করোনার যোদ্ধা
করোনার যোদ্ধা
আজ দেশে একটা জিনিস এর ই ভয় মারাত্মক করোনা ভাইরাস। এ করোনা ভাইরাস এর আক্রমণ তো শুরু হয়ে গেছে কিন্তু কোথায় গিয়ে থামবে কেও ই জানেনা।নিজেকে বাঁচাতে এখন পুরো ভারতবর্ষ না শুধু পুরো বিশ্ব ঘরে বন্দি।কিন্তু পুরো বিশ্ব ঘরে থাকলেও কিছু মানুষেরা আছে যারা দিন রাত্রি সাধারণ মানুষ এর জন্য নিজের প্রাণ বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।যেমন ডাক্তার, নার্স,পুলিশ,সাফাই কর্মী, জরুরি অবস্থার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষেরা।ওরা নিজের কথা না ভেবে অন্য মানুষের জন্য কাজ করেই যাচ্ছে যাদের কে হয়তো ওরা কোনোদিন দেখিনি এবং চিনিয়েও না।তেমনি একজন ডাক্তার ড:অভিরূপ ব্যানার্জী,উনি কলকাতা র ই একটা হাসপাতলের কর্মরত একজন ডাক্তার।উনি নিজের কাজে খুব বেস্ত থাকায় পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারতেন না।ওনার পরিবার বলতে ওনার ছোট্ট ছেলে অন্তু এবং ওনার স্ত্রী শ্রেয়া। যেহেতু উনি সময় দিতে পারতেন না পরিবারকে উনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে উনি 20 মার্চ এ বেড়াতে যাবেন পরিবার কে নিয়ে।উনি কিছুদিনের ছুটি ও নিয়ে নিয়েছিলেন। অন্য দিক দিয়ে পুরো বিশ্বে করোনার ভাইরাস এর প্রকোপ বাড়ছিল।19 মার্চ রাত্রি বেলা হসপিটাল থেকে অভিরূপ কে ফোনে করে বলে তাড়াতাড়ি যাতে ও হসপিটাল এ চলে আসে। হসপিটালএ সে গিয়ে দেখে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী।সে অন্য কোথাও না দেখে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করতে নেমে পরে। সারা রাত্র তার হসপিটাল এই কাটে।তারপর সকাল বেলা অভিরূপ কে বলা হয় ওর ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। কারণ হসপিটাল এ বেশি ডাক্তার ও ছিল না এবং করোনা আক্রান্ত রোগী ও বাড়ছিল।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সে বাড়ি যায়। ও ভাবছিল শ্রেয়া খুব রাগ হয়ে থাকবে।কারণ অনেকদিন পর ওরা একসাথে একটা বেড়াতে যাচ্ছিল।কিন্তু সেটা হলো না।বাড়িতে ঢোকেই ঘরের বাইরে থেকে সে শ্রেয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো ।
এবং সে বলল "দেখো আমি তো চাইনি যে এটা হোক আর এখন রোগী সংখ্যা অনেক বাড়ছে আজকে যদি আমি আমার ডাক্তার হবার কর্ত্তব্য না পালন করে রোগীদের চিকিৎসা না করে পালিয়ে যাই তাহলে আমি নিজেকে কোনোদিন মুখ দেখতে পারবোনা,আমি কোনোদিন নিযেকে ডাক্তার হিসেবে ও মানতে পারবোনা"।তারপর শ্রেয়া বললো "আমিও জানি আজকে দেশের কি অবস্থা তাই আমি তোমাকে বলছি তুমি যাও এবং এই করোনার যুদ্ধ জয় করে আসো।আমি ঘর দেখবো তুমি বাইরে দেখো"। এই কথা বলে অভিরূপ বাড়ি থেকে চলে যায় এবং হসপিটালে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে। মোটামুটি ১,২,সপ্তাহ ওকে হসপিটালে থাকতে হয়েছিল এবং ক্রমশ রোগীও বেড়ে যাচ্ছিল করোনার। অভিরূপ আর শ্রেয়ার শুধু ফোনে ফোনে কথা হতো কারন অনেকদিন সে বাড়ি যেতে পারছিল না । তো মোটামুটি এক মাস পর অভিরূপ কে হসপিটাল থেকে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেয় এবং হসপিটালে ওর সহকর্মীরাই ওকে বাড়ি যেতে বলে কারণ ওর বাড়ি হসপিটাল থেকে ১,২ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল। সে যখন বাড়ি যাচ্ছিল তখন রাস্তার ধারে দেখে
একটা ছোট্ট বাচ্চা পড়ে আছে। যেহেতু পুরো দেশে লকডাউন চলছিল তাই রাস্তায় কোন মানুষ ছিল না শুধু বাচ্চাটা রাস্তার ধারে একা পড়ে আছে। ও যখন বাচ্চাটাকে দেখল ওর শরীর হাত দিয়ে দেখল দেখে বাচ্চাটার গায়ে জর। অভিরূপ মনে করলো ওর করুণা হতে পারে এবং ওর যদি করুণা হয় তাহলে ওকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না, কারণ ওর থেকে আরো একজনের হতে পারে। এবং হসপিটালে রোগী ভর্তি হচ্ছিল হসপিটালের জায়গা ছিল না। যেহেতু কোন নির্দিষ্ট তথ্য ছিল না যে ওই বাচ্চাটার করোনা পজেটিভ তাই অভিরূপ বাচ্চাটাকে ওর বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত করল ।এবং সে বাচ্চাটাকে নিয়ে যখন কলোনির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল কিছু পাড়া-প্রতিবেশী অভিরূপ কে দেখে ফেলে। এবং সন্দেহ করে যে অভিরূপ একটা করোনা আক্রান্ত হওয়া বাচ্চাকে বাড়ি নিয়ে চলে এসেছে ।যখন অভিরূপ বাচ্চাটাকে বাড়ি নিয়ে যায় তখন শ্রেয়া জিজ্ঞেস করল এ বাচ্চাটা কে। অভিরূপ বলল সে রাস্তার ধারে পেয়েছে বাচ্চাটাকে এবং ঘরে নিয়ে চলে এসেছে। তারপর অভিরূপ বাচ্চাটাকে ওদের বাইরের ঘরে রাখল যে ঘরটা একটা আলাদা ঘর এবং ওইখানে রেখে অভিরূপ বাচ্চাটার চিকিৎসা করতে লাগলো। বাচ্চাটার করোনা টেস্ট করলো অভিরূপ কিন্তু করুণার ফলাফল আসতে চার দিন সময় লাগছিল। কিন্তু ওই বাচ্চাটা কে আনার একদিন পরই সে পাড়া-প্রতিবেশীরা অভিরূপ এর বাড়ি যায় এবং শ্রেয়ার সাথে কথা বলে সেদিন অভিরুপ বাড়ি ছিল।এবং অভিরূপ কে পাড়াপ্রতিবেশিরা বলে যে এই বাচ্চাটার করোনা হতে পারে এবং এই বাচ্চাটা যদি কলোনিতে থাকে, যেকোন ঘরে থাকে, তাহলে অন্য মানুষেরা কোরোনা আক্রান্ত হয়ে যাবে ।তাই বাচ্চাটাকে যেন ও অন্য কোন হাসপাতালে নিয়ে যায় সেখানে চিকিৎসা করে,কিন্তু কলোনিতে যাতে না রাখে ।তারপর অভিরূপ বলল না বাচ্চাটা এখানে থাকবে এবং চিকিৎসা এখানে হবে ।ও আরো বলছিল বাচ্চাটার করোনা টেস্ট হয়েছে এখনো ফলাফল আসেনি তাই আপনারা কিভাবে বাচ্চাটাকে নিয়ে যেতে বলছেন যদি বাচ্চাটার করুণা না হয়ে থাকে তাহলে ওকে যদি হসপিটালে ভর্তি করানো হয় তারপর অন্য রোগীদের থেকে করোনা হয়ে যেতে পারে ।তারপর একথা বলার পর পাড়া-প্রতিবেশীরা চলে যায়। দুদিন পর করুনা টেস্টের ফলাফল আসে এবং ফলাফল আসে যে বাচ্চাটার করুণা নেই। অনেকদিন ধরে খেতে না পাওয়ায় ও এভাবে রাস্তার ধারে বেহুশ হয়ে পড়েছিল এবং ওর জ্বর হয়েছিল। তারপর অভিরূপ পুলিশদের ডেকে বাচ্চাটার সব খবর দে এবং অভিরূপ সিদ্ধান্ত নেয় যে বাচ্চাটাকে একটা অনাথ আশ্রমএ দিয়ে দেবে কারণ বাচ্চাটার কেউ ছিলনা। এবং অভিরূপ সে বাচ্চাটাকে একটা অনাথ আশ্রম দিয়ে দে।
অভিরূপ শুধু ওই বাচ্চাটা কে বাচাইনি কিন্তু আমাদের একটা শিক্ষা দিয়েছে যে কাউকে অবহেলা করা ঠিক না ।বিশেষ করে যারা রাস্তার ধারে থাকে এবং আমরা যদি কোন মানুষকে যদি নিজের থেকে সাহায্য করতে পারি তার থেকে বড় মহান কাজ আর হতে পারে না।