STORYMIRROR

KRISHNA JANA

Inspirational Others

4  

KRISHNA JANA

Inspirational Others

চলো নিজ নিকেতনে....

চলো নিজ নিকেতনে....

3 mins
281

সুবিশাল এই জগতে প্রত্যেকের রুচি, চাহিদা ও পথ বিভিন্ন, যা‌ একজনের কাছে খুব অমৃততুল্য‌ সেটা অন্য একজনের কাছে বিষতুল্য‌ও‌ হতে পারে। প্রত্যেকেই নিজের পথকে আবিষ্কার করে চলতে থাকে অনন্তের পথে‌, কিন্তু কোন পথে গেলে আমারা বেশি লাভবান হব বা কোন পথে গেলে আমরা আমাদের চরম‌ লক্ষ্য দেবত্বে স্থিত‌ হ‌ওয়া এবং অনন্ত শান্তি পাওয়া যায় সেটা আমারা অনেকেই জানিনা। আর সেটা জানানোর জন্য‌ই এই ধরাধামে বারবার আবির্ভাব ঘটে সেই মহান পুরুষের‌ সেই পরমপিতার‌, যেন সেই পথটা উনি আমাদের জানাতে পারলেই ওনার সুখ! ওনার স্বার্থকতা‌‌!


কিন্তু সাধারণভাবে আমরা যদি কোন ভালো জিনিষের সন্ধান পাই সেটা গোপন রাখি‌ কারণ সেই সুখটা নিজে অনুভব করব বলে। কিন্তু এই জগতের যিনি‌ পালনকর্তা তিনি আমাদের ঐ চির আকাঙ্খিত রাজপথের খবর অনায়াসে আমাদের দিতে চায়! তাহলে কি উনি পাগল ? না না তা হতে পারে না! তবে কি উনি স্বার্থের জন্য আমাদের থেকে কিছু পেতে আশা করেন? না না তা কি করে হয় উনিই তো এই সমগ্র জগতের পালনকর্তা বলে নিজেকে দাবি করেন তাঁর একান্ত অনুগত ভক্তের‌ কাছে! তাহলে?


উত্তরটা খুবই সহজ, মা যেমন‌ তার সন্তান যদি ভালো থাকে, সুখে থাকে, আনন্দে থাকে তাতে তিনি খুশী হন, অথচ এতে মায়ের কিন্তু বিশেষ স্বার্থ নেই, যেহেতু‌ তার দেহজাত সন্তান সার্থক হচ্ছে, ভালো থাকছে‌ এটা দেখে উপভোগ করেই মা সার্থকতা লাভ করছে। ঠিক সেভাবেই এই সমগ্র বিশ্বের যিনি‌ পালনকর্তা তিনি তো চাইবেন‌ই যে‌ যেকোন মূল্যে আমার সৃষ্টির প্রত্যেকটি‌ জীব যেন‌ ভালো থাকে, সঠিক পথে চলতে থাকে সেটা উপভোগ করতে। জীবের মধ্যে বিশেষত মনুষ্য‌ই একটু উন্নত কারন বাকী সব জীবের থেকে মানবের একটি বিশেষ শক্তি আছে সেটা হল বিবেক বা চেতনা আর এই 'চেতনার চৈতন্য ঘটানো' - এটার জন্য‌ই তাকে বারবার অবতীর্ন হতে হয় এই ধরাধামে এবং এটি আমাদের বোঝাতে গিয়ে তাঁকে কত কষ্ট পেতে হয়! তবু তাঁর বিন্দুমাত্র বিরাম নেই। তাঁর সুবিশাল সত্বাকে‌ একটা ছোট্ট মানব খাঁচায় বন্দী করে আমাদেরকে সেই চেতনতার রাজপথের সন্ধান দিতে আসেন অনবরত অনাদিকাল ধরে।


তিনি যখন‌ অবতীর্ণ হন তখন আমাদের স্বাভাবিক অহং তাকে চিনতে দেয়না মনে হয় উনি হয়তো নিজেকে বড় করতে চাইছে কিন্তু উনি যখন দেহের নশ্বরতার সূত্রে নিজের ধামে‌ ফিরে যান‌ তখন আমরা বুঝতে পারি যে উনি নিজে বড় হতে আসেনি উনি আমাদের বড় করতে এসেছিলেন। অযোধ্যায় রামরূপে‌ অবতরন করে তিনি হনুমানকে মহাবীর করে দিলেন, কুরুক্ষেত্রের ময়দানে কষ্ণরূপে‌ এসে অর্জুনকে‌ বীরত্বে স্থিত করলেন, বঙ্গভূমিতে চৈতন্যদেবরূপে অবতীর্ণ হয়ে জীবকে প্রেমধনে ধনী করে গেলেন, দক্ষিনেশ্বরে‌ রামকৃষ্ণরূপে‌ তিনি বিবেকানন্দকে জগতে বীরত্বে স্থিত‌ করে দিলেন। এভাবেই তিনি নিজে বড় হতে আসেননা, কারন তিনি তো শ্রেষ্ঠ‌ হয়েই আছেন, তিনি আমাদের বড় করতে আসেন, আমাদের ধনী করতে আসেন, আমাদের চৈতন্যের রাজপথের সন্ধান দিতে আসেন।


অহং এবং বিশ্বাস পরস্পর বিরোধী, আমিত্বের অহংকার, সম্পদের অহংকার, যশের‌ অহংকার, আমাদের মোহে আচ্ছন্ন করে রাখে। আর বিশ্বাস না এলে ভক্তি‌ আসেনা আর ভক্তির‌ দৃষ্টি ছাড়া তাঁকে দেখা সম্ভব নয়।


সুতরাং এই অহংকে যেকোন‌ ভাবেই পরাস্ত‌ করতে হবে কিন্তু দুঃখের বিষয় এ যুদ্ধ সহজে শেষ হয়না, অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে। পরমপিতার কাছে একান্ত প্রার্থনা তিনি যেন এই যুদ্ধে‌ আমাদের সারথীরূপে সর্বদা চেতনরূপে‌ থেকে আমাদের সেই চির প্রতিক্ষিত‌ চৈতন্যের রাজ্যে স্থিত‌ করেন!!!


         " সংসার বিদেশে বিদেশির বেশে 

              ভ্রমি কেন অকারণে

             মন চল নিজ নিকেতনে "

             

  

#কৃষ্ণ



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational