শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

4.3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

তুমি রবে নীরবে

তুমি রবে নীরবে

3 mins
1.7K


প্রিয় মৌ,

           জানিস আমাদের গ্রাম, গ্রামের বাড়ি, খেলার মাঠ, স্কুল, আমবাগান, ফেরিঘাট সব একই আছে তবুও আমার সব কেমন শূন‍্য, ফাঁকা, ফাঁকা লাগে। আজও শরৎ কালে ঘাটের রাস্তাগুলোতে কাশ ফুল ফোটে। হাওয়ার তালে তালে ফুলগুলো আনন্দে মাথা দোলাতে থাকে। তখন বারবার আমার মনে পড়ে তোর কথা, মনে পড়ে তোর সেই..... হাঁটুর ওপর শাড়ি পড়ে এলোচুলে, কাঁখে জল ভর্তি কলসি নিয়ে..... ডানহাতে কাশফুলের গুচ্ছ দোলাতে দোলাতে অস্তমিত সূর্যকে পিছনে ফেলে নূপুরের ছম.... ছম..... সুর তুলে বাড়ি ফেরার দৃশ্য। আমি রোজ তোকে দেখবো বলে আমবাগানে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকতাম। ভয় করত তোর সাথে কথা বলতে আমাকে যদি কেউ দেখে নিয়ে,তোর বাড়িতে বলে দেয়!!! তাহলে তোর মামি আর তোকে আস্ত রাখবেনা। 


              তোর কষ্টের জীবনে আমি আর কষ্ট বাড়াতে চাইনি, তাই দূর থেকেই তোকে ভালোবেসে গেছি, কাছে আসতে চাইনি। তবে বেশিদিন নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি!!! ধরা দিয়ে ছিলাম তোর কাছে। আর তুইও মেলে ধরেছিলিস নিজেকে সদ‍্যফোটা ফুলের মত। কিন্তু আমাদের হয়তো এই জীবনে এক সাথে চলা ছিলনা!!!! তাই আবার আমরা একে অপরের থেকে দূর হয়ে গেলাম। কিন্তু তখন দূরে থেকেও তোকে দেখতে পেতাম!!! কিন্তু আজ আর সেই উপায় নেই। তাইতো অপেক্ষায় থাকি তোর দেখা পাওয়ার!!! জানিনা এই অপেক্ষার অবসান কোনদিনও হবে কিনা!!!!


            আজও বর্ষা আসলে ঘাটের জল উপচে ওঠে, ঘাটের রাস্তাগুলো তখন জলে ডুবে যায়, আর আমার মনে পড়ে বর্ষার বৃষ্টির মধ‍্যে কচুর পাতা মাথায় দিয়ে গামছা করে মাছ ধরার কথা, খালি পায়ে জুতো হাতে করে আমাদের বাড়ি ফেরার কথা, আর আনন্দে তোর সেই খিলখিল করে ওঠা হাসি মুখ ভেসে ওঠে আমার চোখের সামনে। জানিনা আর কোনদিনও তোর সেই হাসিমুখ দেখতে পাবো কিনা তবুও অপেক্ষায় থাকি। 


              জানিস মৌ আজও বসন্ত আসলে স্কুলের মাঠের ধারে পলাশ গাছটা লাল হয়ে ওঠে ফুলে। তুই কত বায়না করতিস আমার কাছে পলাশ ফুল পেরে দেওয়ার জন‍্য। অপটু হাতে যত্ন সহকারে আমি তোর খোপায় গুজে দিতাম পলাশ ফুলের মালা। সবই আগের মতই আছে শুধু নেই আমার সেই চঞ্চল প্রেয়সী। আজও আমি রোজ ঘাটের রাস্তায়, আমবাগান, স্কুলের মাঠে যাই, এই জায়গাগুলোতে গেলে আমি তোকে অনুভব করতে পারি। আমার মনে হয় তুই আমার কাছেই আছিস। আমি সেইদিন বুকে অনেক সাহস নিয়ে গিয়ে ছিলাম তোর মামির কাছে তোকে চাইতে, কিন্তু পারিনি তোকে নিজের করে নিতে!!! আসার সময় দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকা তোর কান্নাভেজা মুখখানি দেখেছিলাম । সেইদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল, আর মনে হয়েছিল কেন আমি তোর থেকে মাত্র এক বছরের বড় হলাম??? আমাদের কষ্ট দেখে সেইদিন আকাশে কালো করে মেঘ হয়ে বৃষ্টি এসেছিল, আমার চোখের জল বৃষ্টির জলের সাথে মিশে গেছিল। ঘাটের পাড়ে অনেকক্ষন বসে ছিলাম, নিজের কষ্টটাকে বৃষ্টির সাথে মিশিয়ে দিতে চেয়ে ছিলাম।

             

           তারপর আর দেখা হয়নি তোর সাথে। আমার জন‍্যই হয়তো তোর বিয়েটা একমাসের জায়গায় এক সপ্তাহের মধ‍্যে হয়ে গেল!!! আর নববধূর সাজে তোকে চলে যেতে দেখেছিলাম অন‍্যের হাত ধরে, তুই একবার পিছন ফিরে চেয়ে দেখেছিলিস আমার দিকে, আজও আমি সেই দৃষ্টিকে ভুলতে পাড়িনি, সেইদিন মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম আমার জীবনের সাথে যখন তোকে জড়াতে পারিনি, তখন আর কাউকে এই জীবনের সাথে জড়াবোনা। তাই আজও আমি একাই পথ চলি!!! তোর স্মৃতিকে সাথে নিয়ে। আর যখন তোর কথা খুব মনে পড়ে তখন তোকে একটা করে চিঠি লিখি, জানি এই চিঠি তোর কাছে যাবেনা, কারন আমার যে তোর ঠিকানা জানা নেই, আর জানা থাকলেও পাঠাতামনা। তবে তোর স্থায়ী ঠিকানা হল আমার হৃদয়ে যেখানে তুই ছাড়া আর কারোর জায়গা নেই, তাই এই চিঠি না হয় সেই ঠিকানাতেই পাঠাবো। অর পথ চেয়ে থাকব আমার চঞ্চল প্রেয়সীর দেখা পাওয়ার অপেক্ষায়। 


ইতি তোর, দীপ ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance