ভালোবাসা
ভালোবাসা


কলকাতা শহর। বৃষ্টিস্নাত সকালে চারিদিকে রাস্তা কর্মবিমুখ। সকাল ৮টায় ঘুম ভাঙল সায়কের। সে কাঁচের জানলার দিকে তাকালো, কাচের গায়ে লেগে থাকা বৃষ্টির জল তার মনকে উদ্বেলিত করে দিল। সে ছুট্টে গেল বারান্দায় চোখ মেলে দেখলো বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতিকে। প্রকৃতির মধ্যে সে খুঁজে পেল তার মনের মধ্যে থাকা ভালোবাসার মানুষটিকে। তৎক্ষণাৎ বৃষ্টি শুরু হল। সায়কের মনে হল এই বৃষ্টি যেন তার ভালোবাসার মানুষটির সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে দিল। তার মন চাইলো দৌড়ে গিয়ে সেই মানুষটির হাতটা ধরতে। ঠিক সেই সময় মায়ের ডাক 'বাবু মুখ ধুয়ে যা'। তৎক্ষণাৎ সায়ক ভাবের জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এলো। সে উত্তর দিল তার মাকে 'যাচ্ছি মা'। তারপর সে তার মায়ের কাছে চলে গেল।কিন্তু তার মনে তখনো উঁকি মারছে তার ভালোবাসার মানুষটি। যাকে সে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত দেখতে পায় এবং তার অস্তিত্ব অনুভব করে। কিন্তু সে জানে না তাকে কি নামে ডাকবে। শুধু জানে তাকে সে ভালবাসে। সায়ক ইতিহাস অনার্স নিয়ে পড়ছে। সায়কএকদিন ইতিহাসের বই খুলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম পড়ছিল, হঠাৎ তার মনে হলো এই লেখাগুলি তার ভালোবাসার মানুষটি তার জন্য লিখেছে। সে তখন বিভোর হয়ে আরো পড়তে পড়তে তার ভালোবাসার মানুষটিকে প্রত্যক্ষ করতে লাগলো। আরেকদিন সে দেখল একটা বিড়াল কে একজন মারছে সে তখন ছুট্টে গিয়ে বলল ' মেরো না গো মেরো না আমার মনের মানুষের বড় ব্যথা লাগছে!' সেই মানুষটি অবাক হয়ে গেল আর ভাবলো যে ছেলেটি ইতিহাস পড়তে পড়তে পাগল হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিকেলে সায়ক ছাদে উঠে আকাশের দিকে চেয়ে ভাবে এই আকাশে মেঘ যেন তার ভালোবাসার মানুষটির কেশ সজ্জা। সে অবাক হয়ে সেই সৌন্দর্য্য অনুভব করে। কিন্তু যখন বিদ্যুৎ চমকায়, বজ্রপাত হয় তখন সে ভয় পায়। সে ভাবে তার মনের মানুষ তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে না তো! তখন তার মনের মধ্যে এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সে আকুল হয়ে মনে মনে বলে 'আমাকে ছেড়ে যেও না তুমি! যেও না'! সায়কের বয়সি অন্য ছেলে মেয়েদের থেকে সায়ক অনেক আলাদা তাকে বোঝা বড় কঠিন। সায়কের মধ্যে দুটি সত্তা আছে। কখনো কখনো সে এত বাস্তবিক কথা বলে, অন্যের সমস্যার সমাধান করতে পিছুপাও হয়না; তখন তার বন্ধুরা অবাক হয়ে যায়। আবার এই ছেলেটি যখন ভাব জগতের কথা বলে তখন অন্যরা তা বুঝতেও পারেনা। সায়কের ভালোবাসা এতটাই প্রগাঢ় যে সে প্রকৃতির প্রতিটি অংশে তার ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে পায় এবং তার উপস্থিতি অনুভব করে।