Debdutta Banerjee

Inspirational

2  

Debdutta Banerjee

Inspirational

সত‍্যি মিথ‍্যা

সত‍্যি মিথ‍্যা

4 mins
581


অলস বিকেলে ছাদের এক কোনে দাঁঁড়িয়ে ছিল রাই। পিছনে বাচ্চাদের খেলার পার্কটা দেখা যায় এখানে দাঁঁড়ালে। এই সময়টা তার একান্ত নিজস্ব। নিচে অহনা কে গান শেখাতে এসেছে মিস। হাল্কা গানের সুর ভেসে আসছে ছাদে। অহনা বার বার ভুল করছে। আনমনেই গুনগুনিয়ে ওঠে রাই। আবার পিঠটা জ্বালা করে ওঠে। সকালে বাসন মাজার সময় গুনগুন করে এই গানটা গাইছিল বলে কাকিমা পিঠে গরম খুন্তি চেপে ধরেছিল আজ। অহনার গান শেখার সময় সামনে যাওয়া বারণ তার। কিন্তু সুরগুলো কে তো আটকে রাখা যায় না। আর রাইএর গানের গলা ছোট থেকেই ভালো। মায়ের কাছেই গান শিখতো সে। সত‍্যি, দিনগুলো কতো সুন্দর ছিল তখন আর আজ .......... পুরনো স্মৃতি চোখের দুকোন ভিজিয়ে দেয়।


হঠাৎ কাকিমার চিৎকারে বাস্তবে ফেরে, তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে রাই। কাকিমা কোথাও যাচ্ছিল। ওকে রাতের রুটি আর খাবার গরম করতে বলে বেরিয়ে গেলো। আটা মাখতে বসে গেল সে।


"রাই, একটু আমার ড্রইং এর হোম ওয়ার্কটা মা ফেরার আগে করে দিবি।" বলে টিভি চালিয়ে বসে পরল অহনা।

রাই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আঁকতে বসে যায়। আঁকার হাত ও ওর দারুন। বাবার কাছেই যা শিখেছে ছোটবেলায়। বাবার থেকে লেখার নেশাটাও পেয়েছিল রাই। কিন্ত্ত ভাগ‍্যটা ওর খারাপ। তিনদিনের জ্বরে প্রথমে বাবা চলে গেল। মা খুব কষ্টে ওকে মানুষ করছিল। গানের টিউশন করে ফেরার পথে একদিন ট্রেনে কাটা পড়ে ওর মা। কোনো নিকট আত্মীয় না থাকায় হোমেই যেতে হোতো হয়তো। বাড়িয়ালা দিদার বৌমা সেসময় ওর সব দায়িত্ব নিতে এগিয়ে এল। ওরা কলকাতায় থাকে। রাইএর থেকে এক বছরের বড় ওনার মেয়ে আছে। পাড়ার সবাই রাইকে খুব ভালবাসতো। সবাই বলেছিল হোমে যাওয়ার চেয়ে এই বেশ ভাল হল। তখন কি রাই জানতো তার কপালে কী আছে। মাত্র বারো বছর বয়েসে বাবা মা কে হারিয়ে অনাথ রাই কাকিমার হাত ধরে প্রথম কলকাতা এল মালদা থেকে। আর কদিন পর বুঝতে পারলো এখানে সে বাড়ির বিনা মায়নার কাজের লোক হয়ে এসেছে।


তবুও হাসি মুখে সব কাজ করতো সে। বাড়ির কাজের বাইরে অহনার আঁকা হাতের কাজ অঙ্ক ও করে দিতে হয় কাকিমাকে লুকিয়ে। বরাবর ক্লাসে প্রথম হতো রাই। viii এ পড়তে পড়তে পড়া বন্ধ হয়ে গেল। আর অহনা এক বছরের বড় হয়েও vii এ পড়ে। খুব ফাঁকিবাজ আর অমনোযোগী। কিন্ত্ত শতকাজ করেও কাকিমার মন পায় না রাই। মাঝে মাঝে সব কিছুই মিথ‍্যা মনে হয় তার। কাকুও কাকিমার কথা মতো চলে। রাতে অহনার ঘরের মেঝেতে শুয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে রাই।

তার আঁকা ছবি অহনার নামে স্কুল ম‍্যাগাজিনে ছাপা হয়। কাকু কাকিমা গর্ব করে সবাই কে দেখায়, পর্দার আড়াল থেকে দেখে রাই। অহনা ও তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল‍্য করে সর্বদা। তাকে দিয়ে নিজের সব কাজ করিয়ে নেয় অহনা।


অহনার পুরানো খাতায় লেখালেখির অভ‍্যাসটা চালু রেখেছিল রাই। যখনি সময় পেতো মনের কল্পনা কে উজার করে দিতো খাতার পাতায়। তাকে না জানিয়েই অহনা নিজের নামে তার একটা লেখা গল্প এক বড় প্রতিযোগিতায় পাঠায়। আর আজ অহনাদের বাড়িতে রিপোর্টার দের ভিড়। তার গল্প সারা রাজ‍্যে প্রথম হয়েছে। রান্নাঘরে বার বার চা ক‍রছে রাই। একের পর এক অতিথী আসছে আজ। সবাই অহনার প্রশংসা করছে, ওর লেখার প্রশংসা করছে। অহনা কেমন কুকড়ে গেছে। গুছিয়ে কথাও বলতে পারছে না। ওর বাবা মা ওকে আগলে রাখছে। রাইএর কিন্ত্ত খুব আনন্দ হচ্ছে। স‍ত‍্যি,এই সাফল‍্য যে আসলে তার। একজন বড় পাবলিসার এসেছেন অহনার লেখা পড়ে। চা এর ট্রে নিয়ে রাই ঢুকতেই চোখাচোখি হল অহনার সাথে। চোখ নামিয়ে নিল অহনা। চা দিতে দিতেই রাই এর কানে এল পাবলিসার ভদ্রলোক অহনার কিছু লেখা চাইছেন। কাকু কাকিমা সমানে অহনাকে উৎসাহ দিয়ে চলেছে। অহনা অসহায়ের মতো রাই এর দিকে তাকায়।

রাই তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে যায়। একটু পরে রান্না ঘরে এসে দাড়ায় অহনা। দু চোখে জল। রাই জানে গুছিয়ে আধাপাতা লেখার ও ক্ষমতা নেই অহনার। স্টোররুমের পুরনো বই খাতার ফাঁক থেকে নিজের লেখা দুটো খাতা এনে অহনাকে দেয় রাই। অহনা রাই এর দিকে তাকিয়েই থাকে। কাকিমা ডাকছে, অহনাকে জোর করে ঠেলে ওঘরে পাঠায় রাই। তার লেখার বই বার হবে, তা হোক না অহনার নামে, খাতা কলম তো অহনারি। কল্পনা শুধু তার। বাসন ধুতে ধুতে ভাবে সে।


অহনা ডাকছে ও ঘর থেকে। হাত মুছে দৌড়ে যায় রাই। অহনা বলে----" ও আমার বোন রাইমা, এই লেখাগুলো সব ওর। আপনি চাইলে ওর সাথে কথা বলে ওর লেখা ছাপতে পারেন।"

---" এসব কি বলছিস মা" কাকিমা বলে ওঠে। "এসব তো তোর ........" কাকিমা কে মাঝ পথে থামিয়ে অহনা বলে ওঠে---"না, এ সব রাই এর লেখা। ও রাত জেগে এসব গল্প লেখে। এই সাফল‍্য আমার না, এসব রাই এর প্রাপ‍্য।"

রাই অবাক হয়ে ভাবে আজ অহনা এতো গুছিয়ে কথা কী করে বলছে। সে কি ঠিক শুনছে। ঝাপসা চোখে শুনে চলে অহনা বলে চলেছে ---"ও ভাল ছবিও আঁকে। দারুন গান গায়। পড়াশোনাতেও ভাল........."

আজ আর কোনো কথা খুঁজে পায় না রাই। আজ অহনার বলার দিন। রাই শুধু শ্রোতা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational