Krishna Banerjee

Romance Classics Others

3  

Krishna Banerjee

Romance Classics Others

আর কত নিচে ?

আর কত নিচে ?

3 mins
51



                   একটিবার আমার জায়গাতে দাঁড়িয়ে ভাবুনতো , একটি মানুষ নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে , তার আশেপাশে আপনজন বলে কেউ নেই । হয়তো রক্তের সম্পর্ক যাকে বলে সেটা হিসাব করলে শতাধিক। কিন্তু যাদের উপর জোড় করা যায় যাদের বুক ঠুকে বলা যেতেপারে আমার সন্তান , আমার স্ত্রী , তারা সকলেই রয়েছে কিন্তু আমি তাদের সাথে সকল সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছি । না একটু ভুল করলাম শেষ করে দিয়েছি এই কথাটা সম্পূর্ন সত্ত নয় । আসল সত্য হলো আমি বাধ্য হয়েছি এই সম্পর্ক গুলোকে ছিন্ন করতে । আমি চাইনি আমার পাপের ছায়া টুকুও ওদের উপর পড়ুক । এখন আমি অমন একটা জায়গাতে দাড়িয়ে যার একপিঠে রয়েছে মৃত্যু অপর পিঠে রয়েছে অগণিত অর্থ , অথচ দেখুন ওই টাকা গুলোর কোন দাম নেই আমার জীবনে । ওই অর্থের মুল্য শুন্য। আপনারা হয়তো ভাবছেন লোকটা পাগল হয়ে গিয়েছে , যে মানুষটার কাছে গুছিত রয়েছে আপনাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করা অর্থ । তারমধ্যে দশ বছর আমি পরিশ্রম করে যে টাকাটা উপার্জন করেছিলাম সে গুলো আমি আমার ছেড়ে আসা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিয়ে দিয়েছি । একবেলা খেয়ে বেঁচে থাকা যে মানুষ গুলোর পেট কাটা টাকা নিয়ে আজ পর্যন্ত ফুর্তি করে গিয়েছি সেই টাকাই এখন মূল্য হিন । কোন কাগজের টুকরো আজ আর আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেনা আমার জীবন। এটা হোল ওই মানুষ গুলোর চোখের জল , দিন রাত দিয়ে চলা অভিশাপ । পাপ করলে যেমন তার ফল ভোগ করতে হয় ঠিক তেমন পাপের অর্থ ভোগ করলেও তার একটা ভোগ থেকেই যায় । তাই আমার সেই কাছের মানুষ গুলোকে আমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি যাতে ওরা আমার পাপের শাস্তি না পায়। জানিনা আগামী আমার জন্যে ঠিক কি লিখে রেখেছে ? তবে একটা বিষয়ে আমি নিশ্চিত তোমরা আমাকে ক্ষমা করলেও মৃত্যু আমাকে ক্ষমা করবেনা।

                            আজ রবিবার দেখা করতে যাবো ঐ ব্যাবসায়ীর সাথে । মনের মধ্যে একটা টেনশন কাজ করছিল , আর এটাই হয়তো স্বাভাবিক , রাত ভর ভেবেছি আমার স্যালারি ঠিক কত হলে ঠিক হবে ? বিশ্বাস করুন কোন সিদ্ধান্তেই পৌঁছাতে পারলামনা । পাশের বালিশটা বুকের কাছে নিয়ে অনেকটা সময় নস্ট করবার পর মনে মনে একটা সান্তনা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । আমার মাথায় যেটা ঘুরছিল সেটা হলো ওনার বাড়িতে যেটুকু সময় থাকবো সেটুকু সময় অন্তত ওই অপরূপা সুন্দরী মহিলাকে অনেকটা কাছথেকে উপলব্ধি করতে পারবো । আমার অবস্থা অনেকটা ঐ চিড়িয়া খানার বাঘের মত , খাঁচার ভিতরে থেকে বইয়ের হিষ্ট প্রুষ্ট মানুষ গুলোকে শুধু মাত্র উপলব্ধি করতে পারি কিন্তু তাদের মাংসের সাদ উপলব্ধি করে ওঠা সম্ভব হয়না । জানি এখানেও হয়তো তেমনটাই হতে চলেছে যাইহোক চোখের শান্তি দিয়েই কাজ চালাতে হবে ।

                               জানিনা কি এমন ছিলো ওই মহিলার মধ্যে । ছোটবেলা থেকে জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছি , স্কুলে , কলেজ বহু মেয়ের সাথেই ওঠা বসা করেছি কিন্তু এমন টান কোনদিন উপলব্ধি করিনি । আমার বন্ধুরা প্রেম করেছে , আমাকেও বলেছে প্রেম করতে বা প্রেমে পড়তে । সেইসময় আমার মনে হোত প্রেম ট্রেম মানে বেকার সময় নস্ট , অথচ আজ আমার মনে একজন বিবাহিত মহিলার জন্যে এতো টান কেনো উপলব্ধি হচ্ছে ? হয়তো এটাই আমার ভবিতব্য ছিলো , আমার নিচে নামবার প্রথম সিঁড়ি ।

                                 ঘড়িতে তখন বেলা এগারোটা , একটা ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছে গেলাম ভদ্রলোকের বাড়ির সামনে । প্রধান গেটের সামনে এসে দাড়াতেই দারোয়ান দরজাটা খুলে দিলেন । আজ আর কোন প্রশ্ন - উত্তরের বালাই ছিলনা । শুধু হাত দেখিয়ে ওনাদের বৈঠক খানাটা দেখিয়ে দিয়ে বলল ‘ বাবু ওখানে আপনার অপেক্ষা করছেন ‘ আমি তাকে ছোট করে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হলাম। দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলটা বাজাবার আগেই , ভিতর থেকে সেই গম্ভীর অথচ নম্র কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো —---- দরজা খোলা আছে চলে আসুন। কয়েক মুহূর্তের জন্যে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো এই ভেবে যে ভিতরে ঢুকলেই হয়তো ওই মহিলার সাথে দেখা হয়ে যাবে পাশাপাশি চিন্তাও হচ্ছিল , বারের চাকরিটা চলেই গেল এবার যদি আখানেও চাকরি না জোটে। মুহূর্ত খানেকের দ্বিধা দন্ধের মধ্যে দিয়েই নিজেকে গুছিয়ে নিলাম । তারপর যতটা স্বাভাবিক ভাবে পারলাম ঘরের ভিতর প্রবেশ করলাম …….।

                                            চলবে ……………


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance