙ্গুল চোষা নার্সারির নিশি ভাবে। তুলনায় বাবাই অনেক বেশি স্বাধীনতা দেয়, প্যাম্পার করে। তবে নিশিগন্ধা নিজের বুকের ভেতরে একটা ভাল লাগার স্বচ্ছতোয়া বয়ে যাওয়া অনুভব করে যখন দেখে মায়ের এক ঢাল কাজলা কালো দীঘির মত চুলের দিকে ওর ফ্রেন্ডসরা ভ্যাবলা মেরে তাকিয়ে থাকে, গলার কাছে একদলা ঘন মেঘ আটকে যায় যখন ওর রাগ কমাতে বাবাই প্রায়ই বলে মাস্টার্স করে এমফিল করা ওর মা শুধুমাত্র ওকে বড় করে তোলার জন্য অধ্যাপিকার চাকুরি হেলায় ছেড়ে দিয়েছে, ও নিজেও দেখেছে ওর সামান্য জ্বরজারি হলে ওকে কোলের কাছে নিয়ে মা লুকিয়ে চোখের জল মোছে, এমন আরও কত। নাহ! এমন লোকের সাথে ঝামেলায় গিয়ে নিশি এঁটে উঠতে পারবে না। দেরি করা চলবে না। রাগ কমে যেতে পারে। চট করে টিশার্টটা খুলে ব্রা পরে নিল।

নিশিগন্ধা সেন বড়লোক বাপের আদরের দুলারি। যাদবপুরে ইংলিশে অনার্স ফাইনাল ইয়ার। লাস্ট সেমিস্টার হয়ে গিয়ে সামার ভ্যাকেশন চলছে। তাই গতকাল ওর বার্থডে পার্টিটা একটু স্পেশ্যাল ছিল ওর কাছে। একটু লাগাম ছাড়া টাইপ সেলিব্রেশন প্ল্যান করেছিল। কিন্তু একটা শয়তান কাল ওর বার্থডে পার্টি শুধু যে স্পয়েল করেছে তা নয়, রাতভর ভালো করে ঘুমোতে দেয়নি। সব্বাই এসেছিল কতো কতো দামী দামী গিফট নিয়ে। নিশিগন্ধার বার্থ-ডে ইনভিটেশন পেলে ইউনিভার্সিটির আচ্ছা আচ্ছা রোমিওরা ধন্য হয়ে যায়, আর এই আনকালচার্ড ভূতটা এলই না। হাউ ডেয়ার হি! স্কুটিটা ধড়াম করে অরণ্যদের বাড়ীর সামনে থামিয়ে ঝড়ের বেগে ভেতরে ঢুকে গেল। অরণ্যর মা সুতপা নিশিগন্ধার চোখ মুখ আর উল্কার গতিতে ঢোকা দেখেই আঁচ করে নিয়েছে আজ ছেলের কপালে দুঃখ আছে। এক বিধ্বংসী সুনামি অরণ্যের ওপর আছড়ে পড়তে চলেছে। লুচি করার জন্য ময়দা ঠেসতে ঠেসতে মনে মনে বলে সুতপা, “বেশ হয়েছে, এবার ঝাড় খা। ঠ্যাটা, অবাধ্য ছেলে কোথাকার! সত্যিই বাবা, ছেলেটা এত অসভ্য কেন? মেয়েটা কত করে বলে গেল”।

কতবার সুতপা বলেছে, “যা না, না গেলে দুঃখ পাবে মেয়েটা”। ওর সেই এক কথা, “বড় লোক মেয়ের জন্মদিনের পার্টি। আমার কেমন সঙ্কোচ হয়, মা”। তবুও সুতপা অনেক করে ছেলেকে বুঝিয়েছিল, “দ্যাখ, নিশি অন্য রকম। ওর মধ্যে ওসব ধনী গরীব ব্যাপার নেই। দেখিস না কেমন রান্নাঘরে ঢুকে ঢাকনা তুলে দ্যাখে আমি কি রান্না করেছি। আচারের বয়াম খুলে নিজেই আচার তুলে খেতে শুরু করে। আমার ভীষণ ভালো লাগে মেয়েটাকে। যেন কত আপনার জন। আমি টাকা দিচ্ছি, একটা গিফট নিয়ে যা”।

“মা, তুমি বোঝো না। ওকে দেওয়ার মত জিনিষের অনেক দাম। আমাদের সাধ্যে কুলবে না”।

“তোর যত উল্টা পাল্টা কথা। সবটাতে বাড়াবাড়ি”। খুব রেগে গিয়েছিল সুতপা। ছেলেকে বলতে পারেন না যে মেয়েদের একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে। ওর সেই অভিজ্ঞ ইন্দ্রিয়ে ছেলের প্রতি নিশিগন্ধার আচরণে এমন কিছু আছে যা স্ফটিক স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীর মত। ঠিক যেমন পাহাড়ি নদীর স্রোতের তলায় নুড়ি পাথর মাছ সব স্পষ্ট দেখা যায়। বড়লোকের মেয়ে হলে কি হবে মনটা ভাল, প্যাঁচ পয়জার বর্জিত। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে অনেকে নানা রকম সমালোচনা করে। সুতপার কিন্তু মনে হয় ওরা বেশ সহজ সরল, কোন ভনিতা নেই। স্বামী স্ত্রী তুই তুকারি করছে। এটাই তো চাই। পতিদেব আবার কি? অনেক ভালবাসা থাকবে আর থাকবে নিখাদ বন্ধুত্ব। এখনকার মেয়েদের দেখলে ওর বেশ লাগে। ওদের চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছে অনিচ্ছে সম্মন্ধে ওরা কি সাবলীল এবং সচেতন।

মনে আছে নিশি যেদিন প্রথম ওদের বাড়ি এল, সুতপাকে প্রথম সম্ভাষণ করল মামনি বলে। আপনি আজ্ঞের কোন বালাই নেই। সরাসরি তুমি, আর প্রথম দিন তুমি বলার জন্য কোন অনুমতির ধারও ধারেনি। সুতপাই বরং প্রথম দিকে ওকে তুমি বলাতে, পাগলী মেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলেছিল, “আমি তোমাকে তুমি বলছি, মামনি বলছি আর তুমি আমাকে তুই বলতে পারছ না?”। তারপর যত দিন গেছে মেয়েটা যেন এই বাড়ির একজন হয়ে গেছে। বরং স্বভাব চাপা নিজের পেটের সন্তা্নের মনের খবর পেতে মা হিসেবে ওকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

নিশির প্রতি ছেলের মনোভাবও জানা হয়ে ওঠেনি। ঠারেঠোরে সুতপা যে চেষ্টা করেনি তা নয়। আসলে ছোট থেকেই অরণ্য এমন। বহিঃপ্রকাশ কম। খিদে পেলে মুখে রা নেই। মায়ের চারপাশে ঘুরঘুর করবে। মুখ ফুটে বলবে না, “মা, খিদে পেয়েছে। কিছু খেতে দাও”। মনের ঘরে মেঘ জমিয়ে রেখে কষ্ট পাওয়ার অভ্যাস। সেই মেঘকে যে বৃষ্টিতে পরিনত করে ভারমুক্ত হতে হয়, অরণ্যর জানা নেই। রিটায়ার করার বছর দুই পরে অরণ্যর বাবা হঠাৎ করে চলে যাওয়াতে মা ছেলে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। অবশ্য জীবিতাবস্থাতেই বাড়ীটা সম্পূর্ণ করে মা ছেলের মাথা গোঁজার একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনটে কামরার মধ্যে দুটো বেশ বড়, রান্নাঘরটাও সুতপার ইচ্ছানুসারে তৈরি। দুটো বাথরুম। অরণ্য চাপা স্বভাবের হলেও খুব বুঝদার ছেলে। আর পড়াশুনায় বরাবরই বেশ ভাল। এবছর ইতিহাসে ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে এমএ পাশ করেছে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি থেকে।

কলেজে পড়ার সময় থেকে টিউশন করে নিজের হাত খরচা তোলে। যদিও ফ্যামিলি পেনসন আর জমানো টাকায় দুজনের সংসার মোটামুটি ভালই চলে যায়। এবছর থেকে বালিগঞ্জের দিকে কয়েকটা স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে মেয়েদের পড়াচ্ছে। বেশ ভাল ফিজ দেয় ওরা। পাশাপাশি এমফিলের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে। আশা করছে ক্যালকাটাতেই সুযোগ পেয়ে যাবে। আর একটা গুণ আছে অরন্যর। ভীষণ ভাল আঁকে বিশেষ করে পোট্রেট। অনেকে ওকে পরামর্শ দিয়েছিল গতানুগতিক পড়াশুনা না করে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে। ওর আঁকার স্যার অরুণবাবু তো সব সময় আক্ষেপ করেন এমন প্রতিভাবান ছেলে উনি আগে কখনও পাননি। সেখানেও ছেলের এক গোঁ। ওর খুব স্পষ্ট কথা, “আমি টিচার হবো, কলেজে না পেলে স্কুলেই পড়াব। আঁকাটা আমার নেশা। আমি ভালবেসে আঁকি”। এই আঁকার সুত্র ধরেই নিশিগন্ধার সাথে অরণ্যর আলাপ। যাদবপুরের ছেলেমেয়েরা একটা আর্ট একজিবিশন করেছিল। নিশি ছিল কর্মকর্তাদের একজন। অরুণবাবুর ইচ্ছেতে অরণ্য খান কয়েক ছবি একজিবিশনে দিয়েছিল। তার মধ্যে ওর দুটো ছবি সবার নজর কেড়েছিল।

ময়দা মাখতে মাখতে চোখের কোণ দিয়ে একবার দেখে নিয়ে সস্নেহে জিজ্ঞাসা করল, “তোর কথা ভীষণ মনে হচ্ছিল। কিন্তু সক্কাল সক্কাল আমার নিশি সোনার এমন চেহারা কেন? একটা প্রবল ঝড়ের পূর্বাভাষ দেখতে পাচ্ছি, একটা সুনামি আসছে কি?” আস্কারা পেয়ে রাগ আর অভিমানের মিশেলে নিশির গলায় কথা আটকে গেল, কান্না ভেজা কণ্ঠস্বরে বলল, “তুমি কিছু বলতে পারবে না আমাকে। তুমি কিন্তু কিচ্ছু বলবে না। আজ তোমার ছেলেকে খুন করতে এসেছি, মামনি। কোথায় শয়তানটা?”। 

ইশারায় অরণ্যর ঘরের দিকে দেখিয়ে মুচকি হেসে বলল, “আমিও তাই চাই। আচ্ছা করে শাসন করতো বাঁদরটাকে। আমি তোকে কিচ্ছুটি বলব না। ভেবেছিলাম লুচির সাথে আলু ভাজা করব। অরু খুব ভালবাসে। করব না। আলু ভাজা বাতিল। আমার নিশি সোনার প্রিয় কালো জিরে দিয়ে সাদা সাদা আলুর তরকারি করব। আর কুলের আচারটা চেখে দেখিস তো, আর একটু মিষ্টি লাগবে কি না”। সরোষে একবার সুতপার দিকে তাকিয়ে দপদপ করে অরণ্যর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

ভেজানো দরজায় সজোরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকেই নিশিগন্ধা এক রঙিন স্বপ্নের মায়াজালে আটকে গেল। ঘরের মধ্যে রাখা উল্টো দিকের ইজেল থেকে হরেক রঙের বাহারে আর এক নিশিগন্ধা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওর গজ দাঁতটাও কি জীবন্ত! কি অপূর্ব রঙের কাজ! অনেক আদরে সোহাগে নিখুঁত ভাবে বোলান হয়েছে প্রতিটা তুলির টান। মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওর মনে হয়, “আমি এত সুন্দর দেখতে? রোজই তো নিজেকে আয়নার সামনে কতভাবে দেখি। কই এত অপরূপা তো আগে কখনো লাগে নি”।   

নিজের ভেতরে একটা পরিবর্তন অনুভব করছে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত শেষে গলিত, প্রজ্জ্বলিত লাভা যেমন বাইরের শীতল হাওয়ার ছোঁয়া পেয়ে শান্ত হয়ে যায়, ওর অজান্তে ভেতরের ক্রোধের বহ্নিশিখা নিভে যাচ্ছে। কোন অগ্ন্যুৎপাত ছাড়াই। 

“বিলেটেড হ্যাপি বার্থডে, নিশি। কাল কমপ্লিট করতে পারিনিরে। রাত জেগে শেষ করেছি। তোর পছন্দ হয়েছে? আসলে তোকে কিছু দেওয়ার মত ক্ষমতা তো আমার নেই। কত দামী দামী গিফট পেয়েছিস নিশ্চয়”। 

পেছন ফিরল। ঘরের এক কোণে হরিণ শাবকের দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে ওর টার্গেট। অরণ্যকে পুড়িয়ে ছাই করার জন্য যে বহ্নিশিখা নিজের ভেতরে জমিয়ে রেখেছিল মরিয়া হয়ে নিজের ভেতরে তার খোঁজ করল। কোথায়? ওর চোখের মত মনের ঘরেও কালো শান্ত দীঘির জল টলমল করছে। শিকার করতে এসে শিকারি নিজেই তো শিকারে পরিণত হচ্ছে।

“আমাকে এই চিনেছিস তুই? কাল এই জন্যে আসিস নি? জানিস আমি সারা রাত ঘুমাই নি, আমার জন্মদিনটা তোর জন্যে নষ্ট হয়েছে”, বুজে আসা গলায় কোন মতে শব্দ এনে বলল নিশিগন্ধা।

“কেন? রোহন, সুমিত, জিশানরা আসে নি?

“আমার ছবি আঁকে অথচ আমার চোখের ভাষা পড়তে পারেনা বুদ্ধুরাম। সবাই এসেছিল। দামী দামী গিফটও দিয়েছে। তাতে কি হল? গাঁইয়া ভূত একটা। মুখফুটে ভালবাসি না বললে বুঝি কিছু বুঝতে পারিস না?”

হতবম্ব অরণ্য কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই আহত বাঘিনীর মতো ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল টেনে আগ্রাসী চুমোতে সব কথা বন্ধ করে দিল।  

অরণ্যর সঙ্কুচিত হাতের বেড় ওকে ক্রমশ বন্দী করছে আর ততই নিশিগন্ধা অরণ্যের বুকের মধ্যে লতা হয়ে মিশে যাচ্ছে।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance