স্কুল লাইফ
স্কুল লাইফ
আজ প্রায় পাঁচ বছর পর দেখা পৃথা আর শ্রীজিতার। শ্রীজিতা বরাবরই একটু ডানপিটে, উড়নচন্ডি প্রকৃতির। সেই তুলনায় পৃথা একটু শান্ত, ধীর-স্থির, লাজুক। তবে দুটিতে ভাব ছিল অনেক। সারা স্কুল ওদেরকে চিনত। একে অন্যকে এক মূহুর্ত চোখের আড়াল করত না। আজ তারাই কেমন করে যেন পাঁচটা বছর কাটিয়ে ফেলল একে অন্যকে ছাড়া। একটা সময় ছিল যখন ওরা ভাবত আলাদা স্কুল হয়ে গেলে কি করে থাকবে। সত্যি সময় কত কিছু শিখিয়ে দেয়। ওদেরকেও শিখিয়ে দিয়েছে কি করে থাকতে হয়। তবে আজ পৃথা খুব রেগে আছে ওর শ্রীর ওপর। এই পাঁচ বছরে একবারও ওর সাথে দেখা না করার জন্য। ও নিজেও কতবার দেখা করতে চেয়েছে কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনো বাহানায় শ্রী সেটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে। আজ ওর সব প্রশ্নের উত্তর চাই।
-তুই রাগ করিস না পৃথা। তুই রাগ করলে এখনও তোকে সেই আগের মতোই বুদ্ধমূর্তি লাগে। এখনও চকলেট খাস? আর ঠোঁট দিয়ে কামড়ে বিস্কুট?
শ্রীজিতার কথা শুনে পৃথা না হেসে পারে না। ওর সব রাগ কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
ওকে হাসতে দেখে শ্রীজিতা বলে- এখনো কিন্তু তোকে হাসলে সেই স্কুল লাইফের পৃথাই লাগে।
-তুইও তো সেই স্কুল লাইফের মতো করেই আমার রাগ ভাঙালি।
-হুম। কিছু জিনিস অভ্যেস হয়ে যায় যা সহজে ভোলা যায় না।
-সত্যি করে বল তো এতদিন আমার সাথে কেন দেখা করিস নি?
-একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে হতো। আর স্কুল লাইফের মতো তো রোজ রোজ স্কুল গেলেই তোকে দেখতে পেতাম না। আরও বেশি মনখারাপ হতো। কষ্টটা একবার সহ্য করা গেলেও বারবার যায় না। তাই আর দেখা করিনি।
-আমরা কবে এতো বড়ো হয়ে গেলাম রে? কি অদ্ভুত দেখ, ছোট বেলায় মনে হতো কবে বড়ো হব আর এখন মনে হয় ছোটবেলায় যদি ফিরে যাওয়া যেত। আবার আমরা দুই বন্ধু মিলে একসাথে স্কুল যেতাম। একসাথে অটোয় করে বাড়ি ফিরতাম।
-তাই তো সবাই বলে স্কুল লাইফের মতো আর কিছু নেই। ওটার কোনো বিকল্প হয় না। এই সময়টা সবার লাইফে একবারই আসে। তাই যখন আসে তখন জমিয়ে আনন্দ করা উচিত।
পৃথার এখন আর কোনো রাগ নেই ওর প্রাণের বন্ধু শ্রীজিতার উপর। দুই বন্ধু মিলে আগের মতোই আবার গল্পগুজবে মেতে উঠেছে। ওদের খুনসুটি ভরা সুন্দর মূহুর্তগুলো ধরা থাকে ওদের মুঠোফোনের ক্যামেরায়। দূরে কারোর বাড়ি থেকে ভেসে আসে,
"তেরে জ্যায়সা ইয়ার কাহা,
কাহা অ্যায়সা ইয়ারানা...
ইয়াদ কারেগি দুনিয়া
তেরা মেরা আফসানা।। "