টান
টান
পিয়ালি আর বিশ্বজিত এসেছিলো - অনাথ আশ্রমে। অ্যাক্সিডেন্টের পর আজ প্রথমবার বের হয়েছে তারা, প্রায় ছয় মাস বাদে।
মৌ চলে যাবার পর, পিয়ালির থেকেও বেশি ভেঙে পরেছিলো বিশ্বজিত। তাই, আজ তার জন্যই দুজনে এসেছে অনাথ আশ্রমে।
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের অ্যাপ্লিকেশন গ্রান্ট হয়ে যাবে, ওরাও ভাবেনি। বিশ্বজিতকে সুস্থ মানসিকতায় ফিরিয়ে আনার জন্যই, পিয়ালিই একটা চাইল্ড অ্যাডপ্টের ফর্ম ফিলাপ করে দিয়েছিলো।
অ্যাক্সিডেন্টে তার গর্ভাশয়ে যা রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিলো - সার্জারি করা ছাড়া আর উপায় ছিলো না। সে প্রাণে বেঁচে গেলো কিন্তু মাতৃত্বের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ খোয়ালো, আর বিশ্বজিত মর্মে মরে গেলো।
কোনো প্রয়োজন ছিলো না অত জোড়ে গাড়িটা চালানোর - মেয়ে বললেই চালাতে হবে ঝোড়ো গতিতে? কন্ট্রোলের বাইরে নিজে না গেলেও, অন্যের ধাক্কার হাত থেকে তো বাঁচতে পারলো না - ঐ গতির জন্যই।
ফ্লাই ওভার থেকে ছিটকে নীচে পড়ার সময়ই বুঝেছিলো - মৌকে রক্ষা করা গেলো না আর। সীট বেল্ট আর এয়ারব্যাগের দৌলতে পিয়ালি আর বিশ্বজিত প্রাণে বাঁচলেও, মৌ ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিলো, পিছনের সীট থেকে।
বিশ্বজিতেরও পা, হাত অক্ষত ছিলো না। তবু, ছয় মাস পর আজ পায়ে হেঁটে তো এলো এই অনাথ আশ্রমে! আশ্রমটা একটু ঘুরে দেখার পর, এলো ওদের অফিসে।
সেখানে, সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ই আধিকারিকটি একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসলেন - অমন সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আপনাদের। আহা রে, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে বুঝি?
দুজনেই শুনে আঁতকে ওঠে - মানে?
ভদ্রলোক বললেন - ঐ যে বাচ্চাটি আপনাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো আশ্রমে, মাথায় একটা ব্যাণ্ডেজের ফেটি বাঁধা!
দুজনেই চমকে ওঠে আবার - মাথার পিছনেই তো চোট পেয়ে মারা গিয়েছিলো মৌ! ওরই মাথায় ব্যাণ্ডেজ করা ছিলো অন্তিম ক্ষণে!
পিয়াল আর বিশ্বজিত ওখানেই বসে পড়ে সিঁড়িতে, এদিক ওদিক চায় - কোথাও দেখতে পায় না কোন বাচ্ছাকে।
অ্যাডপ্ট করা আর হয়ে ওঠে না। বিশ্বজিত বলে - মৌ আমাদের ছেড়ে যায়নি পিয়া, চলো বাড়ি চলে যাই। বলে, উঠে ওখান থেকে চলে আসতে যায় তারা।
এমন সময়, জামার পিছনটা ধরে কে যেন টানে! দেখে - একটা ফুটফুটে বাচ্ছা, ঠিক যেন ছোট্ট মৌ তার জামা ধরে টানছে!
তাকেই কোলে নিয়ে বাড়ি ফেরে পিয়ালি আর বিশ্বজিত।