Dibakar Karmakar

Drama Tragedy Action

3  

Dibakar Karmakar

Drama Tragedy Action

সূর্যনূর-একটা রহস্য

সূর্যনূর-একটা রহস্য

5 mins
254


           

আমি সৌরভ, মুর্শিদাবাদের ছোট্ট একটা গ্রামে মা বাবা এবং আমার দাদু কে নিয়ে থাকি।দাদু আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ন একটা অংশ যার থেকে আমি অনুপ্রেরণা পাই নিজের মতো বাঁচার। দাদু ভারতের স্থল সেনা থেকে রিটায়ারমেন্ট এর পর বাড়িতেই আছেন।দাদুর ভ্রমণ করার খুব আগ্রহ ছিল। উনি শেষ বার ভ্রমণে যান জম্মু তে। সেখান থেকে আমার জন্য এবং দাদুর জন্য ও একটা আংটি নিয়ে আসেন।কিন্তু ওই আংটি গুলো খালি ছিল।আমি বললাম দাদু আংটি তে তো কোনো পাথর নেই , তাহলে তুমি আংটি গুলো নিয়ে এলে কেন।দাদু বললো কেন পাথর নেই এবং কেন আংটি গুলো খালি তুই সময় এলে বুঝে যাবি। কিছুদিন পর দেখি উনি আবার কোথায় যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।দাদুর বয়স হওয়ায় বাড়ি থেকে মা বাবা ও বলেছিল যাতে আর ভ্রমণে না যায় কিন্তু দাদু বললো এটা আমার শেষ ভ্রমণ হবে তারপর উনি আর ভ্রমণ এ যাবেন না।একথা বলে উনি পরবর্তী ভ্রমণের জন্য জম্মু কাশ্মীর রাজ্যের কাশ্মীরের জন্য রওয়ানা দেন যাকে বলা হয় পৃথিবীর স্বর্গ।যেহেতু জম্মু কাশ্মীর এ পরিস্থিতি ঠিক নয় আমরা অনেক বলেছি না যাওয়ার জন্য কিন্তু উনি শুনেননি। কাশ্মীরে যাওয়ার কিছুদিন পর একটা ফোন আসে, ফোন টা ছিল বিএসএফ কর্মী দের,ওরা বলেন অমরনাথ যাওয়ার পথে সমুদ্র পৃষ্ট থেকে একটু উঁচু জাগায় ওনার মৃত দেহ পাওয়া যায়। এ খবর শুনে আমি এবং মা বাবা খুব ভেঙে পরি।তারপর বিকেলে ওনার মৃত দেহ আসে বাড়িতে।ওনার সাথে ওনার ডাইরি টা ও আসে। হে ডাইরি, দাদুর ডাইরি লেখার খুব শক ছিল। ওনার জীবনের সব কিছু উনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন কোথায় ভ্রমণ করেছেন ডাইরি টা তে সব কিছু ছিল। একদিন আমি ওই ডাইরি টা নিয়ে বসি পড়তে।কারণ দাদু আমাকে বলেছিলেন যে এই ডাইরি টা যাতে দাদুর পরে আমি পরি। ডাইরি টা পড়ার পর আমি নির্বাক হয়ে যাই।কারণ ডাইরি টা পরে আমি বুঝতে পারলাম কেন দাদু কাশ্মীর এ যাওয়ার জন্য এত উদ্ভিগ্ন হচ্ছিলেন। এবং যে লক্ষ টা পূরণ করার জন্য উনি কাশ্মীর এ যান সেটা যদি পূরণ হয়ে যেত তাহলে ভারতবর্ষের অর্থনীতি দিক দিয়ে খুব উন্নতি হতো এমন কি ভারত অর্থনীতি দিক দিয়ে অন্যান্য বড় বড় দেশ কে তুলনামূলক টক্কর দিতে পারতো। এবং লক্ষ পূরণ করার দায়িত্ব দাদু আমায় দিয়ে যায়।


   সেই লক্ষের জন্য আমাকে কাশ্মীরের অমরনাথ এর কাছাকাছি যাওয়ার ছিল।তাই আমি কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরি। বাড়িতে বলে যায় আমি বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি কিছু দিনের জন্য।কাশ্মীর বিমানবন্দরে আমি যখন ল্যান্ড করি তখন দেখি সব জায়গায় শুধু বিএসএফ এর কর্মীরা মোতায়েন হয়ে রয়েছে।আমাকে প্রথমে অনন্তনাগ জেলায় যেতে হতো কারণ ঐখান থেকে একটা জিনিস নিতে হতো যা ওই লক্ষটার জন্য খুব প্রয়িজনী।তাই এয়ারপোর্ট থেকে প্রথমে নেমে আমি একটা লজে থাকার জন্য যাই।যে অটোটাই উঠেছিলাম কিচ্ছুক্ষন পরে অটোটা আমাকে নামিয়ে দেয় বললো সামনে আর যাবেনা কারণ খুব শক্ত ভাবে বিএসএফ কর্মীরা চেকিং করছিলেন এবং সামনে ১৪৪ধারা ও চলছিল।তারপর আমার চেকিং হলো আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে অন্তনাগ এ যাবো ওরা বললো সামনে বাস স্ট্যান্ড আছে বাস ধরে নাও। কিন্তু আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম কারণ আসে পাশে খুব করা ভাবে চেকিং হচ্ছিল। গাড়িতে যাওয়ার সময় আমি আশেপাশের পরিস্থিতি গাছপালা ,ছোট ছোট পাহাড়,নদী,সব গুলো উপভোগ করছিলাম। সত্যি কথা,জানতেই পারতাম না কাশ্মীর যে এত সুন্দর যদি এখানে না আসতাম।কিন্তু হ্যা এ সৌন্দর্যের মধ্যে যে কত ভয়ংকর ছবি লুকিয়ে আছে এটা বোধয় সবাই জানে না। কিছুক্ষণ পর আবার বিএসএফ এর কর্মীরা গাড়ি থামিয়ে চেকিং করতে লাগলো এবং কাওকে এর পরে আর যেতে দেওয়া হচ্ছিল না।তারপর আমি ভাবলাম আজকে যদি আমি যেতে না পারি তাহলে আমি সেই দাদুর স্বপ্ন এবং লক্ষ টা পুরোন করতে পারবেনা।এবং কোনোদিন জানতে পারবেন কিভাবে দাদূর মৃত্যূ হয়।তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি পাশের জঙ্গল ধরে ওই জায়গাটা পার করে চলে যায়।তারপর আমার এক পাশে একটি নদী এবং আর এক পাশে জঙ্গল এবং মাঝপথে রাস্তা।আমি ওই রাস্তার পথ ধরে যাচ্ছিলাম।নদীর স্রোতের আওয়াজ এবং জঙ্গলে পাখির ডাক আমার মনকে যেন একটু আনন্দ দিলো। আগে যে ভয় টা পাচ্ছিলাম সেটা এখন ছিল না। আস্তে আস্তে সন্ধে নামতে শুরু হলো।এবার আমার একটা আস্তানার প্রয়োজন ছিলো এবং ঠাকুরের কৃপায় সামনে একটা বাংলো দেখতে পাই। বাংলো টা জঙ্গলের একটু ভিতর ছিল।আমি ওই বাংলোয় আস্তানার জন্য কথা বলি মালিকের সাথে এবং আমার কথা শুনে ওরা আমাকে থাকতেও দিয়ে দেয়।এবং ঐ মালিক দাদা বলছিলেন তুমি কিছুদিনের জন্য এখানেই থাকো কারণ সামনে পরিস্থিতি খুব খারাপ।তাই কিছুদিনের জন্য আমি এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত করি। "তখন আমার আস্তানা জঙ্গলের ভিতর নদীর ধারের বাংলো।এক সন্ধেবেলায় বারান্দায় বসে আছি।


সামনে কুয়াশার চাদরে মোড়া অমাবস্যার জঙ্গল।কানে আসছে নদীর জলের আওয়াজ এবং শেয়ালের বিকৃত একটা আওয়াজ যা খুব ভয়ঙ্কর"।দুদিন পর আমি রওয়ানা দি অনন্তনাগ এর উদ্দেশ্যে।সামনে একটা বাস স্ট্যান্ড ছিল সেখান থেকে বাস ধরে আমি আমার গন্তব্য স্থলে পৌঁছে যায়।কোনো সমস্যা ছাড়া।দাদুর ডাইরি তে লেখা ছিল অনন্তনাগ এ যাওয়ার পর বাস স্ট্যন্ড এ ই এক রহিম কাকার জহরতের দোকান আছে সেখান গিয়ে দাদুর কথা বলতে। আমি গিয়ে রহিম কাকা কে সব কথা বলি তখন রহিম কাকা দাদুর কথা শুনে কেঁদে ফেললো।এবং আমাকে ঘর থেকে একটা ছোট্ট হিরে এনে আমার হাতের আংটিটাই দিয়ে দিলেন।যে আংটিটা দাদু জম্মু থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন।এরকম লাগছিলো উনি সব কিছুই জানেন।তারপর ডাইরির মতে আমার লক্ষ ছিল অমরনাথ মন্দিরের পাশের একটা গোহাই যাবার।যার সঙ্গে ভারতের অর্থনীতি উন্নতির পথ জুড়ে আছে।তাই আমি অনন্তনাগ থেকে অমরনাথ এর উদ্দেশ্য রওয়ানা দি।সেখান থেকে বাস দিয়ে একদিন পরে গিয়ে আমি অমরনাথ এর এখানে পৌঁছয়। যেখানে নেমে ছিলাম সেখান থেকে অমরনাথ যেহেতু একটু সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উঁচু তাই আমাকে হাটা শুরু করতে হয়।কিচ্ছুক্ষন যাওয়ার পর আমি যখন পাহাড়ের রাস্তায় উঠতে থাকি তখন আমার ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।তখন সেখানকার একজন বিএসএফ কর্মী আমাকে এসে জল দেয় এবং বলে তুমি হেঁটে হেঁটে কেন যেতে চাইছ।


উনি আরো বললেন কিছুদিন আগে ঠিক এই ভাবে একজন বৃদ্ধ লোক মারাজান শ্বাসকষ্ট হয়ে।তারপর আমি ওনাকে দাদুর ছবি দেখলাম উনি ঠিক চিনতে পেয়ে বললেন হ্যা এই তো সেই ভদ্রলোক বিএসএফ কর্মী টা বলছেন।যাকে আমরা রাস্তায় পরে থাকতে পেয়েছিলাম একটু সামনে।তারপর আমি বুঝতে পারলাম দাদু কিভাবে মারা যান।আমি সেখান থেকে ওই গুহটার সামনে পৌঁছলাম যেটা একটু উপরে ছিল সমুদ্র পৃষ্ট থেকে। এবং ডাইরি টা তে লেখাছিল ওই গুহতে ভোরবেলায় সূর্য্যের প্রথম আলো যেখানে পড়বে সেখানে আমার আংটিটা নিয়ে যেন রাখি তারপর আমার লক্ষ আমি পেয়ে যাবো।ডাইরি অনুযায়ী আমি পরেরদিন ভোর বেলায় আমি গুহার মধ্যে যাই এবং সূর্য্যের আলো যেখানে পড়েছিল সেখানে গিয়ে আমি আংটি টা রাখি। তারপর আলোর প্রতিফলন টা গিয়ে পরে আর একটা পাথরের ওপর ।তারপর আমি ওই পাথর তা উঠিয়ে দেখলাম। পাথরটার নিচে দেখি একটা বাক্স রয়েছে।বাক্সটাই একটা তালা লাগানোছিল।


তালাটা আমি যখন ভাঙি তখন ভিতর থেকে একটা আলোয় চমকানো হিরে দেখতে পাই। হ্যা সেই হিরে যার নাম হলো "সূর্য্যনূর" এবং যার উল্লেখছিলো দাদুর ডাইরিটা তে, যার খোঁজে দাদু এখানে আসতে চেয়েছিলেন এবং যার খোঁজ করতে গিয়ে দাদু মারা যান।দাদু এই "সূর্য্যনূর" হিরেটা ভারত সরকার কে দিতে চেয়েছিলেন কারন এই হিরেটাকে কোহিনূর এর সাথে তুলনা করা হয়।এটা যদি ভারতের কাছে এসে পড়ে তাহলে গরিব, বেকারত্ব অনেক কমে যাবে ভারতে।এবং সেই দাদুর স্বপ্নটা আমি পুরোন করবো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama