ত্রিভুজ ( পর্ব -৯ )
ত্রিভুজ ( পর্ব -৯ )
ত্রিভুজ
( পর্ব - ৯ )
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
সেদিন রাতে কিছুতেই নুপুর দুই চোখের পাতা একা করতে পারছিল না। বিষয়টা প্রত্যুষ বুঝতে পারলেও বেশ কিছুটা সময় কিছুই বলেনা তাকে। আজ অনেক গুলো বছর পর নুপুর সারাটা দিন বিশালের সাথে ছিলো। কালসে তনয়ের সাথে দেখা করবে একদিন যে মানুষটা তার সবকিছু ছিলো আজ সেই মানুষটাই কেমন যেন তারজীবনে কাঁটা হয়ে ফিরে এসেছে। কি করবে নুপুর? সে যেটা করতে চলেছে সেটাকি ঠিক নাকি ভুল? একটা মানুষকে সারাটা জীবনের জল্য অতীত হারা করেদিতে চাইছে সে। এই বাড়িতে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা সে যেটা করতে চলেছে সেটা ঠিক না ভুল? কিন্তু প্রত্যুষের পরিবারকে যে প্রচন্ড ভালোবাসে নুপুর। এতটা ভালোবাসা সে কোনদিন তার বাবার কাছথেকে পাইনি। বাবা টাকার পাহাড়ে বসিয়ে দিয়েই সকল দ্বায়ীত্ব প্রায় ঝেড়েই ফেলেছিলেন। সেই সময় ঐ সর্বহারা ছেলেটিই ছিলো নুপুরের পাশে কিন্তু নুপুরতো বিশালকে হারাতে চাইনি সে চেয়েছিল সকল বাধা অতিক্রম করে একটা সুন্দর সংসার বাঁধবার স্বপ্ন দেখেছিল নুপুর কিন্তু কোথাথেকে যে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারলনা সে হঠাৎ করে কোথায় হাড়িয়ে গেল। তারপর যখন সবকিছু ভুলে একটা সংসার করতে গেলাম একটা সুন্দর পরিবার পেলাম ঠিক সেই সময় কেন আবার ফিরেএলো বিশাল? একটা কৃতজ্ঞতা তার প্রতি নুপুরের আছে কিন্তু এই পরিবারটার প্রতিও নুপুরের একটা কর্তব্য রয়েছে এই সাত পাঁচ চিন্তাতে যখন দুচোখের পাতা এক করতে পারছেনা হঠাৎ প্রদ্যুষ বলল তোমার কি হয়েছে নুপুর শরীর খারাপ লাগছে? নুপুর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল না তেমন কিছুই নয় ঘুম আসছেনা। প্রত্যুষ বলে এটা কিন্তু ভালো বেপার নয় কালই তোমাকে স্যারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এবার একটু রসিকতা করেই নুপুর বলে এই ডাক্তারদের একটাই সমস্যা কিছু একটু হতে দেরি সাথে সাথে চেকআপ করাতে হবে। সকলের কি প্রতিদিন সমান হয়। আসলে কি হয়েছে জানো ঐযে অমিত বলে ছেলেটা যাকে তুমি নিয়ে এসেছ আজ সারাদিন ওর দেখভাল করেছিতো, ছেলেটির কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে। অমন একটা তরতাজা মানুষ অথচ কপাল দেখ ফেলে আশা দিনগুলো সব ভুলেগিয়েছে। আচ্ছা তোমার কি মনে হয় মনিকের কি সব কথা মনে পড়বে? প্রত্যুষ বলে ভুলে যেওনা পেসেন্টটা কার শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবো ওকে সুস্থ করে তুলতে তুমি সুধু একটু সঙ্গ দিলেই হবে কেমন। নুপুর তাকে কথাদেয় যে সে সর্বদাই তার সঙ্গে রয়েছে কিন্তু আগামীকাল বিকালটা একটু ছাড়দিতে হবে কলেজের এক বন্ধুর জন্মদিন ঘন্টা দুয়েকের জন্য একটু সেখানে যাতে হবে। প্রত্যুষ বলে এতে অনুমতির কি আছে দেখ নুপুর অমিত এমনিতে স্বাভাবিক সবটুকুই বোঝে আমাদের চেষ্টা ওকে একটা পরিবার দিলে হয়তো তাদের সাথে চলতে চলতে হয়তো তার পরিবারের কথা তার মনে পড়েযেতে পারে এখানে সুধু তুমি একা নও পরিবারের সকলকেই বোঝাতে হবে ও এই পরিবারের একজন। তুমি বাড়ির সকলকে বলে যেও ওরা যেন ওর সাথে নিজের মত করেই মেলামেশা করে। এখন অনেকটা রাত হয়েছে এবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করো। নুপুর বলে ঠিকআছে আমি ঠিক ঘুমিয়ে পড়বো কিন্তু তোমার জেগে থাকাটা ঠিক নয় সকালে আবার হসপিটাল আছেতো। প্রত্যুষ বলে আছেতো তার পাশাপাশি এটাও আমার কর্তব্য যাতে আমার গিন্নির কোন কষ্ট না হয়। নুপুর বলে অনেক হয়েছে এবার আপনি ঘুমান আমিও ঘুমাচ্ছি।
যাইহোক রাতটা কোনভাবে কেটে গল নুপুরের। সকালে পুজোর কাজ শেষকরে, জলখাবার নিয়ে এসে ডাইনিংয়ে উপস্থিত হয় নুপুর। বাড়ির সকলে সেখানে উপস্থিত হয়েছে, পোষাক পরিচ্ছদ করে প্রত্যুষ উপস্থিত হয় সেখানে মুকুল তখন উপস্থিত হয়নি তা দেখে প্রত্যুষ বলে ভুুঁইদা মুকুল কোথায়? ভুঁই দা একটু বিরক্ত হয়েই বলে আসছেন হয়তো। প্রত্যুষ বলে আসছেন হয়তো মানে আপনি গিয়ে ওনাকে এখুনি ডেকে নিয়ে আসুন। ভুঁইদা চলে গেলে প্রত্যুষের মা বলেন বাবা এগুলো একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছেন, বাড়িতে একটা বৌ আছে তোর একটা বিবাহ যোগ্যা বোন আছে একটা অচেনা অজানা ছেলেকে বাড়িতে এনে তুললি। তুলেছিলি তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু গেস্ট রুমটাই ওর জন্য ঠিক ছিলোনা? ওখানেই না হয় সবকিছু ব্যবস্থা করলেই হতো। প্রত্যুষ বলে মা তুমি অমিতকে ভুল ভাবছো ছেলেটি ভদ্র, সভ্য এবং মার্জিত আর ওকে সুস্থ করতে হলে একটা পরিবারের মধ্যে ওকে রাখতে হবে। কয়েকটা দিন ওরসাথে মিসলে তোমরা ওর সম্বন্ধে ভুল ধারণাটা কেটে যাবে। নুপুর বলে মা ওসব ছারুন আমারও মনে হয়েছে ছেলেটি মার্জিত আর কয়েকদিনের মধ্যে ছেলেটি সুস্থ হয়ে গেলে ও ওর আপনজনদের কাছে চলে যাবে। ভুঁইদা অমিতকে নিয়ে আসে, অমিত বলে ডাক্তার দাদা আমি এসে গিয়েছি। তারপর এক টেবিলে বসে জলাহার শেষ হয় নুপুর অমিতকে বলে আপনি আপনার রুমে থাকুন আমি আপনার ডাক্তার বাবুকে ছেড়ে এসে আপনার ঔষধ আপনাকে দেব কেমন। অমিত বলে আমিতো সব ঔষধ জানি আমি নিজেই নিয়ে নেব আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবেনা।প্রত্যুষ বলে না অমিত কোনভাবে যদি একটাও ঔষধ গন্ডগোল হয়ে যায় তাহলে সবটাই ওলটপালট হয়ে যাবে, তুমি তোমার রুমে যাও নুপুর গিয়ে তোমায় ঔষধ দিয়ে আসবে। অমিত সন্মতি জানিয়ে চলে যায়। সকলে জল খাবার শেষ করে আপন আপন কাজে চলে যান।
নুপুর বিছানার উপরে তার কাজের জিনিস গুলো সাজিয়ে রাখে। প্রত্যুষ সেখানথেকে ঘড়িটা তুলে নিয়ে হাতে পড়তে পড়তে বলে তোমার কোন অসুবিধা হচ্ছেনাতো। নুপুর বলে না আমার আবার কিসের অসুবিধা। সে আবার বলে শোননা বিকালেতো অমিত বাবুর কোন ঔষধ নেই, একটাই ঔষধ রয়েছে রাতে খাবার পরে। প্রত্যুষ বলে আসল কথাটা বলো। নুপুর বলে আসলে সন্ধ্যায় ঘন্টা দুয়েকের জন্য আমাকে একটু বেরতে হবে কলেজের একটা বন্ধুর জন্মদিন বিয়ের আগে প্রতিবছর যেতাম কিন্তু বিয়ের পর ফোন নাম্বার পালটে যাওয়ায় আর যোগাযোগ হয়নি। কয়েকদিন আগে ফেসবুক থেকে আবার যোগাযোগ হয়েছে। প্রত্যুষ বলে বুঝেছি সেখানে যাবে তাইতো? নুপুর মাথানেড়ে বাচ্চাদের মতো সন্মতি জানায়। ঠিক আছে তবে বেশি দেরি কোরবেনা কেমন। নুপুর অনুমতি পেয়ে প্রত্যুষকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলে Thanks. প্রত্যুষ বলে হয়েছে হয়েছে এবার আমার দেরি হয়ে যাবেযে। নুপুর একটু লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। প্রত্যুষ তার চামরার ব্যাগটা হাতে তুলে রওনা হতে যেতেই নুপুর বলে সাবধানে যেও কেমন পৌঁছে ফোন করতে ভুলবেনা কিন্তু। প্রত্যুষ বলে ঠিক আছে পৌঁছে ফোন করে দেব।
চলবে……………