KRISHNA JANA

Inspirational Others

4  

KRISHNA JANA

Inspirational Others

VIP

VIP

4 mins
4


তখন ২০১৬ সাল হবে সদ্য কলকাতায় এসেছিলাম ইচ্ছে হয়েছিল কোলকাতার দূর্গাপূজো দেখতে যাব । তখন আমার গ্রামের এক অন্তরঙ্গ বন্ধু ও আমি ঠিক করলাম দুপুরে ঠাকুর দেখতে যাব এবং ঠিক সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসব, জায়গাটা ঠিক হল শিয়ালদহ এর পথে যতগুলো‌ প্যান্ডেল আছে সবগুলো দেখব। সেইমত বেরিয়ে পড়লাম পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতায়, তখনও পূজোর ভীড়‌ সম্পর্কে কোন ধারনাই ছিল না। দুজনে একসাথে অনেক গল্প ও হাসির মধ্যে দিয়ে একটা একটা করে ঠাকুর দেখতে দেখতে যাচ্ছি। সমস্যাটা হল আমারা যখন‌ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এ এলাম‌ তখন দেখি যে‌ অসম্ভব ভীড়‌, কারো পা দেখতে পাচ্ছি না শুধুই কালো কালো মাথার‌ ভীড়‌, আমারা দুজনেই দেখি বিনা চেষ্টায় ভীষণ ভীড়ের‌ মাঝখানে চলে এসেছি, এখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ নেই কিন্তু এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে ফিরতে হবেই( কারণ বন্ধু গ্রামে বাড়ি ফিরবে ও আমি হোস্টেল যাবো)। ঐ ভয়ানক ভীড়ের‌ মধ্যে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি এমন সময় দেখি আমার পাশেই কিছুটা দূরে বাঁশের লাইন করা আছে যেটা সম্পুর্ণ ফাঁকা‌ এবং ঐ লাইনে একটি লেখা চোখে পড়ল 'VIP GATE' । আমি ঐ বন্ধুটাকে বললাম ইসস্ আমি যদি ভিআইপি হতাম তাহলে আমি এক দৌড়ে দুর্গা মাকে দেখে আসতে পারতাম এবং ঐ ভীষণ ভীড়‌ আমার দিকে তাকিয়ে দেখত এবং মাথা উঁচু করে ঐ ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে পারতাম। তখন ঐ বন্ধুটা ব্যাঙ্গ করে বলেছিল তুই কোথাকার কে হে- ভি আই পি! জানিস VIP হতে গেলে কত কাঠখড়‌ পোড়াতে হয়! আমি বললাম কি কি করতে হয় একটু বল, যদিও ও বিশেষ কিছু জানতো না এ ব্যাপারে ও বলল অনেক টাকা রোজগার করতে হয় যেন‌ মানিব্যাগ এ টাকা না ধরে এত টাকা থাকা লাগে আর কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা নেতা মন্ত্রীর স্তুতি‌ করার কায়দা জানতে হবে তবে তুই VIP হবি ! আমি বললাম তাহলে আর VIP হ‌ওয়া হলোনা রে কারণ এর কোনটাই তো এই মূহুর্তে সম্ভব হবেনা আমার পক্ষে, যাইহোক ঐদিন অনেক কষ্ট করে ভীড়‌ ঠেলে‌ মাকে দর্শন করে এসেছিলাম তবে অনেকটা দেরী হয়েছিল ফিরতে এবং হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে কিছুটা বকা খেতে হয়েছিল ঐদিন।


তারপর অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গিয়েছে, ঐদিনের ঐ ঘটনা গুলো ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু মাতৃদেবী সেটা ভোলেননি। কিছুদিন আগেই গৌড়ীয় মিশনের‌ শ্রীবিগ্রহগনের‌ কৃপায় আমার একটা সৌভাগ্য হয়েছিল ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তথাকথিত VIP চেয়ারে‌ সামনে বসে বিশ্ব বৈষ্ণব সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার‌ এবং যে‌ স্থানে এই অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সেখানে কিছুদিন আগেই G-20 সামিট‌ হয়েছিল যেখানে ‌বিশ্বের বড় বড় রাজনেতার‌ আগমন ঘটেছিল, এটা খুব সাধারণ জায়গা নয় অবশ্যই। যখন‌ ঐ 'ভারত মন্ডপমের‌' গেটে প্রবেশ করলাম দেখি কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনী কিন্তু আমার গলায় ঐ‌ লাল রঙের VIP কার্ড থাকায়‌ আমার গায়ে হাত দিয়ে চেক‌ করা তো দূরের কথা আমাকে প্রনাম করে আমার পথ‌ ছেড়ে দিল! আমি নিজে থেকেই বললাম আমার পকেটে ফোন আছে, বলল না না কিছু চেক করতে হবেনা আপনি ভিতরে যান‌। হৃদয়ের ভিতরটা একটু আদ্র হয়ে উঠল কিন্তু সেটা কৃতার্থ ভাব নয়‌। খানিকটা এগিয়ে যেতে দেখি নিরাপত্তা বাহিনীরা সবাই পথ করে দিয়ে একটা ভালো সিটে আমাকে বসতে অনুরোধ করছে‌, গেট দিয়ে প্রবেশ করে মাথা উঁচু করে এগিয়ে গেলাম ঠিক ঐ দুর্গাপুজোয় যেমনটা‌ কল্পনা করেছিলাম সেদিন!!


তার কিছুক্ষণ পর প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে‌ উঠে বক্তব্য রাখেন আমি সামনে থেকেই দেখতে পেলাম কারণ যাদের‌ সাধারণ কার্ড ছিল তার স্টেজ‌ থেকে অনেক দূরে বসেছিল তারা শুধুমাত্র জায়েন্ট Screen এ তে দেখছিল‌ অনুষ্ঠানটি।

আমার চারপাশে অনেক বড় বড় VIP এবং খ্যাতনামা‌ সব মানুষ ও সন্ন্যাসীর চেয়ার, তখন কিছুসময়ের‌ জন্য বিষয়টি বেশ উপভোগ করলাম।


কিন্তু সমস্যা হল সেদিনের সেই কল্পনার VIP হবার যে‌ সুখ সেটা তন্য‌তন্য করে খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু পেলাম না। অনুষ্ঠান শেষে যখন‌ ঐ নিরাপত্তা রক্ষীদের পাশ দিয়ে গেলাম তখন গলায় ঝোলানো ঐ লাল ভি আই পি লেখা কার্ড দেখে তারা বিশেষ দৃষ্টি দিলনা তো ক‌ই, বা যখন‌ পথচলতি মানুষকে ইঙ্গিতে ঐ কার্ডটি‌ দেখানোর চেষ্টা করলাম ক‌ই তারা তো উচ্ছসিত হলোনা, তাহলে কি ওদের উচ্ছসিত বা সন্মান দেবার উপরে আমার ভিআইপি হবার সুখ নির্ভর করছে? এখন কি তাহলে অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেলাম VIP সম্মিলিত আমি! তাহলে ঐ সুখটা কি তাৎক্ষণিক! ঐ মুহুর্তের মধ্যেই শুধুমাত্র প্রযোজ্য‌ ছিল! তাহলে কি এর উপরেও কোন VIP কার্ড আছে ! যেটা আমাকে অনন্তর VIP করে রাখবে। তাহলে কি ওটা আমার চিরন্তন চাহিদা ছিলনা‌ ? এসব নানান প্রশ্ন ভীড়‌ করতে শুরু করলো ঐদিনের ঐ কালো কালো মাথাগুলোর মতোই কিন্তু ভিআইপি রাস্তাটা কোন দিকে চেষ্টা করেও দেখতে পেলাম না‌!!


গুনীজনেরা‌ বলেন নিজের কর্ম এবং চরিত্র‌ই হল আমাদের আসল কার্ড‌ যেটা নাকি সর্বজন গৃহীত, তখন নাকি সবাই খুব সহজে চিনে নেবে অনায়াসেই।


এদিকে ঈশ্বরের নিরাপত্তা রক্ষীরা বলেন ঈশ্বরের রাজ্যে বা দিব্য‌ আনন্দের রাজ্যে প্রবেশ করতে হলেও নাকি কোন না কোন চিহ্ন থাকতে হবে যে‌ চিহ্নটা নাকি প্রেম‌, নির্ভরতা, বিশ্বাস ও সরলতা দিয়ে আঁকা থাকতে হবে। আর ঐ চিহ্নের দিব্য‌ অঙ্কন‌টাই হল সাধনা।


জগতে কত সব কঠিন কঠিন নিয়ম শুধুমাত্র ঐ VIP কার্ডের‌ গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য!! কিন্তু আমার তো ঐ চিহ্নটা লাগবেই কারণ শুধুমাত্র ক্ষনিক আনন্দে আমি নন্দিত হতে ভালোবাসিনা‌!!!


আমি এত কঠিন নিয়মের দ্বারা চিহ্ন অর্জন করতে অসমর্থ্য কিন্তু ঐ চিহ্ন আমার চাইই তাই পরমঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা যেন‌ শুধুমাত্র তোমার পদচিহ্নের দ্বারা অঙ্কিত VIP কার্ডটা‌ আমি বহন করে সর্বদা পরিধান করে থাকতে পারি অন্তত কাল ধরে, তাহলে যদি কখনও তোমার নিত্য‌আনন্দের রাজ্যে প্রবেশ করার সৌভাগ্য হয় কোনদিন তাহলে সহস্র সহস্র কোটি চিহ্নের ভীড়ে‌ তোমার নিজের পদচিহ্নটাকে চিনে নিতে অসুবিধা না হয়। তোমার পদতলের‌ পুন্য‌ সলিলে বসে যেন‌ তোমার সৃষ্টির নিত্য‌ লীলানুষ্ঠান‌ উপভোগ করতে পারি‌ অনন্তকাল ধরে!!!!


যাইহোক আমার মধ্যে তোমার জয় হোক নিত্যকাল‌🙏


#vip 

#কৃষ্ণ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational