The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Sanghamitra Roychowdhury

Romance Tragedy Classics

2  

Sanghamitra Roychowdhury

Romance Tragedy Classics

সুখী পরিবার

সুখী পরিবার

6 mins
582



রঞ্জনা বড়ো অভিমানী মেয়ে। সেই ছোট্টবেলা থেকেই ও চায়, ওর যখন মন খারাপ হবে তখন ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে কিছু না বলতেইও সে বুঝে ফেলুক, যে ওর মন খারাপ। বিয়ের আগে মা বাবা, বিশেষতঃ মা, কি করে যেন ঠিক বুঝে যেতো যে রঞ্জনা কোনো সমস্যায় আছে। বিয়ের পরে অর্চিস্মান কিছুটা বোঝে হয়তো, কিন্তু বেশিরভাগটাই বোঝে না। হয়তোবা কাজের চাপে, নয়তো উদাসীনতায়। রঞ্জনা ঠিক বোঝে না। তবে আশা করে বসে থাকে, ফোন করে অর্চিস্মান জানতে চাক। ফোন ধরে রঞ্জনা খানিকটা মৃদু অস্ফুটস্বরে 'হ্যালো' বলতেই ফোনের ওপার থেকে অর্চিস্মান বলুক, "রঞ্জা, তোমার কি আজ মন খারাপ? এতো চুপচাপ কেন?" কিন্তু সেসব কিছুই হয় না। অর্চিস্মান ফোন করে বটে, তবে কখনো হৈহৈ করে বলে, "রাতে আজ একটু গরম ভাত খাবো, খাওয়া হয়নি সারাদিন," আবার কখনো বলে, "আজ দেরী হয়ে যাবে ফিরতে, গাড়ি বিগড়েছে। একেবারে সারিয়ে নিয়ে ফিরবো।" কখনো ধীরগলায় রঞ্জনা "হ্যালো" বলার পরে অর্চিস্মান জানতেই চায়নি রঞ্জনার মন খারাপ কিনা, তাই রঞ্জনারও বলা হয়নি যে ওর মন খারাপ, খুব মন খারাপ।





কখন রাত পেরিয়ে সকাল, তারপর সকাল পেরিয়ে দুপুর, ধীরেধীরে দুপুর গড়ালো বিকেলে, বিকেলের ওপরে অন্ধকারের চাদর মুড়ে সন্ধ্যা ঘনালো। একলা চুপটি করে বারান্দার বেতের দোলনায় বসে রঞ্জনা। সেই কোন সকালে অর্চিস্মান বেরিয়ে গেছে। অনেক দূরে যেতে হয় ওকে। সকালে ওর বড়ো তাড়া থাকে। সময়মতো বেরোনোর তাড়া, এতটা পথ নিজে গাড়ি চালিয়ে গিয়ে সময়ে অফিসে পৌঁছনোর তাড়া। তাই হয়তো অর্চিস্মানের চোখেই পড়েনি রঞ্জনার খোলা এলোমেলো চুল, খানিক লালচে আর ক্লান্তিতে ভরপুর দুটি আয়ত টানা চোখ। রঞ্জনা চেয়েছিলো, যে অর্চিস্মান ওর মুখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থেকে ক্ষণেক থেমে আবেগঢালা ভরাটস্বরে বলুক, "তোমার কি ঘুম হয়নি রাতে? নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো? অথবা টেনশন করছো বুঝি কিছু নিয়ে?"

কিন্তু নাহ্, অর্চিস্মান তৈরি হয়েই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেছে। গাড়ির লক খুলতে খুলতে বলেছে শুধু, "সাবধানে থেকো, গেট তালা দিয়ে বন্ধ রেখো।"

রঞ্জনা ভাবে, সেকি কেবলি নিয়মরক্ষার দায়সারা কথা? নাকি সত্যিই অর্চিস্মান দুশ্চিন্তা করে রঞ্জনাকে নিয়ে? কে জানে? রঞ্জনা তো বোঝে না তেমন কিছু!





রঞ্জনা মনে মনে সারাদিন একলা একলাই কথা বলে যায় নিজের সাথে। রঞ্জনা খুব করে চায়, অর্চিস্মান বুঝুক রঞ্জনার সব না বলা কথা। বুঝে নিক কখন রঞ্জনা চায়, অর্চিস্মান ওকে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরুক। চোখের ওপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বন্ধ করে দিক ওর পদ্মচোখের ভেজা পাতা।

রঞ্জনা চায়, অর্চিস্মান বুঝুক, রঞ্জনা কখন চাইছে হাতের মুঠোয় হাত রেখে, কানে গরম পুরু দুই ঠোঁট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলুক, "এইতো আমি আছি তোমার পাশে, তোমার সঙ্গে, তবে মন খারাপ কেন?"

তবে সেসব কিছুই হয় না। রঞ্জনা একবার ঘরে যায়, একবার বাইরে আসে। ঘড়ির কাঁটা নিয়ম মেনে চলে। 




রঞ্জনা গভীরভাবে চায়, অর্চিস্মান মাঝরাতেও টের পাক, তার মাথার নীচের বালিশটা সরে গেছে, ওকে বুকে টেনে ধরে ঠিক করে দিক বালিশটা। তারপর ভোররাতে যখন হিম পড়ে টুপটুপ করে, তখন যত্ন করে অর্চিস্মান ঘুমন্ত রঞ্জনার গায়ে জড়িয়ে দিক পায়ের কাছে গুটিয়ে পড়ে থাকা পাতলা লিনেনের চাদরটা। তারপর কপালে চুমো খেয়ে রঞ্জনাকে নিজের বুকে মিশিয়ে নিক অর্চিস্মান। কিন্তু তা আর হয় কোথায়? রঞ্জনা অনেককিছু চায়, তবে সবই ওর নিজের মনে মনে। অর্চিস্মানের জন্য রঞ্জনা অপেক্ষা করে রোজ মাঝরাতেও। অর্চিস্মান ওকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বলুক, "কেউ তোমায় কিছু বলেনি তো? বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকি যে, রঞ্জা বুকে এসে জড়িয়ে থাকুক আমাকে অপরাজিতা লতার মতো।" কোথায়, রঞ্জনার ভাবনা তো একদিনও মেলে না! অর্চিস্মান রোজ নিয়ম করে অফিসে যায়, নিয়ম করেই অফিস থেকে ফেরে। ফেরার পথে টুকিটাকি বাজার করে। কখনো সখনো গরমকালে আইসক্রিম, শীতের সন্ধ্যায় ফিসফ্রাই বা চিকেন কাটলেট অথবা মাটন কবিরাজি আনে, বৃষ্টিভেজা বর্ষায় গরম বেগুনি বা জিলিপি আনে। কিন্তু এই কবছরে একবারও তো কোনো উপহার আনেনি মনে করে। অথচ রঞ্জনা যে মনেপ্রাণে চায়, অর্চিস্মান মনে রাখুক রঞ্জনার জন্মদিনের তারিখ, ওদের প্রথম দিনের আলাপের তারিখ, ওদের বিয়ের তারিখ, ওদের প্রথম সন্তান আসার সেই অনুভূতির কথা। রঞ্জনা ভেবেই চলে।





রঞ্জনা চায়, অর্চিস্মান ওকে নানা অছিলায়, অকারণ অজুহাতে বারবার ছুঁয়ে দেখুক, দেখে তারপর নাহয় মিছিমিছিই ওর কপালে আঙুলের পিঠ ছুঁইয়ে বলুক, "আরে দেখি দেখি, কিগো তোমার জ্বর নয় তো? গাটা একটু ছ্যাঁকছেঁকে যেন!" কিন্তু অর্চিস্মান কখনো এসব বলে না এমনভাবে। রঞ্জনার বুকে জমে অভিমানের বরফ, সেই বরফ জমতে জমতে পাথর, তারপর সেই পাথরের ওপর পাথর জমে জমে খাড়া হয়ে যায় অভিমানের পাহাড়। অর্চিস্মানের সাধ্য নেই সেই পাহাড় ডিঙিয়ে পৌঁছতে পারে রঞ্জনার মনের দুয়ারের কাছাকাছি। দুস্তর ব্যবধান তৈরি হয় শুধু। রঞ্জনা কখনো অর্চিস্মানকে কিছুই বলেনি। শুধু মনে মনে চেয়েছে। অর্চিস্মান বোঝেনি তাই হয়তো। এক যান্ত্রিক সম্পর্কের মায়াজালে আটকে দুজনে। রঞ্জনা পালিয়ে যেতে চায়, দূরে কোথাও, কোনো অচিন দেশে। আর মনে মনে খুব করে চায়, ও অভিমানে দূরে সরে যেতে চাইতেই অর্চিস্মান বলুক, "একটু নাহয় ভুলো আমি। একটু নাহয় না বুঝে অবহেলা করেছি! তাই বলে কি আমাকে একলা ফেলে এমনি করে দূরে সরে যেতে হবে?" রঞ্জনা দিনের পর দিন শুধু অপেক্ষাই করে চলে, অর্চিস্মান এমন কিচ্ছু করে না। রঞ্জনার মনে হয়, "তবে এই যে এতো এতো ভালোবাসাবাসি, তাতে করেও কি আরো কাছাকাছি আসা যায় না? আরো আরো কাছাকাছি? অনেক অনেক কাছাকাছি?" পাক খেয়ে খেয়ে ওঠে ধোঁয়ার মতো, নিস্তরঙ্গ জীবনে কথাগুলো বুদবুদের মতো ওপরনীচ করে। কখনো তা উচ্চারিত হয়ে রঞ্জনার ঠোঁট থেকে অর্চিস্মানের কান পর্যন্ত পৌছয়ই না। অর্চিস্মান তো জানতেই পারে না রঞ্জনার মনের মধ্যে সর্বক্ষণ চলতে থাকা ঝড়ের খবর।





সত্যিই রঞ্জনা বড়ো অভিমানী। অর্চিস্মানও খুব কম কিছু কি? রোজ প্রতীক্ষা করে, ওর রঞ্জা এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে দুমদুম করে কিল মারবে। একটানে ছিঁড়ে ফেলবে ওর পাঞ্জাবিটা। তারপর হেসে কেঁদে আকুল হয়ে আদরে আদরে ব্যস্ত করে ফেলবে অর্চিস্মানকে। কাজের মাঝে ফোন করে জ্বালাতন করবে। যখন তখন বেড়াতে নিয়ে যাবার আবদারে মাথা খারাপ করে তুলবে। অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে ওর রঞ্জা ওকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলবে। দামি শাড়ি, দামি গয়নার জন্য ঠৌঁট ফুলিয়ে বায়না করবে ওর রঞ্জা ওর কাছে। কিন্তু নাহ্, রঞ্জনা এসব করে না কক্ষনো। কি স্থিতধি, শীতল, বরফজমাট ব্যবহার রঞ্জনার। আর অনন্ত প্রতীক্ষা করতে করতে অর্চিস্মান ক্লান্ত, অবসন্ন। রঞ্জনা স্ত্রী হিসেবে তার ভাগের সব দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করে। যোগ্যতমা সহধর্মিণী। কিন্তু সেটুকুই কি সব? গাড়ির স্টিয়ারিঙে হাত রেখে ভাবতেই থাকে অর্চিস্মান। কত চেষ্টা করে অর্চিস্মান, যাতে রঞ্জনা একটু রাগ করে, ঝগড়া করে, আর পাঁচজনের মতো চেনাশোনা রমণীসুলভ আদর সোহাগ করে। কিন্তু এই কবছরের মধ্যে একবারের জন্যও রঞ্জনাকে জাগিয়ে জ্বালিয়ে তুলতে পারলো না অর্চিস্মান। একি তবে তার ব্যর্থতা? নাকি অপারগতা। অর্চিস্মান অন্যমনস্কভাবেই স্টিয়ারিং ঘোরায়।





রঞ্জনা আর অর্চিস্মান। বারো বছরের দাম্পত্য। বছর আটেকের ছেলে দেরাদুনে হস্টেলে থেকে পড়ে। সুখী পরিবার। স্বামী স্ত্রী দুজনের নির্ঝঞ্ঝাট সুখের সংসার আপাতদৃষ্টিতে। শুধু তাদের দুজনের মনেই সুখের খামতি। তারাভরা আকাশ সাক্ষী। তারা দুজন... অর্চিস্মান আর রঞ্জনা, দুজনেই কেবল ভাবে, ভেবেই চলে। তাদের জন্য যাকিছু তার সব কিছুই তাদের উল্টোদিকের ঐ মানুষটাই করুক। ঐ সেই অন্য মানুষটাই সব করুক, তারই যেন সব করণীয়। কিন্তু কী আশ্চর্য! শেষমেশ আর কিছুই করা হয় না কারুরই। হয়তো তাই ধীরেধীরে কাছে আসার রঙীন স্বপ্নিল দিনগুলি ক্রমাগত দূরে সরে সরে যায়। আর ক্রমশঃ তাদের গল্পও ধূসর, বিবর্ণ, জটিল, কুটিল, পঙ্কিল, ছন্নছাড়া হয়।




সত্যিই তারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রাণী মানুষ। তাই বুঝি তারা বড়ো অভিমানী প্রাণী। দুর্লঙ্ঘ্য অভিমানে তারা ক্রমশঃই দূরে সরে যায়। আর অভিমানী বুকে পুষে রাখে শুধু অনতিক্রম্য এক সমুদ্র আক্ষেপ। অবশ্য দুনিয়াভর লোকের চোখে সুখী পরিবারের উদাহরণ হয়ে রইলো তারা, আর একে অপরের থেকে ছিটকে গেলো কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে। বড়ো দুস্তর অভিমানী যে তারা দুজনেই... রঞ্জনা আর অর্চিস্মান


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance