উত্তরণ
উত্তরণ


---মা , মা, তোমায় কতবার এককথাই বলতে হয় বলতো, বলেছি আজ তাড়াতাড়ি যাবো, তুমি কী করছো, টিফিন হয়নি?
---বাবু রে তোর জন্য স্পেশাল একটা পদ বানিয়েছি, টেস্ট করে দেখ।
অভীক বিরক্তির সাথেই বললো,
---রাখোতো তোমার পদ, আমি মরছি অফিসের জ্বালায়, টিফিনটা দাও।
সুতনুকা করুণ চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে, তাড়াতাড়ি টিফিন বক্সের বাটিগুলো নিজের আঁচল দিয়ে শুকনো করে মুছে নিল, তারপরে গরম ভাত, ডাল, তরকারি, ধীরে ধীরে বেড়ে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করে ঠান্ডা করতে থাকে। চোখ দিয়ে দু এক ফোঁটা জল তার নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে। চোখ মুছে টিফিন গুছিয়ে ছেলের ব্যাগের কাছে রেখে দেয় সে। টোস্টারে কড়কড়ে টোস্ট , গরম অমলেট আর ফলের রস টেবিলে রেখে সুতনুকা ডেকে বলে
---অভি, বাবু খেয়ে নে বাবা, ঠান্ডা হয়ে যাবে তো, আয় আয়...
অন্যদিকে অভীক তখন ফোনে ব্যস্ত। সুতনুকা ডাকতে ডাকতে রুমে দরজার কাছে পৌঁছে থমকে গেলেন, শুনতে পেলেন অভীক বলছে
---জান ইউ নো, টু ডে আই হ্যাভ এ মিটিং, বাট আই প্রমিস বাবাকে সব বলবো। আসলে জানো তো আমার মম, বড্ড সাদামাটা, রান্নাঘরে কাটিয়ে দিলো পুরো জীবন, তাই তোমার বাড়িতে নিয়ে যেতে হেসিটেট করছি। দেখি পাপাকে বলবো, পাপাকে নিয়েই যাবো। মা তো মর্ডান সোসাইটিতে মিশতে পারে না। আজ এসো সন্ধ্যেতে , জলি, অরুণকেও বলেছি। জমিয়ে আড্ডা হবে।
আসতে আসতে ফিরে এলেন সুতনুকা, আজ পটলের একটা নতুন পদ বানাবেন ভেবেছিলেন, কিন্তু মন যাচ্ছে না আর। কাজের মাসি পুটুদি এসে বললো
--বৌদি,মা ডাকছে তোমায়!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাশুড়িমা এর ঘরে এসে দেখেন , তিনি জপ শেষ করে দুধ খই নিয়ে বসেছেন। শ্বশুর মশাই গত হয়েছেন বছর দুই আগে। সুতনুকাকে দেখেই বলেন
---বৌমা , এসো, বসতো দেখি।
--মা এখনো খান নি, দিন, দুধটা দিন গরম করে আনি।
--দুধ যথেষ্ট গরম আছে, তুমি বসতো।
সুতনুকা দেখেন, আরেকটি বাটিতে দুধ খই আর কলা এনে সামনের টি টেবিলে নামিয়ে রেখে পুটুদি বললো
--বৌদি, মায়ের হুকুম এইটুকু খেয়ে নাও তো।
এই এক শাশুড়ি আছে, মেয়ের মতো ভালোবাসে তাকে। অথচ যে মানুষটার যত্ন করা দরকার ছিল সেই মানুষটাই অবহেলা করে, সেই এখন সবচেয়ে দূরের মানুষ। মনের মধ্যে এক গভীর অসুখ সুতনুকার, বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। জলখাবারটুকু খেয়ে বাইরে যেতেই অভীক বললো
---এই ঠান্ডা টোস্ট, তারপর ঠান্ডা অমলেট। খাওয়া যায়?উফফফ
---ফোনে তুই কথা বলছিলি, আমি তো কখন থেকে ডাকছি, ..
কথাটা শেষ না করতে দিয়েই, টাই ঠিক করতে করতে জুতো পরতে থাকে অভীক। অভীকের বাবা পরাগবাবুও ততক্ষনে নীচে নেমেছেন স্নান সেরে। পরাগবাবু অবশ্য ভাত খেয়েই অফিসে যান। অভীকের দিকে তাকিয়ে বললেন
---জানিসতো , মা কেমন, বাইরে খেয়ে নিস কিছু।
সুতনুকার দিকে তাকিয়ে বলেন
---একটু গুছিয়ে কি কাজ করা যায় না? কিছুই তুমি পারোনা। কী যে ভাব জানি না।
চুপ করে থেকে সুতনুকা বললো
--তুমি তাড়াতাড়ি ফিরবে তো?
মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে সুতনুকা পরাগবাবুর খাবার বেড়ে দিয়ে আঁচলে জল হাতটা মুছে ওনার টিফিন গুছিয়ে ব্যাগের কাছেই রাখবেন, এমন সময় সশব্দে মোবাইল বেজে ওঠে। সুতনুকা মোবাইল ধরতেই ওপাশ থাকা তাদের একমাত্র মেয়ে পিয়া কলকল করে বলে উঠলো
--মা কেমন আছ? পাপা কেমন আছে?জানতো আজ তোমার মতো করে রান্না করার চেষ্টা করলাম, নিয়ে কি বাজে হোল। ও মা, তুমি শুনতে পাচ্ছ?
এই একটা জায়গায় সুতনুকার বুকটা হালকা হয়ে যায়, মেয়েটা উচ্চশিক্ষিত হলেও তাকে বড় ভালোবাসে। আসতে আসতে তিনি বললেন
--বুবু, শোন না, মোচার ঘন্ট বানিয়েছি, আর মাছের মাথা দেওয়া ডাল, বড়ি পোস্ত তোর বাড়ি পাঠিয়ে দেব রে ? আজ সন্ধ্যেতে আসবিতো?
---আবার জিজ্ঞেস করছো কেন, এখুনি পাঠাও, জানতো অমল কতো ভালোবাসে এসব।
তাড়াতাড়ি ফোন কানে নিয়েই বড় স্টিলের ডাব্বাতে তরকারি ভরে পরাগের হাতে দিলেন সুতনুকা।
সেই কবে তার বিয়ে হয়েছে, তারপর থেকেই শাশুড়ি মা এর হাতে হাতে সবটুকু যোগান দিতেন, তিনি শিখিয়েছিলেন যত্ন করে নানারকম রান্না। নাহ মায়ের অভাব পূর্ণ না হলেও এই মা তাকে বুকে আগলে রেখেছিলেন। রান্না করতে বড় ভাল লাগতো। কত রকমের মিষ্টি, কত রকমের পদ, সব বানাতেন, তখন সংসার ছিল অনেক বড়। ছোট দেওর জা, ননদ নিয়ে ভরা সংসার। বাড়িতে যতোবার অনুষ্ঠান হয়েছে তিনি ধরেছেন রান্নার হাল, সকলে প্রশংসা করেছে। এখন দেওর বিদেশবাসী, ননদ প্রবাসী। মনটা খারাপ লাগে, এতোবড় বাড়ি পুরো খা খা করছে।
রান্নাঘর থেকে গাজর আর রাঙাআলু নিয়ে বারান্দায় বসলেন। ইদানিং পায়ের ব্যাথার জন্য হাঁটুমুড়ে বসতে বড়ো কষ্ট হয়। গাজরগুলো ঘষে পড়ছে স্টিলের থালায়, সুতনুকা বড় অন্যমনা আজ, ঘষতে ঘষতে হঠাৎ গাছরের পাতলা ছখল ভেদ করে যখন বুড়ো আঙুলের সামনেটা ঘষা খায়, ব্যাথায় মুখটা কুঁচকে যায় । তাড়াতাড়ি হাতটা ধুয়ে গাজর ঘষায় একটা ঝুড়ি ঢাকা দেন। রাঙাআলুগুলো ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ হতে দিলেন। ঘরে আজ পার্টি হবে। গাজরের হালুয়া, রাঙাআলুর পুরি, ক্ষীরের সিঙাড়া, ফিসফ্রাই, মাটন চপ, আরো অনেক কিছু বানাতে হবে তাকে। হঠাৎ কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ পেতে চমকে উঠলেন, বললেন
---এ কী মা আপনি?
---বৌ মা বাইরে থেকে আনাতেও তো পারো। এতো ঝক্কি কেন পোয়াও বলতো?
---থাক না মা, ওরা ভালবাসে আমার হাতে খেতে।
--ভালোবাসা একে বলে না, একে খাটিয়ে নেওয়া বলে বুঝেছ!
সারা দুপুর ধরে যত্ন করে সুতনুকা সব কিছু বানিয়েছেন। সব কাজ সেরে গা ধুয়ে বাসন্তী রঙের ঢাকাই পরেছে সে আজ, গায়ে অল্প পারফিউম দিয়েছে, আর কপালে লাল টিপ। অফিস থেকে ফিরে গা হাত পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘরে ঢুকেই থমকে যায় পরাগ। আয়নায় সুতনুকাকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য মনটা দু্র্বল হয়ে যায়। সে জানে তার স্ত্রী আধুনিক না হলেও বড় যত্ন করে রাখে তাদের, তবুও তার মন ভরে না, কেন কে জানে। হয়তো অন্যান্য কলিগদের উচ্চশিক্ষিতা স্ত্রীদের দেখে তার চোখ টাটায়, মনে হয়, কেন তার স্ত্রী এমন হোল না?
কোন বিশেষ দিন নয় আজ, মাঝে মাঝেই তাদের বাড়িতে এই গেট-টুগেদার হয়। সকলে আসে , খাওয়া দাওয়া হয়, মজা করে, সুতনুকা নিজের হাতে সকলকে যত্ন করে খাওয়ায়।
একটু পরেই শোনা গেল বেলের আওয়াজ, টিংটং। পরাগ পায়জামা পাঞ্জাবি পরে দরজা খুলতেই দেখে মেয়ে জামাই হাজির। জমজমাট সন্ধ্যাবেলা। রাঙাআলুর পুরি, গাজরের হালুয়া , পান্তুয়া, আরো কয়েক রকমের মিষ্টি সব সুতনুকার নিজের হাতে তৈরী। সাথে ফিসফ্রাই, মাটন চপ, ঘুগনি, চিকেন পকোড়া অনেক রকমের স্ন্যাক্স। অভীকের বান্ধবী জলি সুতনুকাকে জড়িয়ে ধরে বলে
---মাসি জাস্ট অসাম, এতো ভালো কী করে করো বলতো, একটা রেস্টুরেন্ট খুলে ফেল?
জামাই অমল বলে
---মা, আমি তোমার কাছেই থাকবো, উফফ কী ভালো রান্না করো তুমি দারুন।
অভীকের মুখটা কুঁচকেই ছিল, হঠাৎ করেই অভীক বলে ওঠে
--ঐ টুকু পারে, ছোটবেলায় এ বি সি ডি এর পর যেই রাইমস আর স্টোরি স্টার্ট হলো মা ও হাত তুলে নিল। এক লাইন পড়াতে পারতো না। বাবার পার্টিগুলোতে বেচারা একাই যেত, মা ঘরে থাকতো। ঐ রান্নাঘরেই যেটুকু পারে। ওটুকু তো একজন রাঁধুনিও পারে তাই না?
---ভাই তুই থামবি, মা কে এরম করে কেন বলিস তুই? কেন ছোট করিস?
বলেই থেমে যায় পিয়া। ঘরে অখন্ড নিস্তব্ধতা, সুতনুকার দুই চোখে জলে ভর্তি।
পিয়া এসে সুতনুকাকে ধরতেই বুঝতে পারলো, সুতনুকা টলছে, সে ধীরে ধীরে মাকে ঐ রুমের বাইরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। এক গ্লাস জল দিয়ে বলে
---মা খাও। ছোটতেই ভাই যখন তোমায় হ্যাটা করতো, তখন যদি ঠাস করে থাপ্পড় মারতে, তাহলে আজকে এই কথাগুলো তোমায় শুনতে হত না।
সুতনুকা চোখদুটো বন্ধ করে বলেন
--তুইও আমাকেই দোষ দিবি বুবু?
--না মা, কিন্তু আমার তো কষ্ট হয়!
--আহহ বুবু থামো না, কেন সবাই মিলে বলছো?
সুতনুকা ঘাড় ঘোরাতেই দেখে
অমল দাঁড়িয়েছে। তিনি তাড়াতাড়ি বলেন
--বাবা তুমি খেয়েছ?
--মা, আমার একটু দরকার আছে, আপনার সাথে।
সুতনুকা চশমাটা খুলে টেবিলে রেখে বললেন,
--- বলো বাবা!
--আমাদের একটা রেস্টুরেন্ট আছে, আপনি তো জানেন, আমি সেটাকে মডিফাই করবো। আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু আমি চাই আপনি ওখানে প্রধান হিসেবে থাকুন।
---না, না বাবা , তা কী করে হয়?
---মা আপনাকে রাজি হতেই হবে। আসলে আমি এখানে বাঙালী খাবারের একটা ভাগ করতে চাই, তার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। এতো অপূর্ব মিষ্টি, কচুরি, আমি এটাকেই এনক্যাশ করতে চাই মা, প্লিজ! আপনি না করলে আমি দুঃখ পাব।
--আমায় ভাবতে দাও বাবা।
এই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সুতনুকা। ঠুক ঠুক করে লাঠি নিয়ে শাশুড়িমা এসে দাড়ালেন তার সামনে, সুতনুকা তাঁকে দেখে কিছু বলার আগেই, বললেন,
---এতো ভাবার কী আছে? বৌমা তুমি করো, যে বিদ্যে তোমায় শিখিয়েছি, সে বিদ্যে তুমি প্রয়োগ করো মা! তবে নাতজামাই আমার বৌমাও কিন্তু ঐ রেস্টুরেন্টের পঞ্চাশ শতাংশের অধিকারী হবে। সেই টাকা আমি দোব। তোমাদের দাদু টাকা রেখেছেন আমার নামে, বাবুকে বলে দোব, তোমাকে দিয়ে দিতে।নাতজামাই, তুমি কাগজপত্তর নিয়ে আসবে দেখি তাড়াতাড়ি।
পরাগ বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন, এরপর না বলে পারলেন না, যে,
---আমাকে না জানিয়ে, এত বড় সিদ্ধান্ত?
---বাবু, তোর মত নেব না এ কথা বলিনি। আমি বৌমাকে আদেশ করেছি। তোর কিছু বলার আছে?
পরাগ চুপ করেই গেল।
প্রথম প্রথম রেস্টুরেন্টে গিয়ে সুতনুকা নিজের মত করে রেস্টুরেন্টকে সাজায়। অনেকটা জায়গা , তারি মাঝে রেস্টুরেন্ট অবস্থিত। ফুলের গাছ দিয়ে সাজিয়ে তোলে জায়গাটাকে, পেছনের জমিতে সবজী চাষ করার ব্যবস্থাও করে। শহরের মধ্যে একটু নিরিবিলিতে এই রেস্টুরেন্ট। এখানের সবকিছুই সুতনুকা নিজের মনের মতো করে করে সব সাজায়। সুন্দর চেয়ার ,টেবিল, যামিনী রায়ের আঁকা ছবি দেয়ালে, উপর থেকে ঝুলছে ঝাড়বাতি, নিখুঁত সবকিছুই। অনেকেই গাড়িতে করে আসে ঘোরার জন্য। খাওয়া দাওয়া করে অনেকে। এত সুন্দর পরিবেশে, এত সুন্দর পরিবেশন মানুষকে আকৃষ্ট করে খুব স্বাভাবিক ভাবেই।
সুতনুকার ছেলে অভীক আর স্বামী পরাগ রাগারাগি অশান্তি করতে থাকে। কিন্তু সুতনুকা নীরবে নিজের কাজ করে যায়। সংসারে আরো একজন কাজের লোককে এনেছে, তাকে সাহায্য করার জন্য। অভীক সেদিন রাগ করে যখন বলে
---অত রাঁধতে যাবার তোমার দরকার নেই।ঘরেই থাকো।
সুতনুকা বলে
--তাহলে তুমিও এই ঘরে আর পা দিও না।কারণ ঘরটা তোমার বাবার, তাই আমারো, আর আমি কি করবো, কি করবোনা তা আমি ঠিক করবো। আমায় এসব বলার তুমি কে?নিজের ব্যবস্থা নিজে কর এবারে।
মায়ের কঠিন মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলেনি অভীক।
পরাগ সেদিনের সুতনুকার ঐ রূপ দেখে আর কথা বাড়ায় নি।
সুতনুকা আর সহকারীরা মিলে বিভিন্ন পদ রান্না করেন। সুতনুকা মাটির থালায়, কলাপাতায় করে গরম ভাত , মুগের ডাল, পোস্ত, চচ্চড়ি, মাছের কালিয়া এসব পরিবেশন করেন। যে কয়জন আসে তারা তৃপ্তির সাথে খেয়ে যায়। আরো কত রকমের পদ, কত মেনু।সবাই তৃপ্তি পায়।
খুব শিগগির জনপ্রিয়তা হু হু করে বাড়তে থাকে। দাম সঠিক হওয়ায় কাস্টমার বাড়তেই থাকে। সুতনুকার নিজের রোজগার। সুতনুকা এখন একজন সফল ব্যবসায়ী, তার রান্নার স্বপ্ন, মানুষকে খাওয়ানোর স্বপ্ন আজ সফল। পুত্রসম অমল উপভোগ করেন তার এই সাফল্যকে। পরাগ আর অভীক মুখে না বললেও তারাও বেশ খুশি। লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে সেখানে খেয়েও এসেছে। তারাও জানে সুতনুকার মত রান্না করতে কেউ পারবে না, এই জায়গায় সে সবসময় একনম্বরে। একদিন রাত্রিবেলায় ক্লান্ত সুতনুকা যখন বিছানায় বসে নিঃশব্দে দেখছে আকাশটাকে, অনুভব করে পরাগ এসে দাঁড়িয়েছে তার পেছনেই। পরাগ তার কানে কানে বলে
---শানু তোমার কাজের জায়গায় আমাকে নেবে গো সহকারী করে, ভাবছি ভি আর এসটা নিয়েই নেবো।
বিয়ের প্রথম প্রথম আদর করে পরাগ তাকে শানু বলে ডাকতো। সুতনুকা বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে পরাগের দিকে।
পরাগ তার পাশে বসে, তার হাতটাকে মুঠোবন্দী করে বলে
--আমায় ক্ষমা কর শানু। আমি সত্যি অনুতপ্ত। তোমায় অনেক অবহেলা করেছি, কিন্তু আর নয়, এখনো কিছু দিন আছে বাকি, আজ থেকে আমরা একসাথেই বাঁচবো।
সুতনুকা কিছু শুনতে পাচ্ছে না। তার দুই চোখ ছাপিয়ে আজ বন্যা নেমেছে, এ বন্যা সব অভিমানকে ভাসিয়ে আনবে আলো, আনবে নতুন সকাল।