Manab Mondal

Romance Thriller Others

4  

Manab Mondal

Romance Thriller Others

যক্ষিনী

যক্ষিনী

6 mins
1.1K


গোয়াতে এসে এটা বদ অভ্যাস হঠাৎ করে পেয়ে বসেছে। স্কুল কলেজ জীবনে কোন দিন নেশা বা কোন মাদকদ্রব্য কখন হাত দিই নি। কিন্তু কি হলো জানিনা শুধু মাত্র স্বাদ নিতে একটি পানশালায় একটু ফেনী নিয়েছিলাম। ফেনী গোয়ার একটি দেশীয় মাদক পানীয়। পুর্তুগীজরা ভারতের এই অংশে কাজুবাদামের চাষ শুরু করেছিলো। আর এই কাজুবাদাম থেকেই তৈরি হয় ফেনী। নেশা ঠিক বলবোনা। কিন্তু সারা সপ্তাহ কাজের পর একটু ঘুম চাইতো শরীরটা। নানা চিন্তা এবং একাকিত্ব সেটা দিতো না। ফেনী কিংবা অন্য মাদকদ্রব্য আমাকে দিয়েছিলো সেই টাই । তাই সপ্তাহান্তে একটি নির্দিষ্ট পানশালায় এসে , দুই এক পেগ পানীয় পান করতাম নিয়মিত।

গোয়া শহরের মেজাজ রঙীন। এর উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তোলে প্রজাপতি র মতো সুন্দর মেয়েরা। তবে প্রজাপতি বলা ঠিক হবে না এরাতো রাত পরী। যানে রাতের বেলায় এক ধরনের পতঙ্গ বের হয়। যাদের মথ বলে , প্রজাপতির চেয়ে এরা কোন অংশে কম নয়। তবু এদের সৌন্দর্য কোন কদর দেয় না মানুষ। ঠিক এই পানশালায় ঘোরাঘুরি করা রূপসীদের সাথে সব পুরুষরাই সময় কাটাতে চায় কিন্তু জীবন বা সংসার কাটাতে চায় না। 

যাইহোক এই পানশালার নিয়মিত খদ্দের আমি। তবে কোন সুন্দরী আমার ধারে কাছে আসে না। এমন নয় যে আমি সুপুরুষ নৈ। আসলে এসব মেয়েরা অভিজাত ব্যেশ্যা । ও "ব্যেশ্যা" শব্দটি আপত্তি আছে বোধহয় আপানার। জানান ব্যেশ্যা শব্দটি আসলে খারাপ নয় ব্যেশ আসলে অতীত সময়ে হোটেলকে বলা হতো । এই হোটেলে আপ্যায়ন করার জন্য মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হতো তারাই আসলে ব্যেশ্যা। থাক ওসব কথা, পানশালায় এই সব রূপসীরা আসলে ফাঁদ। এদের সাথে আপনি বন্ধুত্ব করতে চাইলে এরা অথবা আপনি নিজেই এদের কিছু পানীয় কিনে দিতে প্রস্তাব দেবে। আপনি তখন শিকারী ভাবছেন, খুব দশ পেগ টাকিলা বা ভোটকা পান করেই সুন্দরী বেসামাল হয়ে চলে আসবে আপানার বাহুডোরে। কিন্তু আপনিতো জানান না পানশালার সাথে ওর যোগসাজশ আছে। পানীয় বদলে ওকে দেওয়া হয় জল। তাই বেসামাল হয়ে হয়ে যায় আপনার বিল। মেয়েটি বেসামাল হয় না কখনো। এসব গল্প আমার জানা তাই কোন সুন্দরীর প্রতি আমি আগ্রহ দেখাতাম না কখনোই।

সেইদিন হঠাৎ করে এক তরুণী বন্ধুত্বের প্রস্তাব নিয়ে এলো। আমি সরাসরি নাকচ করে দিলে, সে আমার বোতল থেকে ই এক প্যাগ পানীয় পান করলো। আর জানালো , সে আমার ব্লগ লেখা পড়ে। সেই দিন পূর্নিমা ছিলো তাই তার ব্যক্তিগত সি বীচে আমাকে নিয়ে যেতে চায়। তাঁর হোটেল ব্যবসার একটু প্রমোশন করাতে। মেয়েকে আমি আগে দেখিনি, কথা বিশ্বাস করে যাওয়া যেতো। কিন্তু আজকাল খুব ভুতের গল্প পড়ছি তাই পূর্নিমা রাত কথাটায় একটু বুক শুকিয়ে গেলো। কোথাও যেনো পড়ছিলাম যক্ষনীদের কথা। সুন্দরী মহিলা বেশে যোক্ষণীরা পুরুষদের সাথে বন্ধুত্ব করে। পরে পুর্নীমার তাঁরা শরীর উপভোগ করতে করতেই পুরুষের সব রক্ত শুষে নিয়ে মেরে ফেলে সম্ভোগ কারি পুরুষটি কে।

না না আমি ভুত প্রেত কিছু বিশ্বাস করি না। ব্যক্তিগত জীবনে আমার জীবনে দুই টো মেয়ে এসেছিলো দুইজনকে আমি ভালোবাসা চেষ্টা করেছি আপ্রান । কিন্তু বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে দুইবার। তাই নারীদের বিশ্বাস আমি করতে চাইনা আমি চট করে।

কেমন করে যেনো আমার মনে কথাটা বুঝতে পেরে গেলো। উনি উনার কার্ডটা রেখে গেলো বললো "খোঁজ খবর নিয়ে নিন , দিন পোনেরো পর দেখা হবে, বাঙালি হিসেবে আশা করি এক জন বাঙালীকে আমি পাশে পাবো । "

শেষ কথাটা একটু আবেগী করলেও, খোঁজ খবর নিয়ে , জানলাম পালোলিয়াম আর জুহি বিচের মধ্যবর্তী কোন একটা জায়গায় এটা একটি ব্যক্তিগত বীচ। সোস্যাল মিডিয়া কথা বার্তা হলো। নির্দিষ্ট দিনে একটি দ্বিচক্র যান নিয়ে হাজির আমার ড্রাইডকের সামনে। ও আমার সম্পর্কে কিছু কথা এখনো বলা হয়নি। গোয়াতে এসেছি ভাগ্য পরীক্ষা করতে। একটি ড্রাই ডকের লেবার ক্যান্টিইন চালাচ্ছিলাম, জাহাজের কাজ ছেড়ে।

একটি সুন্দরী মেয়ে বাইকে লং রাইড , যে কোনো পুরুষেরই মনে লাড্ডু ফুটবেই কিন্তু আগের থেকে আমি একটু সংরণ করছি নিজেকে, ওকে বাইক রাইড করতে বললাম।দুষণ মুক্ত গোয়ার পথের, সবুজ জঙ্গল , আর তার ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মারা নীল আকাশ আর সমুদ্র , তুমি চুপ থাকলেও কথা বলা প্রকৃতি, এখানে পথ যদি না শেষ হয় মতো রোমান্টিক মেজাজ তৈরি করলো। তার মধ্যে, ও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রস্তাব দিলো ওর সাথে ওর হোটেল ব্যবসায় যোগ দিতে। ওর তেমন কর্মচারী নেই, ওর বৃদ্ধ কাকা দেখছে ওদের এই বাড়িটা যেটি  ভালো অতিথি শালা হতেই পারে।

বেশ জায়গা জুড়ে রয়েছে ওদের বাড়ি টা। জনমানুষ না থাকায়, বাগান আর বাড়িটি ভুতের বাড়ি মতো ই লাগে বেশ গা ছম ছমে ভাব দিনের বেলায় ও। তবে বাড়িটি অদ্ভুত ভাবে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । পাহাড়ের ওপর থেকে বড়ো গাছ গুলো নেমে আসতে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে ছে পাথুরে পাঁচিলের কাছে, যেন তাঁরা এই বাড়িতে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে। ওর কাকা দেখে রূপকথার গল্প মনে পড়লো। মন হলো দুষ্টু রাক্ষস বোধহয় রাজকন্যা আটকে রেখেছে এখানে। ভয়ঙ্কর ওনার চোখদুটো।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া টা সেরেই , সমুদ্র স্নান বেড়িয়ে পরলাম দুই জনে। ছোট সৈকত দুই পাশ দিয়ে ঝুপ করে নেমে পড়েছে পাহাড় , সাদা বালির বেশ চওড়া বালুয়াড়ী । সামনে দুই একটা দ্বীপ আছে তাই খুব বেশি জোর স্রোত এখানে আসছে না। সে যাইহোক এই সমুদ্র সৈকত তখন শুধু মাত্র আমাদের দুই জনের দখলে। কিন্তু সময়ের ওপর তো করো দখলদারিত্ব থাকে না। সন্ধ্যা হঠাৎ করেই নেমে এলো। সমুদ্র সৈকত গা এলিয়ে নীল দীগন্তরেখার পিছনে সূর্যের লুকিয়ে যাওয়া দেখলাম। চারিদিকে অন্ধকার হবার আগেই কোথা থেকে অনেক জোনাকি এসে হাজির এখানে।

মুখ ফোসকে বলেই ফেললাম " এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না"

ও বললো " তা যেতে তোমায় কে দিচ্ছে? দিনটা তো সমুদ্রের রূপ দেখলে, এ রাত টুকু নাহয় আমার রূপ স্বাদ নাও"

একটু দূরে ই ও শুয়ে। কিছু টা অবাক করে ই ওর চারিদিকে অনেক জোনাকি, জোনাকি মৃদু আলো আর সুমুদ্রের জল যেনো ওকে আরো বেশি নোনতা করে দিয়েছে ওর শরীর টাকে। সমুদ্রের সৈকত মধ্যে ওর শরীর টা যেনো একটা পালক মতো পরে আছে, ফর্শা কাঁধের ওপর জ্বলজ্বল করছে একটা কালো তিল , পাতলা পেটের মাঝখানে ঠিক নাভির কাছে চিকচিক করছে দুই একটা বালিকনা, হালকা অন্ধকারে উজ্জ্বল আর আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেছে ওর উরু। লজ্জা নিবারণের মতো দুই টুকরো কাপড় পড়ে ই নেমে ছিলো সমুদ্রে। ভিজে যাওয়া কাপড়ে ওর যৌনাঙ্গের বিভাজিকা স্পষ্ট করে দিচ্ছি, সমুদ্র মতো ওর যৌবন , জোছনার মসৃন শরীরটা সত্যি লোভ নিও।

আচ্ছা সীতার পবিত্রতা গল্প সবাই বলে কিন্তু রামকে যখন সুর্পনাখার মতো রূপসী প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাম সে প্রস্তাব অস্বীকার করেছিলো সে গল্প কেউ বলে না। পুরুষ মানে লোভি ভাবা ভুল। বছর পাঁচেক আগে ই নীলাঞ্জনা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু মনে প্রানে আমি ওকে ভালবাসি , ওর জন্য এখনো অপেক্ষা করি। একদিন মুখোমুখি হয়ে ওকে বলতে চাই" আমি অবিশ্বাসী নই"।

নিজেকে সামলে নিয়ে আমি , বাঙলো দিকে রওনা দিতে গেলাম।ও আমার হাত টা ধরে টান দিতেই আমি ওরে ওপরে পড়ে গেলাম। সমুদ্র শৈশব এর মতো নরম ওর শরীর, আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস যেনো নিজেদের মধ্যে কথোপকথন শুরু করে দিলো। ওর চোখে যেন জয়ের হাসি, ওর ভেজা বুকের স্পর্শ আমার শরীর উষ্ণতা বাড়িয়ে দিলো কয়েক গুণ। ওর রসালো ঠোট , আমার শিরায় উপশিরায় আকাংখা ছুটোছুটি করলো দুরন্ত গতিতে।

দুই ছেলের ভালো বন্ধুত্ব সব সময় উদাহরণ হয় নিঃসার্থ বন্ধুত্বের, কিন্তু একটা ছেলে আর মেয়ে বন্ধুত্ব কলঙ্কিত হয় ঠিক এই জায়গা এসে, আমদের মধ্যে অনেক ভালো লাগা অনেক ভালো স্মৃতি তৈরি হয়েছে, সেটাকে কলঙ্কিত করতে চাই না, আমি তাই সব আহ্বান উপেক্ষা করে , ওর আদুরে বাহু দোর থেকে মুক্ত হয়ে, চললাম আমি। অস্পষ্ট কন্ঠে বললো "এভাবে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতো পারো না ‌, তুমি ও তো পিপাসিত" কোন কিছু না বলে আমি এগাতে থাকলাম। হঠাৎ দেখি অন্ধকারে পথ আটকে দাঁড়িয়ে ওর কাকা। উনাকে দেখলে যেকোন মানুষ ভয় পাবেন। আর এই অন্ধকারে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

চোখ খুলে দেখলাম, স্থানীয় জেলা নৌকা থেকে নামানো হচ্ছে আমাকে। আমি চোখ খুলতেই কোলাহল ও ভিড়টা বেড়ে গেলো আমাকে ঘিরে। কাল, ঐ সমুদ্র সৈকতে অনেক জোনাকি দেখেই ওরা গিয়েছিলো ঐখানে , কারণ প্রতি আমাবস্যা আর পূর্ণীমাতে ওরা ওখান থেকে শব দেহ উদ্ধার করে আনে‌ । ওখানে এক যক্ষিনীর বাস। আমি যতো দূর জানি,যক্ষিণীদের বলা হয় আদিশক্তি দ্বারা সৃষ্ট শক্তি।প্রাচীন বৌদ্ধ এবং হিন্দু মন্দিরে দারোয়ান হিসাবে এদের মূর্তি পাওয়া যায়। কিন্তু মালায়ালাম সাহিত্যের কল্পকাহিনীতে, যক্ষীদের বেশিরভাগই দুষ্টু চরিত্রে নারী হিসেবে দেখানো হয়েছে । তারা পুরুষদের লোভনীয় এবং রূপ ও কথার ছলে পুরুষ কে বস করে , সঙ্গম করে অবশেষে তাদের হত্যার দ্বারা । যাইহোক সে যাত্রায় আমি বেঁচে গিয়েছিলাম। গল্প টা রাহুলের বিশ্বাস হয়নি। আজ পূর্নীমা শত বারণ করা সত্তেও ও মানালো না, চলে গেলো ঐ মেয়েটার সাথে। আমি ছুটলাম জেলেপাড়ায়। ঐ বৃদ্ধার বাবার কাছে। দূরে আকাশে উড়ল অনেক জোনাকি। জানি না কাল সকালে কি হবে???

সাহিত্য, উপন্যাস, মহাকাব্য, লোককথা , পুরুষের পতনের কারণ হিসেবে নারীদের দায়ী করলেও। ভেবে দেখুন সত্যি পূরুষরাতো সব সময় ভীষণ লোভী, আর অবিশ্বাসী।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance