সীমাহীন ভালোবাসা
সীমাহীন ভালোবাসা
শরৎ কাল চারিদিকে খুশির হাওয়া বইছে, আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা!!!! তারপর মা...... সপরিবারে আসবে আমাদের মাঝে। এই আনন্দে মানুষের সাথে সাথে প্রকৃতিও সেজে উঠেছে। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে, তবে তার ফাঁকে একটু একটু কালো মেঘের আনা গোনাও দেখা যাচ্ছে, দিকে দিকে কাশফুল হাওয়ার তালে তালে আনন্দে মাথা দোলাচ্ছে, শিউলি তার মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছে বাতাসে। চারাদিকে এক খুশির হাওয়া বয়ে চলেছে।
তিথি একা বসে আছে সমুদ্রের তীরে। সমুদ্রটা আজ ভীষন রকম শান্ত, কোন রকমের কোন উত্তাল নেই, কোন এক অজানা কারনে সমুদ্রের মন বুঝি আজ খারাপ!!!! তবে তিথির মন খারাপ!!! নাকি ভালো সঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছেনা!!!! তিথি এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের দিকে, দেখে মনে হচ্ছে যেন সীমাহীন আকাশ এই সমুদ্রের বুকে একটু একটু করে মিশে যাচ্ছে, আর পড়ন্ত সূর্য তাদের মিলন কে রক্তিম আভায় রাঙিয়ে দিচ্ছে মেঘের আড়াল থেকে।
----------তিথির কানে একটা কথাই ভাসছে আমি থাকতে পাড়বোনা!!! আমাকে যেতে হবে, দরকারি কাজ আছে, প্লিজ রাগ করিসনা, একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবার চেষ্টা কর পরিস্থিতিটা!!
তিথির চোখটা খচখচ করছে তার সাথে জ্বালাও করছে, লালা হয়ে উঠেছে, তবুও এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দূর দিগন্ত পানে।
------------হঠাৎ পিছন থেকে একটা আওয়াজ আসলো, কিরে এখনও রাগ করে আছিস আমার ওপর??? কথা বলবিনা আমার সাথে???
----------তিথী অভিমানি গলায় বলল, আমার রাগে কার কি এসে যায়!!! আর তাছাড়া আমি কথা বললেই বা কি...!!! আর না বললেই বা.... কি...!!!! তুই তো.... আর আমার কথা শুনবিনা যেটা তোর ইচ্ছে সেটাই করবি!!!!
----------এটা তুই বলতে পারলি তিথি!!!! আমি তোর কথা শুনিনা, বাড়ির লোক থেকে শুরু করে পাড়ার লোক বন্ধু,বান্ধব সবাই বলে অনিক বাসু একমাত্র তিথি সেনের কথাই শোনে। অনিককে দিয়ে কোনো কাজ করাতে হলে সুপারিশ করতে হয় তিথির কাছে, আর তুই কিনা বলছিস আমি তোর কোনো কথাই শুনিনা!!! কি করব বল!!!! না..... গেলে হবেনা তাই যেতে হচ্ছে!!! আমারও কি ইচ্ছে করছে এই সময় তোকে ছেড়ে চলে যেতে!!! তাছাড়া এবার আমাদের সম্পর্কের সমীকরণটা বদলেছে, তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড থেকে গার্লফ্রেন্ড হয়ে গেছিস, আর কদিন পর আমার বউ হবি, কি রে হবিতো??? না..... প্ল্যান চেঞ্জ করে..... ফেলেছিস আমার ওপর রাগ করে!!!
----------তিথী কিছু না... বলে উঠে চলে যাচ্ছিল, কিন্তু একটা বলিষ্ঠ হাতের হ্যাঁচকা টানে আবার বসে পড়তে বাধ্য হলো, আর তিথির হাত দুটো শক্ত হাতের বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তিথি অনেক চেষ্টা করেও মুক্ত হতে পারলোনা সেই বন্ধন থেকে, তাই কান্না ভেজা ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বলে উঠল আমাকে ছাড় অনি আমার ভালো লাগছেনা, প্লিজ........ একটু একা থাকতে দে... না.....।
-----------অনি বলে উঠল একা!!! তাও আবার তোকে!!! আমি কখনই থাকতে দিতে পারবনা!!!! আর তাছাড়া আমি খুব ভালো করে জানি, আমার তিথি একা থাকতে পচ্ছন্দ করে না!!!!!
-----------তিথি বলে উঠল তাই!!! তাহলে আমার জন্মদিনের দিন কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিস দূরে???? এত বছরে এই দিনে তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও কখনও জাসনি!!! সব সময় এইদিনে আমরা একসাথে থেকে সেলিব্রেট করেছি, তাহলে আজ কেন???? তুই পাল্টে গেছিস অনি....!!! আমার অনি আর আগের মত নেই!!!! আমার খুব কষ্ট হচ্ছে প্লিজ...... যাসনা!!!! তিথির চোখের জল আর বাঁধ মানলনা সে..... তার নিজের গতীতে পড়ে চলল গাল বেয়ে।
------------অনি তিথির চোখের জলটা আলতো ভাবে মুছিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল, তুই এই রকম ভাবে কাঁদলে আমি কি..... করে যাবো বল??? একটু বোঝার চেষ্টা কর, এই প্রজেক্টটা একবার বিদেশে গিয়ে ভালো ভাবে প্রেজেন্টটেশন করতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই!!! আমি তখন প্রোমোশন পেয়ে একটা উচু পোষ্টে চলে যাবো, আর আমাদের ভবিষ্যৎ পুরো সিকিউর হয়ে যাবে। আর তোর বাবার কাছ থেকে তখন অনুমতি পেতেও কষ্ট হবেনা!!!! কারন তার রাজকুমারি বলে কথা, যার তার হাতে তো.... আর তুলে দিতে পারেন না.....!!! একটু ভালো করে বোঝার চেষ্টা কর, এইবছর একটুও আনন্দ হবেনা তোর, খুব কষ্ট হবে এ.... কথা ঠিক!!!! কিন্তু সামনের বছর আমরা একসাথে জন্মদিন সেলিব্রেট করব, বড় করে পার্টি করব প্রমিশ, তবে তখন তুই আর এই তিথি.... থাকবিনা আমি জানি!!!!!
----------তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনির দিকে বেশ কিছুক্ষন!!! তারপর বলে উঠল, কেন আমার আবার কি... হবে???
----------অনি মুখে দুষ্টুমির হাসি এনে বলল, কারন তখন তুই আমার গার্লফ্রেন্ড থাকবিনা!!! বেটার হাফ হয়ে যাবি!!! আর তিথি সেন থেকে তিথি বাসু হবি, তাই বললাম আরকি।
এই কথাটা শুনে এক মুহূর্তেই তিথির সব অভিমান গলে জল হয়ে গেল এবং মুখে একটা লাজুক হাসি ফুটে উঠল, তিথি অনির বুকে আশ্রয় নিল। অনি তিথির মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল..........
------------আমাদের স্বপ্ন পূরন করার জন্য এখন আমার যাওয়াটা খুব দরকার, আমরা দুজন মিলে যে.... স্বপ্ন গুলো দেখেছি, সেই গুলো আমি পূরন করতে চাই!!!! আর তার জন্য তোর একটু সাহায্য দরকার, কিরে বল সাহায্য করবিনা আমাকে???? আর আমি প্রমিশ করছি সবার প্রথম আমিই উইশ করব প্রত্যেকবছরের মত, আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ কমপ্লিট করে ফিরে আসার চেষ্টা করব। তোকে না.... দেখে, তোর সাথে ঝগড়া না.... করে আমিও যে.... ভালো থাকতে পারিনা!!!
------------তিথি অনির বুক থেকে মাথাটা তুলে চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে বলে উঠল আচ্ছা ঠিক আছে!!!! এইবারের মত যেতে দিলাম, এই রকম যেন.... আর দ্বিতীয় বার না.... হয়!!! আর তুই কি..... বললি আমি ঝগরুটে????
-----------অনিক একমুখ হাসি নিয়ে বলল সুক্রিয়া... বহুত বহুত সুক্রিয়া.., আর জো... হকুম মহারানি কি!!! আর কোনদিনও এই রকম হবেনা আর তাছাড়া আমার ঘাড়ে কটা মাথা যে.... মহারানির কথার অবাধ্য হব!!! আর আমার অত সাহস নেই.... ঝগরুটেকে মুখের ওপর ঝগরুটে বলার!!!
---------তিথি চোখ বড় বড় করে, হাতে মুঠো পাকিয়ে, রাগি মুখে বলে উঠল, কিইইইইই বলতে চাইছিস তুই.... পরিস্কার করে বল!!!!
------------অনি মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে উঠল, না...... না...... আমি কিছু বলতে চাইনি, শুধু যাবো কিনা.... তাই জানতে চাইছিলাম... আর কিছুনা!!!!
তিথি হো.... হো...... করে হেসে উঠল, সাথে অনিও হেসে উঠল তবে তিথিকে কোলে তুলে নিয়ে। সাথে সাথে ঝির ঝির করে বৃষ্টি নেমে এল ওদের আনন্দে সামিল হওয়ার জন্য। অনি তিথিকে কোলে নিয়ে এক পাক ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে সমুদ্রের বুকে নামতে শুরু করল, আর শীতল বৃষ্টির ফোটা ওদেরকে ভিজিয়ে দিতে লাগল আপন খেয়ালে। সমুদ্র আনন্দে উত্তাল হয়ে উঠল,সমস্ত মন খারাপ ভুলে গিয়ে । প্রকৃতিও হলো আনন্দে মাতোয়ারা, বৃষ্টি শেষে সীমাহীন আকাশের বুকে এক মিষ্টি প্রেমকাহিনির কথা লিখে দিল রামধনু তার সাতরঙ দিয়ে।