আশালতা Ashalata

Romance Classics

4.8  

আশালতা Ashalata

Romance Classics

তোর লাগি

তোর লাগি

5 mins
872


"এই সহজ তাড়াতাড়ি চল না। দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।" শ্রেয়া শাড়ির কুচিটা সামলে হাঁটতে হাঁটতে বললো।


সহজ বলল,"তা লেটটা কার জন্য হল? ম্যাডামের তো শাড়ি সিলেক্ট করতেই ঘন্টা দেড়েক লেগে গেল।"


শ্রেয়া ভ্রু দুটো কুঁচকে বলল,"আরে জানিসই তো, শাড়ির ব্যাপারে আমি একটু খুঁতখুঁতে। আমার সাজপোশাকে সোবারনেস না থাকলে আমার ভালো লাগে না।"


সহজ একটু হেসে,"দাঁড়া একটু।" বলে শ্রেয়ার খোঁপায় একটা গোলাপ গুঁজে দিলো।


শ্রেয়া খোঁপায় হাত দিয়ে বললো,"এসবের কি দরকার ছিল?"


"দরকার নয় রে সখী, এ হল ভালোবাসা।" সহজ একটু ঢং করে বললো।


শ্রেয়া একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে গালে হাত রেখে বললো,"হায়!"


তারপর নিজের টিপিক্যাল রাগী জেঠিমা রূপ ধরে বললো,"এই লিসেন, এই আদিক্ষেতা গুলো না নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে করবি। এখন চল তো। কলেজে এতক্ষণে ফাংশন শুরু হয়ে গেছে।"


নিজের বাইকটা বের করে শ্রেয়া।


সহজ মনে মনে বললো,"আমার গার্লফ্রেন্ড যে তুই রে। সেকথা যদি তুই বুঝতি।"


বাইকটা স্টার্ট দিয়ে শ্রেয়া বলে,"নে পেছনে বস।"


সহজ একটু অবাক হয়ে বলে,"তুই আজকেও বাইক চালাবি? শাড়ি পড়ে সামলাতে পারবি?"


শ্রেয়া হেলমেটটা পড়তে পড়তে বলে,"Don't underestimate the power of a common girl."


সহজ ভয় ভয় ঢোক গিলে বলে,"না কমন আর কোথায়। এমন আনকমন পিস সারা পৃথিবীতে একটাই আছে।"


"কিছু বললি?" শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে।


"না, একদম না।" সহজ ভয় ভয় উত্তর দেয়।


"তাহলে ওঠ না। কুমড়ো কোথাকার একটা।"


কথাটা শুনে চুপ করে গেল সহজ। 

শ্রেয়াও ওকে এইভাবে বলতে পারলো?


যদিও শ্রেয়ার সেইসব নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। সহজ বাইকে উঠতেই ও স্টার্ট দিলো।


শ্রেয়া আর সহজ সেই স্কুল লাইফ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড। 

এখন একসাথে কলেজে পড়ে।


সহজ ছোটো থেকেই অনাথ আশ্রমে অনাদরে বড় হয়েছে।


একা ছেলেটাকে আগলে রাখা তাই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে শ্রেয়ার। সহজও একটু বেশি আঁকড়ে ধরেছে শ্রেয়াকে।


সহজ অনেক বছর ধরেই শ্রেয়াকে ভালোবাসে। তবে সেটা প্রকাশ করে না।


যদি শ্রেয়া ভুল বুঝে বন্ধুত্ব ভেঙে দেয়। সহজের কাছে ওদের ফ্রেণ্ডশিপটা সবার আগে।

তাছাড়া এখন দুজনের ক্যারিয়ার গড়ার সময়। তাই অন্যদিকে মন ঘুরিয়ে সেটা নষ্ট করতে চায়না ও।


শ্রেয়ার পাশে সহজকে ঠিক মানায়না। শ্রেয়া দেখতে বেশ সুন্দরী। তাছাড়া একসময় নাচ শিখতো। ফিগারটাও তাই পুরো মাপে মাপে।

আর সহজ বেশ মোটা। মুখটা গোলগাল, মিষ্টি। একটা বাচ্চা বাচ্চা ছাপ আছে চেহারাটায়। তার উপর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। 

আসলে ছোটো থেকেই খেতে খুব ভালোবাসে ছেলেটা। খাওয়ার দেখলে নিজেকে সামলাতে পারেনা। আশ্রমে এই নিয়ে কম কথা শোনেনি।


শ্রেয়ার মা তাই স্কুলে শ্রেয়ার সাথে সাথে সহজের খাওয়ারও দিয়ে দিতো। 

সহজের ভাষায় শ্রেয়ার মায়ের বানানো খাওয়ার নাকি পুরো ফিঙ্গার লিকিং।


স্কুল লাইফ অব্দি তো ঠিক ছিল। কিন্তু কলেজে ওঠার পর সবাই যখন ফিগার নিয়ে টোন কাটতে শুরু করল তখন থেকে একটু হীনমন্যতায় ভুগছে ও। 

"গোলমটর, কুমড়োপটাশ" এগুলো শুনতে শুনতে ওর কান পচে গেছে।


কিন্তু শ্রেয়া তো ওকে কখনো হেয় করে কথা বলেনি। তাহলে আজকে?

শ্রেয়াও ওকে শরীর দিয়ে বিচার করলো?

চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো সহজের। 


তবে নিজেকে সামলে নিলো। আজকে ওদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান।

জলটা মুছে মুখে নকল হাসি পড়ে নিলো।


শ্রেয়া চুটিয়ে উপভোগ করেছে অনুষ্ঠানটা।

ওর গানের গলাটা ভীষন মিষ্টি।

হালকা হলুদ আর কালো মিশ্রনের সিল্কের শাড়ির পরিহিতা মেয়েটা যখন মধুর কণ্ঠে ,"ভালোবেসে সখী" গানটা গাইছিল তখন সহজ জাস্ট হাঁ করে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে।


সহজ নিজেও একটা কবিতা আবৃত্তি করল।


শ্রেয়া বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছে সহজ ভীষন চুপচাপ হয়ে গেছে।

এমনিতে তো ননস্টপ বকবক করতে থাকে। হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেল কেন?


শ্রেয়া জানে যে সহজ কারো উপর অভিমান করলে বা কারো কথায় আঘাত পেলে এমন চুপচাপ হয়ে থাকে।


আসলে খুব কথা বললেও ভিতরে ভিতরে ভীষন চাপা স্বভাবের ছেলেটা।

কষ্ট পেলে সেটা কাউকে বলতে পারেনা।


"নাহ্! তোর ব্যবস্থা আজকেই নিতে হবে।" মনে মনে বলে শ্রেয়া।


অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সহজের হাত ধরে শ্রেয়া বলে,"চল, একটা জায়গায় যাবো।"


সহজ গম্ভীর ভাবে বলে,"আমি যাবো না।"


"আমি তোকে যেতে বলেছি, তোর মতামত চাইনি।" বলে সহজের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যায় শ্রেয়া।


"অলরেডি ছটা বাজে শ্রেয়া। আন্টি টেনশন করবে।" সহজ বললো।


"মামমাম বাড়িতে নেই। লণ্ডনে গেছে সেমিনার অ্যাটেন্ড করতে। আর পাপাও অফিসের কাজে দুবাইতে আছে। ভুলে গিয়েছিস?" শ্রেয়া বাইকে চাবি দিয়ে স্টার্ট করতে করতে বললো।


"আমার ইচ্ছে করছে না যেতে।" সহজ মুখ গোমড়া করে বললো।


"ফুচকা খেতে যাচ্ছি। তাও যাবি না?" শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে।


সহজ এবার চাপতে পারে না। চিৎকার করে বলে,"কি ভাবিসটা কি বলতো তোরা আমাকে? যা ইচ্ছে তাই বলতে পারবি আমাকে? মানছি আমি খেতে ভালোবাসি। তার জন্য এত কথা শোনাবি? খাওয়ার লোভ দেখিয়ে আমাকে দিয়ে সব করানো যায় তাই না? আরে কেন ভুলে যাস আমারও মন আছে। আমারও তো কষ্ট হয়।" কথাগুলো বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে সহজের।

কেঁদে ফেলে ফুঁপিয়ে।


জড়ানো গলায় বলে,"আমি জানি, আমি হ্যাণ্ডসাম না। তোর পাশে I am a complete misfit. ওইরকম manly rough and toughness আমার নেই। কিন্তু বিশ্বাস কর আমারও একটা‌ মন আছে।"


"আর সেই মন জুড়ে আমি আছি তাই তো?" শ্রেয়া এতক্ষণ চুপ করেছিল। তবে এবারে আর থাকলো না। সহজের অসম্পূর্ণ বাক্যটা সম্পূর্ণ করে দিলো।


সহজ অবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়ার দিকে।


শ্রেয়া এগিয়ে গিয়ে সহজের কাঁধে হাত রাখলো। তারপর বললো,"তোকে কটা কথা বলবো বলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই মাঝখান থেকে কত কি বলে দিলি। এবার আমি বলি? তুই শোন।


তোর ওই মোটা চশমার ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চোখদুটোর গভীরতা মাপতে চাই। এই শরীরটা , যেটা নিয়ে তুই কমপ্লেক্সে ভুগিস , ভীষন শীতকালে সেটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতে চাই। বেশ একটা পোলার বিয়ার পোলার বিয়ার ফিল দেবে।

তাই বলে গরমে জড়াবো না। তাহলে তো সেদ্ধ হয়ে যাবো।

যত ইচ্ছে খা না। কেউ বাধা দেবেনা। তাই বলে খেয়ে খেয়ে সুগার কোলেস্টরল বাধাস না। 

ভেবেছিলাম তুই আমি দুজনেই নিজের পায়ে দাঁড়াই তারপরে এই কথাগুলো বলবো।

কিন্তু না। খেয়ে খেয়ে তোর ইমোশন লেভেল এত বেড়ে গেছে যে এখন না বললে তুই গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী বয়ে দিবি।

তাই বলেই দিচ্ছি। ভালোবাসি ভীষন তোকে। প্রয়োজন নেই আমার manly rough and toughnessএর।ওই নরম সরম তুইটাই একদম পারফেক্ট।"


একটানা কথাগুলো বলে থামলো শ্রেয়া।


সহজ তখনও হাঁ করে তাকিয়ে আছে শ্রেয়ার দিকে। 

ও সত্যি শ্রেয়ার যোগ্য?


শ্রেয়া আলতো করে সহজের কপালে ওষ্ঠদয় স্পর্শ করে বললো,"আর কান্নাকাটি করিস না। তুই মন খারাপ করলে আমার ভালো লাগেনা।"

বলে কাছে টেনে নেয় সহজকে।


চোখটা মুছে সহজ বলে,"বিষয়টা সেলিব্রেট করলে হত না?"


শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে,"কিভাবে?"


"ওই যে , ফুচকা খাবি বলছিলি।" লজ্জায় রাঙা মুখটা তুলে একটু হেসে বলে সহজ।


"পাগল একটা।" 

বলে সহজের গালটা টিপে বাইকে স্টার্ট দেয় শ্রেয়া। 


সমাপ্ত




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance