দুঃখ বিলাস
দুঃখ বিলাস
পারিপার্শ্বিক বা আমার চারপাশে যারা আমার সম্বন্ধযুক্ত তাদের কিভাবে সন্তুষ্ট করা যায়! কীভাবে তাদের আনন্দিত রাখা যায়? এ প্রশ্ন কমবেশি সকল সুস্থ মানুষই চিন্তন করি সেটা চেতন ভাবেই হোক বা অবচেতনে।
কিন্তু পারিপার্শ্বিকে সন্তুষ্ট করতে গেলেই তো সর্বনাশ, এক একজনের এক একটা চাহিদা ফরমায়েশ, সেগুলো তামিল করতে গেলেই তো আমার সমস্ত সত্তা ক্ষয় হতে থাকবে এবং পরিশেষে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় একটা গল্প শুনেছিলাম - একদিন একটা লোক এক গাধার পিঠে চড়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, একজন দেখে বললে, ' সে কি তুমি গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছ? গাধাটাকে কষ্ট দিচ্ছ, ছিঃ। সে ভাবলে কাজটা সত্যিই অন্যায় হয়েছে, তাই গাধার পিঠ থেকে নেমে হাঁটিয়ে নিয়ে চলতে থাকলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আর একজনের সঙ্গে দেখা হল সে বললে 'ছিঃ ছিঃ গাধাটাকে কষ্ট দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচছ, তুমি কেমন মানুষ গা?' এই ভেবে সে গাধার হাত পা বেঁধে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে পথ চলতে থাকে। এতে গাধা ও পথিক দুজনেরই দুরবস্থার আর সীমা রইল না।
এটা শুধুমাত্র একটি গল্প না এটা আমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে কোন না কোন রূপক হিসেবে। এই জগৎ -সংসারে প্রতিনিয়ত আমরা অন্যের দ্বারা চালিত হচ্ছি প্রশ্নহীন ভাবেই!
তাহলে এর থেকে বের হওয়ার উপায় কি?
আমাদের একজন সৎ চালক দরকার, চালক কেমন হবেন?
চালক হবেন সমস্ত বৃত্তি -প্রবৃত্তির ঊধ্বে তার অন্য কোন চাহিদা থাকবে না, শুধুমাত্র আমার মঙ্গল চিন্তা ছাড়া। সেরকম কে আছেন এই পৃথিবীতে - ঈশ্বর, প্রকৃতি,পরমপিতা, গড্ বা আরও আপন ভাবে বলতে গেলে আমার ঠাকুর!
আমার চলাটা হবে ঠাকুরকে নিয়ে, আমি যদি সবাইকে খুশি করতে যাই তাহলে মন্দিরের ঘন্টার মতো সবাই আমাকে বাজিয়ে যাবে। এই বোধ নিয়ে চলা চাই আমি শুধুমাত্র ঠাকুরের, আমার জীবন চলনের একমাত্র লক্ষ্য ঠাকুরকে খুশি করা। আর আমি ঠাকুরের বলেই, তার সৃষ্ট এই জগতের সবকিছুর প্রতি আমি দরদী হব, সবকিছু সুন্দরভাবে তাঁর মতো করে সাজিয়ে তুলতে ইচ্ছে হবে।
ঈশ্বরের প্রতি অনুরাগ যত বাড়ে আমার চারপাশকে সুন্দর করে তোলার ইচ্ছে প্রবল হয়, আর তখন সকলের মঙ্গল সাধন নিজের মঙ্গল বলে অনুভূত হয়।
তোমার চিন্তনের হীরকদ্যুতি যেন আমাকে জন্ম- জন্মান্তর স্পর্শ করে থাকে।।।
*********