শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

তোমার খোলা হাওয়া

তোমার খোলা হাওয়া

8 mins
304



আকাশের বুকে তখনও ভোরের আলো ঠিকঠাক ভাবে ফোটেনি। সূর্য ধীরে ধীরে তার ঘুম জড়ানো ঢুলুঢুলু চোখ, মেলে ধরার চেষ্টা করছে। পাখিদের ঘুম ভেঙ্গে গেছে, তারা একসাথে দলবেঁধে যেন ঝগড়া করছে নিজেদের ভাষায়। ঠান্ডা একটা মিষ্টি বাতাস বইছে চারিদিকে। শহরের প্রত‍্যেকটা রাস্তা এখন ফাঁকা সেই ভীড়, চিৎকার চেঁচামেচি যানজট এখনও শুরু হয়নি,রাস্তার ধারে... ধারে... চায়ের.... দোকান গুলো খুলেছে, ফুটন্ত দুধ এবং চা পোড়ার মিশ্রনে একটা সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছে বাতাসে। অহনা গাড়ির জানালা দিয়ে মুখটা বার করে ভোরের স্নিগ্ধ শীতল বাতাসটাকে উপভোগ করছে। আর প্রানভরে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। গাড়ির মধ‍্যে এফ এম এ রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজছে..............


"দাঁড়িয়ে... আছ....তুমি....আমার

গানের..... ও....পারে।

আমার.... সুরগুলি পায়.....চরণ,

আমি.....পাই নে...... তোমারে।

দাঁড়িয়ে......আছো তুমি..... আমার

গানের....... ওপারে"।


অহনার গন্তব‍্য মুর্শিদাবাদ জেলার মাঙ্গনপাড়া গ্রাম। ওখানে অহনার মামার বাড়ি ছিল। এখন অবশ‍্য কিছু নেই। অহনার দাদু না ফেরার দেশে পাড়ি দেওয়ার সাথে সাথে ওখানকার সমস্ত পাট চুকে গেছে। অহনার মারা তিন বোন, অহনার মা ছোট। তাই অহনার দাদু মারা যাবার পর অহনার দিদুন ওদের সাথেই থাকত। তবে ছোট বেলার অনেক সুখ স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওখানে তাই সেই সব স্মৃতিকে উজ্জ্বল করতে আর হারিয়ে যাওয়া একজনের খোঁজে অহনার যাত্রা।

গাড়ি যখন অহনার মামার বাড়ির রাস্তায় ঢুকলো তখন ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে সময় বারোটা। সূর্য তখন নিজের ঘুমের ঘোর কাটিয়ে তীব্র তাপ ছড়াচ্ছে দিকে দিকে। অহনার সমস্ত কিছু অচেনা লাগছে অনেক পরিবর্তন হয়েছে গ্রামের তবে কিছু কিছু জায়গা এখন একই রয়েগেছে। হঠাৎ করে ড্রাইভার গাড়িটা থামিয়ে দিল!

-------------অহনা তখন পুরনো সেই রাস্তা, ঘর, বাড়ি খুঁজতে ব‍্যস্ত ছিল নতুনের ভীড়ে, হঠাৎ এই রকম হওয়ায় অহনা চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করে কি হল বিমল কাকু?

----------বিমল কাকু বলে উঠে, দিদিমনি আগে আর গাড়ি যাবেনা!!! রাস্তা কাদায় ভর্তি আর সরু.....!!

-----------অহনা বলে উঠে ঠিক আছে তুমি একটা বড় জায়গা দেখে গাড়িটা পার্ক কর, বাকি পথ আমি হেঁটেই যাব। অহনা গাড়ি থেকে নামল তাকিয়ে দেখলো পুরো রাস্তাটা জল,কাদায় ভর্তি। আর রাস্তার দুই ধারে গোয়াল ঘর। গরু আর বাছুরে ভর্তি, তার সাথে ছাগল, ভেড়াও আছে। অহনার ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল এইভেবে যে.... এই জায়গাটা যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে, কোনো পরিবর্তন হয়নি!!! অহনাকে দেখে আস্তে আস্তে বাড়ি গুলো থেকে দুই একটা লোক, মহিলা বেরতে শুরু করেছে, তার সাথে দল বেঁধে কিছু বাচ্ছা।

---------অহনা বাচ্ছাদের দলের কাছে গিয়ে বলল, আমাকে একটু ভট্টাচার্য বাড়ি যাওয়ার রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যেতে পারবি?

---------বাচ্ছাদের দলের মধ‍্যে সবথেকে বড় বাচ্ছা ছেলেটি বলল, সেই বাড়ি তো ভাঙ্গা দিদি??? কেউ থাকেনা ওখানে!!

-----------অহনা বলে উঠল, ঐ.... ভাঙ্গা বাড়িতেই যাব....!

---------বাচ্ছা ছেলেটি বলল চলো দিদি। বাচ্ছাদের দলটা হাতে পাটকাঠি নিয়ে হই হই করতে করতে আগে আগে চলল, আর অহনা ওদের পিছন পিছন এগিয়ে চলল। অনেকটা রাস্তা যাওয়ার পর অহনার চোখ আটকে গেল গোয়ালঘর লাগোয়া পাঁচিলের গায়ে মাধবীলতা ফুল গাছটার ওপর। সত‍্যি ফুল গাছটা আজও অতীতের স্মৃতি বহন করে চলেছে, গোলাপি থোকা থোকা ফুলে ভরে উঠেছে গাছটা। অহনার চোখের সামনে ভেসে উঠল ছোট্ট বেলাকার স্মৃতি, এই মাধবীলতা ফুল দিয়ে গলার হার, কানের, চুড়ি তৈরী করে শঙ্খদা ওকে ফুলপরী সাজিয়ে দিত। অহনার পা... নিজের অজান্তেই আটকে গেছে একই জায়গায়।

-------বাচ্ছাদের দলটা বলে উঠল, দিদি কি. হল চলো?

---------অহনা ভাবনার জাল ছিঁড়ে বেড়িয়ে এসে বলল হ‍্যাঁ.... চল.. চল। অহনা এগিয়ে যেতে লাগল এক পা... এক পা.... করে সবুজ ঘাসের গালিচার ওপর দিয়ে। প্রাচিরের অর্ধেকটা ভেঙ্গে পরেছে, সদর দরজাটার একটা পাল্লা এখনও দাঁড়িয়ে আছে, চারিদিকে বাড়ি, ঘর ভেঙ্গে, ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়ে আছে আর তার মাঝে জঙ্গলে ভরে গেছে।

অহনা একদম বাড়ির মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল, সেই বাঁধানো উঠোনের চটে যাওয়া কিছু অংশ এখনও আছে। অহনার চোখের সামনে আবার ভেসে উঠল টুকরো টুকরো স্মৃতি এই বাঁধানো উঠোনে সন্ধ‍্যা বেলায় বসে হ‍্যারিকেনের আলোয় সুর করে করে ছড়া পড়ত অহনা আর ওর মাসতুতো দাদা, বোনেরা আর শঙ্খদা। অহনার দাদু আর শঙ্খর দাদু মিলে বেতের মোড়ায় বসে তালপাতার পাখায় হাওয়া খেতে খেতে কত রকমের গল্প করত, আর পড়ার সুরের আওয়াজ কমে আসলেই ধমক দিত। অহনার চোখের সামনে ভাসতে লাগল ওদের ছুটোছুটি করে খেলা, মারামারি, খুনসুটির ছবি। অহনার কানে ভাসতে লাগল শঙ্খদার আদুরে সেই ডাক.........অহ এই অহ বেড়িয়ে আয়, আমি আর বকবোনা প্লিজ বেড়িয়ে আয়, তুই যা.... বলবি তাই শুনব, দরকার হলে দাদুর কাছে মার খেতেও রাজি প্লিজ অহ লুকিয়ে থাকিসনা, আমার ভীষণ ভয় করে তোকে দেখতে না... পেলে! কিরে অহ শুনতে পারছিস? আর ঠিক তখনই অহনা গুটিগুটি পায়ে শঙ্খদার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ধাপ্পা দিত আর শঙ্খ বেচারা ভয়ে চিৎকার করে উঠত, আর অহনা খিলখিল করে হেসে উঠত। এইসব স্মৃতির গভীরে হারিয়ে গিয়ে অহনাও জোড়ে হেসে ওঠে, আর অহনাকে হাসতে দেখে বাচ্ছাগুলোও হেসে ওঠে, অহনা ওদের সাথেই খেলায় মেতে ওঠে।

খেলতে খেলতে হঠাৎ অহনা হোঁচট খেয়ে পড়েই যাচ্ছিল হঠাৎ দুটো বলিষ্ঠ হাত অহনাকে ধরে ফেলে অহনা বন্ধ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ওকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে।

----------অহনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে, থ‍্যাঙ্ক.... ইউ... ।

-----------ছেলেটি গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে, আপনাকে তো.... দেখে এই গ্রামে নতুন মনে হচ্ছে, আর পোশাক দেখে শহুরে, তা..... এই ভাঙ্গা বাড়ির মধ‍্যে বাচ্ছাদের সাথে খেলতে গিয়ে, পড়ে হাত পা.... ভাঙার ইচ্ছে আছে নাকি.?

---------অহনা বলে উঠল, হাত পা.... ভাঙ্গার ইচ্ছে থাকতে যাবে কেন, আর তাছাড়া গ্রামে নতুন হলে কি.... হবে এই গ্রামের সাথে আমার একটা আলাদা টান আছে। থ‍্যাঙ্ক.... ইউ আমাকে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচানোর জন‍্য। অহনা কথা না... বাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

----------ছেলেটি পিছন থেকে বলে উঠল, এই যে মিস শহুরে.... আর ভীতরে যাবেননা.... এখানে অনেক বিষধর সাপ আছে।

--------অহনা পিছন ঘুরে বলল, আপনার চিন্তা না করলেও চলবে, আপনি আপনার কাজে যান, আর আমি মিস শহুরে নয়..... মিস অহনা চ‍্যাটার্জ্জী বুঝেছেন।

অহনা আর না.... দাঁড়িয়ে ছুটল সামনের অর্ধ ভেঙ্গে পড়া বাড়ির দিকে। জঙ্গলী গাছের ঝোপ পেড়িয়ে ভীতরে ঢুকে দেখল সেই লাল মেঝের বারান্দাটা এখনও কিছুটা অক্ষত আছে, আর তার সাথে বড় বড় থাম গুলো। কিন্তু লতানি গাছ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। অহনা ভালো করে চারিদিক চেয়ে দেখতে লাগল, এখনও কড়ি বর্গার ছাদের কিছুটা অংশ অবশিষ্ট আছে। ছোটবেলায় এই বারান্দায় আসন পেতে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসত, কত সুন্দর আনন্দে ভরা দিনছিল। অহনা এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল কুয়োর ধারে, এখনও সেই বট গাছটা দাঁড়িয়ে আছে, কত ঝুড়ি নেমেছে তার শরীর দিয়ে, তবুও সে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে দেয়নি। এই গাছের সাথে দাদু একটা দোলনা বেঁধে দিয়ে ছিল, আর অহনা সারাদিন বসে দোল খেত, শঙ্খদা পিছন থেকে দোল দিয়ে দিত। ওর দোলনায় কাউকে চাপতে দিতনা, এই নিয়ে কত মারামারি হয়েছে দাদা, বোনদের সাথে,আর ততবার শঙ্খদা ওর হয়েই দাঁড়িয়েছে। অহনা আবেগে বট গাছের গায়ে হাত রাখল। হঠাৎ অহনার গলায় কিছু একটা পড়ল অহনা ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল, এবং চোখ বন্ধ করে লাফাতে শুরু করে দিল, হঠাৎ মনে হল কে.... যেন ওর হাতটা শক্ত করে ধরল, অহনা চোখ খুলে সামনে ছেলেটিকে দেখে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তজিত কন্ঠে বলে উঠল..........

----------আমার গায়ে সাপ পড়েছে এই বট গাছ থেকে, প্লিজ.... বাঁচান আমাকে.....!!

---------ছেলেটি হাসতে হাসতে বলল সাহস হাওয়া হয়ে গেছে তাহলে!!! ভালো করে চেয়ে দেখো... সাপ নয়....!! অন‍্যকিছু....

---------অহনা এইবার ভালোকরে গলায় হাত দিয়ে দেখল মাধবীলতা ফুলের হার। অহনা হারটার ওপর হাত বুলিয়ে সাথে সাথে সামনের দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠল... শঙ্খদা.......

-----------শঙ্খ বলে উঠল, কেমন আছিস অহ...???

----------অহনা এই আদুরে ডাক শুনে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলনা, ঝাপিয়ে পড়ল ওর শঙ্খদার বুকে।

-----------শঙ্খ অহনাকে শক্ত করে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলে উঠল, আমি প্রত‍্যেকদিন একবার করে এইখানে আসি পুরনো স্মৃতির ভীড়ে নিজেকে হারাতে, আর তোর ফেরার অপেক্ষায় এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যেতেও... পারলাম না!!! ফিরে আসতে এতটা দেরী করলি অহ.....!!!

---------অহনা বলে উঠল, আমি ভাবতে পারিনি আমার জন‍্য কেউ এতদিন ধরে অপেক্ষা করে থাকবে!!!!

---------শঙ্খ অহনার মুখটা তুলে মৃদু স্বরে বলল, তুই শুধু আমার অহ, তোর জন‍্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকতে পারি।

----------অহনা নিজেকে শঙ্খর থেকে ছাড়িয়ে বলল, তাই.....!!! তাহলে অপেক্ষা করো, আমি চললাম.... বলে ছুটতে শুরু করল।

---------শঙ্খও পিছন পিছন ছুটতে লাগল অহনাকে ধরার জন‍্য ছোটবেলার মত।

হঠাৎ করেই অহনা লুকিয়ে পড়ল শঙ্খর চোখের আড়াল হয়ে, অহনাকে দেখতে না পেয়ে শঙ্খ আবার সেই ছোটবেলার মত করে ডাকতে শুরু করল.......,

--------অহ এই অহ বেড়িয়ে আয়, এইরকম করিস না... বাড়িটা পুরো জঙ্গলে ভরে গেছে, অনেক সাপ, পোকা, মাকড় আছে প্লিজ বেড়িয়ে আয়, আমার ভীষণ ভয় করছে অহ.... তোকে দেখতে না... পেয়ে, কিরে অহ শুনতে পারছিস,?? আর ঠিক তখনই অহনা গুটিগুটি পায়ে শঙ্খর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে ধাপ্পা দিল, আর শঙ্খ অহনার হাত ধরে এক হ‍্যাচকাটান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে উঠল.......,

-------------সেই ছোট বেলাকার দুষ্টুমি তোর আর গেলনা তাই না অহ!!!! কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম আমি। এখন চল এখান থেকে.....।

-------অহনা জিজ্ঞাসা করল কোথায়????

----------শঙ্খ বলল, কেন আমার সাথে যেতে ভয় করছে....???

----------অহনা ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি এনে বলল, তোমার সাথে যে... কোন জায়গায় আমি যেতে রাজি।

---------শঙ্খ হাত বাড়িয়ে বলল, চল তাহলে....!!!

---------অহনা শঙ্খের হাতের ওপর হাত রাখল। শঙ্খ অহনার হাতটা শক্ত করে ধরে নিল নিজের হাতের মধ‍্যে এবং এগিয়ে চলল গ্রামের পথ দিয়ে। কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর অহনা আনন্দে চিৎকার করে বলে উঠল শঙ্খদা এটা ঘাটের রাস্তা না......???

----------শঙ্খ মাথা নেড়ে বলল হ‍্যাঁ.......

অহনাকে আর দেখে কে... আবার ছুটতে শুরু করে দিয়েছে, শঙ্খও ওর পিছন পিছন ছুটতে লাগল। গঙ্গার বাঁধে উঠে অহনা হাঁফাতে লাগল, শঙ্খও ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

-------উফ তোর এই উচিংড়ের মত ছোটার স্বভাব আর পাল্টালোনা!!!! আমি হাঁফিয়ে গেলাম তোর পিছনে দৌড়ে দৌড়ে।

-----------অহনা খিলখিল করে হেসে বলল, পাল্টাবেও না..... তোমাকে সেই ছোট বেলার মত সারা জীবন আমার পিছন পিছন দৌড় করাব। অহনা একটু উঁচু জায়গা দেখে বসে পড়ল, তারপর বলে উঠল তুমি... এখন কোথায় থাকো.. শঙ্খদা.....???

--------শঙ্খ অহনার পাশে বসে বলল, সবাই চলে যাবার পর আমি আর দাদু এইখানেই থাকতাম তারপর দাদু চলে যাওয়ার পর, পড়াশোনার জন‍্য শহরে গেছিলাম, তারপর গ্রামের স্কুলে চাকরি নিয়ে আবার এইখানে চলে আসি, এখন কয়েকজন মিলে একসাথে থাকি। এই গ্রামে ফিরে এসেছিলাম আমি তোর জন‍্য, মনে হত তুই ঠিক একদিন ফিরে আসবি।

----------অহনা এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শঙ্খর মুখের দিকে। মনে মনে বলে উঠল, আজও তুমি সেই একই রকম আছ শঙ্খদা একটুও পাল্টাওনি। আজও আমার মুখে হাসির জন‍্য সবকিছু করতে পারো ছোটবেলার মত। এত কেন ভালোবাসো আমায়?

--------শঙ্খ অহনার দিকে তাকিয়ে বলল কিছু বললি?

-------অহনা দুইদিকে ঘাড় নেড়ে বলল না......!!

সূর্য একটু একটু করে নিশ্চিতে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। পাখিরা দলবেঁধে খাবার সংগ্রহ করে আপন আপন বাসায় ফিরছে। গঙ্গার স্বচ্ছ জলের ওপর বাতাস খেলা করে চলেছে, ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ তীরে এসে ধাক্কা দিয়ে আবার মূল স্রোতে ফিরে যাচ্ছে। বুনোফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। মাঝি নৌকা নিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে গঙ্গার বুকে।

---------শঙ্খ অহনার হাতটা ধরে বলল, আবার আমায় একা.... ফেলে চলে যাবিনাতো... অহ....???

-------অহনা নিজের মাথাটা শঙ্খর কাঁধে রেখে বলল না....!!!

শঙ্খ এক হাত দিয়ে আলতো ভাবে অহনাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করল। সেই ছোট বেলার মত আজ আবার বিকেলে গঙ্গার পাড়ে ওরা একে অপরের পাশে বসে। দূর থেকে মাঝির কন্ঠে সুর ভেসে আসতে লাগল............


"তোমার খোলা.... হাওয়া, 

লাগিয়ে... পালে

তোমার ....খোলা... হাওয়া, 

লাগিয়ে .....পালে;

তোমার খোলা.... হাওয়া।

টুকরো.... করে কাছি...,

আমি ডুবতে.... রাজি আছি,

আমি... ডুবতে.... রাজি... আছি

তোমার ...খোলা.... হাওয়া, 

লাগিয়ে... পালে.......,

তোমার.... খোলা...... হাওয়া"




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance